অন্ধকারে আলো শ্লোগাণ নিয়ে কাজ করা শিক্ষা, লেখক ও সামাজিক অনুপ্রেরণাবান্ধব চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান সমছুল-করিমা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০নং মুড়িয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী অঞ্চল নওয়াগ্রাম প্রগতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফুল, ফল ও ঔষধি বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে।
সবুজে হাসি সবুজে বাঁচি- শিরোনামে অস্বচ্ছল পরিবার ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফলদ ও ঔষধি বৃক্ষরোপণ প্রকল্পের অংশ হিসাবে উপজেলার এই বিদ্যাপীঠে বৃক্ষরোপণ করা হয়।
৯ নভেম্বর বুধবার সকালে আড়ম্বরহীনভাবে স্কুল প্রাঙ্গণে ‘সবুজে হাসি সবুজে বাঁচি’ র ফুল, ফল ও ঔষধি চারা লাগিয়ে উদ্বোধন করা হয়।
নওয়াগ্রাম প্রগতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আলতাফ হোসেন দলুর সভাপতিত্বে স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা জাকিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান ছিলেন পরগনাই দৌলতপুর সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত আরবী প্রভাষক মাওলানা আব্দুল মতিন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন সারপার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসলাম উদ্দিন, তাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: নুরুজ্জামান হাসনু ।
প্রধান অতিথি অবসরপ্রাপ্ত প্রভাষক মাওলানা আব্দুল মতিন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সৃজনশীল কাজের চর্চা খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের মনোজগতে সৃজনশীলকাজ মানষিক উৎকর্ষতা বিকাশে বড় ভূমিকা রাখে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফুল ও ফলের বাগাণ করে দেয়া হয়েছে। এতে করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সৌন্দর্য উপভোগ সহ নিজ ক্যাম্পাসে উৎপাদিত ফলমূল খাওয়ার আনন্দ এবং কিছুটা হলেও পুষ্টি পূরণের সুযোগ পাবেন।
তিনি সমছুল-করিমা ফাউন্ডেশন কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি গতানুগতিকভাবে চলা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর মতো নয়। প্রকল্পের কাজটি বিজ্ঞানভিত্তিক, গাছ নির্বাচন, রোপণ ও পরিচর্চার বিষয়টি সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে করা হয়। এটি আরও বেশী করে শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দেবার অনুরোধ করে তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস ‘সবুজে হাসি সবুজে বাঁচি‘র ফুল ও ফলের বাগাণ পরিচর্চার দিকগুলো শিক্ষার্থীদের মনে দাগ কাটবে এবং তাদের ভবিষ্যত জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিশেষ অতিথি সারপার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসলাম উদ্দিন বলেন, সমছুল-করিমা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রাথমিক স্কুলে ফুল,ফল ও ঔষধি গাছের সমন্বিত বাগান থেকে সরাসরি শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবেন। বাগাণ চর্চার মাধ্যমে সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ হবে এবং বিদ্যালয়ে লাগানো গাছ থেকে ফল খাবার সুযোগ পাবে।
বিশেষ অতিথি তাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: নুরুজ্জামান হাসনু আয়োজকদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এটি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক সামাজিক সেবামূলক অনুকরণীয় উদ্যোগ। প্রকল্পের মাধ্যমে স্কুলে ফুল ও ফলদগাছ রোপণে বারমাস ফল -ফসলের চিন্তাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যাতে করে সকল ঋতুতে কোন না কোন ফল শিক্ষার্থীরা খেতে পারেন। এবং স্বাভাবিকভাবেই এই সুবিধা পেয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনজগতে একরকম পজিটিভ কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
নওয়াগ্রাম প্রগতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আলতাফ হোসেন দলু চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান সমছুল-করিমা ফাউন্ডেশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ভালো জাতের গ্রাফটিং ফল ও ঔষধি গাছের চারা এবং বিভিন্ন জাতের ফুলের গাছ প্রতিষ্ঠানে নিজ খরচে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। সমন্বিতভাবে গাছগুলোর সার্বিক পরিচর্যা ও মনিটরিং করা হবে, যাতে গাছগুলো নষ্ট না হয় এবং দ্রুত ফলন উপযোগি হয়।
সবুজে হাসি সবুজে বাঁচি- প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর সাংবাদিক মো: ইবাদুর রহমান জাকির স্কুল কর্তৃপক্ষ,অতিথিবৃন্দ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সকলের সহযোগিতায় বৃক্ষরোপণ সম্পন্ন হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে আমরা তিনটি ধাপে এর পরিচর্চায় বৃক্ষগুলো দ্রুত ফলনশীল হবে বলে আমরা আশাবাদি এবং একই সাথে আমাদের প্রচেষ্টাও সফল হবে বলে মনে করি ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো: আব্দুল মতিন, সমাজকর্মী আবুল কালাম আজাদ,স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা শিরিন আক্তার, মুজাক্কির হোসেন বাবর, মো: গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত অন্ধকারে আলো শ্লোগাণ নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে সমছুল-করিমা ফাউন্ডেশন বিভিন্ন মানবিক , শিক্ষা- শিক্ষক সম্পর্কিত এবং সমাজসেবামূলক ধারাবাহিক নিজস্ব প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করছে। ‘মানবিক স্বজন’ এর আওতায় নিভৃতে বঞ্চিত ও দুস্থ মানুষের ঘরে খাবার সামগ্রী বিতরণ। ‘সবুজে হাসি সবুজে বাঁচি’ প্রকল্পের মাধ্যমে অস্বচ্ছল ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফুল, ফল ও ঔষধি বৃক্ষ রোপণ, মৌলিক ও সৃজনশীল প্রকল্প- ’সৃষ্টি ঘর’ এর আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং প্রতিশ্রুতিশীল লেখকদের বই প্রকাশ, পবিত্র রমজান মাসে নিন্মবিত্ত পরিবারের জন্য ‘হাসি মুখে ইফতার’, প্রবীন অসহায়দের জন্য –’প্রশান্তির হাসি’, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ‘আমার স্বপ্ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে তৃণমূলে কাজ করে আসছে ।