সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ এক বছরে ৩৩ গুণ বৃদ্ধি
- আপডেট সময় : ১০:৪০:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
- / 225

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ এক বছরে হঠাৎ করে ৩৩ গুণের বেশি বেড়েছে।
সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সাল শেষে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থ দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ৪৪ হাজার সুইস ফ্রাঁ। প্রতি ফ্রাঁ ১৫০ টাকা ধরে এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা।
২০২৩ সালে এই অঙ্ক ছিল মাত্র এক কোটি ৭৭ লাখ ১৩ হাজার সুইস ফ্রাঁ, অর্থাৎ প্রায় ৩৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে টাকার হিসাবে বাড়তি অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, যা প্রায় ৩৩ দশমিক ২৮ গুণ বৃদ্ধি।
তবে এ ধরনের লাফিয়ে বাড়ার ব্যাখ্যা এসএনবির প্রতিবেদনে নেই। পাচার বা অবৈধ উৎস সম্পর্কেও কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। সাধারণত সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো কার কত অর্থ জমা আছে বা অর্থের উৎস সম্পর্কে কিছু জানায় না।
এসএনবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক দশকে ২০২১ সালে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা ছিল—৮৭ কোটি ১১ লাখ ১২ হাজার ফ্রাঁ, যার টাকার পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি (প্রতি ফ্রাঁ ৯৫.৮০ টাকা ধরে)। এরপর ২০২২ ও ২০২৩ সালে অর্থের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে কমে যায়। ২০২৩ সালে ছিল সবচেয়ে কম—মাত্র এক কোটি ৭৭ লাখ ১৩ হাজার ফ্রাঁ।
এই ধারাবাহিকতা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে আবারও বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেছে।
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার পরিসংখ্যান অনুযায়ী:
-
২০১৫ সালে ছিল ৫৫ কোটি ৮ লাখ ফ্রাঁ
-
২০১৬ সালে বেড়ে হয় ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্রাঁ
-
২০১৭ সালে কমে দাঁড়ায় ৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফ্রাঁ
-
২০১৮ ও ২০১৯ সালে সামান্য ওঠানামা করে
-
২০২০ সালে কমে দাঁড়ায় ৫৬ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁ
-
২০২১ সালে রেকর্ড পরিমাণ জমা হয়
-
এরপর আবার কমে গিয়ে ২০২৩ সালে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছায়
-
২০২৪ সালে আবার রেকর্ড বৃদ্ধি
বাংলাদেশিদের পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিকদের সুইস ব্যাংকে অর্থ জমাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালে তাদের জমা অর্থ দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কোটি ৪২ লাখ ৪৬ হাজার ফ্রাঁ, যা আগের বছর ছিল ১০২ কোটি ৯৮ লাখ ৪৪ হাজার ফ্রাঁ।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের অর্থের পরিমাণ ২০২৪ সালের শেষে ছিল ৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৯৪ লাখ ফ্রাঁ, যা ২০২৩ সালে ছিল ৭ হাজার ১০০ কোটি ৮১ লাখ ফ্রাঁ।
অন্যদিকে, পাকিস্তানি নাগরিকদের অর্থ কিছুটা কমেছে—২০২৩ সালে ছিল ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ফ্রাঁ, ২০২৪ সালে কমে হয় ২৭ কোটি ১৬ লাখ ফ্রাঁ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের বড় একটি অংশই অবৈধ উৎস থেকে এসেছে। তবে বৈধভাবেও বিশ্বের নানা দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা সুইজারল্যান্ডে অর্থ রাখেন।
সাধারণত সুইস ব্যাংকগুলো গোপনীয়তা বজায় রাখে। সেখানকার আইনে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশে বাধ্য নয়, এমনকি টাকার উৎস সম্পর্কেও জানতে চায় না। এই কারণে বিশ্বের বহু ধনী ব্যক্তি এই ব্যাংকগুলোতে অর্থ রাখেন।
এসএনবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশিদের অর্থ প্রথম ১০ কোটি ফ্রাঁ ছাড়ায় ২০০৬ সালে, বিএনপি-জামায়াত সরকারের শেষ বছরে। ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়ায় ২০ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁ।
এরপর ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে এই অঙ্ক নিয়মিতভাবে বাড়তে থাকে। ২০১৭ সালে তা কিছুটা কমে গেলেও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের বছরে আবারও বাড়ে।
এসএনবি প্রতিবছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী। তবে এতে গ্রাহকদের পরিচয় বা অর্থের উৎস সম্পর্কে কিছু জানানো হয় না।

















