বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
গ্রেটার বড়লেখা এসোশিয়েশন ইউকে নতুন প্রজন্মদের নিয়ে কাজ করবে  » «   স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের দোয়া ও ইফতার মাহফিল  » «   কানাডা যাত্রায়  ইমিগ্রেশন বিড়ম্বনা এড়াতে সচেতন হোন  » «   ব্রিটিশ রাজবধূ কেট মিডলটন ক্যানসারে আক্রান্ত  » «   যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজাবাসীদের সাহায্যার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের অনুদান  » «   বড়লেখায় পাহাড়ি রাস্তা সম্প্রসারণে বেরিয়ে এলো শিলাখণ্ড  » «   মাইল এন্ড পার্কে ট্রিস ফর সিটিস এর কমিউনিটি বৃক্ষরোপণ  » «   রয়েল টাইগার্স স্পোর্টস ক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন  » «   গোলাপগঞ্জ স্যোশাল এন্ড কালচারাল ট্রাস্ট ইউকে’র সাধারণ সভা ও নির্বাচন সম্পন্ন  » «   যুক্তরাজ্যবাসি  সাংবা‌দিক সাইদুল ইসলামের পিতা আব্দুল ওয়াহিদের ইন্তেকাল  » «   ইউকে বাংলা রিপোটার্স ইউনিটি‘র নতুন কার্যকরী কমিটির অভিষেক  » «   রোটারিয়ান মোহাম্মদ খতিবুর রহমান বার্লিন যাচ্ছেন  » «   টাওয়ার হ্যামলেটসের নতুন বাজেটে হাউজিং, শিক্ষা, অপরাধ দমন, তরুণ, বয়স্ক ও মহিলাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচিতে বিপুল বিনিয়োগ প্রস্তাব  » «   আজীবন সম্মাননা পেলেন সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিই  » «   লন্ডন বাংলা স্কুলের আয়োজনে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

 প্রিন্স ফিলিপ আমার প্রকৃত শক্তি, নির্ভরযোগ্য সঙ্গী এবং পরম আশ্রয়স্থল – রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ  



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

 

গত বছর উইন্ডসর রাজপ্রাসাদে স্ত্রীর সঙ্গে ৯৯তম জন্ম বার্ষিকী পালন করতে পেরেছিলেন  ঠিকই, হয়তো ভেবেছিলেন ১০০তম জন্মদিনও  প্রানপ্রিয় স্ত্রীর সাথে পালন করবেন এ বছর। সে মাহেন্দ্রক্ষণ আসার দুমাস আগেই না ফেরার দেশে চলে যেতে হলো তাঁকে। হ্যাঁ, কথা বলছি “হিজ রয়্যাল হাইনেস ডিউক অফ এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপকে” নিয়ে। ৯ এপ্রিল, শুক্রবার সকালে উইন্ডসর রাজপ্রাসাদে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যু সংবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয় দুপুর বারোটা বাজার পর পরই। ব্রিটিশ রাজ পরিবারের ইতিহাসে তিনি কোনো “মোনার্ক” অর্থাৎ রাজা বা রানীর দীর্ঘতম সঙ্গী  বা “কনসর্ট” হবার রেকর্ড গড়েছিলেন। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে স্বামী হিসেবে কাটিয়েছেন ৭৩ বছর আর “কোনসর্ট” বা সঙ্গী হিসেবে ৭০ বছর।

এ এক অনন্য রেকর্ড! প্রিন্স ফিলিপ ছিলেন একাধারে রানীর জীবনের একমাত্র স্বপ্ন পুরুষ, সুখ – দুঃখের সাথী, পরম বন্ধু, পরামর্শ দাতা, পথ নির্দেশক, বাতিঘর এবং সর্বোপরি বিশ্বস্ত স্বামী। যার উপর রানী অন্ধ বিশ্বাসে নির্ভর করতে পারতেন।  তাঁদের দুজনের মেজাজ ভিন্ন হলেও কর্মক্ষেত্রে  তাঁরা  সর্বদা একত্রিত থেকেছেন। তাঁরই ছায়ায় থেকে আজ পর্যন্ত রানী তাঁর রাজকার্য চালিয়ে গেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠা আর একাগ্রতার সাথে।  বলা হয় তাঁর অবিরাম সমর্থন ব্যতীত রানী আজ অবধি যা যা অর্জন করেছেন তা লাভ করা সম্ভব হতো না।  রানীর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন তিনি। এক কথায়  রানীর জীবনকে আলোতে ভরিয়ে রেখেছিলেন  তাঁর প্রিয়তম জীবন সাথী  প্রিন্স ফিলিপ।

 

চলুন ফিরে  তাকানো যাক প্রিন্স ফিলিপের শৈশবে। জন্ম ১৯২১ সালের ১০ জুন।  স্থান “কর্ফু”, গ্রিসের একটি দ্বীপে। জন্মের পর এই রাজকুমারের পুরো নাম রাখা হয়েছিল ফিলিপোস শেলসভিগ হোলস্টেইন সন্ডারবার্গ গ্ল্যাক্সবার্গ। সাথে রাজকীয় টাইটেল যোগ করা হয়েছিল প্রিন্স অফ গ্রীস এ্যান্ড ডেনমার্ক। তাঁর বাবা প্রিন্স এন্ড্রু ছিলেন হেলেন্স এর রাজা প্রথম জর্জ এর কনিষ্ঠ পুত্র। মা প্রিন্সেস এলিস ছিলেন প্রিন্স লুইস অফ ব্যাটেনবার্গ এর কন্যা এবং রানী ভিক্টোরিয়ার গ্রেট গ্র্যান্ডডোটার।   পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোটো।  একমাত্র পুত্র সন্তান। বড়ো চার বোন। প্রিন্স ফিলিপের শৈশবকাল মোটেই সুখকর ছিল না।  ১৯২২ সালে গ্রিসে এক বিপ্লবী অভ্যুত্থানের পর রাজপরিবার তাদের ক্ষমতা হারাতে বাধ্য হয়।  বিপ্লবীরা তাদের নির্বাসনে পাঠায়।  ব্রিটেনের রাজা পঞ্চম জর্জ রয়্যাল নেভীর জাহাজ পাঠিয়ে পুরো রাজ  পরিবারকে ফ্রান্সে ও ব্রিটেনে নিয়ে আসেন।  প্রিন্স  ফিলিপের বয়স ছিল মাত্র আঠারো মাস। শোনা যায় কমলার বাক্সকে “কট” বানিয়ে তাতে শিশু ফিলিপিকে জাহাজে তোলা হয়েছিল।  স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তার মা ও বাবা আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন।  মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা ফ্রান্সে থাকার জন্য মনস্থির করেন।  পরবর্তীতে সাত বছর বয়সে প্রিন্স ফিলিপিকে পাঠানো হয় উত্তর স্কটল্যান্ডের গর্ডনস্টোন স্কুলে।  মার  সাথে যোগাযোগ খুবই কম থাকলেও বাবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না বললেই চলে। বোনদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো তাঁর। ১৯৩০ সালে চার বোনেরই বিয়ে হয় চার জার্মান রাজপুত্রের সঙ্গে।

 

গর্ডনস্টোন স্কুলে তিনি হকি ও ক্রিকেট টীমের ক্যাপ্টেন ছিলেন।  এছাড়া তিনি স্কুলের “হেডবয়” এর দায়িত্ব পালন করেন। আঠারো বছর বয়সে স্কুল শেষে প্রিন্স ফিলিপ যোগ দেন ব্রিটানিয়া রয়্যাল নেভাল কলেজে।  প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে রাজকুমারী এলিজাবেথের প্রথম দেখা হয় ১৯৩৯ সালে।  রাজা ষষ্ঠ জর্জ স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে ডার্টমাথে রয়্যাল নেভাল কলেজ পরিদর্শনে যান।  তখন প্রিন্স ফিলিপ নৌবাহিনীর এক তরুণ ক্যাডেট।  লম্বা, সুদর্শন এবং এথলেটিক ফিগারের অধিকারী এই তরুণ ক্যাডেট এর উপর রাজকুমারী এলিজাবেথ ও তাঁর বোন রাজকুমারী মার্গারেটকে দেখভাল করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।  রাজকুমারী এলিজাবেথের বয়স তখন মাত্র ১৩ বছর।  প্রথম দেখাতেই রাজকুমারী এলিজাবেথ তাঁকে দেখে মুগ্ধ হন।  প্রিন্স ফিলিপ এ সময় রাজকুমারী এলিজাবেথের মনে গভীর ছাপ রাখতে সক্ষম হন।  যাকে  বলে “লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট”। দুজনের মাঝে বইতে  থাকে  প্রেমের সুবাতাস। চলে পত্র আদান – প্রদান। বাকিংহ্যাম প্যালেসে অতিথি হয়ে আসার আমন্ত্রণ পান কয়েকবার।  এক পর্যায়ে প্রিন্স ফিলিপ রাজকুমারী এলিজাবেথকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে রাজপরিবারের কোনো কোনো সদস্য আপত্তি তোলেন। তাঁর জাতীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।  অনেকে তাঁকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে থাকেন। তবে রাজকুমারী এলিজাবেথ তাঁর সিদ্ধান্তে ছিলেন অনড়। ছাপ কথা, বিয়ে করতে হলে ভালোবাসার মানুষ প্রিন্স ফিলিপিকেই বিয়ে করবেন তিনি। অন্য কাউকে নয়। ১৯৪৬ সালে প্রিন্স ফিলিপের ইংলিশ কাজিন কাউন্টেস মাউন্টব্যাটেনের বিয়ের অনুষ্ঠানে দুজনকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখা গেলে তাঁদের সম্পর্কের কথা প্রথম জনসমক্ষে আসে।  ১৯৪৭ সালের সামারে তাদের এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হয়।  বিয়ের দিন ধার্য করা হয় একই বছরের নভেম্বরের ২০ তারিখ।  বিয়ের আগে তিনি ব্রিটিশ নাগরিত্ব গ্রহণ করেন। নাম পাল্টে রাখেন ফিলিপ মাউন্টব্যাটেন।  বিয়ের পর লেফটেনেন্ট ফিলিপ মাউন্টব্যাটেন কে নতুন টাইটেল দেয়া হয়, “ডিউক অফ এডিনবরা”। বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁর  মা উপস্থিত থাকলেও জার্মান নাৎসীদের সাথে বোনের স্বামীদের  সম্পর্ক থাকায়, প্রিন্স ফিলিপের বোনরা আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা থেকে বাদ পড়েন। বাবা মারা যান বহু আগেই ১৯৪৪ সালে।  উল্লেখ্য বিয়ের পূর্বে প্রিন্স ফিলিপ ও রাজকুমারী এলিজাবেথ ছিলেন ডিসটেন্ট কাজিন।

 

 

বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী ছিলেন প্রিন্স ফিলিপ।  ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ যুদ্ধ জাহাজ “এইচ এম এস রামিলিস” এ মিডশিপম্যান হিসেবে যুদ্ধে অংশ নেন তিনি।  পরের বছর “কেপ মেটাপান” লড়াইয়ের সময়  মেডিটেরিনিয়ান  সাগরে “এইচ এম এস ভ্যালিয়েন্ট” থেকে শত্রুর বিরুদ্ধে অপারেশনে অংশ নেন। সিসিলিতে মিত্র বাহিনীর অভিযানেও প্রিন্স ফিলিপ অংশ নিয়েছিলেন।  পরবর্তীতে নেভির কর্মসূত্রে তাঁকে যেতে হয়েছিল এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে।  ১৯৪৫ সালে জাপানিজদের আত্মসমর্থন স্বচোক্ষে অবলোকন করেছেন তিনি। বিয়ের পরে ব্রিটিশ নেভির উঁচু পদে আসীন হন তিনি। তবে ১৯৫২ সালে রাজা ষষ্ঠ জর্জ এর মৃত্যুর পর যখন রাজকুমারী এলিজাবেথ উত্তরাধিকার সূত্রে রানীর পদমর্যাদা লাভ করেন, তখন প্রিন্স ফিলিপ নেভি থেকে অবসর নিতে বাধ্য হন।  গ্রহণ করতে হয় রানীর “কনসর্ট” এর দায়িত্ব। যদিও জীবদ্দশায় রয়্যাল নেভী ছিল তাঁর আরেকটি ভালো লাগার এবং ভালোবাসার জায়গা। জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।  প্রথম দিকে কেবল রানীর “কনসর্ট” এর দায়িত্ব তাঁকে সন্তুষ্ট করতে না পারলেও, পরবর্তীতে নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি সগৌরবে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হন।  কিছুদিন টিভি প্রেজেন্টার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি ব্রিটিশ রাজপরিবারের দৈনন্দিন কাজকর্ম জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য একটি ফিল্ম তৈরী করেন। ব্রিটিশ রাজ পরিবারকে আধুনিকায়ণ করার জন্য তার চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না।  অসাধারণ অবদান রেখেছেন ব্রিটিশ সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডিজাইনের ক্ষেত্রে । তিনি প্রকৃতি ও বন্য প্রাণী সংরক্ষনে তাঁর কাজের জন্য বিশেষভাবে সুপরিচিত ছিলেন।

 

শিক্ষা ক্ষেত্রেও প্রিন্স ফিলিপের আগ্রহ ছিল অপরিসীম। ১৯৫৬ সালে সুবিধা বঞ্চিত তরুণ – তরুণীদের জন্য তিনি চালু করেন “ডিউক অফ এডিনবরা অ্যাওয়ার্ড”। যাতে এসব তরুণ – তরুণী নিজেদের মধ্যকার লুকায়িত প্রতিভাকে নতুন করে আবিষ্কার করতে শেখে এবং তা কাজে লাগিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। ব্রিটেন এবং কমনওয়েলথভুক্ত দেশসহ বিশ্বের ৬ মিলিয়নেরও অধিক তরুণ – তরুণী এপর্যন্ত উপকৃত হয়েছে।  উল্লেখ্য আমাদের বড়ো ছেলেও “ডিউক অফ এডিনবরা অ্যাওয়ার্ড” জিতেছিল। যা তার উচ্চ শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে দারুণভাবে সাহায্য করেছে। এছাড়া প্রিন্স ফিলিপ দীর্ঘদিন “ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবরার” চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন।  তাঁর কর্মজীবনে তিনি প্রায় সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি চ্যারিটির সাথে কাজ করতে গিয়ে বাইশ হাজার  চ্যারিটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। পাঁচ হাজার বার বক্তব্য রেখেছিলেন। উল্লেখ্য প্রিন্স ফিলিপ তাঁর সুদীর্ঘ রাজকীয় দায়িত্ব থেকে অবসর নেন ২০১৭ সালের অগাস্টে, ৯৬ বছর বয়সে।

এই গুণী মানুষটি অনেক সময় ঠাট্টা করতে গিয়ে তাঁর বক্তব্যের জন্য নানাভাবে সমালোচিতও হয়েছেন। যার জন্য রাজ পরিবারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে বৈকি। যেমন ১৯৬১ সালে ভারত সফরের সময় বাঘ শিকার করে বিতর্কিত হয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালে রানীর সাথে চীন সফরের সময় চীনা মেয়েদের চোখ দেখতে “কুতকুতে” বলে মন্তব্য করে বিপাকে পড়েন। এক সময় অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে এক আদিবাসীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তোমরা কি এখনো একে অপরকে বর্শা  নিক্ষেপ করো? কয়েক দশক আগে একবার বার্মিংহামের একটি কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে একটি বৈদ্যুতিক তার মেশিন থেকে খুলে আসতে দেখে মন্তব্য করেছিলেন ” দিজ মাস্ট বি ডান বাই এন ইন্ডিয়ান”। তাঁর এই মন্তব্য তখন মিডিয়াতে বেশ ঝড় তুলেছিল। এছাড়া প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর পর ডায়ানার প্রেমিক ডোডি আল ফায়েদের বাবা, মোহাম্মদ আল ফায়েদ অভিযোগ করেছিলেন প্রিন্স ফিলিপের নির্দেশে প্রিন্সেস ডায়ানাকে হত্যা করা হয়েছে।  যদিও তদন্তে এ ধরণের সত্যতা মেলেনি।  এছাড়া ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নিজে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।  ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত করেন অন্যদিক থেকে আসা গাড়ির দুজন আরোহীকে। সে ঘটনাও মিডিয়াতে আলোড়ন ফেলেছিলো। শেষ পর্যন্ত তিনি তার ড্রাইভিং লাইসেন্স গিভ আপ করতে বাধ্য হন।

 

মাসখানেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৬ মার্চ উইন্ডসর রাজপ্রাসাদে স্ত্রীর কাছে ফিরে যান প্রিন্স ফিলিপ। ইনফেকশান এবং হার্টজনিত সমস্যার জন্য কিং এডওয়ার্ড সেভেন এবং সেইন্ট বার্থোলোমিউস হাসপাতালে  চিকিৎসা নেন তিনি। তিন রাজপুত্র ও এক রাজকন্যা রেখে গেছেন তিনি। সন্তানদের মধ্যে তাঁর কন্যা “প্রিন্সেস এ্যান ” ছিলেন তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ। এছাড়া প্রিন্স ফিলিপ আটজন নাতি – নাতনি এবং দশজন গ্রেট গ্র্যান্ডসান ও গ্র্যান্ডডোটার রেখে গেছেন। বাবার মৃত্যুর পর চার সন্তান শনি ও রবিবারে পালা করে মাকে দেখতে উইন্ডসর রাজপ্রাসাদে ছুটে গেছেন। গত শুক্রবার চার সন্তানই তাঁদের প্রিয় “পাপাকে” নিয়ে বিবিসি টিভির এক অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেছেন।  প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন একটি বিশেষ ক্যাবিনেট মিটিং এর ডাক দেন শুক্রবার।  সভায় নির্বাচনী প্রচারণা সাময়িকভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।  তবে আগামী মঙ্গলবার থেকে আবার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবার কথা রয়েছে। সভায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সোমবার “হাউস অব লর্ডস” এবং “হাউস অব কমন্স”এ অধিবেশন বসবে প্রয়াত প্রিন্সের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। এদিকে প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। শোক জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা ও স্কটল্যান্ড, নর্দান আয়ারল্যান্ড এবং ওয়েলস এর ফার্স্ট মিনিস্টার।

 

আগামী শনিবার, ১৭ এপ্রিল উইন্ডসর রাজপ্রাসাদে প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।  সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে অপরাহ্ন তিনটার সময় তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শুরু হবে। টিভিতে এ অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার  করা হবে।  বাকিংহ্যাম প্যালেস জানিয়েছে, তারা স্টেট  ফিউনারেল এর পরিবর্তে সেরিমোনিয়াল রয়্যাল ফিউনারেল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কোভিড  রেস্ট্রিকশানের কথা ভেবে  এরই মধ্যে জানা গেছে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন না।  শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শুরুর প্রারম্ভে সারা দেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। কোভিড রেস্ট্রিকশান মেনে সর্বোচ্চ ত্রিশজন রাজ পরিবারের সদস্য অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।

তবে কোন কোন সদস্য যোগ দেবেন, বর্তমানে আমেরিকায় বসবাসরত প্রিন্স হ্যারি অংশ নেবেন কিনা এসব বিষয়ে বাকিংহ্যাম প্যালেস সূত্রে এখন পর্যন্ত কিছুই জানানো হয়নি।  তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃটিশ রাজ পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য ও মুকুটহীন রাজার বিদায় রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবনে ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা বলা মুশকিল। কারণ রানী তাঁদের পঞ্চাশতম বিবাহ বার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন,” প্রিন্স ফিলিপ আমার প্রকৃত শক্তি, নির্ভরযোগ্য সঙ্গী এবং পরম আশ্রয়স্থল”।

লেখকশিক্ষাবিদসাংবাদিক  কমিউনিটি কর্মী।  

 


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন