বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তুলে গভর্নর-ডেপুটি গভর্নরসহ এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দাবি করা হয়েছে। ১৯ এপ্রিল শুক্রবার পূর্ব লন্ডনের লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব অফিসে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন ইউকের এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ উত্তাপন ও শাস্তি দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, ব্রিটেনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠাতা আফসার খান সাদেক ৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ চৌধুরী ৷ বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক ডঃ আনিছুর রহমান আনিছ ও বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরান চৌধুরী৷
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আফসার সাদেক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস নিয়ে একটি গ্রন্থ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ইতিহাস গ্রন্থে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তভুর্ক্ত করা হয়নি। বরং এই ইতিহাস গ্রন্থে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা আইয়ুব খান ও মোনায়েম খানের ছবি পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। এই ইতিহাস গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রকাশ না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে বলে মনে করে, হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি।
বইটি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা ওঠার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থের পান্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ২০১৩ সালের জুন মাসে। এ বিষয়ে তখন উপদেষ্টা কমিটি ও সম্পাদনা নামে দুটি কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি দুটি’ পাণ্ডুলিপি চূড়ান্তের পর গ্রন্থটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটি প্রকাশনার পরপরই এতে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় পরিদৃষ্ট হলে গ্রন্থটি রিভিউয়ের জন্য একজন ডেপুটি গভর্ণরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এবং এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ড. কাজী এরতেজা হাসানের রিটের পর গত বছরের ২ অক্টোবর রুল জারি করে এ ঘটনা তদন্তে অর্থ সচিবকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশ অনুসারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (অর্থ বিভাগ) ড. মো. জাফর উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেন। গ্রন্থটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বির্ধত রয়েছে। এ কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিলো। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বঙ্গবন্ধুর ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি-এ যুক্তিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। গ্রন্থটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃত হয়েছে মর্মে কমিটি মনে করে।‘
প্রতিবেদন আরো বলা হয়, ’গ্রন্থটিতে তদানিন্তন পকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর মোনায়েম খান এর ছবি সংযোজন না- করা শ্রেয় ছিল ।’
ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আফসার সাদেক বলেন, এই প্রসঙ্গে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও অবজারভেশন আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরার জন্যই আমরা এই সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করেছি।
প্রথমত: বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস গ্রন্থে এই ধরনের বিকৃতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, সংশ্লিষ্ট ডেপুটি গভর্নর সহ যারা এই প্রকাশনার সার্বিক তত্ত্বাবধান এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের সকলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। ইতিহাস বিকৃতি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে আমরা মনে করি । এই কারণে জাতির জনকের মর্যাদা ব্যাহত করার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অপরাধ হিসেবে গণ্য করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ঘটনা থেকেই এ বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ এ ধরনের জাতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেখানে অনুসরণ করে থাকে সেখানে এই ধরনের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আফসার সাদেক বলেন, গুরুতর বিভ্রান্তির দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না।
তৃতীয়তঃ আমরা আরো জানতে পেরেছি, এই প্রকাশনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তার মধ্যে একজন ছাত্র জীবনে জামাত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তাই এই বিষয়গুলো তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাই।
চতুর্থত: বঙ্গবন্ধুর যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে এই ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য আমরা সরকার এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন যুক্তরাজ্য হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি, জীবন আলেখ্য, বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস এবং এই মহান নেতার ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরা, সংরক্ষণ এবং এই মহানায়কের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এমন যেকোন প্রয়াসকে কঠোরভাবে প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন যুক্তরাজ্য যাত্রা শুরু করে।