ইউনূস যদি চান, সারা দেশকে কারাগার বানাতে পারেন: আদালতে আনিস আলমগীর
- আপডেট সময় : ০৯:৫২:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 44
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে আলোচিত সাংবাদিক আনিস আলমগীর আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যের মাধ্যমে দেশের ‘জননিরাপত্তা বিপন্ন’ করার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ‘মিথ্যা’ ও ‘সাজানো নাটক’।
সাংবাদিক হিসেবে কথা বলা বন্ধ করবেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ড. ইউনূস যদি চান, সারা দেশকে কারাগার বানাতে পারেন।”
সোমবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে উত্তরা পশ্চিম থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাত দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে এসব কথা বলেন আনিস আলমগীর।
এর আগে রোববার রাত ৮টার পর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে মধ্যরাতে ‘জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য আরিয়ান আহমেদ ‘রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্টের ষড়যন্ত্র এবং নিষিদ্ধ সংগঠনকে উসকে দেওয়ার’ অভিযোগে আনিস আলমগীরসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার অপর তিন আসামি হলেন—অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, মারিয়া কিসপট্টা (ফ্যাশন মডেল) ও ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ (উপস্থাপক)।
সোমবার আনিস আলমগীরকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক মুনিরুজ্জামান সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
সোমবার আনিস আলমগীরকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক মুনিরুজ্জামান।
আবেদনে বলা হয়, “আনিস আলমগীর এক মাস আগে বেসরকারি টিভির এক টকশোতে মন্তব্য করেন, আওয়ামী লীগের অপ্রকাশিত নেতারা সরকারকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে। আসামি মেহের আফরোজ শাওন তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এ বছরের ২৬ নভেম্বর লকারের লকার উদ্ধারের ঘটনায় কটাক্ষ করে সরকার বিরোধী পোস্ট দেন। তিনি বলেন, একেবারে তেলেসমাতি কারবার।
“আসামি ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে লকার উদ্ধারকে ‘এটাই সায়েন্স’ বলে কটাক্ষ করে। এছাড়াও এই চার আসামিসহ অন্য আসামি পরস্পর যোগসাজশে অন্যদের বিভিন্ন সময়ে তাদের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল হতে বিভিন্ন প্রকার উসকানিমূলক পোস্ট ও বক্তব্য দিয়ে দেশের জননিরাপত্তা বিপন্ন করা, অন্য ব্যক্তিকে হত্যার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা এবং অন্য ব্যক্তিকে হত্যা-গুরুতর জখম করার ষড়যন্ত্র ও সহায়তা করার জন্য প্ররোচিত করে।”
এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা জানার জন্য আনিস আলমগীরকে সাত দিনের রিমান্ড নেওয়ার আর্জি জানানো হয় আবেদনে।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “তিনি (আনিস) টকশোতে এভাবে কথা বলতে পারেন না। তিনি টকশোতে কথা বলার নামে সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারেন না। মানুষকে টার্গেট করে টকশোতে বক্তব্য দেন। টকশোতে তিনি বক্তব্য দিতে পারেন, কিন্তু নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের উসকানি দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে লেলিয়ে দিচ্ছেন।”
আনিস আলমগীরের পক্ষে তার আইনজীবী নাজনীন আক্তার রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, মন খুলে কথা বলবেন। আনিস সেই সাংবাদিক, যিনি ইরাক যুদ্ধ কাভার করেছেন। কখনো কারো সাথে আপস করেননি। তিনি একজন শিক্ষক, লেখক। বই লেখেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের তুমুল সমালোচক। উনি কোনো হার্মফুল মানুষ না। প্রচন্ডভাবে রিমান্ডের বিরোধিতা করছি।”
এরপর কথা বলতে আদালতের অনুমতি চান আনিস আলমগীর। তিনি বলেন, “আমি একজন সাংবাদিক, ইরাকের যুদ্ধের নিউজ কাভার করেছি। এর আগে আফগান যুদ্ধ কাভার করছি। আমাকে তখন তালেবানরা আটক করেছিল। তখন থেকে আমার মৃত্যুভয় চলে যায়।
“দুই যুগ ধরে করে এভাবে সাহস নিয়ে সাংবাদিকতা করে আসছি। খালেদা জিয়ার আমলে কথা বলেছি, আওয়ামী লীগের সময়ে কথা বলে এসেছি। ড. ইউনূসের আমলেও কথা বলেছি, বলে যাব। পরবর্তীতে যারা আসবেন তখনো এভাবেই কথা বলে যাব।”
এই সাংবাদিক বলেন, “এখন এরা আমাকে হয়ত নিজেদের নতজানু, দালাল বানাতে চায়। হালুয়া রুটি খাওয়াতে চায়। আমার জীবনে হালুয়া রুটির ইতিহাস নেই। আমার ফেইসবুক একটাই, ভেরিফায়েড। আমার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে লেখার যে অভিযোগ এনেছে… হ্যাঁ, আমি বলেছি। তবে কোন প্রেক্ষিতে বলেছি সেটা দেখেন।
“এটা তো কথার কথা বলেছি। কারণ ধানমন্ডি ৩২ ভাঙার সময়ও বলেছি এমন প্রতিহিংসা চললে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের পক্ষে বলেছি। আওয়ামী লীগের সমর্থকরা যে লকডাউন করেছে, সেটার জন্য সতর্কতামূলক কথাও বলেছি, যে এখনো এরা এমন করতে পারলে সামনে কি হবে? আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের বিরুদ্ধেও তো বলেছি। এখানে কী ভুল হইছে?
আনিস আলমগীর বলেন, “জুলাইয়ে আমি শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছিলাম। এখন এসে অনেকের কাছ থেকে নতুন করে জুলাইয়ের গান শুনতে হয়। আর যাদের সাথে যোগসূত্রতার অভিযোগ আনা হয়েছে, আমি বলি, আমার সাথে কারো যোগসূত্র নেই। মেহের আফরোজ শাওন ছাড়া কারো সাথে যোগাযোগ নেই। তাও শাওনের সাথে একটা কালচারাল প্রোগ্রামে কয়েক বছর আগে দেখা হইছিল শুধু।”
পিপির বক্তব্যের বিরোধিতা করে আনিস আলমগীর বলেন, “উনি যে অভিযোগ এনেছেন সব মিথ্যা। এগুলোর জবাব তো দিয়েছি আমি। একটার প্রেক্ষিতে একটা কথা বলেছি। এটা তো কথার কথা।
“এগুলো সাজানো নাটক। দুই ইউটিউবার একজন প্যারিসে, আরেকজন নিউ ইয়র্কে। দেশের বাইরে থেকে দেশকে অস্থির করার জন্য এরা কাজ করছে। আমাকে বলে নির্বাচন বানচাল করতে চাই, এটা অযৌক্তিক। নির্বাচন বানচাল করতে চায় যারা ভিউ ব্যবসা করে।”
তিনি বলেন, “এ দুই ব্যক্তি বিশেষ রাজনৈতিক দলের কাছে আমার বিরুদ্ধে বলেছে। হুমকি দিয়েছে শায়েস্তা করবে। বিশেষ রাজনৈতিক দলকে প্রভাবিত করেছে প্রধান উপদেষ্টার কাছে নালিশ দিয়ে। আমাকে সন্ত্রাসী বানানো হয়েছে।”
শুনানি শেষে আদালত এই সাংবাদিককে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়।
মামলার বিবরণে বলা হয়, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে। কিন্তু তার অনুসারীরা দেশের মধ্যে বিভিন্ন কৌশলে ঘাপটি মেরে অবস্থান করে দেশের অস্থিতিশীল ও রাষ্ট্রের অবকাঠামোকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র করে আসছে। আসামিরা আগে থেকে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় রয়েছে। তারা গত বছরের ৫ অগাস্টের পর থেকে সোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন টকশোতে নিষিদ্ধ সংগঠনকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে আসছে।
“আসামিরা ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার পাঁয়তারা করছে। তাদের বিভিন্ন পোস্টের ফলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা অনুপ্রাণিত হয়ে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও রাষ্ট্রের অবকাঠামোকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্রের ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আসছে।

















