ব্রিটেনে রেষ্টুরেন্টে ওয়ার্ক পারর্মিটের সুযোগ এখনও সৃষ্টি হয়নি। সম্প্রতি মাইগ্রেশন এডভাইজরি কমিটি (ম্যাক) ইইউ এর বাইরে থেকে দক্ষ এবং অদক্ষ কর্মী নিয়োগে পূর্বের গৃহীত ‘রেষ্টুরেন্টের টেকওয়ে সার্ভিস’ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় সুপারিশ করেছে। নতুন এই আইনটি বাস্তবায়িত হলে অইউরোপিয়ান দেশের অংশ হিসাবে ব্রিটেনের রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায় দীর্ঘদিনের স্টাফ সংকট নিরসনে বাংলাদেশ থেকেও দক্ষ এবং অদক্ষ স্টাফ আনা সম্ভব হতে পারে। এই সুপারিশের আওতায় রয়েছে কৃষি ও নার্সিং শাখাও।
মে মাসের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিক তত্বে প্রকট স্টাফ সংকটে থাকা রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা আশার আলো দেখছেন । বাংলাদেশে এই নিয়ে শুরু দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ ও আলোচনা।
এ বিষয়ে ১৩ জুন বুধবার পূর্ব লন্ডনে ম্যাক এর সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে ব্রিটেনে বাংলাদেশি ক্যাটারার্সদের বৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারর্স এসোসিয়েশন (বিসিএ) এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। ম্যাক এর সুপারিশ বাস্তবে কার্যকর হলে ব্রিটেনে বাংলাদেশি রেষ্টরেন্ট এর স্টাফ সংকট অনেকটা দূরীভূত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে বলে জানিয়েছে বিসিএ। অপরদিকে ম্যাক এর ঘোষণার সাথে সাথে এক শ্রেণীর অসাধু চক্র মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থ ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিতে তৎপর হয়ে উঠার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিসিএ উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘ওয়ার্ক পার্মিট ভিসা’ খোলার সংবাদ প্রচার করে যারা অসাধু পন্থা অবলম্বন করছে, সেসকল দালালদের খপ্পরে না পড়তে সবাইকে শর্তক হওয়ার আহবান জানিয়েছে বিসিএ। পাশাপাশি ব্রিটেনের সাংবাদিক, লেখক, সংগঠক এবং কমিউনিটির সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষদের এই বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির আহবান জানিয়ে বলা হয়েছে- দীর্ঘ দিনের ধারাবাহিক লবিং, আন্দোলনের সুফলটি যেন অতীতের মতো প্রশ্নবিদ্ধ না হয়ে কমিউনিটি এ থেকে সুফল পেতে পারে, সেদিকে সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ‘বিসিএ গভীরভাবে বিশ্বাস করে দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশি কারী ইন্ড্রাষ্ট্রির নানাবিদ সংকট, বিশেষ করে স্টাফ সংকট নিয়ে ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের সাথে তাদের তথ্যভিত্তিক জোরালো লবিং ও প্রচারণার জন্য নতুন এই আইনটি কার্যকরের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে । নতুন এই আইনটি অনুমোদন হলে বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্টে প্রকটভাবে সৃষ্ট স্টাফ সংকট লাঘব হবে বলে মনে করছে বিসিএ। মাইগ্রেশন এডভাইজারি কমিটি ( ম্যাক) এর গৃহীত সুপারিশকে স্বাগত জানাচ্ছে বিসিএ। বাংলাদেশি কারী শিল্পের প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন বিসিএ আশাবাদি সরকার ম্যাক এর সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নে প্রদক্ষেপ গ্রহন করবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের প্রেস ও প্রকাশনা সেক্রেটারী ফরহাদ হোসেন টিপু । সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিসিএ প্রেসিডেন্ট কামাল ইয়াকুব,সেক্রেটারী জেনারেল ওলি খান, চীফ ট্রেজারার সাইদুর রহমান বিপুল, সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠু চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ মুনিম ও চ্যানেল এস এর চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি।
বিসিএ কারী শিল্পের দীর্ঘ মেয়াদী সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রাথমিক ভাবে জরুরী ভিত্তিতে একটি ন্যাশনাল এপেন্ট্রিশীপ স্কিম গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে দাবি জানিয়ে আসছে। যেখানে বিভিন্ন দেশের জাতিগত খাবার তৈরী , সরবরাহে বিনিয়োগ এবং সুনিদৃষ্ট কাজের জন্য দক্ষ কর্মী তৈরীর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। এ বিষয়ে ব্রিটেনে কারী শিল্পে অর্থনৈতিক অবদান রেখে যাওয়া বাংলাদেশি কারী শিল্পের উন্নয়নে বিসিএ সরকারের সাথে আন্তরিক ভাবে কাজ করার- তাদের আগ্রহের কথাও জানিয়েছে।
বাংলাদেশি ক্যাটারার্সদের সক্রিয় সংগঠন বিসিএ বর্তমান কারী শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে এ বিষয়ে ব্যাবসাবান্ধব একটি শক্তিশালী নীতি প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি অব্যাহত চাপ রাখছে জানিয়ে বলেছে, ‘বিসিএ মনে করে সর্ট ওক্যুপেশন লিষ্ট এ লিপিবদ্ধ তালিকাতে স্কিলড স্টাফ এর বার্ষিক বেতন £ 29,570 থেকে অবিলম্বে বেতনের উপর আরোপিত ‘থ্রেশহোল্ড’টি হ্রাস করা জরুরী। একটি ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি একটি অবাস্তব সিদ্ধান্ত। বিসিএ বার্ষিক £ 18,000 থেকে £ 20,000 এর মধ্যে ‘থ্রেশহোল্ড’ নির্ধারণের দাবী জানিয়ে আসছে।’
‘এছাড়া বিসিএ ‘ডুকুমেন্টহীন‘ কর্মীদের ‘ওয়ার্ক রিপ্লেইমেন্ট‘ এর আওতায় এনে তাদেরকে কারী ইন্ড্রাষ্টিতে কাজ করার সুগোগ দেবার জোর দাবী জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশি কারী শিল্পের সংকট সময়ে এই উদ্যোগ গ্রহন করলে কারী শিল্পের বিদবমান ষ্টাফ সংকট হ্রাস পাবে বলে বিসিএ মনে করছে।’
বিসিএ সভাপতি কামাল ইয়াকুব বলেন, পূর্বের ইমিগ্রেশন নীতিতে যে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল তা হচ্ছে – যেসব রেষ্টুরেন্টে টেকওয়ে সার্ভিস আছে, সেসব রেষ্টুরেন্ট ওয়ার্ক পার্মিটের আওতাভুক্ত ছিল না। মাইগ্রেশন এডভাইজারী কমিটির বর্তমান সুপারিশে বলা হয়েছে, পর্বের এই নিয়মটি তুলে নেয়ার কারণে রেষ্টুরেন্ট ও টেকওয়েগুলো নায্য সুফল পাবে। বিসিএ এই বিষয়টি চিহ্নিত করে দীর্ঘদিন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে লবিং করে আসছে। নতুন আইনটি বাস্তবায়িত হলে কারী ইন্ড্রাষ্টির স্টাফ সংকট বহুলাংশে দূর হবে।
বিসিএ’র জেনারেল সেক্রেটারী ওলি খান বলেন, বাংলাদেশি কারী ইন্ড্রাষ্টি আন্তরিকভাবে চায় ইমিগ্রেশন নীতির সুফল নিয়ে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে। বর্তমানে জাতীয় অর্থনীতিতে 4.2 বিলিয়ন অবদান রাখছে বাংলাদেশি কারী ইন্ড্রাষ্টি। অইউরোপিয়ান দেশ থেকে কারী শিল্পে দক্ষ এবং অদক্ষ স্টাফ আনার সুযোগ সৃষ্টি হলে এই সেক্টর থেকে অনেক বেশী রেভিনিউ জাতীয় অর্থনীতিতে যোগান দেয়া সম্ভব হবে। আমরা ধারাবাহিকভাবে সরকার এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমূহের নেতৃবৃন্দের সাথে লবিং চালিয়ে যাব।
প্রধান কোষাধ্যক্ষ সাইদুর রহমান বিপুল বলেন, ‘সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঘোষনায় বিসিএ খুশি হলেও তা বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী হয়ে বসে থাকবে না। কারী শিল্পের দীর্ঘ দিনের প্রকট সমস্যাগুলোর অন্যতম সমস্যা স্টাফ সংকট মোকাবেলার জন্য ধারাবাহিকভাবে নীতিনির্ধারণী সংশ্লিষ্ট বিভাগে লবিং এবং তা বাস্তবায়নে কারী ইন্ড্রাষ্টির সাথে জড়িতদের নিয়ে উচ্চকণ্ঠ থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয় ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রিটেনে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী আনার দাবীসহ কারী ইন্ডাষ্টিতে বাংলাদেশি ক্যাটারার্স ও ষ্টাফদের বিভিন্ন সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে।
২০০৮ সালে বাংলাদেশি কারী ইন্ড্রাষ্টির প্রকৃত সমস্যা ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করে লন্ডনের ট্রাফালগাল স্কয়ারে এক ঐতিহাসিক ডেমোষ্টেশন করে। এছাড়া ২০১৮ সালের ১০ জুলাই হাউস অব কমন্স এর সামনে প্রায় ৩হাজার ক্যাটারার্সদের অংশগ্রহনে ‘সেইভ দ্যা ব্রিটিশ কারী‘ শিরোনামে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং ৩০জন নির্বাচিত এমপির সমর্থ নিয়ে কারী শিল্পের স্টাফ সংকট ও অন্যান্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সরকারের কাছে সুনিদৃষ্ট দাবী সম্বলিত বিক্ষোভ সমাবেশ করে ।