শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
দ্রোহ ও প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ আর নেই  » «   লন্ডন মুসলিম সেন্টারে দুই শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো ‘ফেইথ ইন এনভারনমেন্ট’ সামিট  » «   রোবটিক্স বিজ্ঞানী ড. হাসান শহীদের নেতৃত্বে কুইন মেরি ইউনভার্সিটি অব লন্ডনে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মাল্টিরোটর সোলার ড্রোন উদ্ভাবন  » «   লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমির অফস্টেড রিপোর্টে ‘গুড’ গ্রেড অর্জন  » «   টাওয়ার হ্যামলেটস এডুকেশন অ্যাওয়ার্ডস : ১৮৫ জন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা  » «   ব্যারিস্টার নাজির আহমদের “ইন্সপায়ার এ মিলিয়ন”নামে চ্যারিটি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা  » «   সম্মিলিত সাহিত্য ও  সাংস্কৃতিক পরিষদের ২০২৫-২৬ পরিচালনা পর্ষদ গঠন  » «   গ্রেটার ফতেহপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকের সাধারণ সভা ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত  » «   আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মিল আর গুজব রাজনীতি  » «   পাচারকৃত টাকা বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন ডা. শফিকুর রহমান  » «   প্যারিস-বাংলা প্রেসক্লাব ফ্রান্সের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন  » «   শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা  » «   ব্রিটিশ-বাংলাদেশী হুজহু’র ১৫তম প্রকাশনা ও এওয়ার্ড অনুষ্ঠান ১২ নভেম্বর  » «   বিসিএর ১৭তম এওয়ার্ড : উদযাপিত হলো বাংলাদেশী কারি শিল্পের সাফল্য  » «   কবি ফয়জুল ইসলাম ফয়েজনূরের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ভালোবাসার আগ্রাসন’র মোড়ক উন্মোচন  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

বিস্ময় নদ আমাজান



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ ছুঁয়ে বনসাম্রাজ্য আমাজোনিয়া’র বুক চিরে এঁকেবেঁকে আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়েছে বিস্ময়কর নদ আমাজান। যদিও দৈর্ঘ্যে আফ্রিকার নীল নদের পরপরই আমাজান নদ-এর স্থান, তবে অনেক ক্ষেত্রে নীল নদের চেয়ে এগিয়ে আছে আমাজান নদ। আমাজান প্রতি সেকেন্ডে এক লক্ষ পচাঁত্তর হাজার ঘন মিটার পানি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আটলান্টিক মহাসাগরে। পৃথিবীর তাবৎ নদ-নদী হয়ে যত পানি সাগর-মহাসাগরে পতিত হচ্ছে এর এক-পঞ্চমাংশ পতিত হয় কেবল আমাজান হয়েই। পানি প্রবাহের এ পরিমাণ পৃথিবীর অন্য বৃহৎ ও দীর্ঘ নদী কঙ্গো অপেক্ষা পাঁচ গুণ এবং মিসিসিপি’র তুলনায় দশ গুণ। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, আমাজান নদের যে পরিমাণ পানি আটলান্টিক-এ পৌছে তা নদটির মোট পানি প্রবাহের মাত্র ৩৩ ভাগ। তাহলে কী রহস্য লুকিয়ে আছে অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশের ভাগ্যে? এ বিশাল পরিমাণ পানি যায়ই বা কোথায়? তবে কী এ বিশাল পরিমাণ পানি স্রেফ হাওয়া হয়ে যায়! হ্যাঁ, আমাজান অববাহিকার কোনও কোনও অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কখনই মাটির সফেদ ঘ্রাণ স্পর্শের সুযোগ পায় না। এর আগেই বাষ্পীভূত হয়ে স্রেফ হাওয়া হয়ে বায়ুমন্ডলে মিশে যায়। ফলে আমাজানের দুই-তৃতীয়াংশ পানিই আটলান্টিকের বিশাল বুক ছোঁয়ার সুযোগের ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়।

আমাজানের মোহনাও পৃথিবীর অনান্য সকল নদ-নদীর চেয়ে চওড়া। এর প্রস্থ ৩২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মোহনার মধ্যেই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ স্বাদু পানির দ্বীপ মারাকো’র অবস্থান। আয়তনে যেটি প্রায় আটচল্লিশ হাজার বর্গ কিলোমিটার। ধরে নেয়া যায় ছোট সাইজের একটি দেশের সমান। আমাজান আর আটলান্টিক এর মিলনস্থল থেকে ৩৬০০ কিলোমিটার উজানে পেরুর ইকুইটাসে আমাজানের প্রস্থও প্রায় দুই কিলোমিটার। এই অঞ্চলে সারা বছরই পানির পৃষ্ট থেকে নদের তলদেশ পর্যন্ত গভীরতা অন্তত ৪০ থেকে ৫০ মিটার পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে। সুতরাং এ স্রোতে বা গভীরতায় কারও আমাজানের তলদেশ ছোঁয়ার ইচ্ছা জাগলেও সেটা স্রেফ মামা বাড়ির আবদার ছাড়া আর কিছ ুহবার নয়। সমুদ্রের কাছাকাছি কয়েকশ’ কিলোমিটারের মধ্যে আমাজানের গভীরতা কোথাও কোথাও এমন কী সমুদ্রতল থেকেও বেশি! আমাজান নদের প্রধান দুই সন্তান অথাৎ শাখা নদী কুরুয়া ও মাদিরা। কেবল এ দু’টি নদীই লম্বায় ৩৩০ কিলোমিটার। প্রায় এগারোশ’ শাখা নদী সংযুক্ত হয়েছে আমাজানের নাড়ির বাঁধনে। বছরের বিভিন্ন সময় পানির স্তরের ব্যাপক ওঠা-নামা মানে হল সমগ্র আমাজান অববাহিকা বছরের কোনও না কোন সময় প্লাবিত হওয়া। ভার্জিয়া ফরেস্ট বা প্লাবন বনভূমির মোট আয়তন ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটারের মত। এই পরিমাণ আমাজোনিয়ার মোট বনভূমির প্রায় চার শতাংশ। এই প্লাবন বনভূমি নদী থেকে কোথাও কোথাও এমনকি আশি কিলোমিটার দূর পর্যন্ত রেইনফরেস্টের গহীনে ঢুকে গেছে। প্লাবন বনভূমির উদ্ভিদ ও প্রাণিজগত সাময়িক প্লাবনের সাথে নিজেদের জীবন চক্রকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।

 

বনভূমির মত আমাজান নদের তলদেশও প্রাণীবৈচিত্রে সমৃদ্ধ। এর তলদেশেই বাস করে ঘাতক মাছ পিরানহা। তাজা মাংসের গন্ধ পেলেই এরা ছুটে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে। একটি পিরানহার ঝাঁক পূর্ণ বয়স্ক তাগড়া একটি মহিষকেও সামান্য ক’মিনিটের মধ্যে সাবাড় করে দিতে পারে। এদের রাক্ষুসে ক্ষুধা এমনই যে, শিকারকে নাগালে পাওয়ার পর এরা এক কণা মাংসও অবশিষ্ট রাখে না। পড়ে থাকে কেবল শিকারের হাড় বা কংকাল। পিরানহার অস্ত্র হচ্ছে এর দাঁত। এ দাঁতের সাহায্যেই নিঁখুতভাবে কেটে নেয় সে এক এক টুঁকরো মাংস। আমাজানের তলদেশের অন্য এক সদস্য ‘ইলেক্ট্রিক ঈল’। আমাজানের একেবারে তলদেশ অথাৎ তলদেশের কর্দমাক্ত অংশে এর নিবাস। এরা চোখে দেখতে পায়না। পাঁচ ফুট লম্বা এ প্রাণী চোখে দেখতে না পেলেও এর শরীরের চারপাশে এক ধরণের বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করে পরিবেশ সর্ম্পকে ধারণা রাখে। কোনও শত্রুর অস্তিত্ব অনুভব করলে ইলেক্ট্রিক ঈল রেডিয়েশনের মাধ্যমে শত্রুকে ঘায়েল করে ফেলে। নামে ঈল হলেও সাধারণ ঈল জাতীয় মাছের সাথে এর সর্ম্পক নেই-ই প্রায়। আমাজান তলদেশের অন্য এক বিস্ময়কর প্রাণী ‘মানাটি’। একে ওয়াটার অক্স বা পানির ষাঁড় নামেও ডাকা হয়। দেখতে জলহস্তীর সাথে এর কিছুটা মিল রয়েছে বৈকি।

আমাজানের বৃহত্তম জলজ স্তণ্যপায়ী প্রাণী এটি। ৯ ফুট লম্বা মানাটির ওজন এক হাজার পাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিদিন এরা প্রায় একশো পাউন্ড খাবার খায়। আমাজনের গভীরে বিচরণ করে মিঠাপানির অন্যতম বড় মাছ অ্যারাপাইমা। জায়ান্ট অ্যারাপাইমা লম্বায় প্রায় দশ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। আমাজোনিয়া অরণ্যের বাসিন্দা রেড ইন্ডিয়ানদের মাঝে অ্যারাপাইমা নিয়ে নানা মিথ। রেড ইন্ডিয়ানরা অ্যারাপাইমা শিকার করে বলে শক্তিমান অ্যারাপাইমা নদী থেকে কখনো কখনো রেড ইন্ডিয়ানদের ধরে নিয়ে প্রতিশোধ নেয় বলে তারা বিশ্বাস করে।

আমাজান নদের উদ্ভিদ জগতের মধ্যে সবচে’ আলোচিত ‘আমাজান পদ্ম’। বিরাট আকৃতির পাতাওয়ালা আমাজান পদ্ম নিমফিরেসি পরিবারভুক্ত। গোলাকার ও কাঁটাযুক্ত আমাজান পদ্মের পাতা পৃথিবীতে বৃহত্তম। পূর্ণ বয়স্ক পাতা সাড়ে ৬ ফুট চওড়া হয়। কান্ড অনেকটা আঁদার মত। ফুল সাদা, ব্যাস ১৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এর ফুল ফোটার সময় প্রথমে সাদা, এরপর গোলাপী এবং ঝঁরার সময় লাল বর্ণ ধারণ করে। বর্ষাকালে রাতে ফোঁটে, দিনের আলোয় চুঁপসে থাকে। আমাজান নদের তটসংলগ্ন দেশগুলোতে এর বীজ থেকে ময়দা উৎপন্ন করা হয়। জেনে রাখা ভাল, আপনি চাইলে ঢাকার ওয়ারীতে বলধা গার্ডেনে বেড়াতে এসে আমাজান পদ্মের সাথে পরিচিত হতে পারেন।
পানি প্রবাহের সমৃদ্ধতার মতো আমাজান নদ উদ্ভিদ ও প্রাণ বৈচিত্রেও সমৃদ্ধ। আমাজান প্রতিদিন হাজার হাজার টন জল বুকে নিয়ে ছুটে চলেছে নিরন্তর-নিরবধি।

শিমুল খালেদ:  ভ্রমণ ও প্রকৃতি বিষয়ক লেখক ও প্রাবন্ধিক । পেশায় ব্যাংক কর্মকর্তা।


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন