এবার কারাগারে চিকিৎসা না দেওয়ার কথা জানালেন ডা. দীপু মনি
বললেন, আমাদের কি মরিয়া প্রমাণ করতে হবে আমরা অসুস্থ
- আপডেট সময় : ০৬:০১:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
- / 82
কারাগারে বন্দী অবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুনের মৃত্যুর পেছনে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ করেছে তার পরিবার। এবার কারাবন্দী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আদালতে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করেছেন, তাকে কারাগারে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানা থেকে আদালতে হাজির হন। এ সময় তিনি মাস্ক, হেলমেট এবং বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিহিত ছিলেন। তিনি তার আইনজীবী গাজী ফয়সাল এজলাসে এসে তার সঙ্গে কথা বলেন।
সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে বিচারক এজলাসে প্রবেশ করলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা দীপু মনিকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। পরে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকীও একই দাবি জানান।
পিপি বলেন, “মাননীয় আদালত, গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে হানিফ উড়ালসড়কের ঢালে মনির হোসেন নামের এক আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি দীপু মনি। ঘটনাটির তদন্তে তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।”
রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যের পর আইনজীবী গাজী ফয়সাল বলেন, “মাননীয় আদালত, এই হত্যার সঙ্গে দীপু মনি কোনোভাবে জড়িত নন। তিনি গুরুতর অসুস্থ। আজ তাকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিবর্তে আদালতে হাজির করা হয়েছে এবং ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।”
এরপর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা দীপু মনি নিজেই আদালতের অনুমতি নিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “মাননীয় আদালত, আমি অসুস্থ। আজ হাসপাতালে নেওয়ার কথা থাকলেও আমাকে আদালতে হাজির করা হলো। আবারও আমাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ।”
তিনি আরও যোগ করেন, “গত আগস্ট থেকেই আমি অসুস্থ। ব্রেন পরীক্ষার জন্য একবার কারাগার থেকে তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলেও সেখানে যথাযথ পরীক্ষা হয়নি, আবার আমাকে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর থেকে আমাকে শুধু এদিক-সেদিক ঘোরানো হচ্ছে, পরীক্ষাগুলো আর করানো হচ্ছে না।”
কারাগারে নিজের পরিস্থিতি তুলে ধরে দীপু মনি আদালতকে জানান, “আমি গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আছি। ১৫ দিন পরপর আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে পারি, কিন্তু আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাই না। এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছি, এর মধ্যে মাত্র তিনবার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার নামে ৬০টির বেশি মামলা। তাই কর আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করা খুব জরুরি। মামলার শুনানি শেষে অন্তত ২০ মিনিট আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ চাই।”
এ পর্যায়ে পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আপত্তি জানিয়ে বলেন, “মাননীয় আদালত, আসামিকে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না পাওয়ার অভিযোগও সঠিক নয়। আসামির কাঠগড়ায় থাকাকালেই তারা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। শুনানি শেষে আলাদা করে সময় দেওয়ার প্রয়োজন নেই।”
তার বক্তব্যের জবাবে দীপু মনি আদালতে বলেন, “মাননীয় আদালত, সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী নূরুল মজিদ হুমায়ুনকে চারবার হাসপাতালে নেওয়ার পরও চিকিৎসা হয়নি, শেষ পর্যন্ত তিনি ঢাকা মেডিকেলে মারা যান। আমি বলছি, আমি অসুস্থ। আমার ব্রেন পরীক্ষা দরকার, সুচিকিৎসা দরকার। আমাদের কি মরিয়া প্রমাণ করতে হবে আমরা অসুস্থ?”
এ সময় কাঠগড়ায় থাকা সোলায়মান সেলিম ক্ষুব্ধ হয়ে উচ্চ স্বরে প্রতিবাদ করেন। তখন প্রসিকিউশন পক্ষের একজন আইনজীবী বলতে থাকেন, “আপনাদের হাতে রক্তের দাগ আছে।”
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “মাননীয় আদালত, দীপু মনির বক্তব্যের ভঙ্গি থেকেই প্রমাণ হয়, তিনি যতটা অসুস্থ দাবি করছেন, বাস্তবে ততটা নন।”
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত দীপু মনির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদেশ ঘোষণার পর তাকে আবার আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে দীপু মনিকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

















