শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
টাওয়ার হ্যামলেটসের বো এলাকায় নতুন কাউন্সিল ভবনের উদ্বোধন করেছেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর  » «   বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকের প্রাণহানি এবং সৃষ্ট অস্থিরতা-সহিংসতায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ক্ষোভ-নিন্দা  » «   সৃজনের আলোয় মুস্তাফিজ শফি, লন্ডনে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা  » «   বৃটেনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তাহমিনার অসাধারণ সাফল্য  » «   দুই বঙ্গকন্যা ব্রিটিশ মন্ত্রীসভায় স্থান পাওয়ায় বঙ্গবন্ধু লেখক এবং সাংবাদিক ফোরামের আনন্দ সভা ও মিষ্টি বিতরণ  » «   কেয়ার হোমের লাইসেন্স বাতিলের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্সের সাফল্য  » «   যুক্তরাজ্যে আবারও চার ব্রিটিশ-বাংলাদেশী  পার্লামেন্টে  » «   আমি লুলা গাঙ্গ : আমার আর্তনাদ কেউ  কী শুনবেন?  » «   বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে লন্ডনে ইউনিভার্সেল ভয়েস ফর হিউম্যান রাইটসের সেমিনার অনুষ্ঠিত  » «   লন্ডনে বাংলা কবিতা উৎসব ৭ জুলাই  » «   হ্যাকনি সাউথ ও শর্ডিচ আসনে এমপি প্রার্থী শাহেদ হোসাইন  » «   ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে’র সাথে ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. এএসএম মাকসুদ কামালের মতবিনিময়  » «   মানুষের মৃত্যূ -পূর্ববর্তী শেষ দিনগুলোর প্রস্তুতি যেমন হওয়া উচিত  » «   ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নতুন স্পীকার নির্বাচিত  » «   কানাডায় সিলেটের  কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমকে সংবর্ধনা ও আশার আলো  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

আমেরিকার চিঠি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক নিষিদ্ধ কথামালা



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

ক.

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমন যে, এখানে দলের কর্মীদের পক্ষে নিজ ধর্মের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা সহজ। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ), গৌতম বৌদ্ধ বা যিশু খ্রিষ্ট বা হাজারো হিন্দু দেবতাকে নিয়ে অনায়াসে কেউ সমালোচনা করতে পারে বা মানবজাতির শ্রেষ্টতম আস্থার স্থান স্বয়ং মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধেও যুক্তি দাড় করাতে পারে দ্ব্যার্থহীনভাবে। কিন্তু কেউ মাথা ঘামাবে না। উপরন্তু, পেতে পারে আধুনিকতা বা প্রগতিশীলতার খেতাব। পেতে পারে রাষ্ট্রিয় নিরাপত্তা বা সরকারী আনুকুল্যও। কিন্তু, দলীয় রাজনৈতিক চর্চার কুসংস্কৃতি, অব্যব্যস্থাপনা ও নেতৃবৃন্দের সমালোচনায় কলম-কালির সংযোগ ঘটানো বা বক্তৃতার পূর্বে অনেক ভেবেচিন্তে, বুকের পাটা মজবুত করে নিতে হবে।

সমাজ বলুন, আর রাজনৈতিকবৃত্ত বলুন, কেউ তা সহজে মেনে নিতে পারেনা। এটা বিশেষ কোন রাজনৈতিক দল বা নেতৃবৃন্দের বেলায় প্রযোজ্য নয়; গোটা দেশের পুরো রাজনৈতিক সংস্কৃতিটাই একই চিন্তা ও মনস্তাত্বিক চেতনার আলোকে ঘুরপাক খাচ্ছে। যে দেশে আইনের মাধ্যমে পুরো জাতির জন্য জনগণের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মুখ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, যাদের নিরপেক্ষ বিবেক-বিবেচনার ক্ষেত্র বলে কিছু নেই, ভালো হোক বা মন্দ হোক দলীয় সিদ্ধান্তের আলোকে সংসদে নিরঙ্কুশ পক্ষপাতদুষ্ট ভোটাধিকার প্রয়োগ করতেই হয়, বুঝে কিংবা না বুঝে দলীয় আঙ্গিকে পক্ষাবলম্বন বা বিরুদ্ধাচারণ করতেই হবে, সে দেশে মন্ত্রীপাড়া বা সচিবালয় থেকে অঁজোপাঁড়া গাঁয়ের পর্ণকুটির পর্যন্ত যদিও রাজনৈতিক চর্চার বৃত্ত সম্প্রসারিত হয়েছে ঠিকই, তথাপি ক্ষনিকের জন্যও দলনিরপেক্ষ চিন্তার অবকাশ বড়ই দুর্লভ। এটাই বাস্তবতা। যার নেতিবাচক প্রভাবে আমরা সকলেই দুষ্টলোকের দ্বারা শাসিত হচ্ছি ও দুর্নীতির আড়ষ্টতায় আবিষ্ট হচ্ছি প্রতিনিয়ত।

নিউ ইয়র্কে, কাজ শেষে ঘরে ফেরার পথে ট্রেনে বসাবস্থায় দুটি সংবাদ মোবাইল স্ক্রিনে দেখছিলাম। যার দুটিরই উৎসস্থল আমেরিকায়। তবে আমার কাছে একটির পেছনে যেন জন্মভূমি বাংলাদেশের প্রচ্ছন্ন ছবি ভেসে উঠলো। সংবাদ দুটির প্রথমটি হচ্ছে ইরানের সাথে বিশ্বের পরাশক্তিসমূহের নিউক্লিয়ার সংক্রান্ত চুক্তি থেকে আমেরিকার বেরিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্তেজনামূলক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরান আক্রমনের সম্ভাবনা সৃষ্টির বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে সর্বদলীয় রেজ্যুলেশন পাশ হয়েছে এই মর্মে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কংগ্রেসের অনুমোদন ব্যতিত ইরান আক্রমনের নির্দেশ দিতে পারবেন না। যে রেজ্যুলেশন পাশ করতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট উভয়দলের শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেসম্যানরা উদ্যোগ নিয়েছেন। সংবাদের সারাংশ এই রকম:

http://www.presstv.com/Detail/2018/05/25/562896/US-House-Representatives-war-Iran-Donald-Trump-JCPOA

US House bans Trump from declaring war on Iran without Congress’s approval——-Fri May 25, 2018.

The US House of Representatives has unanimously passed an amendment that bans President Donald Trump from declaring a war on Iran without the Congress’s approval.

The bipartisan amendment on Wednesday received approval from the House as part of the US National Defense Authorization Act of 2019.

The amendment, introduced by Democratic Representative Keith Maurice Ellison and cosponsored by a number of other Democratic as well as Republican lawmakers, made clear Congress’s position that no law exists which gives the president power to launch a military strike against the Islamic Republic.

The announcement came two weeks after Washington unilaterally walked out of a multilateral nuclear agreement, officially known as the Joint Comprehensive Plan of Action (JCPOA), signed between Iran and major powers in 2015. The move was construed by many as a declaration of war against Tehran.

“The unanimous passage of this bipartisan amendment is a strong and timely counter to the Trump administration’s withdrawal from the Iran deal and its increasingly hostile rhetoric,” Ellison said.

“This amendment sends a powerful message that the American people and Members of Congress do not want a war with Iran. Today, Congress acted to reclaim its authority over the use of military force,” he added.

সংবাদটি পড়ে ভালো লাগল এই ভেবে যে, যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রিয় স্বার্থে তাদের রাজনৈতিক দলগুলো শুধু ঐক্যবদ্ধ হয়না, স্বয়ং নিজ দলীয় প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত বা ক্ষমতার বিরুদ্ধেও তারা যে কোন সময় অবস্থান নিতে পারে সহজে। যা তাদের গণতন্ত্রের সৌন্দর্য ও রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর।

বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট দ্বিতীয় সংবাদটি হলো; নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকায় ২১ মে, ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত  ‘হাজী ক্যাম্প মসজিদ ম্যানেজম্যান্টের বিরুদ্ধে মামলাঃ নিউ ইয়র্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম তনয়ের ১২টি এপার্টমেন্ট‘ শীর্ষক। সংবাদপাঠে মনটা বিষিয়ে গেল। বেশী দিন হয়নি, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁর সম্মানে আয়োজিত অনুষ্টানে তিনি বলেছিলেন, ‘নিউ ইয়র্কে অধ্যয়নরত তাঁর ছেলে তমাল মনসুরের গ্রেজ্যুয়েশন সম্পন্ন হয়েছে, তাই তার যুক্তরাষ্ট্র সফর।‘ পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম, তাঁর ছেলে নিউ ইয়র্কের কোন একটি কলেজে বিজনেস ম্যানেজমেন্টের উপর অধ্যয়ন করেছেন। মন ভালোকরা অনুভতি কাজ করেছিল এই ভেবে যে, বীর দাদার বীর নাতি, পরিবারতন্ত্রের মাধ্যমে ভবিষ্যত বাংলাদেশের হাল ধরবে যখন, একটু বিদ্যাবুদ্ধি থাকলে জাতির উপকারে আসবে, আমরাও উপকৃত হবো।  এখন দেখছি সোনার চামছ মুখে জন্মানো তমালের মগজ থেকে এক্ষুনি  হিরা জহরত বের হতে শুরু করেছে। সদ্য গ্রেজ্যুয়েশন সম্পন্ন করা তমাল ইতিমধ্যে প্রকাশিত উপরোল্লেখি সংবাদ ছাড়াও আরো বিনিয়োগ মিলিয়ে ৫৭০কোটি টাকারও বেশী অর্থ আমেরিকায় বিনিয়োগ করে ফেলেছেন বলে সংবাদে প্রকাশ। সংবাদ প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্কের টাইম টেলিভিশনসহ অন্যান্য গণমাধ্যম।

এসব নিয়ে চিন্তায় একটি প্রশ্ন মনে  উচ্চারিত হলো- এই  টাকাগুলো কার? আজ ক’দিন থেকে এটাই নিউ ইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটির ‘টক অব দি টাউন’। যার কেন্দ্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমের নাম মানুষের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। এসব নিয়ে ভাবতে মনটা ভারাক্রান্ত লাগছে। যদিও আপন জন্মদাতা পিতাকে নিয়ে গর্ব করি, যিনি ছিলেন বাংলার হাজার হাজার অতি সাধারণ পিতাদের একজন; যার সততা, পরিচ্ছন্নতা, পরিবার ও সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীলতা, সন্তানদের তাঁর মতো আদর্শিক মানুষ করার জন্য অনন্ত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে যিনি আমাদের কাছে অসাধারণ ও শ্রেষ্টতম পিতার মর্যাদায় আছেন। তবুও অপলকে, মন যেন বিষিয়ে উঠে বলল, -‘কেন একজন মন্ত্রীর ঘরে জন্ম হলোনা, তাহলে তো আর পরিশ্রম করতে হতোনা!

খ.

সমাজে যখন দলবাজী প্রকট আকার ধারণ করে এবং নিরপেক্ষ চিন্তার বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়, তখনই দলের নামে, আদর্শ ও চেতনার নামে প্রতিপত্তির ধ্বজাধারীদের বড়অংশ  মানুষের অস্থিত্বের উপর জোঁকের মতো চেপে বসে। তারা অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বেড়াজালের ফাঁক গলে মানুষের রক্ত চুষে  খায়।আবার দেশব্যাপী এরাই মানুষকে রাজনীতি ও মানবিকতার শিক্ষাদান করে। ব্যাপকাংশ মানুষের প্রশ্নাতীত দলবাজী, তোষামোদ, লেজুড়বৃত্তি, পরশ্রীকাতঁরতার সুযোগে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রশাসনিক শক্তির ব্যবহারে দিনে দিনে একনায়কতান্ত্রীক শক্তিমত্বায় আবিষ্ট হচ্ছে। হাজার বাঁধা সৃষ্টি করে পরবর্তী নেতৃত্ব বিকাশের স্বাধীন পথ রুদ্ধ করে চারপাশে আপন বলয় সৃষ্টির মাধ্যমে স্ব স্ব ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতাসীন থাকার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টিতে সফল হচ্ছে অনায়াসে। পরিণামে শক্তিমান নেতৃত্বের কৌশলীরা  শোষিত মানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার, ব্যক্তি ও বাক স্বাধীনতার উপর প্রভূত প্রভাব ফেলে  গোটা সমাজকে শক্তির দম্ভে ও শাসনে সাধারণ জনগণের উপর শাসনের ষ্টিমরোলার চালাচ্ছে।  এভাবেই যুগে যুগে, দেশে দেশে প্রভূত ক্ষমতাধর রাজাধিরাজ বা স্বেচ্ছাচারীনেতৃত্ব ও শাসকদের সৃষ্টি হয়েছে। আজও হচ্ছে এবং ভবিষ্যতও যে এই পথ থেকে বেরিয়ে আসবে তারও কোন আলো দেখা যাচ্ছেনা বলা যায়।

অথচ,প্রাচিনকাল থেকে যুগে যুগে সংস্কারবাদী চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ও এর যথাসম্ভব বাস্তবায়নই ক্রমে পৃথিবীকে আধুনিকতার স্থানে উন্নীত করেছে এবং প্রাতিষ্টানিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কৃতির বিকাশ হয়েছে। এ যাত্রাপথে সবচেয়ে উজ্জ¦ল ভূমিকা রেখেছে চতূর্দশ শতকের ইউরোপের রেঁনেসা আন্দোলন। কিন্তু প্রশ্নও থেকে যায়, ব্যক্তি, বাক, চিন্তাশক্তি ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার আলোকে সকল প্রকার কুসংস্কার, শোষণ ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে চিন্তা-চেতনার যে জাগরণ ইতালি থেকে ইউরোপ বিজয়ের পথ ধরে এশিয়া ও আমেরিকায় সঞ্চারণ শেষে আফ্রিকাকেও আলোকিত করেছিলো; গোটা দুনিয়া কি তা সমভাবে গ্রহন করতে পেরেছিলো?

যে জাতি যতো তাড়াতাড়ি তা গ্রহন করেছিলো; তারাই ততো দ্রুত উন্নতি ও প্রগতিশীলতার দ্বার উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব সভ্যতায় মনুষ্য সামাজিকতার উন্মেষ বিবেচনায় এশিয়ার অবস্থান যদিও সর্বাগ্রে। কিন্তু , প্রগতিশীল বিশ্বে এশিয়ার অবস্থা নাজুক এজন্য যে, এশিয়া যতটুকু ধর্মের উর্বর ভূমি হতে পেরেছে, আধুনিক চিন্তা-চেতনার আলোয় ততটুকু আবিষ্ট হতে পারেনি। এখানে মানব সমাজ আজও নানারকম পুরাতন কুসংস্কার-কুপমন্ডুকতার বেড়াজালে আবদ্ধ। যা প্রগতিশীলতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কুসংস্কার হচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমালোচনাকে শত্রুতা ও সমালোচককে শত্রুর স্থানে বিবেচনা করা।

আধুনিক বিশ্বে গণতন্ত্র ও বাক স্বাধীনতা হচ্ছে প্রগতিশীলতার প্রধান শর্ত। যেখানে এ দুটির অভাব সেখানেই মানুষ নিষ্পেষিত হচ্ছে। যেখানে বাক স্বাধীনতা নেই, সেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই, চিন্তা চেতনার উজ্জীবন নেই, স্বর্কীয়তা বা উদ্যোগ সেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছে। যেখানে গঠনমূলক সমালোচনা শত্রুর বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনের আঙ্গিকে বিবেচ্য, সেখানে জীবনের জয়রথ স্তব্ধ। সেখানে রাজনৈতিক শক্তি অন্ধ, নিরপেক্ষ চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্র সংকুচিত, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি সেখানে অবারিত এবং প্রগতিশীলতার অগ্রযাত্রা আড়ষ্ট।

যে বাংলাদেশ আজ মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপন করেছে, যে বাংলাদেশ আজ পরমাণু প্ল্যান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যুগে প্রবেশ করেছে, যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি আজ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকেও ভাবনায় আচ্ছন্ন করেছে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্য তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের সমীহ আদায়ে সক্ষম হয়েছে। সেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক বা সামাজিক অঙ্গন আজও সমালোচনা বা বাকস্বাধীনতাকে কতটুকু প্রশ্রয় দান করে বা সম্মান জানায়?  বাংলাদেশ, এখনো সমালোচনা ব্যাপকাংশে শত্রুতার আঙ্গিকে বিবেচিত এবং মোটা দাগে।

দলপ্রীতি রাজনীতির ভুষণ। কিন্তু দলবাজী রাজনীতির দুষন সম্পন্ন করে। বাংলাদেশ হচ্ছে দলবাজীর উর্বরভূমি। প্রচন্ড দলবাজ রাজনীতিকদের স্বর্গভূমি হচ্ছে বাংলাদেশ। এখানে এমন কোন দল নেই, যেখানে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে নিম্নতম পর্যায় পর্যন্ত তোষামোদ ও নীতিহীন লেজুড়বৃত্তিকে সর্বোচ্চ প্রশ্রয় দেওয়া হয়না। দলের কর্মীদের মধ্যে যে যতবড়ো তোষামোদকারী, দলবাজ, প্রশ্নহীন ও যুক্তিহীন অভিব্যক্তিতে নেতৃত্বের প্রতি তনে-ধনে-মনে শ্রদ্ধাশীল; সে ততোবড় নেতা ও পরবর্তী স্তরের নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ সহচর। এভাবেই চলছে দেশের রাজনীতি ও নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা। এর মধ্য দিয়েই চলছে আমাদের প্রত্যাশার নিভূ নিভূ বিকাশ। ফলে প্রতিটি দলের কর্মীরা আজ যুক্তিহীন ও বাছবিচারহীনভাবে নেতৃত্বের প্রতি অন্ধভক্ত। তাই পর্যায়ক্রমিক নেতৃত্বের ক্ষমতার চুড়ান্ত অপব্যবহারে রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্র দূর্ণীতির ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। কি রাজনীতিবিদ, কি বুদ্ধিজীবি, কি শিক্ষাঙ্গন বা প্রশাসন সর্বত্র আজ দূর্নীতির জয়জয়কার।

এই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়েই বাসের কন্ট্রাক্টর মূহুর্তে হচ্ছে শিল্পপতি।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মূহুর্তে রাজনীতিবিদ। নীতিহীন মাঠকর্মী শত নেতাকে ঠ্যাং দেখিয়ে ল্যাঙ মেরে মূহুর্তে হচ্ছে মন্ত্রী কিংবা দলের সর্বোচ্চ ফোরামের নেতা। সামান্য অপরাধে ত্যাগী-আদর্শনিষ্টরা হচ্ছেন দলচ্যুত আবার তাদের সায়েস্তা করতে দুর্নীতিবাজ – আদর্শচ্যুতরা হচ্ছে পুরস্কৃত। যেখানে রাজনীতিবিদ-ব্যুরোক্রেট পারস্পরিক প্রফেশনাল সম্মানের সম্পর্ক বজায় থাকা উচিত, সেখানে রাষ্ট্রিয় সম্পদ লুন্ঠনে তারা রাতের আঁধারে করে গলাগলি। অংশীদারিত্বের ব্যবসা পাতে।

গ.

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলপ্রধানদের মহাশক্তির মতো শক্তিমত্তার অধিকারী নেতা পৃথিবীর প্রগতিশীল দেশসমূহের রাজনীতিতে বিরল। এমনকি পার্শ্ববর্তী ভারতেও অনুপস্থিত। এর মূল হচ্ছে, দৃঢ়তর পরিবারতন্ত্র। এককথায়, রাজনীতিতে আজ পরিবারতন্ত্র ঝেঁকে বসেছে। ছলে -বলে -কৌশলে দলসমূহের প্রতিষ্টাতা পরিবারের কেউ না কেউ সর্বোচ্চ পদে থাকতেই হবে। এতে জ্ঞান, বুদ্ধি, যোগ্যতা, বিচক্ষণতার কোন বিচার নেই; এই পরিবারের কেউ না কেউ দলের হাল ধরতেই হবে। এতে দল বাচুক বা মরুক। তাই কৌশলে অন্ধভক্তদের দিয়ে সাজানো হচ্ছে দলসমূহের সর্বোচ্চ ফোরাম। রাজনীতির চেয়ে, দলীয় আদর্শের চেয়ে, দেশের গণমানুষের প্রত্যাশার চেয়েও বেশী গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিবারগুলোর প্রতি অন্ধত্ব প্রভূভক্তি। এতে দলসমূহের সর্বোচ্চ পর্যায়ে একশ্রেণীর স্বার্থান্ধ ব্যক্তিপূজারীর সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দলসমূহের সিদ্ধান্ত গ্রহনে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাপকাংশেই নেই। সেই অনুশীলনের প্রভাব পড়ছে তৃণমূল পর্যন্ত। তাই গোটা দেশের রাজনীতিতে একটি বিশেষ অভিজাত শ্রেণী গড়ে উঠেছে। যারা সকল ক্ষমতার মালিক। বস্তুত, তারাই রাজনৈতিক দলসমূহের মালিক আর দলের কর্মীগণ হলেন প্রজা। দলের সিদ্ধান্তসমূহ তাদের ইচ্ছার কাছেই কেন্দ্রীভূত। যার প্রভাবে দূষিত হচ্ছে দেশের সমাজব্যবস্থা। ফলে গোটা দেশ আজ প্রভাব-প্রতিপত্তির রণক্ষেত্র। সবাই চায় প্রভাব। পেঠে ভাত থাকুক বা না থাকুক, পরণের পর্যাপ্ত কাপড় না থাকলেও প্রভাব থাকতে হবে, শক্তির প্রদর্শন হতেই হবে। কেউ বুঝুক বা না বুঝুক, মানুক বা না মানুক নেতৃত্বের প্রদর্শন করতেই হবে; এটাই আজ রাজধানী থেকে মফস্বল পর্যন্ত সামাজিক বাস্তবতা। যা সমাজে অশান্তির অন্যতম কারণ। রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে। কিন্তু, বাংলাদেশের মতো এতো দীর্ঘস্থায়ী ও জঘন্য পরিবারতন্ত্র আর কোথাও নেই।

একই সময়ে দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলসহ অনেক দল পরিবারতন্ত্রের চুড়ান্ত দোষে দুষ্ট। এখানে দলসমূহের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব যতো ক্ষমতার অধিকারী, পৃথিবীর আর কোথাও তা নেই। ফলে কেবলমাত্র এই পরিবারতন্ত্রের কারণেই বাংলাদেশের সমকালীন প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক রাজনীতিক ব্যবস্থায় দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে সর্বময় জেঁকে বসা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোন সরকারই ব্যাপক দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে অক্ষম। কেননা, প্রধান দলসমূহের শীর্ষ নেতৃত্বের অতি ক্ষমতাধর পরিবারতন্ত্রের কারণে দল ও প্রশাসনে পরিবারের শীর্ষ নেতৃত্বের আত্নীয় পরিজনদের ব্যাপক দুর্নীতিগ্রস্থতাই এর মূল অন্তরায়। দলসমূহের মনোনয়ন বানিজ্য, দেশের প্রশাসনিক রদ- বদল ও প্রমোশন বানিজ্য, চাকুরীতে নিয়োগ বানিজ্য, সরকারী ক্রয়-বিক্রয় বানিজ্য প্রভৃতিতে পরিবারগুলোর আত্নীয় পরিজনদের একচ্ছত্র আধিপত্য ও একচেটিয়া প্রভাবই দেশের দুর্নীতির অন্যতম কারণ। যা রোধ করতে রাজনৈতিক দলে পরিবারতন্ত্রের লাগাম টানা জরুরী। কিন্তু, তার পরিবর্তে প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের শীর্ষ পর্যায়ের পরিবারতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জবিহীন রাখতে আজ কৌশলে সমগ্র দেশব্যাপী পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি সম্প্রসারিত করা হচ্ছে।

এদেশে আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জি¦ত থেকে আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতিবাজ খ্যাতি পাওয়ার পরও কেউ লন্ডনে বাস করে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতার মালিক হতে চায়। আবার কেউ বা অন্য দেশে। আবার কেউবা পিতৃসৃষ্ট রাজনৈতিক দলে কৈশোরেই সভাপতি মনোনিত হয়ে যায়, সেও স্বপ্ন দেখে রাষ্ট্রনায়ক হবে। মনে হয় যেন, এদেশে দেশ পরিচালনার মতো বিদ্ব্যান, মেধাবী মানুষ নাই।  কিংবা যারা আছেন- চিন্তা চেতনা-বোধে সব বিকলাঙ্গ, অথর্ব,অপদার্থ। বিপরীতে, আল্লাহ যেন তাদেরকে ধরণীতে পাঠিয়েছেন-ই দলীয়প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার ভাগ্য দিয়ে। রাজনীতির নীতিহীন অবারিত পরিবারতন্ত্রই তাদের অসম্ভব ভাগ্যলিখন সম্পন্ন করছে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে একমাত্র বাংলাদেশেই রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের পঞ্চাশ বছরের মাথায় আজো মৌলিক রাষ্ট্রীয় বিষয়গুলো অমিমাংসিত, বিতর্কিত ও বিভাজিত। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চিন্তায় সমাজ উল্লোসিত-জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তেই যা সম্ভবপর হয়েছে। ৭৫’র ১৫ই আগষ্ট বাঙালির স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্বপরিবারে হত্যার পূর্বে যা ছিলো অনুপস্থিত, তাই তাঁর মৃত্যুর পরে সাড়ম্ভে বাস্তবায়িত হলো। আজও সে অভিশাপ জাতিকে অভিশপ্ত করে যাচ্ছে।

পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যে দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির চার বছরের মাথায় স্বাধীনতার স্থপতিকে স্বপরিবারে নৃসংশ হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়েছে।  মুক্তিযোদ্ধাদের উপর নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছে ও মুক্তিযুদ্ধের মহান নেতৃবৃন্দকে কেবল হত্যাই করেনি, স্বাধীনতার স্থপতির নাম ও স্বাধীনতার শ্লোগানকে নিষিদ্ধ করেছে। আবার এরাই আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা ও পৃষ্টপোষকতায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত রাষ্ট্রের মূলভিত্তি ও ঐক্যের বিষয়গুলোকে বিতর্কিত, বিভ্রান্ত ও বিভাজিত করেছে। সংবিধানে ইচ্ছেমতো কাটাছেড়া করেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের লাখো শহীদের রক্তদানকে কার্যত অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্টার মৌলিক ভিত্তি পরিবর্তন করে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার মোড়কে দেশ ও সমাজকে পরিপুষ্ট করার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেছে। ফলে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে প্রতিষ্টিত হয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির রামরাজত্ব। আজ আবার তারাই রাষ্ট্রের কর্ণধার হয়ে রাষ্ট্রকে উদ্ধার করতে চায়। আমরাও বুঝে না বুঝে তাদের প্রতি আসক্তিপূর্ণ।

প্রাসঙ্গিক  আলোচনায় একদিন আমেরিকার একজন সাংবাদিক আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো,- Ôতোমাদের দেশ কিভাবে চলে? ইচ্ছে করেই কৌশলী উত্তর দিয়েছিলাম, Ôডেমোক্রেটিক রিপাবলিক’। উত্তর শেষে সে আর প্রশ্ন করেনি। হয়তো আমার কথাকে সম্মান করে। ফলে আমিও কোনমতে নিজেকে সম্মানিত বোধ করেছিলাম! কিন্তু, যখন ভাবি, হিলারী ক্লিনটন বাংলাদেশ ভ্রমণে গিয়ে ঢাকার সুউচ্চ ব্র্যাক সেন্টারের পেছনের বিশাল জীর্ণ বস্তি দেখে নিজেকে প্রশ্ন করেছিলো, এ দেশ কে চালায়? কিভাবে চলে? একথা স্মরণ হলে, তখন মনে মনে বলি, অল্প আয়তনের বিশাল জনগোষ্টির বাংলাদেশ সত্যিই সৃষ্টিকর্তা চালান। তিনিই আমাদের বোধশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেন, হয়তো তার ইচ্ছায়; পরিবর্তনের পক্ষে।

বলা যায়,বাংলাদেশে   আধুনিক চিন্তা ও প্রগতিশীলতা রাজনীতির কোটরে বন্দি। নিজেকেই প্রশ্ন করি, কবে শেকল মুক্ত হবে বাংলাদেশ? আশাবাদি মানুষ হিসাবে বোধের  প্রতি উত্তর-ও পরক্ষণে শুনতে পাই- সত্যিকার অর্থে প্রগতিশীলতার স্বপ্নদেখা  নবযাত্রীরা যখন জাগবে।

২৫ মে, ২০১৮ইং।।  নিউ ইয়র্ক ।।

 


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

"এই বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব " -সম্পাদক