মানিক বন্দোপাধ্যায় এর কালজয়ী উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ -তে কুবের মাঝির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই আপনাদের। বাস্তবে আজ রাঙ্গামাটির আদার পাহাড়ে দেখা মিলল তেমন দুটি ছেলের- যাদের বসবাস এই ছোট ডিঙি নৌকাতেই।
সারারাত মাছ ধরে ভোরে তা বিক্রি করে যা পায় তা দিয়ে খাবার এবং নৌকা চালানোর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে আবার ফিরে আসে লেক এর গহীনে। তারপর দুপুর পর্যন্ত নৌকাতেই ঘুম- বিকেলের আগে খাবার রান্না করা এবং খাওয়া। আবার সন্ধ্যায় মাছ ধরতে যাওয়া।
তাদের দুজনের নাম হামিদুল ও আব্দুল আজিজ- বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে। আগে অন্য কাজ করলেও ২ বছর হল মাছ ধরার পেশায় আছে। জানালো ভালোই আছে তারা- কারো কথা শুনতে হয় না। আপন মনে কাজ করে আর মাসান্তে পিতামাতা ভাইবোনদের দেখতে একবার বাড়ি যায়।
গহীন জলরাশিতে ভয় পায় কিনা জানতে চাইলে মুখটা ভয়ার্ত করে বলল- ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাস হলে ছোট নৌকায় থাকতে ভয় হয়। তখন নৌকাকে কোন লোকালয়ের কাছে নিয়ে এসে শক্ত করে বেধে রেখে ঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাস থামার অপেক্ষায় থাকি।
‘মাছ ধরে মাসে তাদের আয় কেমন হয়’ এমন প্রশ্নের জবাবে একগাল হেসে জানালো, সব খরচ শেষে তাদের একেকজনের লাভ থাকে মাসে ১২-১৫ হাজার টাকা। এ টাকাতেই তাদের মুখে দেখা মেলে তৃপ্তির হাসি- এ যেন জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার হাসি।
দুজনেরই থাকা খাওয়া/জীবিকার সন্ধান সবকিছুই এই ছোট্ট নৌকাতে- পানির সঙ্গেই যেন তাদের মিতালী।
৬.১০.২০২০
আদার পাহাড়, বালুখালী, রাঙ্গামাটি।