মেসির জোড়া গোল, এমবাপ্পের হ্যাটট্রিক, দি মারিয়ার গোল মিলিয়ে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় শেষে ৩-৩ সমতা। তারপর টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে জিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ক্রীড়া বিশ্লেষকরা বলছেন, এটাই সর্বকালের সেরা ফাইনাল।
নাটকের পর নাটক, স্নায়ুর চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে সম্ভবত বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য চিত্রনাট্যের সমাপ্তি হয়েছে মেসির হাতে ট্রফি ওঠার মধ্য দিয়ে।
২০২২ বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে গোল্ডেন বল জিতেছেন আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি, টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার ‘গোল্ডেন গ্লাভস’ জিতেছেন আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ,বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে গোল্ডেন বুট জয় করে নিলেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে।
গোল্ডেন বল মেসির
২০১৪ বিশ্বকাপেও টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলারের পুরস্কার গোল্ডেন বল জিতেছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু সেবার থাকতে হয়েছে পরাজিতের দলে।
৮ বছর পর ২০২২ সালে এসে বিশ্বকাপটাই জিতে নিলেন তিনি। সে সঙ্গে আবারও জিতলেন গোল্ডেন বল। ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে দ্বিতীয়বার গোল্ডেন বল উঠলো মেসির হাতে।
আরেকটি বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন আর্জেন্টিনাকে। এবার আর স্বপ্নভঙ্গ নয়। বিশ্বকাপ জিতেই সব আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন লিওনেল মেসি।
স্মরণীয় কাতার বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘গোল্ডেন বল’ জিতেছেন সাতবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী এই ফুটবলার।
এবারের বিশ্বকাপে ৭ গোল করা ৩৫ বছর বয়সী মেসি এ নিয়ে দ্বিতীয়বার গোল্ডেন বল জিতলেন। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে স্বপ্ন ভাঙলেও টুর্নামেন্টসেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন মেসি।
এ নিয়ে ইতিহাসে তৃতীয়বার আর্জেন্টিনার কোনো খেলোয়াড় গোল্ডেন বল জিতলেন। ১৯৮২ সালে এই পুরস্কার চালু হওয়ার পর ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ের নায়ক ডিয়েগো ম্যারাডোনা জিতেছিলেন এই পুরস্কার।
গোল্ডেন গ্লাভস মার্টিনেজের
আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার ‘গোল্ডেন গ্লাভস’ জিতেছেন। ফাইনালে পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত কিছু সেভসহ টাইব্রেকারে কোম্যানের শট ফিরিয়ে দেন তিনি।
এর আগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালেও পেনাল্টি শ্যুটআউটে দুই শট ঠেকিয়ে নায়ক বনে গিয়েছিলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
৩–৩ সমতায় সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ ফাইনাল চলে গেল টাইব্রেকারে। এই এপিসোডের নায়ক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। পেনাল্টি ঠেকিয়ে তিনিই আর্জেন্টিনাকে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ শিরোপার নাগাল পাইয়ে দিলেন। এই মার্তিনেজই খেলার একেবারে শেষ মুহূর্তে রান্দাল কোলো মুয়ানিকে গোল থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। সেটিকে বিশ্বকাপের সেরা সেভ বললেও কম বলা হয় হয়তো।
‘আর্জেন্টিনা কখনো সহজে কিছু পায় না। বিশ্বকাপটাও আর্জেন্টিনার হাতে ধরা দিল অনেক সংগ্রামের পর, ‘ম্যাচটায় আমরা অনেক সংগ্রাম করেছি। অনেক ভুগেছি। দুটি ভুলে ফ্রান্স খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। এরপর আমি আমার কাজটা ঠিকঠাক করতে পেরেছি। আমি সেটিই করতে পেরেছি, যে স্বপ্ন আমি দেখেছি।’- মার্তিনেজ খেলা শেষে সহাস্যে এই কথাই বলেছেন গর্ব নিয়ে। বলা যায় গোটা দুনিয়ার ফুটবল ভক্ত তার কথায় হেসেছেন তৃপ্তি নিয়ে।
‘এর চেয়ে দুর্দান্তভাবে আমি আমার বিশ্বকাপের স্বপ্ন পূরণ করতে পারতাম না। পেনাল্টির সময় আমি খুব শান্ত থেকে, মাথা ঠান্ডা রেখেই নিজের কাজটা করেছি।’- নিজের স্বপ্নপূরণের চিত্রনাট্যে মুগ্ধ, রোমাঞ্চিত’- মার্তিনেজ এর কথাটি এখন অগণন ফুটবলারদের জন্য সেরা ইন্সারেশন।
গোল্ডেন বুট এমবাপের
বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে গোল্ডেন বুট জয় করে নিলেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে। ৭ গোল করেও মেসি জিততে পারলে না প্রেস্টিজিয়াস পুরস্কারটি।
মেসি এবং এমবাপে দু’জনই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নেমেছিলেন ৫টি করে গোল নিয়ে। ম্যাচের ২৩ মিনিটেই পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মেসি। সে সঙ্গে নিজের গোলও বাড়িয়ে নেন ৬টিতে।
দ্বিতীয়ার্ধে এসে এক মিনিটেরও কম ব্যবধানে জোড়া গোল করে বসেন এমবাপে। একটি পেনাল্টি থেকে। অন্যটি করেন দুর্দান্ত এক প্লেসিং শটে।
সে সঙ্গে এমবাপের গোল হয়ে যায় ৭টি। মেসির ৬টি। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এই অর্ধে এসে লিওনেল মেসি এক দুর্দান্ত গোল করেন। সমান হয়ে যায় দু’জনের গোল।
এরপর অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় অংশে আবারও পেনাল্টি পেয়ে যায় ফ্রান্স। শট নেন এমবাপে। গোল এবং হ্যাটট্রিক। সে সঙ্গে তার গোল হয়ে যায় ৮টি।