বিয়ানীবাজারের পৌর শহরে পাশে কয়েকটি পয়েন্টে ভ্যানের মধ্যে গ্যাসের চুলা, সিলিন্ডার ও পিঠা তৈরির উপকরণ নিয়ে দুপুরের পরপরই উপস্থিত হোন মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা। রিকশাচালক, দিনমজুর, ব্যবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষক, ছোট বড় সব শ্রেণি পেশার মানুষ এই মৌসুমি পিঠা দোকানের ক্রেতা।
পিঠা কিনতে এসে অপেক্ষায় থাকা আবু হানিফ উসমান জানান, শীতের সময় চিতই, ভাপা পিঠা খেতে ভালো লাগে। বিশেষ করে নানা রকম ভর্তা দিয়ে গরম চিতই পিঠার স্বাদ অতুলণীয়। এটা গরমের সময় ততটা খাওয়া যায় না। তা ছাড়া ভাপা পিঠাও বেশ মজার।
পাশে থাকা তার বন্ধু আবু জাফর কথায় যোগ করেন, এ সময় পিঠার জন্য দোকানে সিরিয়াল দেওয়া লাগে। বাজার কেন্দ্রিক থাকার সুবাদে বিকালের নাশতা চিতই আর ভাপা পিঠা দিয়ে সেরে নেই।
পিঠা কিনতে আসা চাকুরিজীবী হুমায়ুন রশীদ বলেন, শীত আর পিঠা কেমন যেন একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। ছোটবেলায় মাটির চুলোয় মা পিঠা বানিয়ে দিতেন আর সন্ধ্যার সময় বই নিয়ে পড়তে পড়তে পিঠা খেতাম। কর্মব্যস্ততার কারণে বাসায় এসব পিঠা বানানোর সময় হয়ে উঠে না। তাই দোকানে আসলাম পিঠা বাসায় নিয়ে ছেলে মেয়েসহ একসঙ্গে খাওয়ার জন্য।
পিঠা বিক্রেতা শাহজাহান মিয়া জানান, শীতে চিতই পিঠার চাহিদা বাড়ে। নানা রকম ভর্তা দিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পিঠা খেতে ভিড় লেগে থাকে। একই সঙ্গে ভাপা পিঠাও প্রচুর বিক্রি হয়। শীতের দিনে গরমের যন্ত্রণা থাকে না। লোকজন শান্তি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে মন ভরে পিঠা খেতে পারে।
পিঠা খেতে আসা মাজহারুল ইসলাম বলেন, আগে প্রায় প্রতিটি পরিবারে মহিলারা নানা রকমের পিঠা তৈরি করতেন, সবাই মজা করে খেতাম। এখন মহিলারা কষ্ট করতে চায় না, আমাদের উল্টো কাজ করতে হয় এখন- পুরুষরা বাজারে এসে খাই এবং পরে পরিবারের সদস্যদের জন্য বাসা-বাড়িতে নিয়ে যাই।
আরেক পিঠা বিক্রেতা সোলেমান হোসেন জানান, শীত আসতেই কাজের চাপ বেড়ে যায়। পিঠা বানানো থেকে সবকিছু করতে হয়। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার হয়। তিনি ৫টি চুলায় পিঠা তৈরি করেন। প্রতিদিন বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে পিঠা বানানো ও বিক্রি করতে হয়। অনেক সময় বেশি ক্রেতা আসলে ভীড় জমে যায় আমার ভ্যানকে ঘিরে।
পিঠা বিক্রেতারা আরও জানান, বছরের এই সময়টা পিঠা বেচা-বিক্রি বেশি হয়। তাই এই সময়ে দোকানিরা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারেন। বর্তমানে চিতই, ভাপা, বরাপিঠা, পাটিসাপটাসহ ৩ থেকে ৪ ধরণের পিঠা তৈরি করছেন তারা। আর চিতই ও ভাপা পিঠা খাওয়ার জন্য থাকছে নারকেল গুরসহ বাহারি পদের ভর্তা। শীত যত বাড়বে তাদের পিঠা বিক্রিও ততো বাড়বে। তবে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পিঠা বিক্রি করে আগের মতো তেমন আয় করতে পারছেন না পিঠা বিক্রেতারা।