লন্ডনে কবি ইকবাল হোসেন বাল্মীকির দুটি কাব্যগ্রন্থের পাঠ উন্মোচন ও কবিতা সন্ধ্যা অনুষ্ঠান হয়েছে । সূর্য ডুবার মূহুর্ত সময়ে, একপশলা বৃষ্টি মাড়িয়ে ১১ সেপ্টেম্বর ইস্ট লন্ডনের ব্লু মুন সেন্টার সরব হয়ে ওঠেছিল কাব্যজনদের উপস্থিতিতে ।
‘অনন্ত ফাঁসির মঞ্চে ক্রশের খোশবাই‘ ও ‘দু:খবাদীর চিরল দাঁতে‘ কাব্যগ্রন্থের পাঠ উন্মোচন ও কবিতাসন্ধ্যা শুরু হয় গাণের আলোয়, মুগ্ধতা ছড়িয়ে।
কবির কবিতা পাঠ, অনুভূতিকথা ও আলোচনার ফাঁকে বিলেতের জনপ্রিয় আবৃত্তিশিল্পীদের আবৃত্তি আর গানে অনুষ্ঠানটি ছিল সৃজনআবহে ভরা । সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে দর্শকরা শব্দ ও শব্দকল্পের খুশবতে বিমোহিত যে ছিলেন তা বুঝা গেছে অনুষ্ঠান শেষ হবার ঘোষণার মুহুর্তে।
সৃজনশীলতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানটিকে ঋদ্ধ করেছে প্রধান আলোচকের বক্তব্যও।
অনুষ্ঠানের আয়োজক সংগঠক সংহতি সাহিত্য পরিষদ। পাঠ উন্মোচন ও কবিতা সন্ধ্যায় উপস্থিত ছিলেন বিলেতের কবি সাহিত্যিক সংগঠক ও কবির বন্ধু স্বজনেরা।
সংহতির সহ সভাপতি সৈয়দা নাজমিন হক এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কবি, গবেষক ড. শোয়াইব জিবরান।
ড. শোয়াইব জিবরান বাংলা সাহিত্যে কবিতার বিনির্মাণ, সময়ের সাথে বাঁক বদল এবং কবিতাগুলো সময় ও সাহিত্যকে প্রভাবিত করার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে বলেন-
‘আমাদের অনেক অর্জন আছে নিঃসন্দেহে তবে, সাথে সাথে অনেক দৃর্বল সাহিত্য রচনাও আছে। যা যৌক্তিক কারণে দু:খবোধের বিষয়-ও। ইংরেজী সাহিত্য থেকে ‘কপি- পেস্ট‘ চিন্তা, চর্চা এবং অতিমাত্রায় প্রভাবিত না হয়ে বিগত কয়েক দশকে যদি বাংলা সাহিত্যে বাঙালীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, লোক ও ধর্মীয় মিথ ইত্যাদি নিয়ে সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করা হতো তাহলে বাংলা সাহিত্য আজ বিশ্বে অন্যউচ্চতায় প্রকাশ পেত ।‘
নব্বই দশকে বাল্মীকি কবিতা লেখায় সরব ছিলেন। তার মনে একটি রাজনৈতিক দর্শনও ছিল- তিনি সমাজে রুটি-রুজি‘র সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথে মুখরও ছিলেন। এক সময় তিনি ব্রিটেনে পাড়ি দিলেও বাংলাদেশের মাটি মানুষ আর বিলেতের মাটি মানুষের মাঝেই তিনি খুঁজছেন মানবিকতা, ধর্মীয় ও সামাজিক মিথগুলোর সহঅবস্থানের চিহ্নগুলো। টেমস এবং সুরমা তার কবিতায় সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।‘
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংহতি‘র সাধারণ সম্পাদক ছড়াকার আবু তাহের।
কবির সৃজনশীল কাজের দিকগুলো তুলে ধরেন গ্রন্থী সম্পাদক শামীম শাহান।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন লেখক গবেষক ফারুক আহমদ, সাংবাদিক জাহেদী ক্যারল, নাট্যকার স্বাধীন খসরু,দর্পন সম্পাদক রহমত আলী, কবি শাহ সুহেল আমীন ও মোহাম্মদ ইকবাল।
ইকবাল হোসেন বাল্মীকির কবিতার মানবিক দিক, সামাজিক অসঙ্গতি, পচে যাওয়া রাজনীতির অনুসঙ্গ ইত্যাদি পাঠকের মনে দাগ রাখতে পারার দিকগুলো বা পেরে ওঠার মতো মৌলিক বিষয়গুলো বক্তৃতায় ওঠে এসেছে। ব্যক্তিজীবনে কবির বুহেমিয়ান জীবন আর কবি মানসের মিলটিও আলোচনায় প্রকাশ পেয়েছে।
কবি ইকবাল হোসেন বাল্মীকির কবিতা বিলেতের জনপ্রিয় আবৃতিশিল্পী রেজুয়ান মারুফ ও সালাউদ্দিনের কণ্ঠে অনুষ্ঠানে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। বলা যায়, দর্শক শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কবিতা আবহে সময়পার করেছেন।
দুই পর্বের অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশ করেন- বিলেতের জনপ্রিয় শিল্পী মিতা তাহের ও ফারহানা জামান লিয়ানা । ব্রিটিশ বাংলাদেশী শিল্পী মৃদুল, মোহনা, মহিমা ও রাফা। তাদের গাণগুলো দিয়েছে বাড়তি মনভালো করা আনন্দ।
কবিতায় শুধুই মনভরে কাব্যজনরা খালিপেটে বাড়ি যাবার সুযোগটি ছিল না। কবি বাল্মিীকি রাতের ভোজটি করিয়েছেন আন্তরিকতায়। ছিল ভালোবাসার আরেকটি অনুসঙ্গ ;সংহতি পরিবারের সাহেদ চৌধুরী ও কবি সৈয়দা তুহিন চৌধুরীর তৈরী ডেজার্ট দিয়ে সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন।
প্রানবন্ত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন কবি সৈয়দা তুহিন চৌধুরী ও আনোয়ারুল ইসলাম অভি।
পাঠ উন্মোচন ও কবিতা সন্ধ্যায় বিলেতের কবি লেখক সাংবাদিক সংগঠকসহ কবির বন্ধু স্বজনদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে করেছে হার্দিক ভালোবাসাময়। আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির পরও চলেছে আড্ডা। সবার ছবিগুলো হাসিমুখে ধারণ করেছেন ৫২বাংলা টিভির আলোকচিত্রী সামসুর সুমেল।
এক সময় হল ছাড়তে হয় ;বাইরে তখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। জটলা দিয়ে সেখানেও আনন্দসময় পার করেছেন অতিথি ড.শোয়াইব জিবরানকে ঘিরে আর সংহতির ঝুলিতে জমা পড়েছে সকলের কৃতজ্ঞতা,অমূল্য ভালোবাসা।
ছবি: 52banglatv