ম্যানচেস্টার। আমাদের কৈশোরে এই নাম শুনলেই চলে আসতো ইউনাইটেড নাম। স্যার আলেক্স ফার্গুসেনের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। পৃথিবীর অন্যতম সেরা ফ্যান বেইজ সমর্থকদের ক্লাব। খেলা কিংবা বানিজ্য সবদিক দিয়েই শীর্ষে এক ফুটবল উম্মাদনার নাম।
ফুটবলে টাকার ঝনঝনানির শুরুতে রিয়াল মাদ্রিদের গ্যালাক্টিকো তৈরী করতে গিয়ে সাফল্য এবং বানিজ্যিক খেলায় রিয়ালও যুক্ত হয় সেই এলিটিজমে। লিভারপুল -এসি মিলান -ইন্টার মিলান -চেলসি এসব ক্লাবকে ছাড়িয়ে বার্সেলোনা তখন ধাক্কা দেয় ফুটবল দুনিয়াকে।
বিশেষত পেপ গার্দিওয়ালার সর্বজয়ী বার্সেলোনা। একাডেমি হতে বের হওয়া প্লেয়াররাই ছিল বার্সার শক্তি।
আরব ধনকুবের ম্যানচেস্টারের আরেকটি ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিকে কিনে নেওয়ার পর ইংলিশ ফুটবলে চেলসির পরে আরেকটি শিরোপা রেসের ঘোড়া যেন যুক্ত হয় ।
এদিকে বার্সেলোনার সর্বজয়ী কোচ হয়ে পেপ গার্দিওয়ালা পাড়ি জমান জার্মানীতে। সেখানে বায়ার্ন মিউনিখ কে একমাত্র চ্যাম্পিয়ন লীগের শিরোপা ছাড়া বাকি সব কাপ জিতিয়ে পাড়ি জমান দুনিয়ার সবচাইতে প্রতিযোগীতা পূর্ণ লীগ -ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ম্যানচেস্টারের ছোট ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিতে।
সবচাইতে আন ইভেনস হাই প্রেসিং সেই প্রতিযোগীতাময় ইংলিশ প্রমিয়ার লীগকে প্রায় এক ঘোড়ার রেসে পরিণত করে দিয়েছে বর্তমান ফুটবলের এক পাগলাটে এক্সপিমেন্টাল কোচ পেপ গার্দিয়ালা।
গত এক যুগে মোট সাত বার প্রিমিয়ার লীগ জয়ী ম্যানচেস্টার সিটি পেপ গার্দিওয়ালার অধীনে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ চ্যাম্পিয়নশীপ টাইটেল জিতেছে টানা তৃতীয় বার আর শেষ ছয় মৌসুমের যাত্রায় মোট পাচঁ বার ।
প্রায় দেড়শো বছরের ম্যানচেস্টার সিটির ক্লাব ইতিহাসে নয়টি লীগ শিরোপা অর্জন করা দলের পাচঁটি লীগ শিরোপা এনে দেওয়া কোচ হলেন গার্দিওয়া তাও মাত্র ছয় মৌসুমে। কোচ লিগ্যাসির ক্যারেশমেটিক মস্তিকের তালিকায় পেপ কে ছাড়া এখন টপ তালিকা করা প্রায় অসম্ভব।
১৯৯৯ সালে একমাত্র ইংলিশ ক্লাব হিসাবে ট্রেবল জয়ী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো এবার ম্যানচেস্টার সিটির সামনে সুযোগ এসেছে ট্রেবল জয়ের। যা ইউরোপীয় ফুটবলে মাত্র নয়টি দলের এই ট্রেবল কীর্তি আছে। এবার সিটি সেটি করতে পারলে দ্বিতীয় ইংলিশ ক্লাব হিসেবে সিটির সাথে পেপের ঝুলিতে একমাত্র তকমা যুক্ত হবে যিনি দুটি ক্লাব কে ট্রেবল জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বার্সেলোনার পরে সিটিকে ও একটি ড্রিম টিমের ট্যাগ যুক্ত করে দেবার চান্স এসেছে পেপের সামনে। ইতিমধ্যেই ট্রেবল জয়ী কোচ হিসাবে নাম লিখিয়েছেন পেপ গার্দিয়ালা সর্বজয়ী বার্সেলোনাকে দিয়ে ।
এফএ কাপ এবং চ্যাম্পিয়ন লীগের ফাইনালে চলে আসা সিটির সামনে মাত্র দুটি ম্যাচই হয়তো পূর্নতা দিয়ে দিবে সিটি এবং পেপ কে।
স্যার আলেক্স ফার্গুসেন বলেছিলেন- ম্যাচ জিতায় ফরোয়ার্ড আর টুর্নামেন্ট জিতায় ডিফেন্স।
২০১৬ সালে ম্যানচেস্টার সিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর পেপ যেন এই সূত্রকেই ধ্যান জ্ঞান করে একটি ব্যালেন্স স্কোয়াড তৈরী করেন। ডিফেন্স আর মিড ঠিক করতে যে পরিমান ডলার খরচ করেছেন সেটা অনেক দেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যায়ের চাইতে ও ছিলো অধিক।
ইতিমধ্যে চ্যাম্পিয়ন লীগের ফাইনালে অতিরিক্ত এক্সপেরিমেন্ট চালাতে গিয়ে শেষ হার্ডলে আটকে গিয়েছিলেন এই সিটি কে নিয়ে তবে এবার বেঞ্চের ডেপথ কে যে ভাবে ব্যবহার করেছেন প্রতিটি প্রতিযোগীতায় স্পেশালী প্রিমিয়ার লীগে সারা বছরই আর্সেনালের সাথে রেসে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যায়ে এসে নার্ভ ধরে রেখে প্রেসিং করে টানা জয়ের ধারায় সিটিকে ঠিকেয়ে রেখে প্রতিপক্ষকে এক্কেবারে পিষ্ট করে এগিয়ে গেছেন সেটাকে অন্য দলের উপর এক ধরনের রংবাজি বলা যায় নিঃসন্দে।
কারণ লীগ রেসের সাথে এফ এ কাপ এবং চ্যাম্পিয়ন লীগের টানা ধকল টেনেছেন সেটা সম্ভব হয়েছে স্কোয়াড ডেপথ এর কারনেই।
রিয়াল মাদ্রিদ কে চ্যাম্পিয়ন লীগের সেমি ফাইনালে যেভাবে নক আউট করেছেন পেপ সেটা ছিলো অবিশ্বাস্য। কারণ প্রতিপক্ষ হিসাবে চ্যাম্পিয়ন লীগের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল এর সমসাময়িক সময়ের কামব্যাক ম্যাচগুলির কারনে আলাদা একটি চাপ তৈরী হয়ে গিয়েছিলো প্রতিপক্ষ দলগুলির মাঝে সেখানে পেপ নিজেই চেয়েছিলেন রিয়াল আসুক প্রতিপক্ষ হয়ে।
ওয়েন রুনির ভবিষৎ বাণীকে বাস্তবে যেন প্রমাণ করার নেশায় পেয়ে গিয়েছিলো সিটিজেনদের মাঝে। তিনি বলেছিলেন -ম্যানচেস্টার সিটি রিয়াল মাদ্রিদ কে শুধু হারাবেই না ডিস্ট্রয় করে দিবে। ম্যানচেস্টার সিটি যেন সেটি করেই আগামীর ফুটবল মৌসুম গুলির জন্য রংবাজি শুরু করেই দিল।
ফুজেল আহমদ: লেখক, ক্রীড়া বিশ্লেষক
টরেন্টো; কানাডা।
২৩মে,২০২৩ সাল।