ঢাকা ০৫:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

তামিলনাড়ুর বিজয় থালাপতির সমাবেশে কীভাবে মারা পড়লেন ৩৯ জন

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১১:২৬:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 161

বক্তব্য রাখছেন বিজয় থালাপাতি

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

তামিলনাড়ুর কারুরে পদদলনের ঘটনায় ১০ শিশুসহ ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব ছিল। আর সেই দায় এসে পড়ছে চলচ্চিত্র তারকা ও তামিলাগা ভেট্রি কাজাগমের (টিভিকে) নেতা বিজয় থালাপতির ওপর।

তামিলনাড়ুতে চলচ্চিত্র অভিনেতাদের প্রতি ভক্তদের ঈশ্বরতুল্য ভক্তি নতুন কিছু নয়। এমজি রামচন্দ্রন (এমজিআর), রজনীকান্তের মতোই হালের অ্যাকশন হিরো বিজয়ও সেই জায়গায় পৌঁছেছেন। এমজিআর যেমন সিনেমার জনপ্রিয়তাকে রাজনৈতিক শক্তিতে রূপ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, বিজয়ও সেই পথেই হাঁটছেন। তবে শনিবার কারুরে তার সমাবেশে ঘটে যাওয়া পদদলনের ঘটনা রাজনীতির নতুন যাত্রাপথে বড় ধাক্কা দিল।

আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠেয় রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে দল গড়ে প্রচারে নেমেছেন বিজয়।

কী ঘটেছিল?

আগস্টে সফল সমাবেশের পর শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) কারুরে টিভিকে সমাবেশ ডাকে। সেখানে ভিড়ের চাপে পদদলনে প্রাণ যায় কমপক্ষে ৩৯ জনের, আহত হয় শতাধিক।

তামিলনাড়ুর পুলিশ মহাপরিচালক জি ভেঙ্কটরমন জানান, আয়োজকরা ১০ হাজার মানুষের সমাগম আশা করেছিল। কিন্তু উপস্থিত হয় ২৭ হাজার। সমাবেশ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিল মাত্র ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক, যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

সমাবেশের আগে থেকেই হাজারো মানুষ অবস্থান করছিল কারুরে। বিজয় ছাদখোলা বাসে নামাক্কাল থেকে সমর্থকদের নিয়ে আসছিলেন। পথে ও সমাবেশস্থলে ভক্তদের ভিড় বাড়তে থাকে। কেউ কেউ গাছের ডালে চড়ে তাকে দেখার চেষ্টা করেন, কিন্তু ডাল ভেঙে পড়ায় বিশৃঙ্খলা আরও বেড়ে যায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, বিশৃঙ্খলার মাঝেই বিজয় বক্তৃতা চালিয়ে যাচ্ছেন। গরমে অজ্ঞান হওয়া ভক্তদের দিকে তিনি পানির বোতল ছুড়ে দিচ্ছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে আহ্বান জানাচ্ছেন।

কেন এত প্রাণহানি?

ভেঙ্কটরমনের মতে, সমাবেশে বিজয়ের সাত ঘণ্টা দেরি পরিস্থিতি জটিল করে তোলে। টিভিকে তাদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে ঘোষণা দিয়েছিল, বিজয় দুপুর ১২টার মধ্যে পৌঁছাবেন। ফলে দুপুর থেকেই ভিড় জমতে থাকে। অথচ অনুমতি ছিল বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। বিজয় পৌঁছান সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে।

“তীব্র রোদে খাবার ও পানির অভাব ছিল,” বলেন ভেঙ্কটরমন।

ভেলুচামিপুরমের বাসিন্দা দুর্গাদেবী ওই সমাবেশ এসেছিলেন সকাল বেলায়। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, অল্পের জন্য তিনি শ্বাসরুদ্ধকর ভিড় থেকে প্রাণে বেঁচেছেন। “ভিড়টা সকালের দিকে মোটামুটি ছিল। বিজয়ের আসতে দেরি হচ্ছিল, ফলে আস্তে আস্তে ভিড় বাড়তে থাকে। গ্রামের বাইরে থেকেও বিপুল মানুষ এসেছিল।

এছাড়া গতকালের সমাবেশের প্রচারণার কারণে এখানকার দোকান এবং রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ ছিল। ফলে বাইরে থেকে আসা মানুষেরা খাবার বা পানি পাননি।”

“সন্ধ্যায় সমাবেশ শুরুর আগেই অনেকে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল,” বলেন দুর্গাদেবী।

তিনি বলছিলেন, “সকাল থেকে যারা এসেছিল, কেউ আর ওখান থেকে বের হয়নি। সময় বাড়ার সাথে সাথে সমাবেশে মানুষের সংখ্যা বাড়ছিল, সন্ধ্যায় সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আর তখনি পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে।”

কেন সমালোচনা?

বিজয় ও তার দলের নেতাদের জানা ছিল, তাকে ঘিরে ভক্তদের উন্মাদনা তৈরি হবে, ফলে পদদলনের ঝুঁকি থাকবেই। কিন্তু সঠিক প্রস্তুতির অভাবেই প্রাণহানি ঘটেছে বলে অভিযোগ।

বিজয়ের ঘনিষ্ঠ একজন সহযোগী ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতেই বলেছিলেন, ভক্তদের উন্মাদনা পদদলনের দিকে নিয়ে যেতে পারে—এটাই ছিল তাদের বড় চ্যালেঞ্জ।

চেন্নাইয়ের প্রবীণ সাংবাদিক টি আর জওহর লিখেছেন, “আমি বিজয়কে ক্ষয়ক্ষতি ও বিপদের ঝুঁকি ছাড়া অন্য কোনোভাবে দেখতে পারিনি। ভক্তদের উন্মত্ততার কারণে তিনি জনশৃঙ্খলার জন্য ঝুঁকি হয়ে উঠেছিলেন।”

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অরুণা জগদীসানের নেতৃত্বে তদন্তে দেখা হবে, বিজয় থালাপতি কি ভিড় বাড়ানোর কৌশল হিসেবে দেরি করেছিলেন কি না।

কারুরের মানুষ ক্ষুব্ধ, কারণ দুর্ঘটনার মাত্রা জানা সত্ত্বেও বিজয় থালাপতি ঘটনাস্থল ছেড়ে চেন্নাই ফিরে যান।

উল্লেখ্য, গত জুনে বেঙ্গালুরুতে একটি সমাবেশে পদদলনে ১১ জন, মে মাসে গোয়ায় ৬ জন, নয়াদিল্লি রেলস্টেশনে ১৮ জন এবং জানুয়ারিতে মহাকুম্ভে ৩৭ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।

বিজয়ের প্রতিক্রিয়া

রবিবার এক্স-এ দেওয়া পোস্টে বিজয় লিখেছেন, “গতকাল কারুরে যা ঘটেছে, তা কল্পনারও বাইরে। আমার হৃদয় ভেঙে গেছে; আমি অসহনীয় শোক ও বেদনায় আছি। কারুরে যারা আমার ভাই-বোনদের হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। হাসপাতালে যারা চিকিৎসাধীন, তাদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করছি।”

তিনি নিহতদের প্রত্যেক পরিবারের জন্য ২০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেন।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, এনডিটিভি

নিউজটি শেয়ার করুন

তামিলনাড়ুর বিজয় থালাপতির সমাবেশে কীভাবে মারা পড়লেন ৩৯ জন

আপডেট সময় : ১১:২৬:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তামিলনাড়ুর কারুরে পদদলনের ঘটনায় ১০ শিশুসহ ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব ছিল। আর সেই দায় এসে পড়ছে চলচ্চিত্র তারকা ও তামিলাগা ভেট্রি কাজাগমের (টিভিকে) নেতা বিজয় থালাপতির ওপর।

তামিলনাড়ুতে চলচ্চিত্র অভিনেতাদের প্রতি ভক্তদের ঈশ্বরতুল্য ভক্তি নতুন কিছু নয়। এমজি রামচন্দ্রন (এমজিআর), রজনীকান্তের মতোই হালের অ্যাকশন হিরো বিজয়ও সেই জায়গায় পৌঁছেছেন। এমজিআর যেমন সিনেমার জনপ্রিয়তাকে রাজনৈতিক শক্তিতে রূপ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন, বিজয়ও সেই পথেই হাঁটছেন। তবে শনিবার কারুরে তার সমাবেশে ঘটে যাওয়া পদদলনের ঘটনা রাজনীতির নতুন যাত্রাপথে বড় ধাক্কা দিল।

আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠেয় রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে দল গড়ে প্রচারে নেমেছেন বিজয়।

কী ঘটেছিল?

আগস্টে সফল সমাবেশের পর শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) কারুরে টিভিকে সমাবেশ ডাকে। সেখানে ভিড়ের চাপে পদদলনে প্রাণ যায় কমপক্ষে ৩৯ জনের, আহত হয় শতাধিক।

তামিলনাড়ুর পুলিশ মহাপরিচালক জি ভেঙ্কটরমন জানান, আয়োজকরা ১০ হাজার মানুষের সমাগম আশা করেছিল। কিন্তু উপস্থিত হয় ২৭ হাজার। সমাবেশ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিল মাত্র ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক, যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

সমাবেশের আগে থেকেই হাজারো মানুষ অবস্থান করছিল কারুরে। বিজয় ছাদখোলা বাসে নামাক্কাল থেকে সমর্থকদের নিয়ে আসছিলেন। পথে ও সমাবেশস্থলে ভক্তদের ভিড় বাড়তে থাকে। কেউ কেউ গাছের ডালে চড়ে তাকে দেখার চেষ্টা করেন, কিন্তু ডাল ভেঙে পড়ায় বিশৃঙ্খলা আরও বেড়ে যায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, বিশৃঙ্খলার মাঝেই বিজয় বক্তৃতা চালিয়ে যাচ্ছেন। গরমে অজ্ঞান হওয়া ভক্তদের দিকে তিনি পানির বোতল ছুড়ে দিচ্ছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে আহ্বান জানাচ্ছেন।

কেন এত প্রাণহানি?

ভেঙ্কটরমনের মতে, সমাবেশে বিজয়ের সাত ঘণ্টা দেরি পরিস্থিতি জটিল করে তোলে। টিভিকে তাদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে ঘোষণা দিয়েছিল, বিজয় দুপুর ১২টার মধ্যে পৌঁছাবেন। ফলে দুপুর থেকেই ভিড় জমতে থাকে। অথচ অনুমতি ছিল বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। বিজয় পৌঁছান সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে।

“তীব্র রোদে খাবার ও পানির অভাব ছিল,” বলেন ভেঙ্কটরমন।

ভেলুচামিপুরমের বাসিন্দা দুর্গাদেবী ওই সমাবেশ এসেছিলেন সকাল বেলায়। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, অল্পের জন্য তিনি শ্বাসরুদ্ধকর ভিড় থেকে প্রাণে বেঁচেছেন। “ভিড়টা সকালের দিকে মোটামুটি ছিল। বিজয়ের আসতে দেরি হচ্ছিল, ফলে আস্তে আস্তে ভিড় বাড়তে থাকে। গ্রামের বাইরে থেকেও বিপুল মানুষ এসেছিল।

এছাড়া গতকালের সমাবেশের প্রচারণার কারণে এখানকার দোকান এবং রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ ছিল। ফলে বাইরে থেকে আসা মানুষেরা খাবার বা পানি পাননি।”

“সন্ধ্যায় সমাবেশ শুরুর আগেই অনেকে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল,” বলেন দুর্গাদেবী।

তিনি বলছিলেন, “সকাল থেকে যারা এসেছিল, কেউ আর ওখান থেকে বের হয়নি। সময় বাড়ার সাথে সাথে সমাবেশে মানুষের সংখ্যা বাড়ছিল, সন্ধ্যায় সেটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আর তখনি পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে।”

কেন সমালোচনা?

বিজয় ও তার দলের নেতাদের জানা ছিল, তাকে ঘিরে ভক্তদের উন্মাদনা তৈরি হবে, ফলে পদদলনের ঝুঁকি থাকবেই। কিন্তু সঠিক প্রস্তুতির অভাবেই প্রাণহানি ঘটেছে বলে অভিযোগ।

বিজয়ের ঘনিষ্ঠ একজন সহযোগী ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতেই বলেছিলেন, ভক্তদের উন্মাদনা পদদলনের দিকে নিয়ে যেতে পারে—এটাই ছিল তাদের বড় চ্যালেঞ্জ।

চেন্নাইয়ের প্রবীণ সাংবাদিক টি আর জওহর লিখেছেন, “আমি বিজয়কে ক্ষয়ক্ষতি ও বিপদের ঝুঁকি ছাড়া অন্য কোনোভাবে দেখতে পারিনি। ভক্তদের উন্মত্ততার কারণে তিনি জনশৃঙ্খলার জন্য ঝুঁকি হয়ে উঠেছিলেন।”

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অরুণা জগদীসানের নেতৃত্বে তদন্তে দেখা হবে, বিজয় থালাপতি কি ভিড় বাড়ানোর কৌশল হিসেবে দেরি করেছিলেন কি না।

কারুরের মানুষ ক্ষুব্ধ, কারণ দুর্ঘটনার মাত্রা জানা সত্ত্বেও বিজয় থালাপতি ঘটনাস্থল ছেড়ে চেন্নাই ফিরে যান।

উল্লেখ্য, গত জুনে বেঙ্গালুরুতে একটি সমাবেশে পদদলনে ১১ জন, মে মাসে গোয়ায় ৬ জন, নয়াদিল্লি রেলস্টেশনে ১৮ জন এবং জানুয়ারিতে মহাকুম্ভে ৩৭ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।

বিজয়ের প্রতিক্রিয়া

রবিবার এক্স-এ দেওয়া পোস্টে বিজয় লিখেছেন, “গতকাল কারুরে যা ঘটেছে, তা কল্পনারও বাইরে। আমার হৃদয় ভেঙে গেছে; আমি অসহনীয় শোক ও বেদনায় আছি। কারুরে যারা আমার ভাই-বোনদের হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। হাসপাতালে যারা চিকিৎসাধীন, তাদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করছি।”

তিনি নিহতদের প্রত্যেক পরিবারের জন্য ২০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেন।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, এনডিটিভি