বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক জালাল উদ্দিনকে বাংলাদেশে তার বসতবাড়িতে আপন বড়ভাই সুনাম উদ্দিন, তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাবিয়া বেগম এবং পালিত কন্যা মান্না বেগম (পিতা: রুহুল আমীন) এবং তাদের সহযোগী আব্দুল হাসিব উদ্দিন( পিতা:মৃত ইন্তাজ আলী, গ্রাম: পাথাড়িপাড়া)গং কর্তৃক পূর্ব পরিকল্পনা করে অমানষিক নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মরহুম জালাল উদ্দিনের পরিবার।
৩০ আগস্ট পূর্ব লন্ডনে বেলা ২টায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক, সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দের সামনে তাদের অভিযোগ তুলে ধরে যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন ও বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টির মাধ্যমে তাদের পিতা হত্যার সুস্ঠু বিচার দাবী করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়- তাদের পিতা জালাল উদ্দিন ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার তাজপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে একা বাস করছেন। যুক্তরাজ্য থেকে নিজ মাতৃভূমির টানে ২শত হাজার পাউন্ডের অধিক নিয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন নিজের ভূসম্পত্তিতে এগ্রিকালচার ফার্ম করে বিনিয়োগ করতে। কিন্তু আপন বড়ভাই কর্তৃক তিনি জমি ভোগ দখল ও মানষিক ও শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিলেন। গত ১৯ আগস্ট শনিবার ২০২৩ আনুমানিক ৪:২০টায় জালাল উদ্দিন (৬০) কে অমানুষিকভাবে পিঠিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়ে মরহুম জালাল উদ্দিনের পরিবারের পক্ষে ভূমিকা বক্তব্য রাখেন ৫২বাংলা হেড অব কমিউনিটি এফেয়ার্স, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট, বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি ছরওয়ার আহমদ।
পিতা হত্যার অভিযোগ করে – ঘটনার তথ্য, আলামত, গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বাক্ষিদের বক্তব্য, ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহযোগিতায় জালাল উদ্দিনের ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়াসহ বিস্তারিত তুলে ধরেন তার মেয়ে জুবেদা জালাল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- তার জামাতা জাফর ইকবাল।
এসময় পরিবারে পক্ষ থেকে তার মেয়ে রেজওয়ানা জালাল ,ছেলে ওমর ফারুক ও ওমর শরীফ উপস্থিত ছিলেন।
মরহুম জালাল উদ্দিনের মেয়ে জুবেদা জালাল বলেন, বৃটেনের ফরেন বিভাগ, বাংলাদেশস্থ যুক্তরাজ্য হাইকমিশন আমাদের অভিযোগটি আমলে নিয়ে দ্রুত কার্যকরি সহায়তা করলেও বাংলাদেশে আমার বাবার লাশের ময়না তদন্তের জন্য দীর্ঘ ৫৯ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে । প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের প্রথমে মামলা না নেওয়া এবং এখনও ময়না তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়ার অভিযোগ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন।
এসময় তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। অমানুষিক নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরার সময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্বজনরা বলেছেন-‘ আমরা আপনাদের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ হাইকশিশন, বাংলাদেশ সরকারেরর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সকলের সামনে তুলে ধরতে চাই। আমার বাবা ব্রিটিশ নাগরিক জালাল উদ্দিনের হত্যার বিচার চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যটি তুলে ধরা হলো-
সম্মানীত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক, সাংবাদিক ও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ, আসসালামুআলাইকুম।
আমি জুবেদা জালাল । বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত, ব্রিটিশ নাগরিক। যুক্তরাজ্যে লন্ডনে আমার জন্ম, লেখাপড়া এবং একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
আমার শ্রদ্ধেয় পিতা জালাল উদ্দিন । বয়স ৬০ বছর। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। যুক্তরাজ্যে লন্ডনের Southwark brougha Council এর বাসিন্দা।
বাংলাদেশে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে। আমার দাদার নাম মরহুম মাহমুদ আলী । চার ভাই ও ১ বোন বোনের মধ্যে আমার বাবা পঞ্চম।
আমার পিতা জালাল উদ্দিনকে বাংলাদেশে তার বড়ভাই সুনাম উদ্দিন কর্তৃক অমানুষিক শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে।
এবিষয়ে তথ্য, আলামত, গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বাক্ষিদের বক্তব্যের ভিত্তিতে ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহযোগিতায় আমার বাবা মরহুম জালাল উদ্দিনের ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়াসহ বিস্তারিত আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সকলের সামনে তুলে ধরতে চাই। আমার বাবা ব্রিটিশ নাগরিক জালাল উদ্দিনের হত্যার বিচার চাই।
ঘটনার বিবরণ :
১৯ আগস্ট শনিবার ২০২৩ আনুমানিক ৪:২০টায় নিজ বাড়ীতে ব্রিটিশ নাগরিক জালাল উদ্দিন (৬০) কে অমানুষিকভাবে পিঠিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আমার বড় চাচা সুনাম উদ্দিন, তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাবিয়া বেগম এবং পালিত কন্যা মান্না বেগম ( পিতা: রুহুল আমীন) এবং তাদের সহযোগী আব্দুল হাসিব উদ্দিন( পিতা: মৃত ইন্তাজ আলী, গ্রাম: পাথাড়িপাড়া)গং পূর্ব পরিকল্পনা করে তাদের কেয়ারটেকারকে আমাদের পুকুরে মাছ ধরতে পাঠায়- যাতে আমার বাবা উত্তেজিত হোন।
পরে আমার বাবা জালাল উদ্দিনের বাণিজ্যিকভাবে মাছচাষ করা পুকুরে তার বড়ভাই সুনাম উদ্দিনের কেয়ারটেকারকে – ‘মাছ না ধরার ‘ অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা কেউ কথা শুনেনি। উল্টো আমার বাবাকে মারধর করে। তাকে পানিতে ডুবিয়ে, এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি ও টানা হেছরা করেন। একসময় তাকে দা দিয়ে আঘাতের চেষ্টা করেন। আমার বাবা জালাল উদ্দিন কোনভাবে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে বারান্দায় এসে পড়ে যান। এসময় তিনি প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ভূগছিলেন এবং প্রায় কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বে বাবা জালাল উদ্দিন বারবার বলেছেন-“ সুনাম উদ্দিন তুমি আমারে আজ যেভাবে মারছ,আমারে আর কোনদিন মারতে ফারতায় নায়।‘‘
মৃত্যুর পর গ্রামের একজন ফার্মাসিস্টকে ডেকে আনা হয়। তিনি তার মৃত্যু হয়েছে নিশ্চিত করেন। প্রতিবেশীরা যখন তাকে দেখেন তখন জালাল উদ্দিনের পেট ভর্তি পানি ছিল।পরদিন তাকে তড়িগড়ি করে দাফন করা হয়।
আমার বাবার বড়ভাই সুনাম উদ্দিন দীর্ঘদিন থেকে পারিবারিকভাবে আমার বাবা ও চাচাদের জমি-জমার নায্য ভাগ দিচ্ছেন না। অবশেষে ২০১৯ সালে পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগ হলেও আমার বাবা তার জমির দখলীস্বত্ত পাননি। উপরন্তু আমাদের এক চাচা প্রাণভয়ে তার অংশ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে সেখান থেকে পৈত্রিকভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।
আমার বাবাকে এর আগেও বেশ কয়েকদিন সুনাম উদ্দিন শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন। তিনি মামলা- হামলার ভয়ে থানায় কোন মামলা করেননি।
প্রায় ২৫বছর পূর্বে সিলেটের উপশহরে আমার বাবা-চাচা ( চারভাই মিলে)একটি বাসা যৌথভাবে কিনেছিলেন,কিন্তু সুনাম উদ্দিন বাকী তিনভাইকে বাদ দিয়ে গোপনে তার নামে রেজিস্টার করে নিয়েছেন।
আমাদের দাদী তার নিজ অর্থ দিয়ে কিছু জমি কিনে আমার বাবার নামে রেজিস্টার করে দিয়েছিলেন। এই জমির অর্জিত ফসলের টাকা সদকায়ে জারিয়া হিসাবে আমার বাবা ব্যয় করতেন। এই জমিও সুনাম উদ্দিন জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছেন। এবং এই জমির মূল কাগজ সুনাম উদ্দিন তার কাছে রেখে দিয়েছেন। আমার বাবা বহুদিন থেকে এই কাগজ উদ্ধারে চেষ্টা করেও পারেননি।
আমার বাবা জালাল উদ্দিন লন্ডনের নিজের ঘর বিক্রি করে প্রায় দুই কোট টাকা নিয়ে দেশে গিয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল গ্রামে তার জমিতে এগ্রিকালচার ফার্ম করার। মূলত এসব করেই তার বাকী জীবন সুখে কাটাতে চেয়েছিলেন।
আমার বাবাকে হত্যায় বড় চাচা সুনাম উদ্দিনের সাথে ছিল তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাবিয়া বেগম এবং পালিত কন্যা মান্না বেগম ( পিতা: রুহুল আমীন) এবং তাদের সহযোগী হিসাবে কাজ করেছে একই এলাকা- পাথারীপাড়া গ্রামের মৃত ইন্তাজ আলীর ছেলে আব্দুল হাসিব উদ্দিন।
এর আগেও বিভিন্ন সময় সুনাম উদ্দিন আমার বাবাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন।
হত্যাকারী সুনাম উদ্দিন তাজপুর গ্রামের ত্রাস ও মামলাবাজ হিসাবে পরিচিত। গ্রামের বেশীরভাগ মানুষ নিন্ম মধ্যবিত্ত। তাদের গৃহপালিত হাঁস, মোরগ, গরু, ছাগল ইত্যাদি তার জায়গায় অনুপ্রবেশ করলে সে প্রাণে মেরে ফেলে- এরকম অনেক উদাহরণ আছে। তারপরেও বিভিন্ন সময় গ্রামের মানুষ তার অপরাধের প্রতিবাদ করেছেন। যারাই প্রতিবাদ করেছেন, পরবর্তিতে মাদক ও ডাকাতি মামলায় তাদেরকে হয়রানী করেছে এবং এখনও করছেন। ফলে গ্রামে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রাণভয়ে কথা বলতে পারেননা। কোন শালিস বৈঠকেও গ্রামবাসী অপমানের ভয়ে আর আসতে চান না।
কেন আমাদেরকে দেরী করে ময়না তদন্তের জন্য আবেদন করতে হলো ?
শ্রদ্ধেয় সাংবাদিকবৃন্দ। খুব স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, কেন লাশ দাফনের পূর্বে আমার বাবার ময়না তদন্ত করা হয়নি।
প্রথমত আমার বাবা বাংলাদেশে একা ছিলেন। আমরা খবর পাই (১৯ আগস্ট) মৃত্যুর প্রায় চার ঘন্টা পরে, আত্নীয়দের মাধ্যমে। আমরা এতোই বেদনাভারাক্রান্ত ছিলাম যে,চাচা সুনাম উদ্দিনের প্রতি প্রচন্ড ক্ষোভ থাকলেও বাবা জালাল উদ্দিনকে যে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে- সে সময় আমাদের বিচার বুদ্ধিতে আসেনি। সুনাম উদ্দিন তড়িগড়ি করে পরের দিন লাশ দাফন করেন। এরপরেই আমাদের আত্নীয় ও প্রতিবেশীদের নিকট থেকে জানতে পারি- সেদিন কীভাবে সুনাম উদ্দিন তাকে মারধর করেছেন এবং মৃত্যুর পূর্বে বাবা শেষ কী কথা বলেছেন।
বাবা মারা যাওয়ার তিনদিন পরে চাচা সুনাম উদ্দিন আমাদের ঘরে তালা মেরে সিলেট চলে যান। আমি সংবাদ পেয়ে সুনাম উদ্দিনকে লন্ডন থেকে ফোন দিলে তিনি বলেন – ‘আমি মনুকে দিয়ে ঘরে তালা মারিয়েছি। ঘরের তালা খুলে দেয়া সম্ভব নয়।’ তিনি আরও বলেন, আমার বাবার পাসপোর্ট ও ওয়ালেট সহ অন্যান্য জিনিস তার হাতে তুলে দিতে।
আমাদের পরিবারের সদস্যরা সহ আত্নীয় স্বজন তাকে অনেক অনুরোধের এক পর্যায়ে তিনি বাড়ি আসলেও আমাদের ঘরের তালা খুলে দিতে অস্বীকার করেন। এবং বলেন কেউ যেন ঘরের তালা খুলার সাহস না করে।
এই সময় আশপাশের মানুষ সুনাম উদ্দিনকে বুঝানোর উদ্দেশে বলেন- আপনার ভাইর সাথে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত ঝগড়া করেছেন, এখন উনি মৃত, অন্তত এখন এইসব বাদ দিয়ে তাদের ঘরের তালা খুলে দেয়ার অনুরোধ করেন।
সুনাম উদ্দিন উত্তেজিত হয়ে এক পর্যায়ে বলেন – ‘হ্যা আমি আমার ভাইকে মারছি । তোমরা উপরে যাইতে চাইলে যাও। আমাকে তোমরা কিছুই করতে পারবে না।’
মূলত আমার বাবার পাসপোর্ট, জমিজমা ইত্যাদি ডকুমেন্ট হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা, ঘরে তালা মারা এবং মৃত্যুর পর থেকে তার সকল কাজে সন্দেহজনক ও অদ্ভুত আচরণ, প্রতিবেশী ও প্রত্যক্ষর্শীদের কথায় আমাদের সন্দেহ আরও শক্ত হয়।
তারপর আমার আত্নীয়রা বিয়ানীবাজার থানায় একটি অপমৃত্যুর অভিযোগ করে মামলার জন্য পাঠালে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ মামলা নথিভুক্ত করেনি।
এরপর আমি অসহায় হয়ে যুক্তরাজ্যের ফরেন বিভাগে ইমেইলে আমার কনসার্ণ তুলে ধরি। তাদের পরামর্শে আমি বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনে বিষয়টি জানাই। বাংলাদেশস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় – প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের প্রবাসী হটলাইনে আমার বাবার হত্যার অভিযোগ তুলে ময়না তদন্তের আবেদন করি। কিন্তু তাতেও কোন সমাধান না হওয়াতে অনন্যপায়ী হয়ে আমি গত ১৩ সেপ্টেম্বর আমার এক বছর বয়সী সন্তানকে ইউকেতে রেখে আইনজীবীদের সহায়তা নিয়ে সুনাম উদ্দিন, তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাবিয়া বেগম এবং পালিত কন্যা মান্না বেগম ( পিতা: রুহুল আমীন) এবং তাদের সহযোগী আব্দুল হাসিব উদ্দিন( পিতা: মৃত ইন্তাজ আলী, গ্রাম: পাথাড়িপাড়া)গংদের বিরুদ্ধে সিলেট জুডিশিয়াল কোর্টে একটি হত্যা মামলা দায়ের করি।
পরবর্তিতে মাননীয় আদালত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ হত্যা মামলার এফআইআর সহ ময়না তদন্তের আদেশ দেন। এফআইআর নং হলো-৩৬৫৭(৫)/ ১ ও বিয়ানীবাজার সিআর মামলা নং ২৭১/২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ। কিন্তু তারপরও অজানা কারণে প্রায় তিন সপ্তাহ পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে।
১৭ অক্টোবর, দুপুরে,দীর্ঘ ৫৯ দিন পর সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাহমুদুল ইসলামের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করা হয়।
ময়না তদন্ত শেষ হলেও অজানা কারণে আমার বাবার ময়না তদন্তের রিপোর্ট আমরা এখনও পাচ্ছিনা। উপরন্তু আমার স্বাক্ষী এবং গ্রামের আশে পাশের নিরীহ প্রতিবেশীদের প্রায় প্রতিদিন হুমকী দেয়া হচ্ছে এই বলে যে, যদি এনিয়ে কেউ কথা বলে তাহলে তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। স্বাক্ষিদের সুনাম উদ্দিন বলছেন, তিনি আওয়ামীলীগ করেন,মামলা নিয়ে কথা বললে সবাইকে শেষ করে দেবো। মামলার স্বাক্ষীরা এই মুহুর্তেই অসহায়ত্ব প্রকাশ করে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
ঘটনাটি স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় অনেক তরুণ এই বিষয়ে প্রতিবাদী হওয়াতে সুনাম উদ্দিন ও তার সন্ত্রাসীবাহিনী তাদেরকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এবং সুনাম উদ্দিনগণ পরিবারে লোক পাঠিয়ে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত চিন্তা করে এই বিষয়ে নাক না গলাতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
প্রসঙ্গত সুনাম উদ্দিন পরিবারের বড় ছেলে হওয়ার সুবাদে পারিবারিক সম্পত্তি মূলত তিনি একাই ভোগ করেন। ২০১৯ সালে পারিবারিক সম্পত্তি ভাগ করা হয়।
তিন নম্বর ভাই জয়নাল উদ্দিন প্রাণ বাচাতে বাধ্য হয়ে নামমাত্র মূল্যে তার সম্পতি বিক্রি করে অন্যত্র চলে গেছেন।
দুই নম্বর ভাই নিজাম উদ্দিন তার পুরো সম্পতি এখনও নিজের দখলে আনতে পারেননি। বর্তমানে তিনি স্থানীয় মসজিদ কমিটির কাছে সালিশ জানিয়ে তার বাড়ি ও জমি উদ্ধারের আবেদন করেছেন। এবং ২০১৯ সালে বন্টনকৃত আমার বাবার প্রাপ্ত সম্পত্তি সুনাম উদ্দিন জবরদখল করে ভোগ করে আসছেন।
আমার বাবা জালাল উদ্দিন খুবই পরপোকারী লোক ছিলেন। করোনা পেনডামিক সময়ে তিনি সুরক্ষা সামগ্রীসহ গ্রামের নিডি মানুষদের সহযোগিতা ছাড়াও সকল সময় মানুষের পাশে থেকেছেন।
তিনি লন্ডনের নিজের ঘর বিক্রি করে প্রায় দুইশত হাজার পাউন্ড নিয়ে দেশে গিয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল গ্রামে তার জমিতে এগ্রিকালচার ফার্ম করার। মূলত এসব করেই তার বাকী জীবন সুখে কাটাতে চেয়েছিলেন।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আমি আমার বাবার হত্যার পেছনের কারণ এবং ময়না তদন্ত পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সকল বিষয় আপনাদেরকে অবগত করলাম। আপনাদের সকলের সহযোগিতায় আমার বাবা জালাল উদ্দিনের হত্যার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত তরান্বিত করার লক্ষ্যে আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।
বিনীত
মরহুম জালাল উদ্দিনের পরিবারের পক্ষে তার মেয়ে
জুবেদা জালাল
লিখিত বক্তব্য পাঠ : জাফর ইকবাল (জুবেদা জালালের স্বামী )
তারিখ : ৩০.১০.২০২৩ খ্রি
স্থান: লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব
সম্পত্তির লোভে ব্রিটিশ নাগরিক জালাল উদ্দিনের জীবন কেড়ে নিল ভাই!