তারেক রহমানও বললেন : জনমনে প্রশ্ন—যথাসময়ে নির্বাচন হবে কি না
- আপডেট সময় : ১১:১৮:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
- / 103
রবিবার বিএনপির প্রবাসী নেতা–কর্মীদের প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্যপদ গ্রহণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দলের ওয়েবসাইটে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধন করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আদৌ হবে কি না—এ নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
তারেক রহমান জানান, বিএনপি ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এবং প্রার্থী বাছাইও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। “রাজপথে যারা ছিলেন, তাদেরও কিছু আসন ছাড়া হবে,” যোগ করেন তিনি।
রবিবার (২ নভেম্বর) রাতে গুলশানের হোটেল লেকশোরে এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এই পেমেন্ট গেটওয়ের উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন, “পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচারের শাসনামলে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জনগণের কোনো আগ্রহ ছিল না। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে জনমনে প্রশ্ন জাগছে—যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?”
‘এমন তো হওয়ার কথা ছিল না’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনগণের মনে সৃষ্ট সংশয়–সন্দেহ গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সংকটে ফেলতে পারে।”
বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত ও পরাজিত স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও এখন বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংগঠিত অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক।”
বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
‘প্রার্থী মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত’
তিনি বলেন, “গণতন্ত্রকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। এর অংশ হিসেবে তিনশ আসনে দলীয় বা বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় আছি।”
প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করাটা স্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। “প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়,” বলেন তিনি।
রাজপথের ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে’ যারা পাশে ছিলেন, তাদেরও কিছু আসনে বিএনপি সমর্থন দেবে জানিয়ে তারেক বলেন, “এই বাস্তবতায় কিছু আসনে হয়তো বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হবেন।”
দলের সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত হিসেবে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।”
তিনি আরও বলেন, “শিগগিরই বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তাকে বিজয়ী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।”
‘গুপ্ত স্বৈরাচার’ নিয়ে সতর্কতা
“চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওঁৎ পেতে আছে,” সতর্ক করে বলেন তারেক রহমান। “তাই নিজেদের মধ্যে রেষারেষি, বিরোধ এমন পর্যায়ে নেওয়া ঠিক হবে না, যাতে প্রতিপক্ষ সেই সুযোগ নিতে পারে।”
তিনি বলেন, “একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য রক্ষায় সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে এসেছে—গণতান্ত্রিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকেও সহযোগিতা করে আসছে।”
এরপরও একের পর এক শর্ত যুক্ত করে গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এ নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”
তারেক রহমান আরও বলেন, “কৌশল ও অপকৌশলের পার্থক্য না বুঝলে কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করতে হতে পারে—গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর এটা মনে রাখা দরকার।”
জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার অবদান প্রশ্নবিদ্ধ হয়—এমন কোনো আচরণ না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখুন। আমি সেই স্লোগানটি উচ্চারণ করতে চাই—‘ভোট দিলে ধানের শীষে, দেশ গড়ব মিলে–মিশে।’”
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রবাসী ভোটের প্রক্রিয়া আরও সহজ করার আশ্বাসও দেন তিনি।
নারী ও শিশুর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, “জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী, অথচ তাদের নিরাপত্তা নিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজ উদাসীন। নারী ও শিশুর নিরাপত্তাহীন সমাজ কখনো সভ্য সমাজ হতে পারে না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় সামাজিক উদ্যোগ এখন আমার ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত জরুরি মনে হচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্বাগত বক্তব্য দেন দলের কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত।
দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারির সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান এবং সহ–সম্পাদক সাইফ আলী খান।
















