প্লট দুর্নীতির মামলায় টিউলিপ দোষী সাব্যস্ত, আইনজীবীর অভিযোগ: কোনো প্রামাণিক নথি উপস্থাপন করেনি দুদক
- আপডেট সময় : ০১:৫২:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 44
ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে বাংলাদেশের একটি দুর্নীতি মামলায় দোষী ঘোষণা করে ঢাকার একটি আদালত দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। পূর্বাচলে টিউলিপের মা শেখ রেহানাকে বরাদ্দ দেওয়া ১০ কাঠার একটি প্লট নিয়ে করা দুর্নীতির মামলার রায় সোমবার (১ ডিসেম্বর) ঘোষণা করেন ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম।
এ মামলায় শেখ রেহানা সাত বছরের কারাদণ্ড পান এবং টিউলিপের খালা, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। অন্য আসামিদেরও সমান মেয়াদের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপারের কাছ থেকে লন্ডনে সাত লাখ পাউন্ড দামের ফ্ল্যাট ‘উপহার’ পাওয়ার খবর প্রকাশ্যে এলে সমালোচনার মুখে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে সিটি মিনিস্টারের পদ ছাড়েন টিউলিপ সিদ্দিক।
এর কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগেও টিউলিপের নাম ওঠে। তখন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে টিউলিপ ও তার বোনের পাওয়া ‘উপহারের’ ফ্ল্যাট নিয়েও তীব্র আলোচনা শুরু হয়।
গুলশানে মা-বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি ফ্ল্যাট টিউলিপ ২০১৫ সালে তার বোন রূপন্তীর কাছে হস্তান্তর করেন। তবে সেই হস্তান্তরে ব্যবহৃত নোটারি তদন্তে ‘ভুয়া’ বলে উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে দুদকের মামলায় টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে এর প্রতিক্রিয়ায় গত এপ্রিলে তার আইনজীবী অভিযোগ করেন—দুদক বলেছিল ‘প্রামাণিক নথির ভিত্তিতে’ তদন্ত চলছে, অথচ কোনো প্রামাণিক নথিই উপস্থাপন করা হয়নি।
এছাড়া দুদকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো ‘সাড়া’ পাওয়া যায়নি বলেও আইনজীবীরা অভিযোগ করেন। তাদের বক্তব্য—এতে টিউলিপের ‘ন্যায়বিচারের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন’ হয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ২৩ এপ্রিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “টিউলিপ যদি নির্দোষ হন, তবে কেন পদত্যাগ করলেন?
“কেন তিনি তার আইনজীবীদের দুদকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেন? দুদক তার আইনজীবীকে ইমেইলে অনুরোধ জানিয়েছে যাতে তিনি বাংলাদেশে মামলার আইনি প্রক্রিয়ায় অংশ নেন।”
গত বছরের মাঝামাঝি যুক্তরাজ্যে নিরঙ্কুশ জয়ে সরকার গঠন করে লেবার পার্টি, যেখানে আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান টানা চারবারের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকীর মেয়ে টিউলিপ ২০১৫ সালে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। পরবর্তী দুই নির্বাচন ২০১৭ ও ২০১৯ সালেও তিনি পুনর্নির্বাচিত হন।
লন্ডনের মিচামে জন্ম নেওয়া টিউলিপ শৈশব কাটিয়েছেন বাংলাদেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে। তিনি লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্মেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতির অন্য তিন মামলায় গত বৃহস্পতিবার আরেকটি আদালত টিউলিপের খালা শেখ হাসিনাকে মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল পান পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড।
এর আগে গত ১৭ নভেম্বর জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমনচেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
পূর্বাচলের প্লট দুর্নীতির আরও দুটি মামলা এখনো আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। সেখানে শেখ হাসিনা ও টিউলিপের পাশাপাশি টিউলিপের ভাই রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীও আসামির তালিকায় আছেন।
















