শেখ হাসিনার রায় ১৭ নভেম্বর
‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’
- আপডেট সময় : ০৩:২৫:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
- / 119
জুলাই অভ্যুত্থান দমনচেষ্টার সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ‘পলাতক’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাস্তি হবে কি না—সে বিষয়ে রায় দেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৭ নভেম্বর।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার এ মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করে। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামানের সমাপনী বক্তব্য শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার।
এই মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি। এর মধ্যে মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাকেও আদালতে হাজির করা হয়।
রায়ের তারিখ ঘোষণার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম, বাংলাদেশে যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, কেউ যদি মানবতাবিরোধী অপরাধ করে, তাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
“১৭ নভেম্বর আদালত তার প্রজ্ঞা প্রয়োগ করে জাতির ন্যায়বিচারের প্রত্যাশাকে সম্মান জানাবেন—আমরা এমনই একটি ঐতিহাসিক রায়ের প্রত্যাশা করছি। এই রায় ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আদালতের কাছে সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করেছি। আদালত তার সুবিবেচনা প্রয়োগ করে যেন আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দেন, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
আন্দোলন দমনে ১,৪০০ জনকে হত্যায় উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’-এর দায়ে গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলার বিচার শুরু হয়। ironভাবে, সেই ট্রাইব্যুনালই তার সরকার গঠন করেছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয়।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিনই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
চলতি বছরের ১৬ মার্চ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করার আবেদন করে প্রসিকিউশন, যা ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করে।
তদন্ত সংস্থা চলতি বছরের ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে ১ জুন শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়, যাতে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগগুলো হলো—
১️⃣ গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক বক্তব্য’;
২️⃣ হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের দমন নির্দেশ;
৩️⃣ রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা;
৪️⃣ রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা;
৫️⃣ আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা।
এই পাঁচ অভিযোগে গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল।
গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছাড়ার পর শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। ধারণা করা হয়, আসাদুজ্জামান খান কামালও বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। ফলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার চলে।
একমাত্র হাজতবাসী আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ১০ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত ১২ অক্টোবর শুরু হয় যুক্তিতর্ক। সেখানে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
অন্যদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন দুই আসামির খালাস চান। মামুনের পক্ষেও খালাসের আবেদন করেন তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
২৩ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, “যদি এই আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হয়, কেউ প্রতিবাদ করবে। কিন্তু যদি তাদের বিচার না হয়, তাহলে জাতি ভীরু ও উপহাসের পাত্র হবে।
“আমি আশা করি, আসামিরা রায় মেনে নেবেন; অন্য পথ বেছে নেবেন না। আদালত যেন সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করে, সেটাই প্রত্যাশা।”
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়ে আসছিল।
রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তাদের ঘোষিত বিক্ষোভের মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বোমাবাজি ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এ কারণে সকাল থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। হাই কোর্ট মাজারসংলগ্ন এলাকায় পুলিশ, এপিবিএন ও বিজিবি সদস্যদের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও টহল দিতে দেখা যায়।
এলাকাজুড়ে বসানো হয় সাঁজোয়া যান ও কড়া নিরাপত্তা বলয়। ট্রাইব্যুনালে প্রবেশের সময় সাংবাদিক ও আইনজীবীদের তল্লাশি করা হয়।
নাশকতা ঠেকাতে বুধবার থেকেই ঢাকার প্রবেশপথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন আছে ১৭ হাজার পুলিশ সদস্য। পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
















