আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্রিটেনে কর্মজীবন ও কর্মচাঞ্চল্যে মোটাদাগে পরিবর্তন না আসলেও ব্রিটেনের আবহাওয়া এখানের সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে প্রভাব ফেলে।
ব্রিটেনে এখন আলো ঝলমল স্প্রিং টাইম চলছে। মার্চ মাসের শেষ রবিবার এর প্রথম প্রহরে একঘন্টা সময় দিনে বৃদ্ধির সাথে সাথে আবহাওয়ায়-ও বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। মাত্র একদিন আগেও যেখানে বিকেল হলেই অন্ধকার নেমে আসতো, স্প্রিংটাইমে সেখানে সূর্য ডুবে বিকাল আটটার পরে।
প্রকৃতিতে দেখা দেয় বসন্তের ছোঁয়া। উইনটারের পাতাহীন গাছপালায় দ্রুত হলুদ –সবুজ পাতা গজায়।মুকুল আসে। রাস্তার চারপাশের সবুজ জাগয়ায় লাগানো হলুদ-সাদা ডেফোডিল সবুজঘাস বেধ করে ফুটে থাকে হাসিমুখে। ছোট বড় ষ্ট্রিট এর ফাঁকে ,বাড়ীর ওয়াল ঘেষে অথবা পার্কে লাগালো চেরি ব্লোসম, ব্ল-বেলস, গোলাপ সহ নানাজাতের ফুল ফোটার দৃশ্য মনভালো করা উসৎব এরই অংশ হয়ে থাকে।
উৎসবপ্রিয় লন্ডনবাসী মনে হয় এই সময়য়ের জন্যেই সবচেয়ে বেশী অপেক্ষায় থাকেন। পার্কে রোদপোহানো অথবা আলতো রোদে বসে বইপড়া, দলবেধেঁ আড্ডা দেয়া হয়। অনেকে উইকএন্ডে নিজের গার্ডেনে বারবাকিউ ইত্যাদিতে আনন্দ ভাগাভাগি করে কাটান এই সময়গুলো।
লেকে দেখা যায় পর্যটকদের ভিড়। ইউরোপের প্রকৃতিঘনিষ্ট মানুষের একটি অংশ এইসব লেকেই ক্যানালবোর্ট এ ভাসমান বাড়ি বানিয়ে থাকেন। ফলত এই সময় ইউরোপের একদেশ থেকে আরেক দেশে অথবা দেশের মানুষের এক শহর থেকে অন্য শহরেও সময় কাটে বেশ আনন্দে-ই।
ব্রিটেন এর অন্যতম বড় উৎসব চেলসি ফ্লাওয়ার শো , এশিয়াকার্ণিভ্যালসহ উল্লেখযোগ্য উৎসবগুলোর আগমনে উন্মুখ থাকেন লন্ডন তথা ব্রিটেনবাসী।
বাঙালিদের সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব বাংলা বর্ষবরণ, বৈশাখী মেলা লন্ডন, বসন্তবরণ, নৌকাবাইচ, ঘুড়ি উৎসব, কবিতা উৎসব হয়ে থাকে সামার সময়কে সামনে রেখেই। যার শুরুটা হয় ষ্প্রিং টাইম দিয়েই।
এসময়ে কম ও বেশী দিনের স্কুল হলিডে-ও থাকে বেশী। ঠান্ডার দেশে অল্প কয়েক মাসের রোদ আর লম্বাদিনে অনেকে দলবেঁধে বিকেলের সময় কাটান মনোরোম ও অদ্ভূদ সৌন্দর্য়ের পার্কগুলোতে। শিশুদের উপভোগের সুযোগ সুবিধা থাকায় তাদের জন্যও সময়টি আনন্দময় উৎসবমূখর কাটে।
পার্কে খেলাধুলা চলে অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশী। এ সময় আড্ডা আর আনন্দপ্রিয় সৌখিনরা রোদপোহাতে আর আড্ডা দিতে ভালোবাসেন।
বছরের বেশীরভাগ সময়ে ঠান্ডা আর সূর্যের উত্তাপহীন ব্রিটেনে ভিটামিন ডি ভোক্তভোগির সংখ্যা আশংকাজনক। ডাক্তারদের পরামর্শ থাকে সূর্যালোকের এই সময়টি ছোট-বড় সকলের সূর্যের উত্তাপে প্রতিদিন অন্তত কিছুটা সময় কাটানোর।
লন্ডন ম্যাট অফিসের তথ্য মতে, এবছর স্প্রিং টাইম শুরু হয়েছে মার্চের একুশ তারিখ । শেষ হবে জুনের তেইশ তারিখ। তারপরের সময়টি আরও উত্তাপের। আরও রোদউজ্জ্বল সামার সময়। একুশ জুন থেকে শুরু হয়ে চলবে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
মূলত এই সময়ে পর্যটকদের সবচেয়ে বেশী আগমন ঘটে লন্ডনে। সবমিলিয়ে ব্রিটেনে স্পিং টাইম থেকে সামার শেষ হবার আগ পর্যন্ত ব্রিটেনের কর্মচাঞ্চল্যে মনভালো করা আমেজ আর সৌখিনতার সকল উপকরণে ব্রিটেনকে উপলব্দি করা যায় চমৎকার ভাবে।
আ নো য়া রু ল ই স লা ম অ ভি; কবি,সাংবাদিক