ঢাকা ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ নেতাদের বিচার, আন্তর্জাতিক আদালতে গেল আওয়ামী লীগ

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১২:৩৭:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
  • / 116

আন্তর্জাতিক আদালতে গেল আওয়ামী লীগ

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ‘হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তারসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত–আইসিসিতে মামলার আবেদন করেছেন একজন ব্রিটিশ আইনজীবী।

লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের আইনজীবী স্টিভেন পাওলস কেসি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ দাখিল করেছেন বলে চেম্বারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে শেখ হাসিনার সাবেক সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘প্রতিশোধমূলক সহিংসতার’ বিষয়ে রোম সংবিধির ১৫ নম্বর বিধি অনুযায়ী তদন্ত শুরু করতে আইসিসির প্রসিকিউটরের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই আবেদনে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ রোম সংবিধিতে অনুসমর্থন করে; ওই বছরের ১ জুন থেকে তা কার্যকর হয়।

এমন এক সময়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আইসিসিতে অভিযোগ গৃহীত হলো, যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় অপেক্ষমাণ।

২০২৪ সালের জুলাই–অগাস্ট মাসে আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ প্রদান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’-এর আওতায় মোট পাঁচ অভিযোগে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন থেকে।

ওই বছরের ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।

আইসিসিতে স্টিভেন পাওলসের দাখিল করা আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রায় ৪০০ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের অনেককেই ‘মব তৈরি করে পিটিয়ে হত্যা’ করা হয়েছে।

এসব ঘটনার প্রমাণ হিসেবে ভিডিও ও সাক্ষ্য যুক্ত করে বিস্তারিত বিবরণ নথিতে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “এসব হত্যা, বেআইনি আটক ও নির্যাতনের ঘটনা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল এবং এর সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার বাংলাদেশে হওয়ার কোনো বাস্তব সম্ভাবনা নেই।”

এছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ব্যক্তিদের ‘অযৌক্তিকভাবে গ্রেপ্তার করে জামিন বা অভিযোগ ছাড়াই কারাগারে পাঠানোর’ অভিযোগও আনা হয়েছে সেখানে।

নথিতে বলা হয়েছে, রাজনীতিক, বিচারক, আইনজীবী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী—বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এই ‘নিপীড়নের’ শিকার হচ্ছেন।

এতে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর থেকে কারাগারে অন্তত ২৫ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। যাদের মৃত্যুর কারণ ‘হৃদরোগ’ বলা হলেও, অনেকের শরীরে ‘নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন’ পাওয়া গেছে।

আইনজীবী স্টিভেন পাওলস বলেন, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকার ‘ডেভিল হান্ট’ নামে একটি অভিযান শুরু করে, যার ঘোষিত লক্ষ্য ছিল ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদ’ দমন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথভাবে পরিচালিত ওই অভিযানে মাত্র ১২ দিনে প্রায় ১৮ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আইসিসিতে জমা দেওয়া আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার একটি ‘ইমিউনিটি অর্ডার’ জারি করে, যাতে বলা হয়েছিল—“১৫ জুলাই থেকে ৮ অগাস্টের মধ্যে আন্দোলনে যারা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।”

অভিযোগে বলা হয়, “এ ধরনের একতরফা দায়মুক্তি শুধু অপরাধীদের পার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে না, বরং এসব হামলার প্রতি রাষ্ট্রের নীরব সমর্থনেরও ইঙ্গিত দেয়।”

সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়, “তদন্তের মাধ্যমে এসব অপরাধে জড়িত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের দায় নির্ধারণ সম্ভব হবে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়; এবং এই ধরনের অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ারের মধ্যেই পড়ে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ নেতাদের বিচার, আন্তর্জাতিক আদালতে গেল আওয়ামী লীগ

আপডেট সময় : ১২:৩৭:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ‘হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তারসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত–আইসিসিতে মামলার আবেদন করেছেন একজন ব্রিটিশ আইনজীবী।

লন্ডনের ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের আইনজীবী স্টিভেন পাওলস কেসি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ দাখিল করেছেন বলে চেম্বারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে শেখ হাসিনার সাবেক সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত ‘প্রতিশোধমূলক সহিংসতার’ বিষয়ে রোম সংবিধির ১৫ নম্বর বিধি অনুযায়ী তদন্ত শুরু করতে আইসিসির প্রসিকিউটরের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই আবেদনে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১০ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ রোম সংবিধিতে অনুসমর্থন করে; ওই বছরের ১ জুন থেকে তা কার্যকর হয়।

এমন এক সময়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আইসিসিতে অভিযোগ গৃহীত হলো, যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় অপেক্ষমাণ।

২০২৪ সালের জুলাই–অগাস্ট মাসে আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ প্রদান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’-এর আওতায় মোট পাঁচ অভিযোগে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন থেকে।

ওই বছরের ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে চলে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এখনো তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।

আইসিসিতে স্টিভেন পাওলসের দাখিল করা আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রায় ৪০০ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের অনেককেই ‘মব তৈরি করে পিটিয়ে হত্যা’ করা হয়েছে।

এসব ঘটনার প্রমাণ হিসেবে ভিডিও ও সাক্ষ্য যুক্ত করে বিস্তারিত বিবরণ নথিতে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “এসব হত্যা, বেআইনি আটক ও নির্যাতনের ঘটনা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল এবং এর সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার বাংলাদেশে হওয়ার কোনো বাস্তব সম্ভাবনা নেই।”

এছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ব্যক্তিদের ‘অযৌক্তিকভাবে গ্রেপ্তার করে জামিন বা অভিযোগ ছাড়াই কারাগারে পাঠানোর’ অভিযোগও আনা হয়েছে সেখানে।

নথিতে বলা হয়েছে, রাজনীতিক, বিচারক, আইনজীবী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী—বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এই ‘নিপীড়নের’ শিকার হচ্ছেন।

এতে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর থেকে কারাগারে অন্তত ২৫ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। যাদের মৃত্যুর কারণ ‘হৃদরোগ’ বলা হলেও, অনেকের শরীরে ‘নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন’ পাওয়া গেছে।

আইনজীবী স্টিভেন পাওলস বলেন, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকার ‘ডেভিল হান্ট’ নামে একটি অভিযান শুরু করে, যার ঘোষিত লক্ষ্য ছিল ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদ’ দমন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথভাবে পরিচালিত ওই অভিযানে মাত্র ১২ দিনে প্রায় ১৮ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আইসিসিতে জমা দেওয়া আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার একটি ‘ইমিউনিটি অর্ডার’ জারি করে, যাতে বলা হয়েছিল—“১৫ জুলাই থেকে ৮ অগাস্টের মধ্যে আন্দোলনে যারা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।”

অভিযোগে বলা হয়, “এ ধরনের একতরফা দায়মুক্তি শুধু অপরাধীদের পার পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে না, বরং এসব হামলার প্রতি রাষ্ট্রের নীরব সমর্থনেরও ইঙ্গিত দেয়।”

সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়, “তদন্তের মাধ্যমে এসব অপরাধে জড়িত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের দায় নির্ধারণ সম্ভব হবে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয়; এবং এই ধরনের অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ারের মধ্যেই পড়ে।”