ঢাকা ১২:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

সাগর–রুনি হত্যা মামলার তদন্তে আরও কত বছর লাগবে : হাইকোর্টের চরম অসন্তোষ

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০২:৪০:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
  • / 120

সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনী

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

১৪ বছর পার হলেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যা মামলার তদন্তে এখনো কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ শতাধিকবার পিছিয়েছে। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ অবস্থায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদালত।

গত ২২ এপ্রিল হাইকোর্ট সাংবাদিক দম্পতি হত্যার মামলায় টাস্কফোর্সকে আরও ছয় মাস সময় দিয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষের সময় বৃদ্ধির আবেদন শুনে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট সাগর–রুনি হত্যা মামলায় উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। পাশাপাশি, বিভিন্ন বাহিনীর অভিজ্ঞ তদন্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশও দেওয়া হয়। আদালত বলেছিলেন, টাস্কফোর্স গঠনের পর ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে হবে।

কিন্তু টাস্কফোর্স দুই দফায় সময় নিলেও প্রতিবেদন দিতে পারেনি।

নির্ধারিত সময় শেষে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) মামলাটি বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ, বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এবং রিটপক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

শুনানিকালে শিশির মনির বলেন, “আপনারা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে সময় দিয়েছিলেন। হাই–পাওয়ার টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারাও প্রতিবেদন দিতে পারেনি। তাই টাস্কফোর্স কমিটিকে তলব করুন।”

জবাবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ বলেন, “তারা কাজ করছে। কাজ শেষ হলেই প্রতিবেদন দেওয়া হবে। কিছুটা সময় লাগবে।”

শিশির মনির বলেন, “তারা সময় চাইলে আবেদন দিয়ে আদালতকে জানাক। কিন্তু তারা কী কাজ করছে, সেটা কেউ জানে না। আমাদের জানানো হোক।”

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “যদি কাজের অগ্রগতি থাকে, প্রয়োজনে তা আদালতকে জানানো উচিত।”

আরশাদুর রউফ বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশে টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। কিছু কর্মকর্তা বদলিও হয়েছে। এটি একটি জটিল মামলা। র‍্যাব ও পুলিশ সদর দপ্তর একসঙ্গে কাজ করছে। সরকার গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। আমরা আরও ছয় মাস সময় চাই।”

এ সময় শিশির মনির বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ আগেও একই কথা বলেছে। এই মামলাটি সারাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।”

আদালত বলেন, “এ নিয়ে তথ্য প্রচার অব্যাহত রাখতে হবে—যাতে সবাই জানে, মামলাটি নিয়ে কাজ হচ্ছে। শেষবারের মতো সময় দিচ্ছি।”

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তখন বলেন, “আমরাও চাই, এটি দ্রুত শেষ হোক।”

তবে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “আর কত বছর লাগবে? এখন তদন্তের কত শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে? রাজনৈতিকভাবে যেই থাকুক, এ মামলার অগ্রগতি তো হচ্ছে না।”

রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, মামলার সঙ্গে জড়িত অনেকে দেশের বাইরে, অনেক তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে, এজন্য সময় লাগছে।

এরপর পিবিআই–এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজিজুল হককে ডেকে তদন্তের অগ্রগতি জানতে চান আদালত। তিনি মামলার কত শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে সে সম্পর্কেও প্রশ্নের মুখোমুখি হন।

রাষ্ট্রপক্ষ নতুন করে সময় চাওয়ায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা শেষবারের মতো সময় দিচ্ছি।”

এরপর আদালত টাস্কফোর্সকে তদন্ত শেষ করতে আরও ছয় মাস সময় দেন।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার (মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক) ও মেহেরুন রুনি (এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক) নিজ ভাড়া বাসায় খুন হন। তাঁদের একমাত্র ছেলে মাহির সারোয়ার মেঘ (তখন ৫ বছর বয়সী) তখন বাসায় ছিল। এ ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলী রোমান শেরেবাংলা থানায় মামলা করেন।

মামলাটি প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার তদন্তাধীন ছিল, পরে গোয়েন্দা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। তারা ব্যর্থ হলে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটি র‌্যাবের কাছে দেওয়া হয়। গ্রেপ্তার আট আসামির মধ্যে দুজন জামিনে, বাকিরা কারাগারে আছেন।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন জমার দিন নির্ধারিত ছিল, কিন্তু ১২১ বার তারিখ পিছিয়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান তদন্তে গড়িমসির জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন এবং পরবর্তী শুনানির তারিখ ৩০ নভেম্বর নির্ধারণ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

সাগর–রুনি হত্যা মামলার তদন্তে আরও কত বছর লাগবে : হাইকোর্টের চরম অসন্তোষ

আপডেট সময় : ০২:৪০:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

১৪ বছর পার হলেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যা মামলার তদন্তে এখনো কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ শতাধিকবার পিছিয়েছে। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশে উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ অবস্থায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদালত।

গত ২২ এপ্রিল হাইকোর্ট সাংবাদিক দম্পতি হত্যার মামলায় টাস্কফোর্সকে আরও ছয় মাস সময় দিয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষের সময় বৃদ্ধির আবেদন শুনে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এর আগে, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট সাগর–রুনি হত্যা মামলায় উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। পাশাপাশি, বিভিন্ন বাহিনীর অভিজ্ঞ তদন্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশও দেওয়া হয়। আদালত বলেছিলেন, টাস্কফোর্স গঠনের পর ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে হবে।

কিন্তু টাস্কফোর্স দুই দফায় সময় নিলেও প্রতিবেদন দিতে পারেনি।

নির্ধারিত সময় শেষে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) মামলাটি বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ, বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এবং রিটপক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

শুনানিকালে শিশির মনির বলেন, “আপনারা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে সময় দিয়েছিলেন। হাই–পাওয়ার টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারাও প্রতিবেদন দিতে পারেনি। তাই টাস্কফোর্স কমিটিকে তলব করুন।”

জবাবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ বলেন, “তারা কাজ করছে। কাজ শেষ হলেই প্রতিবেদন দেওয়া হবে। কিছুটা সময় লাগবে।”

শিশির মনির বলেন, “তারা সময় চাইলে আবেদন দিয়ে আদালতকে জানাক। কিন্তু তারা কী কাজ করছে, সেটা কেউ জানে না। আমাদের জানানো হোক।”

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “যদি কাজের অগ্রগতি থাকে, প্রয়োজনে তা আদালতকে জানানো উচিত।”

আরশাদুর রউফ বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশে টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। কিছু কর্মকর্তা বদলিও হয়েছে। এটি একটি জটিল মামলা। র‍্যাব ও পুলিশ সদর দপ্তর একসঙ্গে কাজ করছে। সরকার গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। আমরা আরও ছয় মাস সময় চাই।”

এ সময় শিশির মনির বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ আগেও একই কথা বলেছে। এই মামলাটি সারাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।”

আদালত বলেন, “এ নিয়ে তথ্য প্রচার অব্যাহত রাখতে হবে—যাতে সবাই জানে, মামলাটি নিয়ে কাজ হচ্ছে। শেষবারের মতো সময় দিচ্ছি।”

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তখন বলেন, “আমরাও চাই, এটি দ্রুত শেষ হোক।”

তবে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “আর কত বছর লাগবে? এখন তদন্তের কত শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে? রাজনৈতিকভাবে যেই থাকুক, এ মামলার অগ্রগতি তো হচ্ছে না।”

রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, মামলার সঙ্গে জড়িত অনেকে দেশের বাইরে, অনেক তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে, এজন্য সময় লাগছে।

এরপর পিবিআই–এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজিজুল হককে ডেকে তদন্তের অগ্রগতি জানতে চান আদালত। তিনি মামলার কত শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে সে সম্পর্কেও প্রশ্নের মুখোমুখি হন।

রাষ্ট্রপক্ষ নতুন করে সময় চাওয়ায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা শেষবারের মতো সময় দিচ্ছি।”

এরপর আদালত টাস্কফোর্সকে তদন্ত শেষ করতে আরও ছয় মাস সময় দেন।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার (মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক) ও মেহেরুন রুনি (এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক) নিজ ভাড়া বাসায় খুন হন। তাঁদের একমাত্র ছেলে মাহির সারোয়ার মেঘ (তখন ৫ বছর বয়সী) তখন বাসায় ছিল। এ ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলী রোমান শেরেবাংলা থানায় মামলা করেন।

মামলাটি প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার তদন্তাধীন ছিল, পরে গোয়েন্দা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। তারা ব্যর্থ হলে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটি র‌্যাবের কাছে দেওয়া হয়। গ্রেপ্তার আট আসামির মধ্যে দুজন জামিনে, বাকিরা কারাগারে আছেন।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন জমার দিন নির্ধারিত ছিল, কিন্তু ১২১ বার তারিখ পিছিয়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান তদন্তে গড়িমসির জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন এবং পরবর্তী শুনানির তারিখ ৩০ নভেম্বর নির্ধারণ করেন।