ঢাকা ০২:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

রিকশায় থাকা হাদিকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে গুলি

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১১:০১:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / 30

হাদিকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে গুলি

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশায় ছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি। তার পেছনেই আসছিল একটি মোটরসাইকেল। চলন্ত রিকশার পাশে এসে সেই মোটরসাইকেল থেকেই হাদির দিকে গুলি ছোড়া হয়।

গুলিটি হাদির কানের পাশ দিয়ে মাথায় বিদ্ধ হওয়ায় তার জীবন এখন গভীর সংকটে রয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোডে হাদির ওপর হামলা হয়। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বিকাল ৫টায় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “তার মাথার ভেতরে গুলি রয়েছে। বর্তমানে অপারেশন থিয়েটারে তার সার্জারি চলছে।”

তিনি আরও জানান, হাদিকে ‘লাইফ সাপোর্টে’ রাখা হয়েছে।

ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বক্স কালভার্ট সড়ক দিয়ে রিকশাটি যাওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেল খুব কাছ ঘেঁষে চলে। এক পর্যায়ে মোটরসাইকেলের আরোহী অস্ত্র বের করে রিকশার একেবারে সন্নিকটে গুলি ছোড়েন।

শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় যানবাহন ছিল তুলনামূলক কম। ফাঁকা রাস্তায় মোটরসাইকেলটি দ্রুতগতিতে সরে যায়।

হাদির সহযোদ্ধারা জানান, তারা তাকে সেই রিকশাতেই হাসপাতালে নিয়ে যান। ঢাকা মেডিকেলে তারা বলেন, “একটি মাত্র গুলিই করা হয়েছে, সেটাই হাদির মাথায় লেগেছে।”

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডের ডিআর টাওয়ারের সামনে হাদিকে গুলি করা হয়। তিনি বলেন, “কী কারণে বা কারা তাকে গুলি করেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। অপরাধীদের শনাক্তে আমরা কাজ করছি।”

ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ডিআর টাওয়ারের আনসার সদস্য ইমরান হোসেন হৃদয় বলেন, চাকা ফেটে যাওয়ার মতো শব্দ শুনে তিনি ভবনের বাইরে আসেন। তখন দেখেন রিকশায় একজন গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে আছেন, অন্যরা তাকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।

হাদিকে হাসপাতালে আনা একজন জানান, বাম কানের পাশেই গুলি লেগেছে। একই তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই শরীফুল ইসলাম।

ঢাকায় প্রায় চার দশক ধরে অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকতা করা পারভেজ খান বলেন, “এরা নিঃসন্দেহে খুব পেশাদার শ্যুটার। অপরাধজগতে অনেক সময় আকস্মিক কিছু ঘটে, তবে এটি সেই ধরনের ঘটনা নয়।

“একটি চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে আরেকটি চলন্ত যানবাহনে থাকা লক্ষ্যবস্তুকে নিখুঁতভাবে গুলি করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এই শ্যুটার তা করেছে, তাও মাত্র একটি গুলি ব্যবহার করে। প্রফেশনাল ছাড়া এটা সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক সময় অপেশাদার অপরাধীরা ছিনতাই বা অন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ে দুর্ঘটনাবশত টার্গেটকে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু ঘটায়—এ ধরনের ঘটনা বহুবার দেখা গেছে। কিন্তু এটি সেরকম কাকতালীয় কিছু নয়।”

‘জীবন সংকটে হাদি’

হাদির এক সহযোদ্ধা জানান, জুমার নামাজের পর তাদের লিফলেট বিলির কর্মসূচি ছিল। লিফলেট বিতরণ শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্র হয়ে দুপুরের খাবার ও আলোচনা করার পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে হাদির ওপর হামলার খবর আসে।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান হাদির অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে জানান, তাকে ‘লাইফ সাপোর্টে’ নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলের এফসিপিএস প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক সাব্বির হোসেন সাগর ফেসবুকে লেখেন, “হাদি ভাইয়ের জিসিএস-৩, বাইল্যাটারাল পিউপিল ডাইলেটেড। মেডিকেলের ভাষায় যেটা আসলে ব্রেইন ডেথ।”

নিউজটি শেয়ার করুন

রিকশায় থাকা হাদিকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে গুলি

আপডেট সময় : ১১:০১:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫

সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশায় ছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি। তার পেছনেই আসছিল একটি মোটরসাইকেল। চলন্ত রিকশার পাশে এসে সেই মোটরসাইকেল থেকেই হাদির দিকে গুলি ছোড়া হয়।

গুলিটি হাদির কানের পাশ দিয়ে মাথায় বিদ্ধ হওয়ায় তার জীবন এখন গভীর সংকটে রয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট রোডে হাদির ওপর হামলা হয়। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বিকাল ৫টায় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “তার মাথার ভেতরে গুলি রয়েছে। বর্তমানে অপারেশন থিয়েটারে তার সার্জারি চলছে।”

তিনি আরও জানান, হাদিকে ‘লাইফ সাপোর্টে’ রাখা হয়েছে।

ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বক্স কালভার্ট সড়ক দিয়ে রিকশাটি যাওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেল খুব কাছ ঘেঁষে চলে। এক পর্যায়ে মোটরসাইকেলের আরোহী অস্ত্র বের করে রিকশার একেবারে সন্নিকটে গুলি ছোড়েন।

শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় যানবাহন ছিল তুলনামূলক কম। ফাঁকা রাস্তায় মোটরসাইকেলটি দ্রুতগতিতে সরে যায়।

হাদির সহযোদ্ধারা জানান, তারা তাকে সেই রিকশাতেই হাসপাতালে নিয়ে যান। ঢাকা মেডিকেলে তারা বলেন, “একটি মাত্র গুলিই করা হয়েছে, সেটাই হাদির মাথায় লেগেছে।”

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডের ডিআর টাওয়ারের সামনে হাদিকে গুলি করা হয়। তিনি বলেন, “কী কারণে বা কারা তাকে গুলি করেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। অপরাধীদের শনাক্তে আমরা কাজ করছি।”

ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ডিআর টাওয়ারের আনসার সদস্য ইমরান হোসেন হৃদয় বলেন, চাকা ফেটে যাওয়ার মতো শব্দ শুনে তিনি ভবনের বাইরে আসেন। তখন দেখেন রিকশায় একজন গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে আছেন, অন্যরা তাকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন।

হাদিকে হাসপাতালে আনা একজন জানান, বাম কানের পাশেই গুলি লেগেছে। একই তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই শরীফুল ইসলাম।

ঢাকায় প্রায় চার দশক ধরে অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকতা করা পারভেজ খান বলেন, “এরা নিঃসন্দেহে খুব পেশাদার শ্যুটার। অপরাধজগতে অনেক সময় আকস্মিক কিছু ঘটে, তবে এটি সেই ধরনের ঘটনা নয়।

“একটি চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে আরেকটি চলন্ত যানবাহনে থাকা লক্ষ্যবস্তুকে নিখুঁতভাবে গুলি করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এই শ্যুটার তা করেছে, তাও মাত্র একটি গুলি ব্যবহার করে। প্রফেশনাল ছাড়া এটা সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক সময় অপেশাদার অপরাধীরা ছিনতাই বা অন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ে দুর্ঘটনাবশত টার্গেটকে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু ঘটায়—এ ধরনের ঘটনা বহুবার দেখা গেছে। কিন্তু এটি সেরকম কাকতালীয় কিছু নয়।”

‘জীবন সংকটে হাদি’

হাদির এক সহযোদ্ধা জানান, জুমার নামাজের পর তাদের লিফলেট বিলির কর্মসূচি ছিল। লিফলেট বিতরণ শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্র হয়ে দুপুরের খাবার ও আলোচনা করার পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে হাদির ওপর হামলার খবর আসে।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান হাদির অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে জানান, তাকে ‘লাইফ সাপোর্টে’ নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলের এফসিপিএস প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক সাব্বির হোসেন সাগর ফেসবুকে লেখেন, “হাদি ভাইয়ের জিসিএস-৩, বাইল্যাটারাল পিউপিল ডাইলেটেড। মেডিকেলের ভাষায় যেটা আসলে ব্রেইন ডেথ।”