অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তাঁরা দুজনই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত ছিলেন মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ। দায়িত্বের অংশ হিসেবে মাহফুজ আলম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ছিলেন। আর আসিফ মাহমুদ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
পদত্যাগের বিষয়ে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে চান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন করব। এটা স্পষ্টভাবেই বলা যায়।’ নিজের পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে যথাসময়ে জানানো হবে।
এর আগে আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, তিনি ঢাকায় নির্বাচন করবেন। গত ৯ নভেম্বর তিনি ভোটার এলাকা পরিবর্তন করে ধানমন্ডিতে ভোটার হওয়ার আবেদন করেন। এরপর ঢাকা-১০ আসন (ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ) থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন বলে আলোচনা শুরু হয়।
এ সময় বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে অথবা দলটি থেকে আসিফ মাহমুদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনার কথাও আলোচনায় আসে। যদিও ৪ ডিসেম্বর বিএনপি দ্বিতীয় দফায় যে ৩৬টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে, সেখানে ঢাকা-১০ আসনও রয়েছে। ফলে আসিফ মাহমুদ স্বতন্ত্র নাকি কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে নির্বাচন করবেন এবং তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান কী হবে—সে বিষয়ে এখনও স্পষ্টতা নেই।
এর আগে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমি নির্বাচন করব। এটা স্পষ্টভাবেই বলা যায়। কিন্তু কোথা থেকে করব, কোন দল থেকে করব, সেটা পরবর্তী বিশ্লেষণ।’
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। শুরুতে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল ২৩ জন। এবার সেখান থেকে দুইজন ছাত্র প্রতিনিধি পদত্যাগ করলেন।
উল্লেখ্য, সরকার গঠনের সময় উপদেষ্টা পরিষদে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন মো. নাহিদ ইসলাম। পরে তিনি চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক হন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগেই এনসিপি গঠিত হয়।
মাহফুজ আলম প্রথমে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান গত বছরের ২৮ আগস্ট। পরবর্তীতে ১০ নভেম্বর তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন, যদিও তখন তাঁকে কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। নাহিদ ইসলাম পদত্যাগ করার পর মাহফুজ আলমকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অন্যদিকে আসিফ মাহমুদ শুরুতে শ্রম মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। গত বছরের নভেম্বরে প্রয়াত এ এফ হাসান আরিফকে সরিয়ে তাঁকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।