সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ১০ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
টরেন্টো বাংলা পাড়া ক্লাবের ১ম ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত  » «   ফুটবলের ব্যাখ্যাতিত নায়ক  » «   বিলেতে হালাল ব্যবসায় হাবিবুর রহমানের সাফল্য  » «   ইউ‌কে বাংলা প্রেসক্লা‌বের দোয়া মাহ‌ফিল  » «   বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতালের ‘মোবাইল ক্লিনিক’ সেবা উদ্বোধন  » «   লণ্ডনে গ্রেটার পাতন এসোসিয়েশন ইউকের বর্ণাঢ্য অভিষেক  » «   সুনামগঞ্জ জেলা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউকের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ২০২৩ অনুষ্ঠিত  » «   ইস্টহ্যান্ডস’র আয়োজনে লন্ডনে বাগান প্রেমীদের মিলন মেলা  » «   লন্ডন বাংলা স্কুল এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন  » «   লন্ডনে বইমেলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব  » «   চ্যানেল এস এর সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার মুনিরা পারভিনের মাতা শাহানা সুলতানা’র মৃত্যুতে ক্লাব নেতৃবৃন্দের শোক  » «   কানাডায় স্বাগতম ! তবে তার আগে…  » «   ইউ‌কে-বাংলা প্রেসক্লা‌বের সভাপ‌তি রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরীর মাতৃবিয়োগে ৫২বাংলার শোক প্রকাশ  » «   ইউ‌কে-বাংলা প্রেসক্লা‌বের সভাপ‌তি রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরীর মাতৃবিয়োগে শোক প্রকাশ  » «   বৃটেনের শিক্ষার্থীদের জন্য মেয়র লুৎফুর রহমানের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

নার্স তানিয়া ধর্ষণ: ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

কিশোরগঞ্জে চলন্ত বাসে নার্স তানিয়াকে পালাক্রমে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি নূরুজ্জামান ওরফে নূরু নিজের অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে নূরু জানিয়েছে সে ছাড়াও তার খালাতো ভাই বোরহান ও বাসের হেলপার লালন মিয়া নার্স তানিয়াকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে। পরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার রাতে বাসের চালক নূরুজ্জামানের জবানবন্দি রেকর্ড করেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-মামুন। আদালত ও পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জবানবন্দিতে নূরু জানিয়েছে, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের গজারিয়া বিলপাড় এলাকায় রাস্তার পাশে প্রথমে চালক নূরুজ্জামানের খালাতো ভাই বোরহান তানিয়াকে বাসের ভেতরে ধর্ষণ করে। পরে চালক নূরুজ্জামান এবং শেষে হেলপার লালন নার্স তানিয়াকে ধর্ষণ করে।

ধর্ষণের সময় বাসের হেলপার লালন নার্স তানিয়ার ঠোঁটে কামড় দিলে তানিয়া তাকে সজোরে লাথি মেরে বাঁচার জন্য বাসের ভেতর ওঠে দাঁড়ান। এ সময় চালক নূরুজ্জামান হঠাৎ ব্রেক করে। এতে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে বাস থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান তানিয়া।

এ অবস্থায় হেলপার লালন তানিয়াকে ফেলে যাওয়ার জন্য বললে চালক তাতে রাজি হয়নি। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। এ সময় চালক বাস থামিয়ে দিলে রাস্তায় চলাচলকারী দুটি মোটরসাইকেল ও একটি অটো সেখানে আসে। তাদের জানানো হয়, মেয়েটি বাস থেকে পড়ে গেছে। পথচারীদের সহযোগিতায় তানিয়াকে আবারও বাসের ভেতর তোলা হয়। তখনো জীবিত ছিলেন তানিয়া।

চালক, হেলপার ও বোরহান মিলে তানিয়াকে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাজারে সততা ফার্মেসি নামে একটি ওষুধের দোকানে নিয়ে যায়। ফার্মেসির মালিক তানিয়ার শরীরের রক্ত মুছে দিয়ে অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে ভাগলপুর জহুরুর ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। ঘটনাটি পিরিজপুরে স্বর্ণলতা বাসের কাউন্টার মাস্টার আলামিনকে জানানো হয়। আলামিন, বোরহান ও অন্য আরেক ব্যক্তি মেয়েটিকে কটিয়াদী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আবারও বাসে উঠায়। এ সময় হেলপার লালন পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পালিয়ে যায়।

রাত ৯টার দিকে তানিয়াকে বাসে রেখে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকে বাসের চালক। আলামিন ও বোরহানকে সিএনজি আনতে বললেও তারা বাস থেকে নামতে রাজি হয়নি। এ অবস্থায় চালকও বাস থামিয়ে বসে থাকে। একপর্যায়ে আলামিন মেয়েটিকে নিয়ে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। কথামতো চালক নূরুজ্জামান বাস চালিয়ে কাপাসিয়ার দিকে যায়। কটিয়াদী উপজেলার বেতাল যাওয়ার পর সুপারভাইজার আলামিন চালককে জানায়, স্বর্ণলতা বাসের এমডি পাভেল তানিয়াকে কটিয়াদী হাসপাতালে রেখে যেতে বলেছেন।

জবানবন্দিতে চালক নূরুজ্জামান জানায়, এ অবস্থায় সেখানে বাস থামিয়ে ২০-২৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকি। মেয়েটি তখনো জীবিত এবং হাত-পা নাড়ছিল। একসময় রফিক নামে বাসের এক লাইনম্যান আসে। সে বেতাল বাজারে ফোনে কথা বলছিল। তখোন বাসের ভেতর তানিয়া ছাড়া বোরহান, আলামিন ও কালো করে আরেক ব্যক্তি ছিল। তখন আমি বাস থেকে নেমে নিজেই অটোরিকশা আনতে যাই। অটোরিকশা নিয়ে এসে আলামিন ও রফিকের কাছে মেয়টিকে বুঝিয়ে দেই। আমি বাস নিয়ে চলে যাই।

চালক জানায়, মেয়েটিকে ধর্ষণের সময় তার মাথা পেছনের দিকে এবং পা বাসের সামনের দিকে ছিল। চালকের খালোতো ভাই ধর্ষণের সময় চালক নূরুজ্জামান পেছনে এবং হেলপার লালন সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। রাত ১১টার দিকে জানতে পারি মেয়েটি মারা গেছে।

দীর্ঘ জবানবন্দিতে মামলার প্রধান আসামি নূরুজ্জামান জানায়, ৬ মে ৪টা ১৫ মিনিটে ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে তানিয়া তার বাসে ওঠে। এরপর বাসটি টঙ্গী স্টেশন, গাজীপুর চৌরাস্তা, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা, কাপাসিয়া, টোক হয়ে উজুলি আসলে তার খালাতো ভাই বোরহান বাসে ওঠে। তারপর থানাঘাট, যাত্রাঘাট, বেতাল বাজার এলাকায় বাসের কিছু যাত্রী নেমে যায়। রাত ৮টার সময় বাসটি কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে আসে। সেখানে ২০-২২ জন যাত্রী নেমে যায়।

নূরুজ্জামান জানায়, পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত হেলপার লালনকে বাসটি চালাতে বলি। কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড ছাড়ার সময় বাসটিতে আমি, হেলপার লালন, আমার খালাতো ভাই বোরহান, নিহত মেয়েটি এবং আরও দুইজন যাত্রী ছিল। কটিয়াদীর কদমতলীতে একজন এবং বাজিতপুরের উজানচরে অন্য একজন যাত্রী নেমে যায়। এ সময় মেয়েটি বাসে একা বসে থাকে। আমি বাসের পেছনের সিটে বসে সিগারেট খেতে থাকি। লালন তখন মেয়েটিকে পেছনের সিট থেকে সামনের সিটে এসে বসার জন্য বলে। মেয়েটি তার সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র নিয়ে সামনের সিটে যাওয়ার সময় বোরহান তাকে ইচ্ছা করে ধাক্কা দেয়।

মেয়েটি তখন বোরহানকে গালি দিলে বোরহান মেয়েটিকে জাপটে ধরে বাসের মাঝখানে যাত্রীদের চলাচলের পথে ফেলে দিলে মেয়েটি কান্নাকাটি শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে ধর্ষণ না করতে চাই পা ধরে কান্না শুরু করে। কিন্তু বোরহান আকুতি-মিনতি না মেনে মেয়েটিকে ধর্ষণ করতে থাকে। এ সময় হেলপার লালন বাস চালাচ্ছিল। সে গজারিয়া বিলপাড় এলাকায় একটি কলা বাগানের কাছে বাস থামিয়ে দেয়।

গত ৬ মে রাতে ঢাকা থেকে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে ও ঢাকার কল্যাণপুর এলাকার ইবনে সিনা হাসপাতালের সিনিয়র নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়া।

বাসটি কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে আসার পর বাসের অন্য যাত্রীরা নেমে যায়। কটিয়াদী থেকে পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার পথে গজারিয়া বিলপাড় এলাকায় বাসের চালক ও হেলপার তানিয়ার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। পরে তানিয়ার মরদেহ কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সে রেখে পালিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে ওইদিন রাতেই চারজনের নামে বাজিতপুর থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় বাসের চালক, হেলপারসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের ৮ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন