ফেনীর আলোচিত নুসরাত জাহান রাফি হত্যার ঘটনায় অদক্ষতা, পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ, দায়িত্বে অবহেলা ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, সাসপেন্ড থাকাকালীন মোয়াজ্জেম হোসেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবেন।
অপরদিকে, নুসরাতের ঘটনায় ফেনীর পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও দুই এসআইর বিরুদ্ধে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে গতকাল এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সোনাগাজীর ঘটনায় ডিআইজি এসএম রুহুল আমিনের নেতৃত্বে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত গঠিত কমিটি ২ মে প্রতিবেদন পুলিশ সদর দফতরে জমা দেয়। ফেনীর এসপি জাহাঙ্গীর আলম সরকার এবং সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, এসআই ইকবাল ও এসআই ইউসুফের গাফিলতির কথা উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।
ওসিকে সাসপেন্ড করার মধ্য দিয়ে তাদের একজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি দৃশ্যমান হলো। এর আগে ঘটনার পর ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
অভিযোগ রয়েছে, শুরু থেকেই এসপি, এডিএম এবং ওসিসহ স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা চালান। তারা বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে ‘আত্মহত্যা’র নাটক সাজাতে চেয়েছিলেন। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ওসি শুরুতেই জানিয়েছিলেন, নুসরাতের ঘটনা আত্মহত্যা হতে পারে। এসপিও শুরু থেকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হন।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে। অনেকে অনুমাননির্ভর বক্তব্য রেখেছে। এতে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম ও এসআই ইকবালকে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া এসপি জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও এসআই আবু ইউসুফকে নন অপারেশনাল ইউনিটে বদলিরও সুপারিশ করা হয়। তারা সবাই বিভাগীয় মামলার মুখোমুখি হবেন।
রাফির পরিবার ও এলাকার সচেতন মহলের অভিযোগ, ওসির মদদে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা এলাকায় দাপট নিয়ে চলতেন। একাধিকবার অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নের গুরুতর অভিযোগ উঠলেও তার কোনো সুরাহা হয়নি। সাহস ও প্রতিবাদ নিয়ে রাফি রুখে দাঁড়ানোয় বেরিয়ে এসেছে সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসা ঘিরে নানা অপকর্মের কাহিনী।
একাধিক সূত্র জানায়, মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা নুসরাতকে শ্নীলতহানি করেছে- এটা জানার পরও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ওসি মোয়াজ্জেম। ২৭ মার্চ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ করেন নুসরাত। এরপর সোনাগাজী থানায় যাওয়ার পর নিয়ম ভেঙে তার বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি মোয়াজ্জেম। ভিডিও করার সময় নুসরাত অঝোরে কাঁদছিলেন। দুহাতে মুখ ঢেকে রাখার চেষ্টা করছিলেন তিনি। এ সময় ওসি বলতে থাকেন- ‘মুখ থেকে হাত সরাও। কান্না থামাও। এমন কিছু হয়নি যে, এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’ নুসরাতের সঙ্গে ওসির আচরণ ছিল আপত্তিকর।
নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এই মামলার চার্জশিট দাখিল করবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এরই মধ্যে নুসরাত হত্যায় ১৬ জনের সংশ্নিষ্টতা পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আটজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।