সিয়াম সাধনার মাস- রমজান। ইসলাম ধর্মে এর গুরুত্ব অসীম। বান্দা যখন আল্লাহর নির্দেশিত বিধি মেনে রোজা রাখে-তার প্রতিদান মহান আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন হাদিসে বর্ণিত আছে। ‘নিশ্চয়ই রোজা আমার জন্য। আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দেব।’ (সহিহ মুসলিম : ১১৫১/১৬৫)।
রোজাদারের কাছে সেহরি ও ইফতার দুটো গুরুত্বপূর্ণ হলেও সারাদিন রোজা রেখে ইফতার করতে একজন রোজাদার সবচেয়ে বেশী মনোনিবেশ করেন। দীর্ঘ সময় অনাহারে থেকে পানাহারের সুনিদৃষ্ট সময়েই আমরা ইফতার করে থাকি। ধনীদের বাহারি খাবারে অথবা দরিদ্রের পানীয় জলে, যেভাবেই হোক – ইফতার আল্লাহর কাছে অতি পছন্দের- যা কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত।
রোজাদারকে ইফতার করানো মহামূল্যবান সুন্নত। সামাজিক ও আত্নিক বন্ধনের চিন্তা ও চর্চার ধারাবাহিকতায় পবিত্র রমজানে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ইফতার এর আয়োজন করা হয়। দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা এই ধর্মীয় ঐতিহ্যটি বর্তমান সময়ে রমজান মাসের সবচেয়ে বড় অংশ দখল করে আছে।মহান আল্লাহ পবিত্র রমজানে ইবাদত বন্দেগির প্রতিদান অসীম রেখেছেন- রোজাদার মোটাদাগে সেটা জানেন, বুঝেন- অন্তত ইফতারের সময়, তাদের অভিব্যক্তিতে এমন প্রকাশ পায়। কিন্তু দিন শেষে বা রাত পোহানোর বেলায় রমজানে আমাদের মগজে- ঘুরে ফিরে ঐ ইফতার এবং ইফতারের আয়োজন নিয়েই আমরা কেন জানি ব্যস্ত থাকি।
ঘৃহিণীরা পবিত্র রমজান মাসের মতো আর কোন মাসে বা সময়ে মনে হয়না- রান্না ঘরে এতো লম্বা সময় ব্যয় করেন। এই মাসে খাবারের রেসিপি তৈরীর আইডিয়া ও তৈরীর চেষ্টা- বারো মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশী হয় বলে বিশ্বাস করি। ডাক্তার, নিউট্রিশিয়ান, শেফ থেকে শুরু করে উপস্থাপক, লেখক, সাংবাদিক,ব্লগার, নেটিজেন সবাই সবচেয়ে বেশী স্বাস্হ্য সচেতনতার উপদেশ আওড়ান। কথার ফুলঝুরিতে ভাজা-পোড়া,তৈলাক্ত খাবার পরিহারের সর্বোচ্চ সতর্ক বার্তা থাকলেও বাস্তবে কতভাগ রোজাদার তা মানেন – সেবিষয়ে বিশ্বাসের ব্যারোমিটার আমার এক পার্সেন্টের উপরে নয় ।
উপরের ২৫০টি শব্দমালা কষ্ট করে পাঠ করা শ্রদ্ধেয় পাঠক ,আপনি রোজা রাখতে কী কী খাবেন, কী খাবেন না- তা একান্তই আপনার ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর। এসব নিয়ে আমি সচেতনভাবে কথা বলার কেউ না। তবে আন্তরিকভাবে, বিনয়ে, রমজান মাসের ইফতারী প্রথা নিয়ে আমার অনুভূতি শেয়ার করছি।
সারাদিন অভূক্ত থেকে নিদৃষ্ট সময় ইফতার করা এবং সাধ্য মতো অন্য রোজাদারকে ইফতার করানোর রীতি ইদানিং অত্যন্ত অমানবিক ও অনৈতিক চর্চার দিকে যারা নিয়ে যাচ্ছেন-সজ্ঞানে অথবা ব্যক্তি স্বার্থে; আমরা নিরব থেকে যে দিন দিন সামাজিক এই ব্যাধিকে প্রকারান্তে পরিবার ও সমাজে উদ্বুদ্ধ করছি- সেই অভিজ্ঞানের দিক আমার মতো বলতে চাচ্ছি।
কেন মেয়ের বাবা শুধু ইফতারী দেবেন?
রমজান মাসে ইফতারী দেয়া অনেক সওয়ারের কাজ। কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমানদের চর্চায় যেন ইফতারি শুধু কনে পক্ষের দিক থেকে দেয়ার প্রথা বিদ্যমান। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার যাতাকলে এটি এক সময় একতরফা শুরু হয়ে থাকলেও তা এখন চলছে রীতিমতো উৎসবের মতো। বর্তমান সময়ে অনেক জায়গায়- রমজানে মেয়ে পক্ষের বাড়ি থেকে ইফতারী মহা আয়োজনে দেয়ার দাবি জানানো হচ্ছে। শশুরবাড়ির ইফতারি উপলক্ষে রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ দিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হচ্ছে।
ছেলের বৌয়ের অস্বচ্ছল বাবা কীভাবে ইফতারী দিবেন, সেদিকে ছেলের বাবা-মা সহ পরিবারের অগ্রজদের মানবিক চিন্তা কাজ করে না! বাস্তবতা বলছে, একই সময়ে বরং শশুরবাড়ির ইফতার খাওয়াতে রীতিমতো ইফতার পার্টির দাওয়াতে ব্যস্ত থাকেন স্বামী। তারপর শশুরবাড়ির দেয়া ইফতারী দিয়ে লোক খাইয়ে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটে, নিজে লাভ-রিএক্ট দিয়ে, লাইক , কমেন্টস গুনতে থাকেন!
চ্যারিটি কাজে অভিজ্ঞতায় দেখেছি, রমজান মাস আসার অনেক আগ থেকে বাংলাদেশে অস্বচ্ছল পরিবার তাদের নতুন বিয়ে দেয়া মেয়ের বাড়ি প্রথম ইফতারী দেবার অর্থ সংগ্রহে অসহায় আবদার থাকে। ২০০৪ সাল থেকে ‘হাসি মুখে ইফতার( Ifther with Happiness) প্রজেক্ট এর পরিচালক হিসাবে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বলছে- এক শ্রেণীর মানুষ ‘কনের বাড়ি ইফতারী’দেয়া কে একটি সামাজিক সংস্কৃতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।এবং খেয়াল করলে দেখা যায়, একই পরিবারে প্রবীন ধার্মিক বাবা আছেন, অন্য পরিবারে , সংসারে টানাপোড়েন,রোগে,অসুখে সংসার করা কন্যার মা আছেন। কিংবা স্কুল- কলেজ পড়ুয়া সামাজিকভাবে স্মার্ট বিবেচ্য তরুণ্য ছেলে-মেয়ে আছেন। সামান্য মিষ্টি- জিলাপি-নিমকি-রসগোল্লা খাওয়ার জন্য এই তারাই প্রথমে নিজেদের বিবেককে পদদলিত করেন।
বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে?
সমাজে মানবিকবোধ সম্পন্ন ভালো মানুষ অবশ্যই অনেক আছেন। কিন্তু রমজান মাসে ইফতারী শুধু ‘মেয়ের বাবার কাধে’ তুলে দেয়ার চর্চার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন কজন? কতজন ‘ছেলের বাপ’ রমজানে ‘বৌমার বাড়ি’ ইফতারী দিয়েছেন বা দেন?
সামাজিক যোগাযোগ বিশ্লেষকদের দেয়া একটি তথ্য বলছে- সমাজে নানা অনাচার অসঙ্গতি,অমানবিকতা দ্রুত ছড়ালেও তার স্থায়িত্ব থাকে না। কয়েকদিন পরে এইসব, একটি ঘটনাকে ছাপিয়ে এরকম আরেকটি জায়গা করে নেয়। কিন্ত ‘ভালো বা আলোকিত কাজ’ নগণ্য হলেও নেটিজেনদের মনে শ্রদ্ধা-মিশেল অনুভূতি নিয়ে দীর্ঘ দিন থাকে। সে যুক্তিকে সামনে নিয়ে ভাবলেও- ইফতার নিয়ে অমানবিকতা, পাপাচার,বিভেদ সৃষ্টির বিপরীতে নেটিজেন তারুণ্য, পরিবার কিংবা সমাজের শিক্ষিত অংশের তেমন কোন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। অথচ এই অগ্রজরাই রমজানে অধিক পূণ্য লাভের আশায় ব্যতিব্যস্ত থাকি! নামাজে, প্রার্থনায় সমাজে পাপাচার মুক্ত থাকার বন্ধনা করি!
মিথ্যা আবেগ : তোমার আয়ু কতদিন?
রমজান মাস শুরুর আগ থেকে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ওয়াজ মাহফিলে মৌলানারা কোরআন –হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে ললিত কণ্ঠে রমজান মাসের ইবাদতের বর্ণনা দেন। সহজ হিসাবে মাদ্রাসায় কয়েক কোটি শিক্ষার্থী, শিক্ষক,কর্মচারী আছেন। সামাজিক যোগাযোগে তাদের ওয়াজ নসিহতের তথ্য মতে- আমাদের সমাজের সবচেয়ে সৎ, মানবিকবোধ সম্পন্ন হলেন- মাদ্রাসায় ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিতরা! টাকার বিনিময়ে ঘন্টা-দুই ঘন্টার ওয়াজে আওড়ানো ‘ আবেগঘন মানবিক বক্তব্য’ ছাড়া এর প্রতিফল কী খোদ তাদের পরিবার-পরিজনে আছে? ( স্বীকার করছি-প্রকৃত ইসলামী চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ তাদের অনুকরণীয় কাজের মাধ্যমে আলো চড়াচ্ছেন এবং তাদের প্রতি অগণন মানুষের শ্রদ্ধাও আছে )।
দূ:সংবাদ বাতাসের আগে ছড়ায় – প্রবাদটি বর্তমান হাইডেফিনেশন( HD) ইন্টারনেট বান্ধব যুগে সকল বিষয়ে যুক্তিতে ঠিকেনা । এখন ‘ভালো কাজ’-ও সমানে ছড়িয়ে যায়- সব খানে। আল্লাহর ইবাদত চর্চার শ্রেষ্ঠ মাসে মৌলানাদের ঘরে ছেলে ও মেয়ে দুই পরিবারে ইফতার খাওয়া ও খাওয়ানোর সর্বজনীন রীতির চর্চা থাকলে সমাজে এর স্ফোরণ দেখা যেত। বুদ্ধিভিত্তিক, সমাজবান্ধব মানবিক চিন্তা- চেতনা চর্চা, লালন এবং ধারণে সংখ্যাঘরিষ্ট ইসলামী বক্তা এবং তাদের অনুসারীরা যে সমাজবিনির্মাণে কাজের চেয়ে কথার খই ফোটানোতে ব্যস্ত- তার অনেকগুলো দৃশ্যমান উদাহরণের মধ্যে এটিও একটি।
প্রাসঙ্গিভাবে আরেকটি যুক্তি শেয়ার করছি- রমজান মাসে বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বাড়ে। এবং এটা ধ্রুবসত্য যে- একশ্রেণীর অসাধু শ্রেণী বা চক্র দ্বারা এই কাজটি যুগের পর যুগ ধরে বাংলাদেশে ঘটছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ইসলামী বক্তাদের ভাষায়- বাংলাদেশে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে সৎ ও মানবিক। বাস্তবতা হলো- মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান গুলোর সাবেক ও বর্তমান কয়েক কোটি শিক্ষিত মানুষ আছেন। তাদের বড় একটি অংশ মুদি দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসাও পরিচালনা করছেন। কিন্তু গোটা বাংলাদেশে কতটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে- যেখানে দোকান মালিক তাদের মূল্য বৃদ্ধি করেনা রমজানে!
এই সব জ্ঞানপাপী বক্তা,যারা নিজেদেরকে মানবিক বলে দাবী করে, তারা কী আরবের অন্যান্য দেশের মতো রমজানে সুনিদিৃষ্ট দ্রব্যের দাম কমায়, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে? রমজানে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কতটা মানবিকতার চর্চা হয় – সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল কনটেন্ট উপকরণ কী আছে তাদের ?- এর উত্তর তাদের কাছ থেকে জানার দরকার পড়ে না। কারণ সচেতনরা এসব আবেগীয় কথামালা ভালো জানেন এবং বুঝেন।
আলোর কথা হলো- বাংলাদেশে হাতে গোনা কয়েকটি দোকান আছেন- যেখানে মানুষ নিজ দায়িত্বে দ্রব্যসামগ্রী কিনে নিদৃষ্ট বাক্সে টাকা রেখে যায়। এই খবরটি মোটামোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা জানেন। তেমনি ভাবে,বাংলাদেশে যেকোন শহরে বা উপজেলায় একজন মুদি দোকানী সততা নিয়ে ব্যবসা করলে তার নাম সে অঞ্চলে আলোকিতভাবে বহুল চর্চিত বা উচ্চারিত হয়। এই কোটি কোটি মাদ্রাসা সার্টিফিকেটধারীকে যদি সৎ ও মানবিক ধরি তাহলে, তাদের আদর্শের দৃশ্যমানতা কোথায়! ভালো কাজের সঙ্গে অন্যদের অনুপ্রেরণার আলো আপনা আপনি যুক্ত হয়। সামাজিক প্রেরণাদায়িকাজ লোকায়িত থাকে না। এর পেছনের কারিগরদের নামও কোন না কোনভাবে সামনে আসে। শুধু ব্যবসার জায়গাকে ধরে যদি বলি- সামাজিক যোগাযোগে ভাইরাল বক্তাদের শিষ্যদের কাজে, মুদি দোকান থেকে পাইকারী ব্যবসায়- কিছুটা প্রতিফলিত হওয়ার সুসংবাদ কী আছে? জনগণ বা নেটিজেনরা কী জানে? ভাইরাল বক্তারা অন্তত প্রচার করলে দুস্থ, গরিবদের কিছুটা উপকার হতো।
সামাজিক যোগাযোগের প্রোফাইল আপন ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি
যুক্তরাজ্যে বাংলাভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য চর্চার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আলোকিতভাবে মূলধারায় তুলে ধরছেন যুক্তরাজ্যবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা। যুক্তরাজ্যে ইফতার মাহফিল এর রেওয়াজটি পুরনো। বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলার প্রবাসীদের অঞ্চলভিত্তিক সংগঠন রয়েছে। বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিলেট বিভাগের প্রবাসীদের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রামের অধিবাসীদের সংগঠন রয়েছে। মূলত প্রবাসে দেশটির বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসীরা রমজানে একত্রে ইফতার করতে পছন্দ করেন। ঢালাওভাবে না হলেও এখানেও চলে ইফতারে নামে ভুরিভোজন আর অপচয়। দশ পাউন্ড থেকে শুরু করে পচিশ/ত্রিশ পাউন্ড এ ইফতার ব্যুফের বুকিং পেতে বেগ পেতে হয় বাঙালি অধ্যুষিত ইস্ট লন্ডনে।
যুক্তরাজ্যে কয়েক বছর থেকে শুরু হয়েছে সেহরি পার্টি।বর্তমানে প্রবাসের এই আয়োজনে অতীতের হার্দিক সম্পর্ক এবং ধর্মীয় পূণ্য লাভের বিষয়টি এখন আর মূখ্য নয়। রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের ইফতার মাহফিলগুলো এখন ইফতারের আজানের পূর্ব পর্যন্ত বক্তৃতাবাজিতে ব্যয় হয়। ইফতারের পূর্বে, যে সময় বান্দা আর আল্লাহ খুব কাছাকাছি, সার্বিক কল্যাণে আল্লাহর কাছে আমাদের প্রার্থনায় থাকা জরুরী- সে সময় রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অন্য দলের সমালোচনা,অকল্যাণ,পরনিন্দায় ব্যস্ত থাকেন। এবং সমান তালে চলে নানা পদের খাবারে সাথে নিজেদের দলবদ্ধ ছবি তুলে – নিজেদের মহত্ব প্রচারের কাজটি।
সমাজে আপনার মূল্য আছে,আপনিই উচ্চকণ্ঠ
বিলেতে ইকোয়ালিটি ও ডাইভারসিটি পলিসির সুযোগ নিয়ে অসংখ্য প্রবাসী তাদের কথা ও আচরণে নিজেদের মতো জ্ঞানী, স্মার্ট ও বড় ভাবতে পছন্দ করেন হয়তো। তবে এটা তো সত্যাশ্রয়ী যে, আমরা কোন না কোন ভাবে ভালো কাজ করছি।ভালো চিন্তা করছি। আমাদের রেমিটেন্সে বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি হাসছে।পরিবার, স্বজনদের দুধে-ভাতে রাখতে নিরবিচ্ছিন্ন অর্থনৈতিক সহযোগিতা করছি। মাইক্রোক্রেডিট অর্থনীতির দেশে, এই সময়ে টাকা ওয়ালার একটি বড় প্রভাবও আছে।
একজন চ্যারিটিওয়ারকারের অভিজ্ঞতা জানিয়ে, বিনয়ে কামনা করছি- আপনার অবস্থান থেকে রমজান মাসে বাংলাদেশে পরিবার-স্বজনদের টাকা পাঠানোর সাথে আপনার মতো করে অন্তত একটি স্পষ্ট বার্তা দিলে সমাজে অসংখ্য গরীব মানুষের উপকার হয়:
– ইফতারী প্রথায় আমরা যেন অমানবিক না হই। মেয়ের বাপের বাড়ি থেকে ইফতারী খাওয়ার দাবীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে প্রথমে নিজেদের পরিবারকে সোচ্চার করি। স্বেচ্ছায় ছেলের শশুর বাড়ি থেকে ইফতার আসলে যেন ছেলের মা-বাবা তাদের বৌ-মা‘র বাড়িও সেই আন্তরিকতায় যেন ইফতার দেয়া হয়। এবং এই চর্চাটি সমাজে যেন বাধ্যতামূলক এবং কোনভাবে অমানবিক না হয়।
-আমাদের প্রতিবেশী, তারা যে ধর্ম, গোত্রের হোক না কেন। তাকেও যেন ইফতার করাই। সামর্থ্য থাকলে তাদের ঘরে কিছু ইফতার দিলে নিজেকে সুখি ভাবার বড় উপকরণ পাওয়া যাবে। এবং প্রজন্মরাও ইতিবাচক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে বড় হবে বলে বিশ্বাস রাখি।
-প্রবাসীদের রমজানের সহায়তা যেন লোকচক্ষুর আড়ালে হয়। কোন গরীব-দুস্থদের হাতে কয়েক কেজি চাল-ডালের প্যাকেট দেয়া কোন বিধবা বা বৃদ্ধ বাবার ছবি তথাকথিত রাজনৈতিকনেতা বা বিশিষ্ট সমাজসেবীর হাত থেকে যেন প্রতিবেশী বন্ধু স্বজনদের নিতে না হয়। এবং গ্রহীতার ছবি যেন সামাজিক যোগাযোগে প্রচার করা না হয়।
-আমরা যুক্তরাজ্যবাসী অনেক ভাগ্যবান। আমাদের যা ইচ্ছে করে- তা খেতে পারছি। আমাদের সামর্থ্য আছে। ব্যক্তিগত এবং সাংগঠনিকভাবেও আমরা রমজানে সকলে যার যার অবস্থান থেকে সহায়তা করছি-যা নি:সন্দেহে অনুকরণীয়। কিন্ত বাংলাদেশে রমজানে খাদ্যদ্রব্য বিতরণের প্রক্রিয়াটি কেন অমানবিক লোক দেখানো,প্রচার সর্বস্ব হচ্ছে?
একটি ছিনারিও দিতে ইচ্ছে করছে,-‘ যারা এই রমজানে অর্থাভাবে সেহরি ও ইফতারে ডাল-ভাত খেতেও কষ্ট করছেন,তাদেরকে মানবিক সহায়তা দেয়া হলো। পরের দিন সামাজিক যোগাযোগে প্রকাশ করা ছবিটির দৃশ্যপটে যদি আপনার কোন আত্নীয়, প্রিয়জন বা কোন স্বজন হোন। তাহলে আপনার অনুভূতি কী রকম হবে?’
আপনি চাইলে সব সম্ভব…
আপনি নি:সন্দেহে আমার চেয়ে অনেক জ্ঞানী, মন ও মননে অনেক ভালো। মানবিকবোধ সম্পন্ন। সম্ভাবনাময় ও অনুপ্রেরণাদায়ী। ভালোকাজ মাছের মতো সময় সময় পোনা ছাড়ে। আপনি এক পা সামনে এগুলে- অনুচ্চারিতরা উচ্চকণ্ঠ হবে।আমরা আপনার পথে হাটতে সাহস পাবো। আপনার আলোয় আমরা দুর্বলদের আলোকিত হওয়ার সুযোগটি দিবেন, আন্তরিক কামনা।
বিলেতে ডাইভার্স কমিউনিটিতে আমাদের রমজান হোক- নেইভারদের নিয়ে। ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিবারের বাহারী ইফতারে অন্য জাতি-ধর্মের নেইভারদের মনে হার্দিক জায়গা নেয়ার প্রত্যয় আছে। হ্যাপি রামাদান।
আ নো য়া রু ল ই স লা ম অ ভি : কবি, সাংবাদিক