সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে যুবক রায়হান হত্যার মূল অভিযুক্ত এসআই আকবর কানাইঘাট সীমান্তের জঙ্গলের ভেতরে লুকিয়ে ছিল। ছদ্মবেশ নিতে মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি এবং গলায় কাঠের তৈরি একধরনের মালা পড়ে ছিলেন তিনি।
সোমবার (৯ নভেম্বর) জঙ্গল দিয়ে রশি কাস্তে নিয়ে কয়েকজন আদিবাসী খাসিয়া নিজেদের কাজে যাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে এসআই আকবরের চেহারার সঙ্গে মিলে যায় এমন একজনকে সন্দেহ করছিলেন তারা। পরে তাকে প্রশ্ন করা হলে সে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাৎক্ষণিক ওই খাসিয়ারা এসআই আকবরকে পাওয়া গেছে চিৎকার করে ধাওয়া দিয়ে হাতেনাতে আটক করে চড়-থাপ্পড় দিয়ে হাতে পায়ে রশি বেঁধে ফেলে।
এসআই আকবরকে ধরার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায় এসআই আকবর বলছে, “আমি খুনি না, আমি ইচ্ছা করে আমি একা মারিনি। রিমান্ড দিচ্ছিল পাঁচ-ছয়জন ওই জন্য মরে গেছে ভাই। ওই বাসিন্দাদের কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে এসআই আকবর আরও বলেন, ‘ও (রায়হান) টাকা ছিনতাই করছিল। আমরা তার (রায়হান) জান নেই নাই তাকে হাসপাতালে নিয়েছি, পাবলিক মারছিল আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়েছি সেখানে তিনি মরে গেছে।
তাহলে তুমি কেন পলাতক? এম প্রশ্নের জবাবে আকবর বলেন, ‘আমি ভাইগা আসছি যে বলছে সাসপেনশন করছে, বলছে দুই মাস পরে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে, পরে গেলে এটা হ্যান্ডেল করা যাবে। আমি অন্যকোন কারণে ভাগি নাই’ পরে তিনি আবার বলেন, ‘আমাকে এক সিনিয়র অফিসার বলছিলেন তুমি আপতোত চলে যাও কয়েকদিন পরে আইস, দুইমাস পরে মোটামুটি ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।’
সিলেট বন্দর বাজারের পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর প্রধান আসামি এসআই আকবর ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পালিয়ে গেছেন বলে এর আগে বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছিল। তবে আজ দুপুরে ভারতে পালানোর সময় সীমান্ত এলাকায় চিনে ফেলে খাশিয়ারা। এরপর খাশিয়াদের সহযোগিতায় আকবরকে গ্রেপ্তার করে সিলেট জেলা পুলিশ। পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর পর মানববন্ধন মিছিলে আন্দোলনে উত্তাল হয় পুরো সিলেট। আকবরকে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত ১০ অক্টোবর শনিবার মধ্যরাতে রায়হানকে নগরীর কাষ্টঘর থেকে ধরে আনে বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ। পরদিন ১১ অক্টোবর ভোরে ওসমানী হাসপাতালে তিনি মারা যান। রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, ফাঁড়িতে ধরে এনে রাতভর নির্যাতনের ফলে রায়হান মারা যান। ১১ অক্টোবর রাতেই রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন।
শুরুর দিকে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. আজাহার আলী শেখের তত্ত্বাবধানে মহানগর পুলিশের তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়। এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এর পর থেকে প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর পলাতক ছিলেন। তাকে পালানোতে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগে ২১ অক্টোবর ফাঁড়ির আরেক এসআই হাসানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে পিবিআই এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুন উর রশিদকে দুই দফায় আটদিন ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহীকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তবে তারা কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হননি। এছাড়া রায়হানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী সাইদুর শেখ নামের এক ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।