পবিত্র ঈদ ইসলামের অনুসারীদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব। এর আনন্দ সকলের জন্য সমান হওয়া চাই। অথচ এই দিনে ব্রিটেনের মূলধারার প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি পেলেও আমাদের মালিকাধীন বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্র থেকেই কর্মীদের ছুটি দেয়া হয় না। ফলে ঈদের দিনও তাদের কাজে ছুটতে হয়। এতে হাজার হাজার কর্মী, তাঁর পরিবার ও স্বজনদের ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে যায়। এই অসাম্য দূর করা বহুদিনের ন্যায্য দাবী, সামাজিক দাবী এবং সর্বোপরি ধর্মের দাবী।
এই দাবী পূরণে প্রতিষ্ঠানসমূহের মালিকদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট। তাদের একটি নৈতিক সিদ্ধান্তই বর্তমানের চিত্র বদলে দিতে পারে। বছরে দুটি দিন বন্ধ রেখে কিংবা খোলা রাখার বিকল্প ব্যবস্থা করে মালিকপক্ষ কর্মীদের ঈদের ছুটির ব্যবস্থা করতে পারেন। বাস্তবে তা হচ্ছে না।
যুক্তরাজ্যে ঈদের ছুটি চাই- শ্লোগানে সাপ্তাহিক পত্রিকা ও ৫২বাংলা টিভি একটি যৌথ সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছে।
কমিউনিটিতে সামাজিক প্রচারণার ধারাবাহিক অংশ হিসাবে ১৮ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুর ২টায় পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেলে এক সমাবেশ এর আয়োজন করা হয়।
কমিউনিটির বিশিষ্ট সংগঠক,ব্যারিস্টার ,মানবাধিকার কর্মী, লেখক, সাংবাদিক সমাজকর্মী সহ বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশে শ্লোগাণে ও বক্তব্যে উচ্চারিত হয়েছে- যুক্তরাজ্যে ঈদের ছুটি‘র দাবী পূরণে প্রতিষ্ঠানসমূহের মালিকদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট।
সমাবেশে অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন হিউম্যার রাইটস ল-ইয়ার ব্যারিস্টার মাসুদ চৌধুরী, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রহমত আলী।
যুক্তরাজ্যে ঈদের ছুটি চাই- ক্যাম্পেইনের সমন্বয়ক ও ৫২বাংলা সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম অভি সঞ্চালনায় ক্যাম্পেইন সম্পর্কে ভূমিকা বক্তব্য রাখেন অপর সমন্বয়ক ও ৫২বাংলা টিভির হেড অফ পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ভিপি ছরওয়ার আহমদ।
কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন যুক্তরাজ্যে ঈদের ছুটি চাই এর হোয়াইটচ্যাপে ক্যাম্পেইন ২০২৩ সমন্বয়ক সিনিয়র সাংবাদিক ও ৫২বাংলা য়ুক্তরাজ্য চ্যাপ্টার সম্পাদক চৌধুরী মুরাদ।
নিউম্যান রাইটস ল-ইয়ার ব্যারিস্টার মাসুদ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, বিশেষ দিনে শ্রমিকের ছুটি পাওয়া তার অধিকার। বহুভাষা ও সংস্কৃতির ব্রিটেনে শ্রমিকের ছুটি নিশ্চিত করার বিধান থাকলেও বিশেষ দিনে সকল ধর্ম ও জাতিগত উৎসবের ছুটি কার্যকর হচ্ছেনা।
তিনি বাংলাদেশীদের দ্বারা পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্টাফদের বছরের দুটি ঈদে ছুটির দাবী জানিয়ে বলেন-ঈদের ছুটি বাস্তবায়নে মালিকদের ইচ্ছাশক্তিই প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে। এবং তা সম্ভব হলে কমিউনিটির সর্বস্তরে একটি অনুকরণীয় ইতিবাচক বার্তা পৌছবে। তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে এই ক্যাম্পেইন সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করার প্রতিও গুরুত্ব দেন।
লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট রহমত আলী বলেন, ঈদের ছুটি একটি মৌলিক দাবী। বিশেষ করে বাংলাদেশী ক্যাটারার্সদের দ্বারা পরিচালিত রেস্টুরেন্টগুলোর স্টাফরা ঈদের ছুটি থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে। যা মানবাধিকার লঙ্গনের শামিল।কারী ইন্ড্রাস্ট্রির অব্যাহত স্টাফ সংকট সময়ে বছরের দুটি ঈদে স্টাফদের ছুটি বাস্তবায়ন করলে তারা কাজে অনুপ্রাণীত হবেন । এবং অন্যরাও এই কাজে স্বাচ্ছন্দে এগিয়ে আসবেন।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের মিডিয়া এন্ড আইটি সেক্রেটারী ও টুএ টিভির সম্পাদক মো. আব্দুল হান্নান, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের ইভেন্ট এন্ড ফেসিলিটিস সেক্রেটারী ও চ্যানেল এস এর সিনিয়র রিপোর্টার রেজাউল করিম মৃধা, এনটিভি ইউরোপের লন্ডন করেসপন্ডেন্ট কয়েস আহমদ রুহেল,বাংলা সংলাপের বিশেষ প্রতিনিধি সাজু আহমদ, হাওয়া টিভির পরিচালক কিশোয়ার আনাম লিটন, ইউকে বাংলা নিউজের ডাইরেক্টর মহিউদ্দিন আফজাল, ৫২বাংলা কমিউনিটি করেসপন্ডেন্ট আবু রহমান, জাহেদ আহমদ রাজ, বড়লেখা ফ্রেন্ডস ক্লাব ইউকের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুনিম বেলাল ও কমিউনিটি কর্মী কয়েস উদ্দিন প্রমুখ।
বক্তারা যুক্তরাজ্যে ঈদের ছুটি চাই- শ্লোগাণে সাপ্তাহিক পত্রিকা ও ৫২বাংলা টিভির যৌথ সামাজিক আন্দোলনের সাথে একাত্নতা প্রকাশ করে বলেন, ইতিমধ্যে সামাজিক যোগযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ক্যাম্পেইনটি কমিউনিটিতে একটি শক্ত ভয়েস তুলে ধরতে পেরেছে।
এই ক্যাম্পেইনের উদ্যোক্তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও পরিচালকদের মানবিক বোধটি জাগ্রত করার অনুরোধ করেন। একই সাথে কর্মরত শ্রমিকদের তাদের নায্য অধিকার আদায়ে আরও সোচ্চার হওয়ার প্রতি আহবান জানান।
সমন্বয়ক ভিপি ছরওয়ার আহমদ সামাজিক আন্দোলনটি ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, কমিউনিটির সকল শাখার মানুষদের সদিচ্ছা জাগ্রত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। ইতিমধ্যে অনেক রেস্টুরেন্ট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঈদের দিন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। এবং তারা বন্ধ রাখা ব্যবসায় ক্ষতির বদলে কাস্টমার ও স্টাফদের সাথে সম্পর্ক আরও আন্তরিক হয়েছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
ক্যাম্পেইনটির অপর সমন্বয়ক আনোয়ারুল ইসলাম অভি বলেন, এই সামাজিক আন্দোলনে যুক্তরাজ্যে ঈদের ছুটির দাবীর পাশাপাশি ডাইভার্স কমিউনিটির অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের উতসব দিনেও তাদের জন্য ছুটির দাবী জানাচ্ছে।
তিনি উপস্থিত এবং এই ক্যাম্পেইনে সাথে যারা সংগতি প্রকাশ করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন- আমাদের বিশ্বাস সকলের কন্ঠ একত্রিত হয়ে ব্রিটেনের বিশেষ করে বাংলাদেশী কমিউনিটির সর্বস্তরে এই দাবীটি তুমুলভাবে উচ্চকন্ঠ হবে। এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের বিবেক প্রস্ফুটিত হবে।
প্রসঙ্গত যুক্তরাজ্যে ঈদের ছুটি চাই- ক্যাম্পেইনে ইতিমধ্যে প্রায় সহস্রাধিক পেশাজীবি, সামাজিক ও কমিউনিটি সংগঠন, সাংবাদিক, কবি, লেখক, একাত্নতা প্রকাশ করেছেন। এই ক্যাম্পেইনের অংশ হিসাবে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে অসংখ্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ঈদের ছুটি চাই’- শ্লোগান সম্মলিত পোষ্টার তাদের ব্যক্তিগত ওয়ালে প্রচার শুরু করছেন।
এছাড়াও ৫২বাংলাটিভি ডটকম যুক্তরাজ্যে ঈদের ছুটি চাই ক্যাস্পেইনের অংশ হিসাবে যুক্তরাজ্যবাসী লেখক, পাঠক ও সংগঠকদের ঈদের ছুটি বিষয়ক লেখা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে। এবং কমিউনিটির বিশিষ্টজন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিকদের মতামত নিয়ে ৫২বাংলাটিভি ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন করছে।