চিকিৎসায় রেসপন্স’ করছেন খালেদা জিয়া, বিএনপির কর্মসূচি স্থগিত
- আপডেট সময় : ০৯:০১:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৫
- / 124
ঢাকার হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি একই রয়েছে, তবে তিনি ‘চিকিৎসায় রেসপন্স’ করছেন বলে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হয়েছে।
দলীয় প্রধানের অসুস্থতার কারণে বিজয় দিবস উপলক্ষে ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত সব কর্মসূচি—‘মশাল রোড শো’সহ—স্থগিত ঘোষণা করেছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে দলটি।
আগামী ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মশাল রোড শোর মধ্য দিয়ে বিএনপির বিজয়ের মাস উদ্যাপন কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে মহাসমাবেশের মাধ্যমে রোড শো শেষ করার পরিকল্পনা ছিল।
দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, মিসেস জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত এবং নতুন কোনো অবনতি হয়নি।
তিনি বলেন, “উনার শারীরিক অবস্থা অবনতিশীল হয়নি। তাই বলে খুব একটা উন্নতি হয়েছে এরকমও খবর পাইনি। তার মানে উনার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।”
অন্যদিকে চিকিৎসকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালে ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণে’ থাকা খালেদা জিয়া ডাকলে মাঝে মাঝে সাড়া দিচ্ছেন। তাদের মতে, পরিস্থিতিটি গত তিন দিনের তুলনায় কিছুটা আশাব্যঞ্জক।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী নতুন করে নিউমোনিয়ার আক্রান্ত হলে গত রোববার জরুরি ভিত্তিতে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর থেকেই তিনি চিকিৎসাধীন।
তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রে গুরুতর সংক্রমণের কারণে তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এরপর বুধবার থেকে তার অবস্থার আরও অবনতি হয় এবং বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হয় যে মিসেস জিয়ার অবস্থা ‘সংকটময়’। শুক্রবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন।
শনিবার বিএনপি এবং তার ছেলে তারেক রহমানের বিবৃতিতেও খালেদা জিয়ার অবস্থাকে ‘গুরুতর ও সংকটাপন্ন’ বলা হয়।
এ জেড এম জাহিদ হোসেন শনিবার রাতে সাংবাদিকদের জানান, বৃহস্পতিবার থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বা সিসিইউ’-তে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, “গত তিনদিন ওনার অবস্থা একই আছে। ডাক্তারি ভাষায় যদি বলি, চিকিৎসকরা যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, সেটা তিনি গ্রহণ করতে পারছেন।”
এর আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হলেই তাকে লন্ডনে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে পরিবার।
তবে তাকে বিদেশে নেওয়া হবে কি না—সেই বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান রুহুল কবির রিজভী।
তিনি আরও বলেন, লন্ডনে যে হাসপাতালে মিসেস জিয়া আগে চিকিৎসা নিয়েছিলেন, সেখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে তারেক রহমান যোগাযোগ রাখছেন এবং একই সময়ে ঢাকার চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলছেন।
খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস ও চোখের নানা সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।
২০২১ সালের মে মাসে ঢাকায় নিজ বাসায় থাকার সময় তিনি করোনায় আক্রান্ত হন এবং শ্বাসকষ্টের কারণে করোনারি কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।
২০২৪ সালের জুনে তার হৃদপিণ্ডে পেসমেকার বসানো হয়। সে সময়ও তিনি হার্ট, কিডনি ও লিভারজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন, যা তার শারীরিক অবস্থাকে আরও জটিল করে তোলে।
এর আগে থেকেই তার হৃদপিণ্ডে তিনটি ব্লক ছিল, একটি রিংও পরানো ছিল। ২০২৪ সালের জুনে বিদেশি চিকিৎসকদের এনে ‘পোর্টো সিস্টেমেটিক অ্যানেসটোমেসি’-র মাধ্যমে তার লিভারের চিকিৎসা করা হয়।
আওয়ামী লীগ আমলে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়। এরপর তিনি প্রথমে কারাগারের বিশেষ ব্যবস্থায় এবং পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। দুর্নীতির আরেক মামলায়ও তাকে দণ্ডিত করা হয়।
পরে হাসপাতালে থাকার সময়ই নির্বাহী আদেশে বিশেষ শর্তে মুক্তি পেয়ে তিনি গুলশানের বাসায় ওঠেন।
২০২৪ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে তাকে সব দণ্ড থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান।
ফিরে আসার পর ঢাকায় আরও কয়েকবার তাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে।
সর্বশেষ ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রওনা দিয়ে গাড়িতে ওঠার পরই তিনি অস্বস্তি অনুভব করেন। অনুষ্ঠান শেষে আরও অসুস্থ হয়ে তার শ্বাসকষ্ট তীব্র আকার ধারণ করে।
২৩ নভেম্বর জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেওয়ার পর জানা যায় তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।
অন্যদিকে অসুস্থ অবস্থায় তাকে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে কেন নেওয়া হয়েছিল—এ নিয়েও দলের ভেতরে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরাও এ বিষয়ে শীর্ষ নেতাদের কাছে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানা যায়।
সেনাকুঞ্জের সেই অনুষ্ঠানে মিসেস জিয়াকে বহু মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা গিয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে সাধারণত বিপুল সংখ্যক অতিথি অংশ নিয়ে থাকেন।
অনুষ্ঠানে তার পাশে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

















