ধর্মভিত্তিক দলের কাছে নতিস্বীকার, প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল
- আপডেট সময় : ০৫:২৩:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫
- / 104
রাজনৈতিক সরকারগুলোর মতোই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও দেশের মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নতিস্বীকার করল।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার জন্য সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের আপত্তির পর এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে।
রবিবার (২ নভেম্বর) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে গত আগস্টে প্রকাশিত ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫’-এ যুক্ত করা সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে সহকারী শিক্ষকের দুটি নতুন পদ বাতিল করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয় অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আখতার খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “সংশোধিত গেজেট জারি করা হয়েছে। আগের গেজেটে চার ধরনের শিক্ষকের কথা বলা হলেও নতুনটিতে মাত্র দুটি ক্যাটাগরি রাখা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার জন্য সহকারী শিক্ষকের পদ থাকছে না।”
ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর সমালোচনার কারণেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে কি না— এমন প্রশ্নে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তার ভাষায়, “এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত।”
এর আগে গত ২৮ আগস্ট প্রকাশিত গেজেটে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার জন্য দুটি নতুন সহকারী শিক্ষকের পদ সৃষ্টির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
স্কুলে নাচ-গানের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিরোধ পরিহারের আহ্বান জানানো হয়েছিল
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও নাচের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জুলাই অভ্যুত্থানের সফলতায় বিভক্তি তৈরির অপপ্রয়াস উল্লেখ করে এ নিয়ে বিরোধ পরিহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন ৫১ জন নাগরিক।
২৩ সেপ্টেম্বর দেওয়া তাঁদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংগীতবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে একটি পক্ষের লাগাতার বক্তব্য, বিবৃতি, কর্মসূচি গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে। আমরা মনে করি, সংগীতের শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ে তাদের বিরোধিতা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিপরীত।’
জুলাই আন্দোলনে সব শ্রেণি–পেশা এবং ধর্ম ও মতের মানুষ অংশ নিয়েছিল উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তবে সফল অভ্যুত্থানের পরপরই নানা ধরনের বিভক্তি তৈরির অপপ্রয়াস চলছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও নাচের শিক্ষক বাতিলের দাবি এ বিভাজনকে আরও জটিল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে।’
বিবৃতিতে নাগরিকেরা বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, শিশুর নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা যেমন প্রয়োজন রয়েছে, তেমনি মেধা ও মননের বিকাশে সংগীত ও নৃত্যকলার প্রয়োজনও রয়েছে। সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে শিশুরা আধ্যাত্মিক সৌন্দর্যকে নিজের ভেতরে ধারণ করতে সক্ষম হবে। বিশ্ব সংস্কৃতির পরিসরে বাংলাদেশের হয়ে তারা অংশ নিতে পারবে। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে, ইসলামি সভ্যতায় গানের চর্চা ও সাধনার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। গান ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইসলাম তার সৌন্দর্যের প্রকাশ ঘটিয়েছে, যা মানুষকে ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করেছে।’
বাংলাদেশ গান, নাচ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এখানকার শিশুদের অধিকার রয়েছে তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার পরিণতি সুখকর হবে না।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষকের যে দাবি উঠেছে, তা মেনে নিয়েও সংগীত শিক্ষক বহাল রাখা ন্যায়সংগত। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে স্থাপন শিশুর বিকাশের পরিবেশ সংকীর্ণ করবে।’
বিবৃতি দেওয়া ৫১ নাগরিকের মধ্যে আছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৌভিক রেজা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জি এইচ হাবীব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রায়হান রাইন, মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, কথাসাহিত্যিক জিয়া হাশান, সালাহ উদ্দিন শুভ্র, গাজী তানজিয়া, এহসান মাহমুদ প্রমুখ।
















