যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী কমিউনিটির মানুষের মধ্যে ফুসফুস-ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি । যেকেউ যেকোনো সময় নিজের অজান্তেই এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে । তাই টাওয়ার হ্যামলেটসের বাংলাদেশীদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আগামী বছরের শুরুতে পূর্ব লন্ডনের মাইল এন্ড লেজার সেন্টারে একটি স্ক্রিনিং মেশিন স্থাপন করা হবে । তখন ৫৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সী ধুমপায়ী বাসিন্দাদের উক্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আহবান জানানো হবে । নিজ নিজ জিপির মাধ্যমে এপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। যদি কারো ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে তাহলে সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে । কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার চিহ্নিত করা গেলে রোগির বেঁচে থাকার দ্বিগুন সম্ভাবনা থাকে ।
২৫ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে বার্টস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্টের উদ্যোগে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয় ।ফুসফুসে ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির মাস নভেম্বর উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
বার্টস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্টের ইনক্লশন এন্ড কমিউনিটি এনগেইজমেন্ট ম্যানেজার খসরুজ্জমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টের কমিউনিটি এনগেইজমেন্ট গ্রুপ লীডার আবাস মির্জা, ক্যান্সার বিষয়ক কনসালটেন্ট আদম জানুস-জেউস্কি ও স্পেশালিষ্ট পিজিশিয়ান ডাঃ নিনা প্যাটেল।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যাডাম জানুস-জেউস্কি বলেন, ফুসফুস ক্যান্সার-আক্রান্ত হওয়ার সাধারণ লক্ষণগুলো জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । যদি কোনো লক্ষন ধরা পড়ে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করিয়ে নেয়া ভালো । যদি ক্যান্সারের মতো কিছু ফুসফুসকে আক্রান্ত করে তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় জানতে পারলে চিকিৎসা করা সহজ হয় এবং সাফল্য আসার সম্ভাবনাও বাড়ে।
তিনি বলেন, ফুসফুস ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ধূমপান । প্রাথমিক লক্ষনগুলোর মধ্যে রয়েছে তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে কফ থাকা এবং কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, বুকে ইনফেকশন হওয়া এবং তা সহজে সেরে না ওঠা এবং কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমতে থাকা অথবা বুকে ব্যথা অনুভব করা।
এই লক্ষণগুলোর কোনো একটি ধরা পড়লে দ্রুত সংশ্লিষ্ট জিপির সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত । তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ভালো।
ট্রাস্টের কমিউনিটি এনগেইজমেন্ট গ্রুপ লীডার আবাস মির্জা বলেন, ফুসফুসে ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির মাস নভেম্বর । তাই বার্টস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্ট রোগের লক্ষণগুলো মানুষকে জানাতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে । এ ব্যাপারে বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষদের জিপির সঙ্গে আলোচনা করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে । প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলে তাতে অংশগ্রহণে কেউ যেন বিলম্ব না করেন।
ডা: নিনা প্যাটেল, বলেন কোভিড-১৯ মহামারির প্রথম তিন বছরে নর্থ ইস্ট লন্ডনে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্তের হার অনেকটাই কমেছে । ইউকেতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যান তাদের বেশিরভাগেরই ফুসফুস আক্রান্ত হয় । মোট ক্যান্সারের মধ্যে এই হার ২১ শতাংশ । প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ৫৭ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সারের রোগী সেরে ওঠেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন এক্সটারনেল এফেয়ার্স ম্যানেজার লিসা দিনহ, মিডিয়া ম্যানেজার হান্নান ক্রোস, বাইল্যাঙ্গয়াল হেলথ এডভোকেসি টিমের লিডার লায়লা কিবরিয়া ও নর্থ-ইস্ট লন্ডন ক্যান্সার এলায়েন্স এর কর্মকর্তা এমা নিকলস।