ট্রেন্ট ব্রিজে টাইগারের গর্জে উঠা দেখেছে লাখো-কোটি ক্রিকেটপ্রেমী। মেনে নিতে হয়, এটা একটা পরাজয় ছিল যদিও, কিন্তু সারা ট্রেন্ট ব্রিজ যেন গর্জে উঠেছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময়। এমনিতেই গ্যালারিতে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় বাঙালি দর্শক ছাড়া আর কাউকে খুব একটা দেখা যায়নি। সে সময় ৯৫ শতাংশই ছিল টাইগার সমর্থক। সৌম্য সরকারের বোলিং আর উইকেট ধরাশয়ীর মধ্য দিয়ে ক্রমেই প্রাণ ফিরে পাচ্ছিল টাইগাররা। পরবর্তীতে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লা, তামিম ইকবালের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে গর্জন উঠে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো দুলতে থাকে ট্রেন্ট ব্রিজের গ্যালারি। সেই ঢেউয়ের ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হয়েছে গতকাল লিডসে শ্রীলংকা-ইংল্যান্ডের খেলায়ও। এমনকি হেডিংলি কার্নেগি স্টেডিয়ামে কমেন্টেটর আগের দিনের খেলার প্রসঙ্গ টেনে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশি দর্শকরা ট্রেন্ট ব্রিজ আলোকিত করে রাখছিল কাল।
২০ জুন বাংলা আর বাঙালি ঐতিহ্যের নানা বর্ণের কস্টিউমে সারাটি স্টেডিয়াম ছিল রঙিন। ছিল লাল সবুজের ছড়াছড়ি। বাঘের কস্টিউম পরা মানুষগুলো দেখে মনে হয়েছে গ্যালারিতে যেন বাঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশের খেলার চিরাচরিত এ কস্টিউম জানিয়ে দেয়, খেলছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া খেলা চলাকালীন যেমন ট্রেন্ট ব্রিজ ছিল বাংলাদেশি দর্শকদের দখলে, ঠিক তেমনি সেদিন যেন অফিসিয়াল রিকগনিশনটা এলো বাংলাদেশি দর্শকদের কাছেই। মোহাম্মদ আজাদ নর্থ ওয়েস্ট ইংল্যান্ডের এক পরিচিত সাংস্কৃতিক কর্মী। বাংলাদেশ দলের সমর্থক হয়ে তিনিও ছিলেন ট্রেন্ট ব্রিজ স্টেডিয়ামে। তার বন্ধুদের সঙ্গে তিনি চিৎকার করছিলেন ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ শ্লােগানে, গাইছিলেন গান। তার পরনে ছিল বাঘের কস্টিউম। আপাদমস্তক বাঘের সাজে সাজা আজাদের উজ্জীবিত করা শ্লােগান আইসিসির ট্রেন্ট ব্রিজের কর্মকর্তাদের চোখ কাড়ে। তারা গ্যালারিতে গিয়ে তাকে আমন্ত্রণ জানান। তারপর তাকে তারা এ খেলার সেরা দর্শক হিসেবে ঘোষণা করেন।
গ্যালারির হাজার হাজার দর্শক করতালিতে তখন শুধু তাকে নয়, যেন বাংলাদেশকেই স্বাগত জানাল। পৃথিবীর লাখো-কোটি দর্শক এই মুহূর্তটি উপভোগ করে। সম্মানসূচক তাকে প্রদান করা হয় অফিসিয়াল মার্চেন্ডাইসের ৫০ পাউন্ডের ভাউচার। বিশ্বকাপ খেলা চলাকালীন এটা ছিল আইসিসির পক্ষ থেকে বাংলাদেশিদের জন্য এ রকম দ্বিতীয় স্বীকৃতি। শুধু বাংলা আর বাঙালির ঐতিহ্য প্রদর্শনের কারণেই গ্যালারিতে এ স্বীকৃতি আসে।