আদালতপাড়ায় প্রকাশ্যে গুলি, হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে এসে খুন মামুন
- আপডেট সময় : ০৬:২৭:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
- / 44
হত্যা মামলার হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে পুরান ঢাকায় দিনের বেলায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে একসময়কার শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে। সোমবার (১০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে। তিনি ২৮ বছর আগে জাহিদ আমিন ওরফে হিমেল হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে এসেছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মোহাম্মদপুরের পিসি কালচার হাউজিং এলাকায় ২৫ বছর বয়সী জাহিদ আমিন ওরফে হিমেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় হিমেলের বন্ধু সাইদও আহত হন। এরপর হিমেলের মা জাফরুন নাহার সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত দুই-তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর তারিক সাইফ মামুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অন্যান্য আসামিরা হলেন— ওসমান, মাসুদ ওরফে নাজমুল হোসেন, রতন, ইমন ও হেলাল।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মমিনুন নেসার আদালতে সেদিন মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য তালিকাভুক্ত ছিল। আদালতে হাজিরা দেন তারিক সাইফ মামুন। কিন্তু কোনও সাক্ষী উপস্থিত না হওয়ায় আদালত আগামী বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেন।
আদালত থেকে বের হয়ে মামুন যান ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সকাল ১০টা ৫১ মিনিটে তিনি হাসপাতাল থেকে বের হচ্ছিলেন। মূল ফটক অতিক্রম করে সামনের রাস্তায় পৌঁছালে আবার দৌড়ে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে পড়েন। তখন চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনকেও ছুটোছুটি করতে দেখা যায়।
হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মী মো. তারেক জানান, দুইজন দুর্বৃত্ত তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তবে গুলিটি গিয়ে লাগে হাসপাতালের জানালার গ্লাসে। তারা আরও পাঁচ রাউন্ড গুলি করে। তিনটি গুলি গিয়ে লাগে মামুনের শরীরে। পরে তাকে উদ্ধার করে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়। “শুনেছি তিনি মারা গেছেন,” বলেন তিনি।
নিরাপত্তাকর্মী তারেক আরও জানান, “শুনেছি, যে ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তার কাছে একজন ভিক্ষুক খাবারের জন্য টাকা চেয়েছিলেন। সেই টাকা দিতে তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, তিনি গাড়ি পার্কিং করতে এসেছিলেন।”
যোগাযোগ করা হলে মামুনের আইনজীবী মেহেদী হাসান বলেন, “তিনি আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। মামলাটি ১৯৯৭ সালের। সাক্ষীরা আসে না। আদালতকে বলি মামলাটি শেষ করতে। পরে আবার সাক্ষীর জন্য তারিখ ধার্য করা হয়।”
মামুন কেন হাসপাতালে গিয়েছিলেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা তো বলতে পারবো না। আমার অন্য মামলা থাকায় আমি চলে গিয়েছিলাম। তিনিও আদালত থেকে বের হয়ে যান।”
ঘটনার পর মামুনের খালাতো ভাই হাফিজ সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ভাই একজন সাধারণ মানুষ। কী কারণে তাকে কে হত্যা করলো আমি জানি না। সে কোনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কারা তাকে হত্যা করেছে, কী কারণে করেছে আমার জানা নেই।”
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় ২০ বছরের বেশি কারাভোগের পর ২০২৩ সালে জামিনে মুক্তি পান মামুন। তিন মাসের মাথায় তেজগাঁও বিজি প্রেস এলাকায় তাকে হত্যার চেষ্টা হয়।
সেই সময় রাস্তার ওপর তার গাড়ি আটকে এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হলে আইনজীবী ভুবন চন্দ্র শীল গুরুতর আহত হন এবং পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
তখন মামুন জানান, হামলাকারীরা তাকে চাপাতি দিয়ে কোপায় এবং তিনি পুলিশকে বলেছিলেন—তেজগাঁওয়ের ওই হামলার পেছনে পুলিশের তালিকাভুক্ত আরেক ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ সানজিদুল ইসলাম ইমনের হাত রয়েছে।
উল্লেখ্য, সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় গত বছরের ৯ মে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তারিক সাইফ মামুনসহ ছয়জন খালাস পান। তবে ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজসহ তিন আসামিকে একই ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।


















