মৃত অবস্থায়ও হাতকড়া, নুরুল মজিদ হুমায়ুনের মৃত্যু চিকিৎসা অবহেলায়?
জানাজায় মানুষের ঢল
- আপডেট সময় : ০৪:০৮:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / 166
নরসিংদীতে দ্বিতীয় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে চির শায়িত হয়েছেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও নরসিংদী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় মনোহরদী উপজেলার শুকুর মাহমুদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযা শেষে ব্রাহ্মণহাটা গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। জানাজায় সাধারণ মানুষের ঢল নামে। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এলাকায় কোন মাইকিং করতে না দেয়ার পরেও জননেতা নুরুল মজিদ হুমায়ুনের জানাযায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন।।
এর আগে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। পরে রাজধানীর আজাদ মসজিদে তার প্রথম জানাযা সম্পন্ন হয়।
৭৫ বছর বয়সী সাবেক শিল্পমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটলে কারাগার থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর,শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টার দিকে তিনি মারা যান। চিকিৎসারত, এমনকি মৃত্যুর পর তাঁর হাতেও হাতকড়া পরিয়ে রাখাকে দেখা যায়।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশান থেকে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই ছিলেন। কারাগারেই তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। একটি সুরক্ষিত এলাকার মধ্যে কীভাবে মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে অবহেলা করা হয়েছে।
সাংবাদিক আনিস আলমগীর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ভাবির কাছে দুপুরেই শুনলাম তার চিকিৎসা নিয়ে জেল কর্তৃপক্ষের তালবাহানা এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর পিজি হাসপাতাল যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে ফেরত পাঠানো তার মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করেছে। শেষমেষ উপায় না পেয়ে জেল কর্তৃপক্ষ তাকে পাঠায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, যেখানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাজনীতির বাইরে হুমায়ূন ভাই ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী এবং মুক্তিযোদ্ধা। এই মৃত্যু নির্মমভাবে মনে করিয়ে দিল—রাষ্ট্র যদি চিকিৎসা ও মানবিকতার দায়িত্ব এড়িয়ে যায়, তবে আজ হুমায়ুন ভাই, কাল অন্য কারও; এমন ভাগ্যই অপেক্ষা করছে সবার জন্য।’
সাংবাদিক শরিফুল হাসান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যুদ্ধের ময়দানে যে শত্রুকে আপনি পরাজিত করতে চান, অসুস্থ, আহত বা বন্দি হলে তারও সুচিকিৎসা পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। আর এই দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধা সাবেক মন্ত্রী ৭৫ বছরে একজন প্রবীণ যথাযথ চিকিৎসা তো পেলেনই না উল্টো মৃত্যুর আগে এমনকি মরে যাবার পরেও হাতকড়া খোলা হয় না! আফসোস বাংলাদেশ মানবাধিকার আর আইনের শাসনের দিকে হাঁটলো না! সরকারের নীতি নির্ধারকদের কাছে অনুরোধ, অসুস্থদের অন্তত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।’
কারা অধিদপ্তরের এক বার্তায় জানানো হয়েছে, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় । বার্তায় উল্লেখ করা হয়, নূরুল মজিদ মাহমুদ ‘আনকন্ট্রোলড বাওয়েল অ্যান্ড ব্লাডার’ সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রোববার বিকেলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই সোমবার সকালে তিনি মারা যান।
নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন নরসিংদী-৪ মনোহরদী বেলাব আসন থেকে পাঁচ বার সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো নরসিংদী-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয়বার শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধসহ তৎকালীন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনার পর তিনি যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

















