ভিসার ধরণ না বুঝে কুয়েতে বিপাকে পড়েছে প্রবাসীরা। সরকারি ভাবে কুয়েতে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ থাকলেও গত ৪ থেকে ৫ বছরে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ বিভিন্ন ভিসায় কুয়েতে এসেছে। ‘১৮ নাম্বার শোন ভিসা’ বলে ভিসার দালালরা ৭ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছে প্রতিটি ভিসা বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছে। আবার এসব ভিসা গুলোকে ফ্রী ভিসা বলেও ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।
ফ্রী ভিসা বলে কোন ভিসা হয় ন।এরকম ভিসাধারীদের অবৈধ হিসেবেই কুয়েতে অবস্থান করতে হয়। স্থানীয় প্রশাসনের হাতে এ ভিসারধারী কেউ ধরা পড়লে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি যে আকামার ভিসা সে কোম্পানির নামে মামলা দেওয়া হয়। কুয়েতে বিভিন্ন ধরণের ক্যাটাগরির ভিসা রয়েছে তার মধ্যে হল ফ্যামেলি ভিসা (২২ নাম্বার)। ফ্যামিলি ভিসা এসে কোথাও কাজের জন্য আবেদন বা কাজ করার অনুমতি নেই। টুরিস্ট ভিসা(১৪ নাম্বার) ভ্রমন ভিসায়ও কাজ করার অনুমতি নাই। মাছনা ভিসা (১৮ নাম্বার), মাছুরা সাগিড়া (১৮ নাম্বার) ছোট কোম্পানি ভিসাগুলো প্রয়েজনীয় আইনী প্রক্রিয়ায় অন্য ছোট কোম্পানিতে ট্রান্সপার করা যায়। খাদেম ভিসা( ২০ নাম্বার)ও একইভাবে পরিবর্তন করা যায়। মাজরা রায় শোন (১৮ নাম্বার) এই ভিসায় খামার অথবা বাগানের নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে কাজ করা যায় না । এরকম ভিসাধারীরা বাইরে কাজ করার সময় পুলিশি অভিযানে পড়লে যে কোন সময় গ্রেপ্তার করতে পারে স্থানীয় প্রশাসন। আহলি ( ১৮ নাম্বার) শোন ভিসা কোম্পানির চুক্তির নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পর অন্য যেকোন কেম্পানিতে ভিসার পরিবর্তন করার আইনগত বিধান আছে । তবে বিভিন্ন অনিয়ম ও অভিযোগ পাওয়ার কারণে বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরণের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির সরকার ।
শুধুমাত্র বর্তমানে কুয়েতে সরকারি ভাবে আকদ হুকুমা নামে (১৮ নাম্বার ) ভিসা চালু রয়েছে। যে ভিসা গুলো কুয়েত সরকার কর্তৃক বিনা মূল্যে প্রদান করেছে। এই ভিসায় কাজ হল পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার , যা এক কোম্পানি থেকে অন্য কোন কোম্পানিতে ট্রান্সপার যোগ্য নয়। বেতন কুয়েতি ৬০ দিনার ( বাংলা টাকায় প্রায় ১৭ হাজার টাকার মত) ।সাধারনত মসজিদ , মাদ্রসা ও কুয়েতের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ভিসার আওতায় কাজ হয়ে থাকে।
ভারত, শ্রীলংকা,নেপালী নাগরিকরা শুধু মাত্র ১ লক্ষ টাকা খরচ করে ২ বছর মেয়াদী এ ভিসায় আসেছ। আর কোম্পানির কিছু কর্মকর্তা ও ভিসার দালালরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশির কাছে এই ভিসা গুলো নানা ধরণের সুযোগ সুবিধার কথা বলে ৭ লক্ষ টাকা থেকে ৮ লক্ষ টায় বিক্রি করেছে। কুয়েতের ল ফার্মের কেইস ম্যানেজার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে কুয়েতে সরকারি ভাবে আকদ হুকুমা চালু আছে যাহা কুয়েত সরকার বিভিন্ন কোম্পানিকে দিয়েছে। ভারত,নেপাল,শ্রীলংকান নাগরিকরা তাদের দেশের এজন্সির মাধ্যমে এই ভিসায় ১ লক্ষ টাকা খরচ করে আসছে । আমাদের বাংলাদেশিরা ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকায় আসছে কুয়েতে একই কাজে, একই বেতন, একই সুযোগ সুবিধা। আমাদের সরকার চেষ্টা করলে এজেন্সরি মাধ্যমে কুয়েত সরকারের সাথে যোগাযোগ করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষকর্মী পাঠাতে পারে কম খরচে।’ উচ্চ মূল্যে দালালদের কথায় ১৮ নাম্বার ভিসার ধরণ সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারনে দেশ থেকে গত কয়েক বছরে আসা নতুন শ্রমিকরা নানা ধরণের ভোগান্তীর শিকার হচ্ছেন। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কুয়েতে এসে অসহায় হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন প্রায় সকলেই।