সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
বাংলাদেশে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের সম্পদ সুরক্ষায় অন্তবর্তীকালীন সরকারকে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে  » «   ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটির উদ্যোগে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং কর্মশালায় বিভিন্ন পেশার মানুষের অংশগ্রহণ  » «   হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমের  বিরুদ্ধে নীতিহীন কর্মকান্ডের অভিযোগ  » «   সাংবাদিক ক্যারলকে গ্লোবাল জালালাবাদ ফ্রান্সের বিশেষ সম্মাননা প্রদান  » «   গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক জালালাবাদ উৎসব প্যারিস অনুষ্ঠিত  » «    সাকিব : নক্ষত্রের কক্ষচ্যুতি  » «   লন্ডনে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী চাটগাঁয়ে মেজবান ৬ অক্টোবর রবিবার  » «   ১১তম মুসলিম চ্যারিটি রান ২০ অক্টোবর ভিক্টোরিয়া পার্কে  » «   ৭৫ শেফ এর অংশগ্রহণে বিসিএর শেফ অব দ্যা ইয়ার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত  » «   ৩০ বছরেও ধরা পড়েনি কোনো আসামী, বিচারের দাবীতে মেয়ের সংবাদ সম্মেলন  » «   ইস্টহ্যান্ডসের ফ্রি স্মার্ট ফোন পেলেন ৪০ জন  » «   সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য পদক ২০২৪’পেলেন কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠক ফারুক আহমেদ রনি  » «   টাওয়ার হ্যামলেটসে হোমলেসনেস-এর প্রস্তাবিত নতুন পলিসি সাসপেন্ড করেছেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর  » «   লন্ডনে বিসিএ এ্যাওয়ার্ডস ২৮ অক্টোবর থাকছে নানা চমকপ্রদ আয়োজন  » «   বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৩২নং বাসভবন ভস্মীভূত এবং ভাস্কর্য ভাংচুরের নিন্দা ও প্রতিবাদ  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

মহামারী ডেঙ্গু নিয়ে অসাধু ব্যবসা



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

রাজধানীতে হঠাৎ করেই মহামারি আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। ইতোমধ্যে ডেঙ্গু মশার ছোবলে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন। প্রতিদিন অনেকটাই স্রোতের মতো হাসপাতালে ছুটে আসছেন শিশুসহ সব বয়সের মানুষ। এসব ডেঙ্গু রোগীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল। এটাকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ব্যবসার ফাঁদ পেতেছে অসাধু চক্র। এই চক্রে হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রয়েছে বিশেষ দালাল চক্র।

সরেজমিন হাসপাতালটি ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন শত শত রোগী ভিড় করছেন এখানে। এদের বড় অংশ জ্বর নিয়ে আসছেন। আর জ্বর নিয়ে আসা এসব রোগীদের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার মধ্যে ডেঙ্গুর পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ফলে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার স্থল ও টাকা জমা দেয়ার স্থলেও ভিড় করছে শত শত মানুষ। এই ভিড়ের মধ্যেই অবস্থান করছেন দালাল চক্র।

চক্রটি রোগী বা রোগীর স্বজনকে বুঝিয়ে পরীক্ষার জন্য অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন অথবা মোটা অংকের কমিশনের মাধ্যমে মুগদা হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। পরীক্ষার টাকা জমা দেয়া স্থলে দীর্ঘলাইন থাকায় অনেকে বাধ্য হয়ে এই দালাল চক্রের সহায়তা নিচ্ছেন। আর যারা দালাল চক্রের সহায়তা নিচ্ছেন না তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও টাকা জমা দিতে পারছেন না।

সম্প্রতি দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে রোগীদের বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এর ফলে রোগীরা কোনো ধরনের ইউজার ফি ছাড়াই বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার সুযোগ পাওয়ার কথা। তবে মুগদা হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন না রোগীরা।

ডেঙ্গুর প্রাথমিক পরীক্ষার জন্য রোগীদের দিতে হচ্ছে ৩০০ টাকা করে। তবে হাসপাতালটিতে আসা অধিকাংশ রোগীর ৩০০ টাকা দিয়েও ডেঙ্গু পরীক্ষা করার সুযোগ মিলছে না। দালাল ও হাসপাতালের অসাধু কর্মকর্তাদের চক্রে পড়ে ডেঙ্গুর প্রাথমিক পরীক্ষার জন্য রোগীদের গুনতে হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা। বাড়তি এই টাকা না দিলে ডেঙ্গুর যন্ত্রণার সঙ্গে হয়রানিও বেড়ে যাচ্ছে কয়েক গুণ।

অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে মুগদা হাসপাতালে দৌরাত্ম্য চালাচ্ছে এমন দালালের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। এ চক্রে যেমন পুরুষ আছে তেমনি আছে নারীরাও। তবে পুরুষদের থেকে নারী দালালদের বেশি সক্রিয়তা দেখা গেছে। এসব দালাল চক্রকে আবার রোগী ভাগিয়ে আনতে কমিশন দিচ্ছে কিছু অখ্যাত ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

মুগদা হাসপাতালে দৌরাত্ম্য চালানো দালালদের এক জন্য সালমা, যিনি মুগদা হাসপাতালের সামনে অবস্থিত সান ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড সেয়ার লিমিটেডের পক্ষে কাজ করছেন। প্রতিদিন সকালে এই নারী মুগদা হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় পরীক্ষার টাকা জমা দেয়ার ক্যাশ কাউন্টারের সামনে অবস্থান নেন।

রোগী সেজে কথা বললে সালমা নিজেকে মুগদা হাসপাতালের কর্মী বলে পরিচয় দেন। ডেঙ্গুর পরীক্ষার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা টাকা জমা দিতে লাগবে ৩০০ টাকা। তবে কী ভিড় সেটা তো আপনি দেখতেই পাচ্ছেন! এখানে লাইনে দাঁড়িয়ে আপনার পক্ষে টাকা জমা দেয়া সম্ভব হবে না। হাসপাতালের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে টাকা জমা দিলে ৫০০ টাকা লাগবে। এত ঝামেলা না করে আপনি ডেঙ্গুর পরীক্ষা বাইরে থেকেও করাতে পারেন। বাইরে থেকে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে আপনার ৬০০ টাকা লাগবে।’

এ সময় এ প্রতিবেদক তাকে প্রশ্ন করেন-আপা, ডেঙ্গুর পরীক্ষা বাইরের কোথা থেকে করা যেতে পারে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘পাশেই ডায়াগনস্টিক স্টোর আছে।’ এরপর তিনি সান ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কেয়ার লিমিটেডের একটি ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দেন এবং বলেন, ‘ওখানে গিয়ে তার পরিচয় দিতে।’

এরপর কার্ডে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে সালমার পরিচয় দিয়ে কথা বললে কাউন্টার থেকে একজন বলেন, ‘সালমা আমাদের লোক। কোনো সমস্যা নেই। আপনি স্লিপ নিয়ে আমাদের এখানে চলে আসেন, স্লিপ দেখলে আমরা বুঝতে পারব পরীক্ষা করতে কত টাকা লাগবে।’

সালমার মতো দ্বিতীয় তলায় একই কাজ করা আর এক নারী সদস্য নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভাই, এখানে আমাদের মতো প্রায় ৫০ জন আছেন। যারা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিকের পক্ষে কাজ করেন। ডায়াগনস্টিকে পরীক্ষার জন্য রোগী পাঠানো হলে আমরা কিছু কমিশন পাই। আবার এখানে হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ আছে। তাদের মাধ্যমে এখানেও আমরা দ্রুত পরীক্ষা করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারি। এজন্য প্রতি রোগীকে দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা বেশি দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডায়াগনস্টিক সেন্টার আমাদেরকে এখান থেকে রোগী পাঠানোর দায়িত্ব দেয়ার পাশাপাশি হাসপাতালের কর্মকার্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখে। তাদেরকেও কমিশন দেয়। যে কারণে এই হাসপাতালে এসে সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজে পরীক্ষার টাকা জমা দেয়া সম্ভব হয় না। নিজে টাকা জমা দিতে হলে সকাল ৬-৭টার সময় এসে লাইনে দাঁড়াতে হবে। এরপর যারা আসেন তাদের পক্ষে আর টাকা জমা দেয়া সম্ভব হয় না। তবে কিছু বাড়তি টাকা দিলে আমরা ব্যবস্থা করে দেই।’

মানিকনগর থেকে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করতে আসা মো. আসলাম মিয়া বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৮টার সময় এসে কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়াই। ১১টা বেজে গেলেও টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হই। এরপর এই আপার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারী) মাধ্যমে টাকা জমা দিয়েছি। এজন্য ৩০০ টাকার জায়গায় ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। বাইরে পরীক্ষার জন্য তো আরও বেশি টাকা দিতে হবে। আর নিজে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টাকা জমা দিতে পারব কি না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই বাধ্য হয়ে এটি করতে হয়েছে।’

ক্যাশ কাউন্টারের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ডেঙ্গুর পরীক্ষা ফ্রিতে করতে হবে এমন কোন নির্দেশনা আমরা পাইনি। নির্দেশনা পেলে তখন আমরা সেভাবে পদক্ষেপ নেব। আর এখন যে পরীক্ষার জন্য যে মূল্য তা আমরা বাইরে সাইনবোর্ডে লিখে ঝুলিয়ে দিয়েছি। বাড়তি টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। আমাদের এখানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা দিতে পারবে, আমরা সবার টাকা নেব।’

সূত্র: জাগো নিউজ


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন