মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
রাজধানীতেই আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়! অনুমোদন পেল ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’  » «   আরসা প্রধান জুনুনিকে গ্রেপ্তারের দাবি র‌্যাবের  » «   হিন্দুদের ওপর আক্রমণ ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক: মার্কিন সিনেটরকে প্রধান উপদেষ্টা  » «   দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেলসেতুর উদ্বোধন  » «   বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন: তুলসী গ্যাবার্ড  » «   রেমিটেন্সের নামে এক ব্যক্তি এনেছেন ৭৩০ কোটি টাকা!  » «   সিলেটে ভালোবাসায় সিক্ত হামজা চৌধুরী, বললেন, ‘ইনশাল্লাহ আমরা উইন খরমু’  » «   এমসি কলেজে ধর্ষণের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেই  » «   জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরে এক ঢিলে তিন পাখি  » «   অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের আরেকটি দল আসছে, নেতৃত্বে শিবিরের সাবেকরা  » «   আসছেন হামজা চৌধুরী, গ্রামে উৎসবের আমেজ  » «   ঈদের আগে চাঙা প্রবাসী আয়, ১৫ দিনে এলো ১৬৫ কোটি ডলার  » «   বালোচ লিবারেশন আর্মি কারা এবং কেন পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে?  » «   সিপিবি অফিস দখলে পিনাকীর ডাকে সাড়া মিলেনি  » «   গুতেরেসের সঙ্গে কেন বৈঠক, ‘আমি ঠিক বুঝিনি’: ফখরুল  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

 সাকিব : নক্ষত্রের কক্ষচ্যুতি



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের নিঃসন্দেহে সবচাইতে বড় সুপারস্টার কিংবা ক্রিকেটার হিসেবে সাকিব আল হাসানের নাম শীর্ষে আছে। নিকট ভবিষ্যতে সেটাকে অতিক্রম করে যাবেন এমন ক্রিকেটারের নাম আপাতত বাংলার ক্রিকেট আকাশে দেখা যাচ্ছে না।

সাকিব আল হাসান টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ;শর্তসাপেক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকেও আসলে বিদায় নিয়ে নিয়েছেন।বাকি রয়েছে শুধু ওয়ানডে ক্রিকেট ।

সেটিও এখন ক্রিকেট এবং রাজনৈতিক দুই জায়গায় ফিটনেস সার্টিফিকেট পাওয়া সাপেক্ষে বলবৎ আছে। তা না হলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের অধ্যায় কি শেষ বলা যায় !আমার উত্তর – হ্যাঁ।

নৈতিকতার মানদন্ডে আসলে সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাবেক হয়ে গেছেন আরো অনেক আগেই। অর্থাৎ যেদিন তিনি জাতীয় দলের সদস্য হয়েও একটি রাজনৈতিক দলে নাম লিখেয়েছেন- সেদিনই।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে একথা বলার কারণ হচ্ছে – ব্যক্তিটির নাম সাকিব আল হাসান এবং তাঁর হাতে আছে আমেরিকান পাসপোর্ট। যেটা ব্যবহার করে রাজনৈতিকভাবে ফেরারী হয়েও সারা বিশ্বের ফ্রাঞ্চাইজি  ক্রিকেট লিগগুলোতে খেলে যেতে পারবেন অবলীলায়।

সেই সুযোগ থাকলে সাকিব সেটি লুফে নিবেন স্বানন্দে। অন্তত যারা সাকিব আল হাসানের চরিত্রকে চেনেন তারা নিশ্চিত মনে সেটাই ভাববেন; ভাবা উচিত।

পরিসংখ্যান নাকি একটা আস্ত গাধা। সাকিব আল হাসানের  ক্রিকেট পরিসংখ্যান নিয়ে চর্চা হবে, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার থেকে শুরু করে নানা রকমের বিচার-বিশ্লেষণ হবে; হচ্ছেও। কিন্তু বাস্তবতা হলো সাকিব হলেন বাংলাদেশ দলের লক্ষ তারার মাঝে একটা উজ্জ্বল সূর্য । মাঠের  নৈপুণ্য  দিয়ে নিজেকে যেমন উজ্জ্বল করেছেন তেমনি উজ্জ্বল করেছেন বাংলাদেশের নাম।

তবে ক্রিকেট যেহেতু দলীয় খেলা, টেনিস কিংবা দাবার মতো নয়- সেজন্য দল হিসাবে বাংলাদেশের যে সাফল্য সেখানে এসে দাঁড়িয়ে খুবই স্পোর্টিংভাবে চিন্তা করলে এমন বড় কোন ট্রফি যেমন নেই; সেজন্য খুব বেশি হাহাকারেরও আসলে কিচ্ছু নেই।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব যখন থেকেই অবিসংবাদিত বিকল্পহীন হলে হয়ে উঠেছিলেন; তখন বাংলাদেশের রাজনীতিতেও শেখ হাসিনা হয়ে উঠেছিলেন বিকল্পহীন। কাকতালীয়ভাবে হোক আর ডিক্টেটরদের রাজনৈতিক গুটি হিসেবে হোক- শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আনন্দ ও উৎসবের উপলক্ষ ক্রিকেটের সবচাইতে বড় দুই নাম মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং সাকিব আল হাসানকে কৌশলে  নৌকায় তুলে নেন। স্বৈর শাসকরা সমসময়ই পাবলিক ফিগারদের কাছে টানেন ফোকাস টিক করার জন্য। ইতিহাস সেটার ই সাক্ষ্য  দেয়।

বয়স এবং প্রধানমন্ত্রী লেভেলের ট্যাকটিসের বিপক্ষে দাঁড়ানোর মত ছিলেন না  দুজনেই কেউই। কিংবা এই বয়সের কেউ উল্টো না বলতে না পারাটাই বরং স্বাভাবিক। সমস্যা শুরুটা হয়েছিল আসলে তখনই ।

বোর্ড সভাপতি যেমন আপার পছন্দের লোক ;সেই দলের একজন প্লেয়ার ইজিলি ঢুকে যান আপার ড্রয়িং রুমে! সেজন্য বাংলাদেশ ক্রিকেটে ডিসিপ্লিন নামক যে একটি সিস্টেম থাকার কথা সেটি ভেঙ্গে পড়েছিল একদম অংকুরেই।

সেই ভেঙ্গে পড়া ডিসিপ্লিন আর ঠিক হয়নি।কারণে টিম সিলেকশনে যে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কথা বলতে হতো; সাবেক কাপ্তান এবং এমপি এখনো যিনি রিটায়ার্ড করেননি সেই মাশরাফি প্রধানমন্ত্রী এর ড্রইংরুমে ঢুকে যান কারো না কারো সুপারিশ নিয়ে। অথচ স্পোর্টিং এরিনাতে এমন  হওয়ার নজির নাই সারা দুনিয়ায়।

মাশরাফি , সাকিবের রাজনীতিতে কিংবা আওয়ামীলীগে যোগদান অবশ্যই দোষের না এবং তাদের মতো হাই প্রোফাইল পাবলিক ফিগাররা রাজনীতিতে আসবে এটাই বরং হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে এই দুটি নাম ভালোবাসার চেয়ে নিন্দার ঝড় বয়ে নিয়ে চলেছে। কারণ তারা খেলা না ছেড়ে উল্টো রাজনীতি করে খেলতে শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই।

যে কোন দেশের ন্যাশনাল টিম হলো- সে দেশের সকল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার জায়গা, ভালোবাসার জায়গা। কিন্তু এই দুজন ক্রিকেটার ন্যাশনাল টিমের অংশ থাকা অবস্থাতেই একটি দলের হয়ে সংসদ নির্বাচন করে এমপি নির্বাচিত হয়ে যান। সেটা শুধু দোষেরই না , চরম একটি অনৈতিক প্র্যাকটিস। যে প্র্যাকটিসটি করার কারণেই আজ নিজের অজান্তেই সাকিব আল হাসানকে বলতে হচ্ছে -দেশে যাওয়ার পর যদি বিদেশে আবার ফিরে আসার আশ্বাস পাওয়া যায় তবে তিনি নিজ দেশে গিয়ে খেলতে চান।

প্রশ্ন হলো- একজন জাতীয় দলের প্লেয়ারের ভেতরে এই প্রশ্নটির উদ্ভব হবেই বা কেন ? কারণ তার নিজের নেয়া সিদ্ধান্ত যে ভুয়া এবং ভুল সেটির স্বীকারোক্তি হলো তার বক্তব্য।

ন্যাশনাল টিমের একজন প্লেয়ার আজ নিজ দেশের মাটিতে খেলে অবসর নিতে পারবেন কিনা- সেই প্রশ্ন তুলে দিয়ে বিশ্ব মিডিয়ার কাছে হয়তো একটি সংবাদ শিরোনাম হয়ে যাবেন ।

কিন্তু আত্ম উপলব্দি করলে তো নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন, আমি জাতীয় দলের প্লেয়ার হয়েও  কেন একটি দলের হয়ে নৌকায় উঠে গিয়েছিলাম। সেই উঠা যে ভুল ছিল- সেটা তারই বিবৃতিতে প্রকাশ হয়ে গেল।

সাকিব আল হাসান যেমন অসংখ্য তরুণ ক্রিকেটারদের আইডল হিসেবে নিজেকে একটি স্থানে নিয়ে গেছেন ।সেই আইডলের অনৈতিক কার্যকলাপ এবং সর্বশেষ অবিবেচকের ন্যায় সংসদ সদস্য হয়ে যাওয়া পর্যন্ত এবং একই সাথে সরকার পতনের সাথে তার এই অধ:পতন দেখে নবাগত ক্রিকেটাররা আরেকটি শিক্ষা নিতে পারেন।

মাঠের সাকিবের পারফরম্যান্সকে কেউ যদি লক্ষ্য হিসেবে ধরেন তবে অবশ্যই যেন মাঠের বাহিরের সাকিবকে এড়িয়ে চলেন।কারণ মাশরাফি এবং সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য হয়তো অনেক বড় নাম কিন্তু ক্রিকেটের বাইরে ক্রিকেটে থাকা অবস্থায় তাদের যে পরিচয় তা অবশ্যই নিন্দনীয় -অনৈতিক এবং ও অবিবেচনা পূর্ণ।

স্পোর্টিং এরিনাতে আবেগের কোন স্থান নেই। সেখানে পরিসংখ্যানের চেয়ে আপনাকে সাফল্যই বেশি টানবে। ফিটনেস এর চাইতে আপনার পারফরম্যান্স কথা বলবে। এদুটি জায়গায় বাংলাদেশের কিছু সাংবাদিক এমনভাবে একজন অ্যাথলেটিক হিসাবে মাশরাফির আনফিট অবস্থাকে বীরত্ত্বগাথা হিসাবে  তুলে ধরে তাকে মহাবীর বানানোর চেষ্টা করেছেন। একইভাবে হয়তো সাকিবের অবসরের পর আরেক দল বেরিয়ে পড়বে কত ম্যান অব দ্যা ,ম্যাচ অব দ্যা সিরিজ সহ নানা পরিসংখ্যান দিয়ে সাকিবকে এমন বীর বানাবে যার শূন্যস্থান কখনো পূরণ হবে না। এখানেই আসলে মার খেয়ে যায় ক্রিকেট এবং পরিসংখ্যান।

বিশ্ব ক্রিকেটের দিকে তাকালে বিনোদ কাম্বলি থেকে শুরু করে এন্ড্রু সাইমন্ড,শোয়েব আক্তার, আসিফ ,মোহাম্মদ আমির,  রস টেলর সহ অসংখ্য ক্রিকেটারদের পাওয়া যাবে -যারা শুধু ডিসিপ্লিন ভঙ্গের কারণে ক্রিকেট মাঠ থেকে সরে যেতে হয়েছিল ।সে ক্ষেত্রে অবশ্য আমাদের ক্রিকেট বোর্ড তাদের দায় এড়াতে পারবেনা ।তারা কখনোই বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধার সেই প্রয়াস চালায়নি। সেটা অবশ্য কারণ ছিল- সেই রাজনৈতিক।

রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সাকিব আল হাসানকে যেমন অনেক হাইলাইট করেছিল ,আজ তার তারকা হয়েও খসে পড়া সেই রাজনীতির কারনেই হলো। এটা ক্রিকেটের জন্য লজ্জার নয় বরং ক্রিকেটকে রাজনৈতিক মুক্ত হবার একটি পথ যদি তৈরী হয় সেটাই হবে সাকিব হতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আগামীর প্রাপ্তি।

নৌকাতে উঠেও সাকিব আসলে মাঠেই ছিলেন -এজন্য শেখ হাসিনা এবং সাংসদের পতনের দিনেও এমপি সাকিব টরেন্টোর মাঠে সেদিনও হয়েছিলেন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ। তার জন্য বলা যায়- দুষ্ট গরুর চাইতে শূন্য গোয়াল  ভালো।

ফুজেল আহমদ, টরেন্টো। কানাডা

২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আরও পড়ুন-

বিসিবি আছে ক্রিকেট নাই

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন