রাজধানী ঢাকার সাত কলেজ যেন শিক্ষার্থীদের জন্য এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্বে এনে হাজারো শিক্ষার্থীদের জীবনে পুরনো সেশন জটের অভিশাপ লেপ্টে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন,এমনটাই মনে করছেন সাত কলেজের ভুক্তভুগি শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে,জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের চার বছরের অনার্স কোর্স শেষ হয় ৬ বছর পর ২০১৬সালে।
ঢাবির অধীনে সাত কলেজের হয়ে এই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরাই ১ম মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে, যা ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে শেষ হয় সেপ্টেম্বর মাসে।
৭ মাস পার হয়ে গেলেও রেজাল্ট এখনও দিতে পারে নি ঢাবি প্রশাসন।কবে দিবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।এদিকে ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল চলতি মাসের ২২ তারিখ।তিতুমীর কলেজের ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করলে কবে এই পরীক্ষা হবে তিনি তা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেননি ।তাই শিক্ষার্থীরা আবারো নেমে এসেছে রাজপথে।
‘বেলা তুমি বিয়ে করে ফেলো, আমি সেশন জটে আটকে গেছি’-ব্যতিক্রমী এই স্লোগান লেখা প্লেকার্ড নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়েছেন এক শিক্ষার্থী।তার দাবি সেশন জটে আটকে পড়ায় তিনি শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারছেন না।আর শিক্ষাজীবন শেষ করতে না পারায় তার মতো অনেকে চাকরি পাচ্ছেন না। বিয়ে করতে পারছেন না পছন্দের মানুষকে।
এই শিক্ষার্থীর নাম সুজয় দাস। পড়েন ঢাকা কলেজের গণিত বিভাগে। মঙ্গলবার ঢাকা কলেজের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে সুজয়কে দেখা গেছে।তার হাতে শোভা পাচ্ছিল ব্যতিক্রমী ওই প্লেকার্ড।
কর্মসূচির ফাঁকে সুজয়ের সঙ্গে কথা হয়,ব্যতিক্রমী এই প্লেকার্ড নিয়ে আসা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে সুজয় দাস বলেন, অঞ্জন দত্তের বিখ্যাত ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো / এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা’ গানটি আমার বেশ পছন্দ।গানের মূল উপজীব্য ছিল চাকরির জন্য নায়কের বিয়েটা আটকে ছিল।
তিনি বলেন, সেই গানের গল্পের মত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অবস্থা। আমরা যারা সাত কলেজে পড়াশোনা করছি তারা মূলত সেশন জটে আটকে গেছি। এখানে সময়মতো পরীক্ষা হয় না, পরীক্ষার পর ফল প্রকাশে বিলম্ব হয়। ফলে এখন আমাদের অনেককেই বলতে হচ্ছে, ‘বেলা তুমি বিয়ে করে ফেলো, আমি সেশন জটে আটকে গেছি।’
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সাত দফা দাবিতে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে মানববন্ধন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা, যা নীলক্ষেত ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। এর পর সড়ক আটকিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা।
এ সময় তারা সাত কলেজের নানা সমস্যা তুলে ধরে বিভিন্ন স্লোগান দেন। ‘গণহারে আর ফেল নয়, যথাযথ রেজাল্ট চাই’, ‘শিক্ষা কোনো পণ্য নয়, শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা নয়’, ‘গণহারে ফেল, ঢাবি তোমার খেল’, ‘বন্ধ কর অনাচার, সাত কলেজের আবদার’, ‘নিচ্ছ টাকা দিচ্ছ বাঁশ, সময় শেষে সর্বনাশ’- এসব স্লোগান দেয়া হয় বিক্ষোভে।এসময তারা অভিযোগ করেছে যে, ঢাবির অধীনে সাত কলেজ তথা ঢাকা কলেজ,ইডেন মহিলা কলেজ,সরকারি তিতুমীর কলেজ,বাংলা কলেজ,কবি নজরুল কলেজ,বদরুন্নেসা কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের অবজ্ঞা করে পরীক্ষার্থীদের খাতা ঢাবি প্রশাসন সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করেনা বলে তারা অভিযোগ করে বলেন,একটি ডিপার্টমেন্টের ৬৫ জন ছাত্র/ছাত্রীর মধ্যে ৬০ জন ফেল করবে এটা অসম্ভব।
শীঘ্রই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবি প্রশাসনের শিক্ষা বৈষম্যের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামবে বলে জানান।