ঢাকা ০৫:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

গোয়ালন্দে লাশ কবর থেকে তুলে আগুনে পুড়াল ‘তৌহিদী জনতা’

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৬:৫৫:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / 282

নুরাল পাগলের কবর ভাঙচুর করে আগুন

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলেছে ‘তৌহিদী জনতা’ নামধারী একদল লোক। তারা কবর গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর স্থাপনা আগুনে পুড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে আশপাশের বাড়িঘরেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) লাঠিসোটা হাতে স্লোগান দিতে দিতে একদল মুসল্লি ওই কবরে হামলা চালায়। স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কবরটি ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করা হচ্ছে এবং চারদিকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। এ সময় পুলিশের কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।

আরেকটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কবর থেকে নুরুল হকের মরদেহ তুলে আনা হচ্ছে। এরপর প্রাঙ্গণে দাউ দাউ আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান।

এর আগে গত ২৩ আগস্ট নুরাল পাগল (৮৫) মারা গেলে পরিবারের সিদ্ধান্তে নিজ বাড়ির সামনের প্রায় ১২ ফুট উঁচু কাঠামোর ভেতরে তাকে কবর দেওয়া হয়। পরবর্তীতে কবরটি কাবা শরিফের আদলে রঙ করা হয় এবং সেখানে ‘হজরত ইমাম মাহাদী (আ.) দরবার শরীফ’ লেখা ব্যানার টানানো হয়।

স্থানীয়দের মতে, এ কারণে এলাকাবাসীর একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। সম্প্রতি উপজেলা মডেল মসজিদের নিচতলায় উপজেলা ইমাম কমিটি ও ‘তৌহিদী জনতা’র উদ্যোগে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা মো. জালাল উদ্দিন প্রামাণিক। উপস্থিত ছিলেন জেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা মো. ইলিয়াস মোল্লা, গোয়ালন্দ সরকারি কামরুল ইসলাম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কে. মোহিত হীরা, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মো. আইয়ুব আলী খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন, পৌর বিএনপি সভাপতি মো. কাশেম মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইদুল ইসলাম, ইদ্রিসিয়া মাদরাসার নায়েবে মোহতামিম মুফতি শামসুল হুদা, উপজেলা ইমাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবুল হোসাইনসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ‘তৌহিদী জনতা’।

সভায় জেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা মো. ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ‘ইমাম মাহাদীর দাবিদার নুরাল পাগলের মাজার ও কবর নিয়ে আমাদের তিনটি দাবি ছিল। এর মধ্যে দুটি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে একটি দাবি এখনো বাকি আছে— ১২ ফুট উঁচু স্থানের কবর নিচু করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। নুরাল পাগলের পরিবার সময় চেয়েছিল। ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের সময় দেওয়া হয়েছিল।’

বৈঠকে জানানো হয়েছিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কবর নিচু না করলে তা ভেঙে ফেলা হবে। এ ঘোষণার পর শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল ডাকা হয় এবং শেষ পর্যন্ত কবর ভেঙে ফেলা হয়।

‘তৌহিদী জনতা’ ও ইমাম পরিষদের তিন দফা দাবি ছিল— কাবা শরিফের আদলে করা রঙ পরিবর্তন, ‘ইমাম মাহাদী (আ.) দরবার শরীফ’ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণ, এবং কবরের উচ্চতা কমিয়ে স্বাভাবিক করা।

নুরাল পাগলের ভক্ত ও পরিবার প্রথম দুটি দাবি মেনে নিলেও কবরের উচ্চতা কমানোর জন্য সময় প্রার্থনা করেছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

গোয়ালন্দে লাশ কবর থেকে তুলে আগুনে পুড়াল ‘তৌহিদী জনতা’

আপডেট সময় : ০৬:৫৫:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলেছে ‘তৌহিদী জনতা’ নামধারী একদল লোক। তারা কবর গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর স্থাপনা আগুনে পুড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে আশপাশের বাড়িঘরেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) লাঠিসোটা হাতে স্লোগান দিতে দিতে একদল মুসল্লি ওই কবরে হামলা চালায়। স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কবরটি ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করা হচ্ছে এবং চারদিকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। এ সময় পুলিশের কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়।

আরেকটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কবর থেকে নুরুল হকের মরদেহ তুলে আনা হচ্ছে। এরপর প্রাঙ্গণে দাউ দাউ আগুন জ্বলতে দেখা যায়।

সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান।

এর আগে গত ২৩ আগস্ট নুরাল পাগল (৮৫) মারা গেলে পরিবারের সিদ্ধান্তে নিজ বাড়ির সামনের প্রায় ১২ ফুট উঁচু কাঠামোর ভেতরে তাকে কবর দেওয়া হয়। পরবর্তীতে কবরটি কাবা শরিফের আদলে রঙ করা হয় এবং সেখানে ‘হজরত ইমাম মাহাদী (আ.) দরবার শরীফ’ লেখা ব্যানার টানানো হয়।

স্থানীয়দের মতে, এ কারণে এলাকাবাসীর একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। সম্প্রতি উপজেলা মডেল মসজিদের নিচতলায় উপজেলা ইমাম কমিটি ও ‘তৌহিদী জনতা’র উদ্যোগে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা মো. জালাল উদ্দিন প্রামাণিক। উপস্থিত ছিলেন জেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা মো. ইলিয়াস মোল্লা, গোয়ালন্দ সরকারি কামরুল ইসলাম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কে. মোহিত হীরা, উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মো. আইয়ুব আলী খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন, পৌর বিএনপি সভাপতি মো. কাশেম মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইদুল ইসলাম, ইদ্রিসিয়া মাদরাসার নায়েবে মোহতামিম মুফতি শামসুল হুদা, উপজেলা ইমাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবুল হোসাইনসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ‘তৌহিদী জনতা’।

সভায় জেলা ইমাম কমিটির সভাপতি মাওলানা মো. ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ‘ইমাম মাহাদীর দাবিদার নুরাল পাগলের মাজার ও কবর নিয়ে আমাদের তিনটি দাবি ছিল। এর মধ্যে দুটি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তবে একটি দাবি এখনো বাকি আছে— ১২ ফুট উঁচু স্থানের কবর নিচু করা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। নুরাল পাগলের পরিবার সময় চেয়েছিল। ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের সময় দেওয়া হয়েছিল।’

বৈঠকে জানানো হয়েছিল, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কবর নিচু না করলে তা ভেঙে ফেলা হবে। এ ঘোষণার পর শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল ডাকা হয় এবং শেষ পর্যন্ত কবর ভেঙে ফেলা হয়।

‘তৌহিদী জনতা’ ও ইমাম পরিষদের তিন দফা দাবি ছিল— কাবা শরিফের আদলে করা রঙ পরিবর্তন, ‘ইমাম মাহাদী (আ.) দরবার শরীফ’ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণ, এবং কবরের উচ্চতা কমিয়ে স্বাভাবিক করা।

নুরাল পাগলের ভক্ত ও পরিবার প্রথম দুটি দাবি মেনে নিলেও কবরের উচ্চতা কমানোর জন্য সময় প্রার্থনা করেছিলেন।