যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম ২১শে ফেব্রুয়ারিকে “লন্ডন বহুভাষিক দিবস” হিসেবে ঘোষণা করার জন্য লন্ডনের মেয়রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত সোমবার লন্ডনের এক হোটেলে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন ও যুক্তরাজ্য ইউনেস্কো কমিশনের যৌথ উদ্যোগে ‘Using technology for multilingual learning: Challenges and opportunities”” প্রতিপাদ্যের ভিত্তিতে মহান ভাষা শহিদ দিবস এবং ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন অনুষ্ঠানে স্মাগত বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান।
হাইকমিশনার বলেন, “বৃহত্তর লন্ডনের সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপকে সমৃদ্ধ করেছে এমন ৩০০ টিরও বেশি কমিউনিটির মধ্যে বহুভাষিকতা ও বৃহত্তর আন্তসাংস্কৃতিক সম্প্রীতির জন্য ২১শে ফেব্রুয়ারিকে লন্ডনের বহুভাষিক দিবস হিসাবে ঘোষণা করার জন্য আমি লন্ডনের মেয়রের প্রতি আহ্বান জানাই।” তিনি আরো বলেন, “বৃহত্তর লন্ডনে বাংলা তৃতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা হওয়ায় হাইকমিশন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মের জন্য বাংলা ভাষা শেখার সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
১৯৫২ সালের অমর ভাষা শহিদ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে হাইকমিশনার উল্লেখ করেন যে বিবিসি’র তথ্য অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাঙালি যিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে বাংলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা ভাষা শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিকীকরণের পাশাপাশি বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ৭ হাজারেরও বেশি মাতৃভাষা সংরক্ষণে সহায়তা করার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রতি আহ্বান জানান।
স্মারক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কমনওয়েলথ সেক্রেটারি-জেনারেল ব্যারনেস প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড, ইউনেস্কোতে যুক্তরাজ্য ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মিস লরা ডেভিস, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত উমিত ইয়ালসিন, উত্তর মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত মিসেস আলেকসান্দ্রা মিওভস্কা, কিউবার রাষ্ট্রদূত বারবারা মন্টালভো অ্যালভারেজ, জর্জিয়ার রাষ্ট্রদূত সোফি কাতসারাভা, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূত সরোজা সিরিসেনা, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত ডঃ ডেসরা পারসায়া, ব্রিটিশ ফরেন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের ডেপুটি ডিরেক্টর মায়া শিভাগনানাম, লন্ডনের নেহেরু সেন্টারের পরিচালক আমিশ ত্রিপাঠী, ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরিচালক মাইকেল কনোলি, মহান একুশের অমর গানের রচয়িতা এবং বিশিষ্ট কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ অ্যাকশন কমিটি যুক্তরাজ্যের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ এবং যুক্তরাজ্য ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর প্রধান নির্বাহী জেমস ব্রিজ।
কমনওয়েলথ সেক্রেটারি-জেনারেল ব্যারনেস প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড ভাষা শহিদদের এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য ২১শে ফেব্রæয়ারি বহুভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উদযাপনের একটি মহান দিন, যা আমাকে আমার ডোমিনিকান শিকড় এবং মাতৃভাষা ক্রেওল-এর কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়।”
যুক্তরাজ্য ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর সেক্রেটারি-জেনারেল জেমস ব্রিজ ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুরস্কারকে সংস্কৃতি এবং সৃজনশীল অর্থনীতিতে নিযুক্ত তরুণদের অসামান্য বৈশ্বিক উদ্যোগের বিশেষ স্বীকৃতি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এই পুরস্কার ইউনেস্কোর বহুপাক্ষিক ফোরাম যেখানে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে সেখানে ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের বার্তা কার্যকরভাবে ছড়িয়ে দিতে পারে।”
ইউনেস্কোতে যুক্তরাজ্য ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মিস লরা ডেভিস ১৮৬৩টি ভাষার বিশ্ব অ্যাটলাসসহ বহুভাষিকতার প্রচার ও প্রসারে ইউনেস্কোর বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বহুভাষিক শিক্ষা উৎসাহিত করতে এবং স্থানীয় উপভাষার ঐতিয্য তুলে ধরতে প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনার মিশনের কর্মকর্তা ও অতিথিদের নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে স্থাপিত একটি প্রতীকী শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এরপর ভাষা শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে লন্ডনে অবস্থিত দূতাবাসগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী ও ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির শিল্পীরা মহান ভাষা শহিদ ও জাতির পিতাকে উৎসর্গ করে মনোজ্ঞ সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
দিবসের শুরুতে সকালে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম দূতাবাসে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে মহান শহিদ দিবস এবং ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের সূচনা করেন। এরপর দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রদত্ত মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শুনানো হয় এবং অমর একুশের মহান ভাষা শহিদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার ও মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহিদের আত্মার মাগফিরাত এবং বাংলাদেশের শান্তি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এতে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি