বাংলাদেশসহ তিন দেশে আইইএলটিএস প্রতারণা, ব্রিটেনে ভিসা জালিয়াতির আশঙ্কা
- আপডেট সময় : ০৫:৩৪:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 76
বাধ্যতামূলক ইংরেজি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া সত্ত্বেও হাজারো শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য অভিবাসী ব্রিটেনে ভিসা পেয়েছেন—এমন একটি বড় ধরনের মার্কিং–ত্রুটি উদঘাটিত হয়েছে। ব্রিটিশ কাউন্সিল পরিচালিত আন্তর্জাতিক ইংরেজি ভাষা পরীক্ষা আইইএলটিএস–এ ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার পরীক্ষার্থী ভুল স্কোর পেয়েছেন বলে জানা গেছে। পরীক্ষার ফল ভুলভাবে বেশি দেখানো হওয়াই এর প্রধান কারণ।
আইইএলটিএস কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘প্রযুক্তিগত সমস্যার’ কারণে লিসেনিং ও রিডিং অংশের কিছু প্রশ্নে ত্রুটি ঘটে। তাদের দাবি—এটি মোট পরীক্ষার প্রায় এক শতাংশকে প্রভাবিত করেছে, যা সংখ্যায় প্রায় ৭৮ হাজার পরীক্ষার্থী। এই ভুল দুই বছরেরও বেশি সময় অজানা থাকায় অনেকেই ভুল স্কোর পেয়ে শিক্ষার্থী কিংবা কর্মী ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন।

ইংরেজি দক্ষতার ঘাটতি নিয়ে ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যসেবাখাতে আগে থেকেই উদ্বেগ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মতে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রায় ৭০ শতাংশের ভাষাগত দক্ষতা প্রত্যাশিত মানে পৌঁছায় না। এনএইচএস–এর কোরোনাররা সতর্ক করেছেন, দুর্বল ইংরেজি জানা স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীর নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং অতীতে এ ধরনের ভুলে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এক কেয়ার–ওয়ার্কার “breathing” ও “bleeding”—এর পার্থক্য বুঝতে না পারায় জরুরি মুহূর্তে বড় ভুল হয়ে যায়।
এদিকে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও চীনে আইইএলটিএস পরীক্ষায় প্রতারণার প্রমাণ মিলেছে। বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রশ্ন সংগ্রহ করে £১,০০০ থেকে £২,৫০০–এ বিক্রির অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভিয়েতনামে প্রশ্নফাঁসের সন্দেহে শেষ মুহূর্তে একটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বদলাতে বাধ্য হয় ব্রিটিশ কাউন্সিল। ভিসা জালিয়াতির ঝুঁকি বিবেচনায় যুক্তরাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী নিয়োগ স্থগিত করেছে।
শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিল্প বলেন, “ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে প্রায় দশ লাখ মানুষ ইংরেজি ভালোভাবে বলতে পারেন না। এখন জানা যাচ্ছে প্রায় ৭৮,০০০ জন ভুল স্কোর পেয়ে ভিসা পেয়েছেন। যারা ভুলভাবে ভিসা পেয়েছেন—তাদের অপসারণ করতে হবে।” তার মতে, ইংরেজি না জানলে অভিবাসীরা সমাজে একীভূত হতে ব্যর্থ হয় এবং রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের নতুন স্কোর পাঠিয়েছে এবং ক্ষমা চেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ভবিষ্যতে এ ধরনের ত্রুটি রোধে মান নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করা হয়েছে। তবে কোভিড–কালে নেওয়া সরকারি ঋণের £১৯৭ মিলিয়ন এখনো পরিশোধ করতে সংগ্রাম করছে তারা; ভুল স্কোরের ক্ষতিপূরণ দাবি উঠলে আর্থিক চাপ আরও বাড়বে।
ইংরেজি পরীক্ষার জন্য £৮১৬ মিলিয়ন মূল্যের নতুন পাঁচ বছরের চুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস। এতে ব্রিটিশ কাউন্সিল ছাড়াও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবে। আইইএলটিএস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে—বর্তমান পরীক্ষাগুলোতে আর কোনো সমস্যা নেই এবং পরীক্ষার মান ধরে রাখতে কঠোর ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ



















