ঢাকা ০৫:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হলে কার লাভ, কার ক্ষতি

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৫:২১:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫
  • / 206

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার‌্যালয়

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর সংঘাত-সহিংসতা এবং নুরুল হক নুরের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার ঘটনাকে ঘিরে রাজনীতিতে বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে— জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করলে কার সুবিধা হবে, আর কার ক্ষতি?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটানো হচ্ছে যাতে নির্বাচন বানচাল হয় অথবা নির্বাচন হলেও নির্দিষ্ট পক্ষ বিশেষ সুবিধা নিতে পারে।

অনেকে মনে করছেন, জাপা নিষিদ্ধ হলে জামায়াতে ইসলামীই বেশি লাভবান হবে। কারণ আওয়ামী লীগ মাঠে নেই, ফলে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে জামায়াত। অন্য ইসলামি দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে তারা দরকষাকষির সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছাতে পারে।

যদি কোনো দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা অংশগ্রহণ স্বীকার না করে বর্জনের পথে যায়, তবে নির্বাচনে আর কোনো বিকল্প শক্তি অবশিষ্ট থাকবে না। সেক্ষেত্রে নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে এবং বিএনপিও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের ফাঁদে আটকে পড়বে।

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ করার দাবি নতুন নয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এ দাবি বহুবার উঠেছে। যদিও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জাপার ওপর এর প্রভাব পড়েনি। বরং তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

গত ২৯ আগস্ট কাকরাইলে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষ এবং নুরুল হক নুরের ওপর হামলার পর আবারও জাপাকে নিষিদ্ধের দাবি জোরদার হয়েছে।

এক পক্ষের মতে, টানা তিন মেয়াদ আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার সময়ে জাতীয় পার্টি তাদের সহযোগী ছিল। সমঝোতার মাধ্যমে বিরোধী দলের ভূমিকায় থেকেছে। অথচ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলেও জাপা বহাল রয়েছে। অভিযোগ আছে, আবারও রাষ্ট্রীয় সংস্থার মধ্যস্থতায় তাদের বিরোধী দল বানানোর চেষ্টা চলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগকে দীর্ঘ সময় সহযোগিতা করার কারণে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি যৌক্তিক। তারা বলেন, জাপা নিষিদ্ধ হলে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংকও ভেঙে যাবে এবং তার সুবিধা পাবে জামায়াত ও এনসিপির মতো দলগুলো। তুলনামূলকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি।

অন্যদিকে সুশীল সমাজের অনেকেই মনে করেন, কোনো দলকে চাপের মুখে নিষিদ্ধ করা হলে পরে তা সরকারের জন্য বুমেরাং হতে পারে। এতে নির্বাচন বানচালের সুযোগও তৈরি হতে পারে।

জাপাকে নিষিদ্ধের দাবি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার সময় থেকেই জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। এমনকি আওয়ামী লীগ ও জাপাসহ তাদের জোটসঙ্গী দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলের আবেদনও ইসিতে দেওয়া হয়।

সাম্প্রতিক সংঘর্ষে নুর গুরুতর আহত হওয়ার পর গণঅধিকার পরিষদ সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাপা নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম দিয়েছে। জুলাই মঞ্চের নেতারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাপার রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান অভিযোগ করেছেন, জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলে বসানোর চক্রান্ত চলছে এবং এ বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তাদের দরকষাকষি হচ্ছে।

নুরের ওপর হামলার পর জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ একাধিক সংগঠন কর্মসূচি পালন করেছে। অনেকে প্রকাশ্যে, কেউ ইঙ্গিতে জাপার ওপর নিষেধাজ্ঞা দাবি করেছে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলকে নিষিদ্ধের দাবি জানান। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টিও একই অপরাধে দোষী। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন হতে দেওয়া হবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিএনপি-জাপার প্রতিক্রিয়া

বিএনপি এ বিষয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে গত বছর মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, “রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা জনগণের সিদ্ধান্ত, আমাদের নয়।” বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানান, এ বিষয়ে দলীয় কোনো দিকনির্দেশনা নেই।

অধ্যাপক ড. সাহাবুল হক মনে করেন, ১৫ বছর আওয়ামী লীগের সহযোগী থাকার কারণে জাপাকে নিষিদ্ধ করার যথেষ্ট কারণ আছে। তবে অ্যাডভোকেট মনজিল মোর্শেদ বলেন, এখন যে কেউ দাবি তুললেই দল নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ উঠছে।

সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের মতে, কোনো ডিক্রি জারি করে নয়, বরং জনআন্দোলনের মাধ্যমে নিষিদ্ধের দাবি তোলা উচিত।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী অভিযোগ করেছেন, তাদের ওপর হামলার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটন এটিকে বড় ধরনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন।

সরকারের অবস্থান

সরকার সরাসরি কিছু না বললেও অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের আইনি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন— “জাতীয় পার্টি কেন নিষিদ্ধ হবে না?”

লাভ-ক্ষতি কার?

২০০৮ সালের সুষ্ঠু নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৪৮%, বিএনপি ৩২.৫০%, জাপা ৭.০৪% এবং জামায়াত ৪.৭০% ভোট।

বর্তমানে আওয়ামী লীগ কার্যত নির্বাচনের বাইরে। ফলে জাতীয় পার্টি অংশ নিলে তারা আওয়ামী লীগের ভোটের বড় অংশ পেতে পারে। কিন্তু জাপা নিষিদ্ধ হলে সেই ভোট অনিশ্চয়তায় পড়বে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমানের মতে, এতে জামায়াত ও এনসিপির মতো দলগুলো লাভবান হবে, আর ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি।

নির্বাচন বানচালের আশঙ্কা

অনেকে আশঙ্কা করছেন, জাপা নিষিদ্ধের দাবির আড়ালে নির্বাচনি পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা চলছে। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি— এ তিন পক্ষের অবস্থান পরস্পরবিরোধী। যদি জাপা না থাকে, তবে বিএনপি একা হয়ে পড়বে এবং নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

মনজিল মোর্শেদ সতর্ক করে বলেন, বড় জনগোষ্ঠীকে স্পেস না দিলে গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সেলিম মনে করেন, একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর চক্রান্ত চলছে।

ড. জাহেদ উর রহমানও একই কথা বলেছেন— “জাপাকে নিষিদ্ধ করার তৎপরতা স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, বরং নির্বাচনি পরিবেশ জটিল করার পরিকল্পনা।”

ঢাবির সাবেক শিক্ষক ফাহমিদুল ইসলাম মনে করেন, নুরের দল গণঅধিকার পরিষদকে হয়তো ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন— “কেন জামায়াত বা এনসিপি নয়, বরং গণঅধিকার পরিষদ জাপাকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এগিয়ে গেল?”

তার মতে, বিএনপি ও জামায়াত-এনসিপির টানাপোড়েনের মাঝখানে নুর রাজনৈতিক বলির পাঁঠা হয়ে উঠতে পারেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হলে কার লাভ, কার ক্ষতি

আপডেট সময় : ০৫:২১:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৫

জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর সংঘাত-সহিংসতা এবং নুরুল হক নুরের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার ঘটনাকে ঘিরে রাজনীতিতে বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে— জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করলে কার সুবিধা হবে, আর কার ক্ষতি?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটানো হচ্ছে যাতে নির্বাচন বানচাল হয় অথবা নির্বাচন হলেও নির্দিষ্ট পক্ষ বিশেষ সুবিধা নিতে পারে।

অনেকে মনে করছেন, জাপা নিষিদ্ধ হলে জামায়াতে ইসলামীই বেশি লাভবান হবে। কারণ আওয়ামী লীগ মাঠে নেই, ফলে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে জামায়াত। অন্য ইসলামি দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে তারা দরকষাকষির সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছাতে পারে।

যদি কোনো দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা অংশগ্রহণ স্বীকার না করে বর্জনের পথে যায়, তবে নির্বাচনে আর কোনো বিকল্প শক্তি অবশিষ্ট থাকবে না। সেক্ষেত্রে নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে এবং বিএনপিও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের ফাঁদে আটকে পড়বে।

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ করার দাবি নতুন নয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এ দাবি বহুবার উঠেছে। যদিও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও জাপার ওপর এর প্রভাব পড়েনি। বরং তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলই বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

গত ২৯ আগস্ট কাকরাইলে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষ এবং নুরুল হক নুরের ওপর হামলার পর আবারও জাপাকে নিষিদ্ধের দাবি জোরদার হয়েছে।

এক পক্ষের মতে, টানা তিন মেয়াদ আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার সময়ে জাতীয় পার্টি তাদের সহযোগী ছিল। সমঝোতার মাধ্যমে বিরোধী দলের ভূমিকায় থেকেছে। অথচ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলেও জাপা বহাল রয়েছে। অভিযোগ আছে, আবারও রাষ্ট্রীয় সংস্থার মধ্যস্থতায় তাদের বিরোধী দল বানানোর চেষ্টা চলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগকে দীর্ঘ সময় সহযোগিতা করার কারণে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি যৌক্তিক। তারা বলেন, জাপা নিষিদ্ধ হলে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংকও ভেঙে যাবে এবং তার সুবিধা পাবে জামায়াত ও এনসিপির মতো দলগুলো। তুলনামূলকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি।

অন্যদিকে সুশীল সমাজের অনেকেই মনে করেন, কোনো দলকে চাপের মুখে নিষিদ্ধ করা হলে পরে তা সরকারের জন্য বুমেরাং হতে পারে। এতে নির্বাচন বানচালের সুযোগও তৈরি হতে পারে।

জাপাকে নিষিদ্ধের দাবি

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার সময় থেকেই জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। এমনকি আওয়ামী লীগ ও জাপাসহ তাদের জোটসঙ্গী দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলের আবেদনও ইসিতে দেওয়া হয়।

সাম্প্রতিক সংঘর্ষে নুর গুরুতর আহত হওয়ার পর গণঅধিকার পরিষদ সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাপা নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম দিয়েছে। জুলাই মঞ্চের নেতারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাপার রাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান অভিযোগ করেছেন, জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলে বসানোর চক্রান্ত চলছে এবং এ বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তাদের দরকষাকষি হচ্ছে।

নুরের ওপর হামলার পর জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ একাধিক সংগঠন কর্মসূচি পালন করেছে। অনেকে প্রকাশ্যে, কেউ ইঙ্গিতে জাপার ওপর নিষেধাজ্ঞা দাবি করেছে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলকে নিষিদ্ধের দাবি জানান। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টিও একই অপরাধে দোষী। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন হতে দেওয়া হবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিএনপি-জাপার প্রতিক্রিয়া

বিএনপি এ বিষয়ে সরাসরি কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে গত বছর মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, “রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা জনগণের সিদ্ধান্ত, আমাদের নয়।” বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানান, এ বিষয়ে দলীয় কোনো দিকনির্দেশনা নেই।

অধ্যাপক ড. সাহাবুল হক মনে করেন, ১৫ বছর আওয়ামী লীগের সহযোগী থাকার কারণে জাপাকে নিষিদ্ধ করার যথেষ্ট কারণ আছে। তবে অ্যাডভোকেট মনজিল মোর্শেদ বলেন, এখন যে কেউ দাবি তুললেই দল নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ উঠছে।

সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের মতে, কোনো ডিক্রি জারি করে নয়, বরং জনআন্দোলনের মাধ্যমে নিষিদ্ধের দাবি তোলা উচিত।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী অভিযোগ করেছেন, তাদের ওপর হামলার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর সিকদার লোটন এটিকে বড় ধরনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন।

সরকারের অবস্থান

সরকার সরাসরি কিছু না বললেও অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের আইনি দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন— “জাতীয় পার্টি কেন নিষিদ্ধ হবে না?”

লাভ-ক্ষতি কার?

২০০৮ সালের সুষ্ঠু নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৪৮%, বিএনপি ৩২.৫০%, জাপা ৭.০৪% এবং জামায়াত ৪.৭০% ভোট।

বর্তমানে আওয়ামী লীগ কার্যত নির্বাচনের বাইরে। ফলে জাতীয় পার্টি অংশ নিলে তারা আওয়ামী লীগের ভোটের বড় অংশ পেতে পারে। কিন্তু জাপা নিষিদ্ধ হলে সেই ভোট অনিশ্চয়তায় পড়বে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমানের মতে, এতে জামায়াত ও এনসিপির মতো দলগুলো লাভবান হবে, আর ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি।

নির্বাচন বানচালের আশঙ্কা

অনেকে আশঙ্কা করছেন, জাপা নিষিদ্ধের দাবির আড়ালে নির্বাচনি পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা চলছে। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি— এ তিন পক্ষের অবস্থান পরস্পরবিরোধী। যদি জাপা না থাকে, তবে বিএনপি একা হয়ে পড়বে এবং নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

মনজিল মোর্শেদ সতর্ক করে বলেন, বড় জনগোষ্ঠীকে স্পেস না দিলে গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সেলিম মনে করেন, একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে নির্বাচনের সময়সূচি পেছানোর চক্রান্ত চলছে।

ড. জাহেদ উর রহমানও একই কথা বলেছেন— “জাপাকে নিষিদ্ধ করার তৎপরতা স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, বরং নির্বাচনি পরিবেশ জটিল করার পরিকল্পনা।”

ঢাবির সাবেক শিক্ষক ফাহমিদুল ইসলাম মনে করেন, নুরের দল গণঅধিকার পরিষদকে হয়তো ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন— “কেন জামায়াত বা এনসিপি নয়, বরং গণঅধিকার পরিষদ জাপাকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এগিয়ে গেল?”

তার মতে, বিএনপি ও জামায়াত-এনসিপির টানাপোড়েনের মাঝখানে নুর রাজনৈতিক বলির পাঁঠা হয়ে উঠতে পারেন।