আমাদের গ্রামে একজন মিস্ত্রি বেশ পরিচিত ছিলেন। সবাই তাঁকে চিনতেন। খুব জনপ্রিয় ছিলেন অর্থনৈতিক ভাবে অস্বচ্ছল মানুষদের কাছে। তাঁর আসল নাম জানি না। সবাই তাঁকে চায়নামিস্ত্রি বলেই ডাকতেন। ছোটখাটো, হালকা পাতলা, শ্যামবর্ণের চায়নামিস্ত্রির জনপ্রিয়তার কারণ ছিল; তিনি কাটমিস্ত্রির যেকোন কাজে খুব বেশী পারদর্শী না হলেও কোন কাজে ‘না’ বলতেন না এবং মোটামোটি ভালোভাবেই গরিবের ঘর-দুয়ার মেরামত এর কাজগুলো করে দিতে পারদর্শী ছিলেন। তাঁর সাথে সব সময় ছোট একটি কাপড়ের ব্যাগ থাকতো- সেখানে হাতুড়ি, রামদা, বাটাইল ইত্যাদি। একদিন, বাড়ীর পাশের জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে মানিক দা‘র চায়ের ষ্টলের সামনে দুজন যুবকের কথা কাটাকাটির মাঝে একজন পাশে থাকা চায়নামিস্ত্রির ব্যাগ থেকে কৌশলে হাতুড়িটা নিয়ে অন্য যুবককে আক্রমণ করতে উদ্যোত হচ্ছে- এই পর্যন্ত আসলে আশেপাশের কেউই তেমন আঁচ করতে পারেননি। চায়নামিস্ত্রির চিৎকারেই সকলের এই ঘটনার দিকে চোখ যায়। বয়সে অনেক ছোট আমি দেখছি ,আমাদের চায়নামিস্ত্রি- হাতুড়ি নিয়ে মারতে যাওয়া যুবকের দুপায়ে সজরে ঝাপটে ধরে কাঁপা, ভারি গলায় বলছেন- ‘ভাইরে ই-টা দিয়া মারিছনা, মরি যাইবো, তোর আল্লার দুহাই লাগে।’ লোকটি তাঁকে টেনে হিচছে সামনে নিয়ে যাচ্ছে আর চায়নামিস্ত্রি পায়ে শক্তকরে ধরে ছেছড়িয়ে যাচ্ছেন। তারপর মানুষজন দৌড়ে এসে মারামারি থেকে বাঁচিয়েছেন দুজনকে । চায়নামিস্ত্রি নিরক্ষর ছিলেন না, তবে হাইস্কুলে যাননি- এটা নিশ্চিত। ঘটনাটিকে বড় করে দেখার কিছু নেই। তবে দুইদিন থেকে চায়নামিস্ত্রির মানবিকতা আমার চোখে ভাসছে। আমি তাকে নতুন ভাবে ভাবছি।
স্যোসাল মিডিয়ায় দেখি আরেক দৃশ্য- শহীদ মিনারে কিছু ছাত্র একজন ছাত্রকে মারছে। অনেকে পাশে থেকে দেখলেও প্রতিবাদে নেই। মাঝখান থেকে একটি কুকুর প্রতিবাদ করছে। এ যেন মানুষ চায়নার চেয়েও আরও মানবিক রাস্তায় বেড়ে ওঠা কুকুর।
আমরা কাকে মারি ? কেন মারি ? মারার প্রয়োজনটা কেন আসে ? এই প্রশ্নগুলো একেবারেই স্থুল হয়ে গেছে এই অতিআধুনিক দুনিয়ায়। বাংলাদেশে এটা একটা সাধারণ ঘটনার মতো হয়ে যাচ্ছে কারো কারো কাছে,সমাজে।
আমরা কমবেশী সবাই নির্যাচিত হয়েই বড় হয়েছি। আমাদের জীবনের সবচেয়ে বেশী চড় -থাপ্পরগুলো আমরা ছোট বেলাই খেয়েছি। অকারণে প্রায় শতভাগ। চড়-থাপ্পর খাওয়ার-ও তো কোন কারণ নেই। অপরাধ করলে-ও শিশুদের সজরে চড় থাপ্পর খেতে হবে কেন?
জন্মভূমি বাংলাদেশ থেকে দূরে ব্রিটেনে, সামাজিক অনেক দৃশ্য মনখারাপ করে দেয়, ভালো অর্থেই। ধরুন, একটা ছেলে স্কুলে বা পার্কে খেলতে বা চলতে হঠাৎ মাটিতে পড়ে গেল। শিক্ষক/ টিম লিডার বা বাবা-মা, পথচারি তৎক্ষনাৎ-ই একটা অদ্ভূদ মনভালো করা প্রেরণাময় কথায় ও এটিচিউডে ভুলিয়ে দেয় -পড়ে ব্যাথা পাওয়ার কষ্ট। বাচ্চাটা হয়তো মাটিতে পড়ে কাঁদছে, বাবা-মা অথবা শিক্ষক পাশে গিয়ে আদরে তোলে, হাসি মুখে বলবে – ‘ ইটস ওকে, ওয়েল ডান বয়, কিপ ইট আ্যাপ।’ অর্থ্যাৎ ভালো কাজে বা শেখার কাজে ভুল বা ছোটখাটো দুর্ঘটনাগুলোকে পজিটিব ভাবেই প্রকাশ করে শিশুদের বুঝিয়ে তোলা যে, জীবন এরকমই।এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। তোমাকে কষ্টে, পরাজয়েও মানবিক এবং অনুপ্রেরনাদায়ী হয়েই বড় হতে হবে।
আমরা বড় হয়েছি বা হচ্ছি ঠিক উল্টো ভাবে। নি:গৃহ, দুর্বলের প্রতি সবলের কর্তৃত্বপরায়ণ, এভিউসিব মনোভাবের ভিতর দিয়ে। ফলত শারিরিক উচ্চতার হিসাবে আমরা ‘বড়’ হয়ে সেই ‘ছোট বেলা’র নির্যাতিত হওয়ার কাজটি করছি। ছোট শিশুকে, দুর্বলকে চড়-থাপ্পড় না মারলে আমাদের ‘বড় বড় ভাব’ লাগে না।
এ এক অমানবিক, অপ্রতিরুদ্ধ বর্বর চর্চা। ঘরে -বাইরে। রাজনীতিতে , বিভিন্ন পেশায়। ঠোকাই শাসায় ঠেলাগাড়িকে। ঠেলাগাড়ি ভ্যানগাড়িকে। ভ্যাগগাড়ি রিক্সাকে। একই ভাবে অটোরিক্সা, লেগুনা, ক্যাব, বড়লোকের কালোগ্লাসের গাড়ি। রাজনীতিতে পাতিনেতাকে শাসায় মধ্যমানের নেতা। নেতাকে তার বড়নেতা-গডফাদার। সবখানেই, চড়-থাপ্পড়। কথায়- থাপড়াইয়া চব্বিশ দাত ফেলে দেওয়া থেকে কিলঘুষি অথবা শালারে সাইজ করিয়া দিমু-জাতীয় আচরণ। চলছে তো চলছে-ই। আমরা যাপিত জীবনে দেখছি, শুনছি আর দিন দিন আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মদেরও অভ্যস্থ করে তুলছি।
এবার শুরু হলো হাতুড়ির অবাধ ব্যবহার। সাথে আছে ছোট ছোট অনেকগুলি – চুলাচুলি, খিস্তি খেউর-আর মাদক-ইয়াবা সেবন বানিয়ে দেয়ার অদ্ভূদখেলা। স্যোসাল মিডিয়া, পত্রিকা সবখানে হাতুড়ি পেঠা বা লাথালাথি,লাঠিপেঠা আর টানা হেচড়ার খবর।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু পরপার থেকে দেখছেন কি না জানিনা। তবে আমাদের গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতির জনক তনয়া শেখ হাসিনা হাতুড়ি পেঠা দৃশ্যটি দেখেননি – এই কথা একটা সচেতন টোকাই-ও বিশ্বাস করবেনা।
হলফ করে বলতে পারি- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের হাতুড়ি পেঠানো ছবি দেখেছেন। কোটা আন্দোলনের সামগ্রিক বিষয়গুলোও তাঁর নখদর্পনে। একজন রাষ্ট্রনায়কের প্রতিদিনের কাজের অন্যতম হলো দেশের সাম্প্রতিক এবং দিনের প্রধানতম ঘটনাপ্রবাহগুলো জানা এবং সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে সমাধানে কাজ করা। নিন্দুকেরাও স্বীকার করবেন যে, শেখ হাসিনা রাষ্টনায়ক হিসাবে দূরদর্শী চিন্তায় অতীতের অন্যান্যদের চেয়ে বহুগুন এগিয়েও।
তবে পাশাপাশি মোটাদাগে আমরা এও গভীর বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীকে যারা ঘিরে আছেন, প্রকৃত সত্য বা পরিস্থিতি তাদের স্বার্থবাদী, তোষামোদি চিন্তায় এগুলোকে গুরুত্বদিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরছেন না। বা তাঁকে বিষয়টি অনুধাবনের সুযোগটি কৌশলে দিচ্ছেন না। তাদের অবাধ ভোগ লালসা ও ব্যুরোক্রেসী রাজনীতির দূরভিসন্ধির কারণে।
গ.
কোটা পদ্ধতি অথবা কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে দ্বিমত বা মতানৈক্য থাকতে পারে । থাকাটা দোষের কিছু না। ত্রিশলাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন দেশে আমরা যদি স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে না পারি, তাহলে স্বাধীনতার অর্থই বা কোথায়। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম ও রক্তের বিনিময়ে যে গণতন্ত্র আমরা পেয়েছি বলে আত্নতৃপ্তিতে ভোগি- সেই গণতন্ত্রই তো বলছে- তোমার কথা আমি মানিবনা সত্য, কিন্তু তোমার কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমি বাধ্য থাকিব।
ছাত্রলীগের যারা, সরকার বিরুধী আন্দোলনের গন্ধ খুঁজে ৫৬ কোটি টাকা লেনদেন এর তথ্য দিচ্ছেন , কেউ শতকোটি কোটাবাণিজ্য বা কোটা আন্দোলনের নামে সরকার পতনের আন্দোলন এর কথা বলে সরব আছেন -হাতুড়ি পিঠা আর লাঠির আঘাত, চড় -লাথির অবাধ ব্যবহারে। কোটা আন্দোলনে সরকার পতনের রাজনীতির ষড়যন্ত্র খুঁজছেন। সেটাকেও ছাত্রলীগকে চালিয়ে যেতে কি কেউ বাঁধা দিচ্ছে? ৫৬ বা ৬০ কোটিকে ৬০০ কোটি বানিয়েও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বা প্রচার করতে কেউ বাঁধা দিচ্ছে বলেও শুনা যায়নি।
হাতুড়িপেঠা তত্বটি নিয়ে সুশীল সমাজও কথা বলবে না, বা ‘কথা না বলতে চাপ আছে‘- বলেও উচ্চারিত হচ্ছে এবং এখন দৃশ্যমানও।
এই জানা-শোনা, দেখা-না দেখার মাঝেই আমাদের যাপিত জীবন হলেও একটা দুর্বল ,মানবিক প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা আছে কিছু মানুষের। নেহায়েত বোধের তাড়নায়। বিনম্রতায় জিজ্ঞাসু আঙ্গুলটি তরুন, যুবা বা তারুন্যদ্বীপ্ত অগণণ জনগণকে বিকেকের দিকেই নিবন্ধিত করছে দিন দিন।
যারা রাষ্ট্রের অক্সিজেন গ্রহন করে, দূ:খে,কষ্টে জীবন পার করে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সুখের কথা ভাবে। সংগ্রামে- সাহসে আলোর সুড়ঙ্গ দেখে। দেখাতে চায়। ভালো কিছু করতে চায় বা ভালো কিছুর সঙ্গে থাকতে চায়- তাদের সাথে গাঁ-ঘেষাঘেষির দরকার কী। টাকায়, পেশীতে, ক্যাডারশক্তিতে অনেক এগিয়ে থাকলে এই দূর্বলশ্রেণীর প্রতি একরকম করুণা দৃষ্টি থাকে। তাদের রাজনৈতিক যুক্তি ও তথ্যগুলো জনগণ মিডিয়ায় দেখে ,পড়ে। জনসভায় চিৎকার করে বলা কথাগুলো বোকাসোকা জনগণও পথ যেতে যেতে শুনে। এখানে এই নগন্য শ্রেণীর সাধারণ ছাত্রদের দমনে পুলিশ-ক্যাডার-পেটুয়া বাহিনীর কী দরকার?
এতো ভয় ই-বা কীসের। কোটা আন্দোলন জনবান্ধব নয়। জনগণ এর সাথে নেই; তো গায়ে হাত তোলা কেন? হলে -হলে হামলা কেন? গ্রেফতার, মামলা কেন? হাতুড়ী পেটা কেন?
এই প্রশ্নগুলো এখন বাসি হয়ে গেছে। এগুলোর উত্তরও সচেতনদের জানা।
আবার উচ্চকণ্ঠও আছে; সত্যি-ই কী আমাদের আবেগ,অনুভূতি- সাহস, জেগে উঠার ঐতিহ্যিক বাঁধন সব কিছু তলালিতে গেছে? বাঙালির বিবেক বোধে-রক্তে যে আলোর স্ফোরণে জেগে থাকে সব সময় সেখানেও কী নতুন সামাজিক ব্যাকটেরিয়া বাসা বেঁধেছে!
দুটি স্যিনারিওর দিচ্ছি, একটি তে আপনি আটকা আছেন বিশ্বাস করি; এক. অনুভবে দেখুন; এই কোটা আন্দোলনে নির্যাতিত ছাত্রীর মতো একজন আপনার জীবনের অর্ধেক হয়ে আছে । কিংবা মেয়েটি দেখতে অবিকল আপনার প্রিয় বোন এর মতো । অথবা পাড়ার বোন। অন্যদিকে, ঘটনার পরেও আপনার আশপাশের ভাই বন্ধুরা নিরব দর্শক।বোনটি এখনও একা লড়াই করছে। মিডিয়ার সামনে একা চিৎকার করছে লাখো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের জন্য। ঐ সত্য-ন্যায়ের জন্য।
দুই. ভাইটি, হাসপাতালে কাতরাচ্ছে-আর কোনদিন দাড়াতে পারবে কি না সে জানে না। হাসপাতালের চিকিৎসা বহনের ক্ষমতাও নেই। তবুও ভাইটি- হাজারো মেধাবীর কথা ভাবছে…। পিতা, জায়গা বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিল। আপনি হয়তো তার আপন বোন না। পাড়ার তো বোন। অথবা বন্ধুর বোন যে নন- সেটা কী অস্বীকার করা যাবে? অথবা স্যোসাল মিডিয়ার ফ্রেন্ড, পাড়ার প্রিয় খালার ছেলে। পাড়ার ভাই?
স্যিনারিও গুলো ভাবলে, চোখে কি ঝাপসা অনুভব না ছোঁয়ে যায়…?
আমরা বিশ্বকাপ উন্মাদনায় ভাসছি। এ নিয়ে কারো কোন সমস্যা হবার যৌক্তিকথা দেখিনা। এটা জীবনেরই অংশ। তবে বিরতির সময় ব্যালকনিতে এই দেশের আলো-হাওয়ায় দাড়িয়ে একা এক মিনিটের জন্য স্যিনারিওটি থেকে ঘুরে আসার দাবীটি বিনয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ রাখার অনধিকার চর্চা করছি।গ.
স্যোসাল মিডিয়ায় ছাড়া আমাদের জীবন চলেনা এখন। একটু কিছু হলেই আমাদের –‘ওয়াও, ওস্যোম, ইস,আহ, বাল্লাগছে, সুন্দর হইছে, মন খারাপ ইহছে‘-তে বুদ হয়ে আছি। সেলফি তো এখন আমাদের ভার্চ্যূয়্যাল যমজ ভাই-বোন।
এসবের মাঝেই স্যোসাল মিডিয়ায় একটি আর্তনাদ, প্রতিবাদ বোবাকান্নায় ভাসছে- ‘আজকে আমার ছেলে, কালকে আপনার ছেলে, পরশু দিন তার ছেলে– এভাবেই দেশটা চলবে। আমরা মরে যাবো তারাই বেঁচে থাকবে।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলায় আহত নুরুল হকের বাবা ইদরিস হাওলাদার এর আর্তনাদ কারোই স্যোসাল একাউন্ট এর ফিড এড়িয়ে যাবার কথা নয়।
প্রিয় র্ভাচ্যূয়াল তারুন্য। আপনি ব্যস্ত আছেন। কষ্টে আছেন। আনন্দে আছেন। উচ্ছাসে, উৎসবে আছেন। তবে এটা ধ্রুব সত্য যে, সবকিছুতে স্যোসাল মিডিয়া নিয়েই আছেন। লাইক, রিয়্যেক্ট, এ্যাংরি, স্যাড বা কমেন্টস নিয়েই আপনার আধুনিকতম জীবন।
সেখানে একটি মিনিট কি দেশের জন্য, মানবিকতার জন্য দেয়া যায়! একজন শিক্ষার্থী তার স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার কনসার্ণ, দাবীগুলো তুলেছে। আর আমি তাঁকে হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে পিঠিয়ে পঙ্গু করে দেবো? আর বুক ফুলিয়ে সামন দিয়ে চলাফেরা করবো চরম দাম্ভিকতায়! গোটাদেশের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের চিন্তা নিয়ে হাজার হাজার মেধাবী আন্দোলন করছে। আর মাত্র কয়েকশত অছাত্র ও ছাত্রসংগঠনের নামধারী ক্যাডার রাষ্ট্রের ভবিষ্যতকে দলিত করছে আপনার সামনে ! আপনি নিজেকে পরিচ্ছন্ন ,সুবোধ,মেধাবী তারুন্য ভাবতে পারেন?
প্রিয় বোনটির সাথে অমানবিক ব্যবহারসহ টানাহেচড়া, খিস্তি খেউড়ি আমি করে যাবো আর আপনি নিরব থেকে সুপৌরষ ভাবছেন নিজেকে! কৃষক বাবার কান্না তারুণ্যের বুকের পাজর সিডরের মতো ছোঁয়ে যায় না- আমি বিশ্বাস করিনা।
গায়ে চিমটি দিয়ে দেখুন। বেঁচে আছেন তো?
প্রিয় সবুজ। প্রিয় তারুন্য। প্রিয় শক্তি; আপনি একটু নড়ে চড়ে স্যোসাল মিডিয়াতে আসুন। হাতুড়ি পেটার বিভিৎস ছবি, শহীদ মিনারে নির্যাতিত ছাত্রকে বাঁচাতে কুকুরের মানবিকতা,শিক্ষার্থী বোনটির ক্যামেরার সামনে অসহায়ত্ব ইত্যাদি যদি আপনার চোখে-বোধে অমানবিক না-ও লাগে, তাহলেও আপনার অভিব্যক্তি, মন্তব্য প্রকাশ করতে পারেন। একটু এ্যাকটিভ হোন।
না হয়, হোক প্রতিবাদ। ৫২,৬৯,৭১,৯০ সালে স্যোসাল মিডিয়া ছিলনা। মানুষ জেগেছে। মানবিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বোধগুলো অগণণ মানুষকে জাগিয়েছে। চিন্তাশক্তি ও বোধের স্ফোরণই মানুষকে জীবিত রাখে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে সাহস যোগায়;আপনার চেয়ে এই ধ্রুবসত্য আর কে জানে, তারুন্য?
জেগে আছে বিবেক। জেগে আছে মানুষ। মানবিক বাংলাদেশ আবারও প্রমাণ করবে-পরাজিত হবার জন্য জন্মায়নি বাঙালি।
ছবি কৃতজ্ঞতা: ডেইলি স্টার, বিবিসি বাংলা
আ নো য়া রু ল ই স লা ম অ ভি; কবি সাংবাদিক। লন্ডন