ঢাকা ০৫:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের গম কিনল বাংলাদেশ

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০২:২৮:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • / 99

যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম নিয়ে এসেছে এমভি নোরস স্ট্রিড

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‘চুক্তির কারণে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের গম কিনছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ডেইলি স্টার। ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত এ প্রতিবেদনের প্রতিবাদ পাঠিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ডেইলি স্টারের রিপোর্ট ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন তুলনামূলক বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি করছে। রাশিয়ান গমের দাম কম হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ও দুই দেশের বাণিজ্য চুক্তি বজায় রাখাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। রোববার (২৬ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানান।

বর্তমানে মার্কিন ও রাশিয়ান গমের দামের ব্যবধান প্রতি টনে ৭৫ থেকে ৮০ ডলার। বাংলাদেশ প্রতি টন আমেরিকান গম ৩০৮ ডলারে কিনছে, যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে রাশিয়ান গমের দাম প্রতি টনে ২২৬ থেকে ২৩০ ডলার।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা ৫৭ হাজার টন গমের প্রথম চালান এসে পৌঁছেছে। এটি ৪ লাখ ৪০ হাজার টন গম কেনার চুক্তির অংশ।

চলতি বছরের শুরুতে খাদ্য অধিদপ্তর ও যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দপ্তরের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক সমঝোতা স্মারকের আওতায় এ গম কেনা হয়েছে।

এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের ওপর শুল্কহার ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে সম্মত হওয়ার পর এই শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কনীতি ছিল ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কৌশলের অংশ।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ বছরে ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে এবং ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে।

সরকার বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ৩৫ লাখ টন গম আমদানিতে সম্মত হয়েছে। চুক্তির খসড়া উভয় পক্ষই ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে, এখন শুধু আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর বাকি।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাজার রক্ষা করা, যা এ বছর শেষে ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বড় বাণিজ্য অংশীদার, রাশিয়া তা নয়। তাই এই বাজারে কিছু সুবিধা দেওয়া যৌক্তিক।”

রাশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি এখনো ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেনি।

তিনি উল্লেখ করেন, সুবিধাজনক শুল্কনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

তার ভাষ্য, “যুক্তরাষ্ট্রের গমের প্রোটিন ও মান উভয়ই রাশিয়ান গমের তুলনায় ভালো, তাই ঐতিহ্যগতভাবেই মার্কিন গমের দাম কিছুটা বেশি।”

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিকর পোকা ও আর্দ্রতার কারণে রাশিয়ান গমের ১২ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়, ফলে কার্যকর গমের পরিমাণ কমে যায়।

তার মতে, “রাশিয়া ও ইউক্রেনকে গম সরবরাহের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে ধরা যায় না, কারণ দুই দেশের চলমান যুদ্ধ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। যুদ্ধের কারণে জাহাজ ডুবির ঝুঁকিও রয়েছে।”

বাণিজ্য সচিব আরও জানান, বেসরকারি খাত চাইলে রাশিয়া থেকে কম দামে গম আমদানি করতে পারে, তবে সরকারের উদ্যোগ মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর অংশ।

সরকারের এই উদ্যোগের মধ্যে আরও রয়েছে বোয়িং বিমান ও এলএনজি কেনা, গম, তুলা ও সয়াবিনসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানি বৃদ্ধি।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসলিম শাহরিয়ার বলেন, “আমরা দামের প্রতিযোগিতা বিবেচনা করেই গম আমদানি করি, তবে যুক্তরাষ্ট্রের গমের মান সাধারণত রাশিয়ার তুলনায় ভালো।”

তিনি যোগ করেন, “মেঘনা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সয়াবিন আমদানি করে, তবে গমের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম আমদানি করে।”

তার মতে, বর্তমানে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন কিনতে শুরু করেছে চীন, ফলে মার্কিন সয়াবিনের দাম কিছুটা কমে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানিতে অনিয়ম হয়নি: খাদ্য মন্ত্রণালয়

যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানিতে কোনো ধরনের অনিয়ম, অতিরিক্ত দাম বা বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় জানায়, সম্প্রতি এক জাতীয় দৈনিকে ‘চুক্তির কারণে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের গম কিনছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেখানে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে গম আমদানির বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, ওই প্রতিবেদন পাঠকদের ভুল ধারণা দিতে পারে। তাই বিষয়টির সঠিক তথ্য তুলে ধরা প্রয়োজন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় জিটুজি পদ্ধতিতে গম আমদানি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম প্রতি টন ৩০২.৭৫ ডলারে কেনা হয় এবং দ্বিতীয় ধাপে একই পরিমাণ গম প্রতি টন ৩০৮ ডলারে কেনার চুক্তি সম্পন্ন হয়।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথম চালান হিসেবে ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গম নিয়ে এমভি নোরস স্ট্রিড নামের একটি জাহাজ গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ১৭০ টন গম চট্টগ্রাম ও ২২ হাজার ৭৮৯ টন গম মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সংবাদে যুক্তরাষ্ট্রের গমের দামের সঙ্গে রাশিয়ার গমের দামের তুলনা করা হয়েছে, যা ‘সম্পূর্ণ ত্রুটিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের গমের দামে চট্টগ্রাম ও মোংলা সাইলো পর্যন্ত পরিবহন ব্যয়, বীমা, আনলোডিং ও বন্দরভিত্তিক সব খরচ অন্তর্ভুক্ত; কিন্তু রাশিয়ার দামে কেবল দেশটির বন্দর পর্যন্ত খরচ ধরা হয়েছে।

বাস্তব হিসেবে বর্তমানে রাশিয়ার গমের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য প্রতি মেট্রিক টন প্রায় ২৩০ ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রের গমের দাম ২৩২ ডলার— অর্থাৎ পার্থক্য মাত্র ২ ডলার।

এছাড়া মানের দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের গম উন্নত। রাশিয়ার গমে গড়ে ১১ শতাংশ প্রোটিন থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের গমে ১৩.৫ শতাংশ প্রোটিন রয়েছে, যা পুষ্টিগুণ ও মানের দিক থেকে উত্তম।

ফলে উন্নত মান, প্রোটিনের উচ্চমাত্রা ও পরিবহন ব্যয় বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের গমের দাম কিছুটা বেশি হওয়া যুক্তিসঙ্গত ও বাজারসম্মত বলেও জানায় মন্ত্রণালয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে গম আমদানির পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক ও সরকার অনুমোদিত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে।

নিউজটি শেয়ার করুন

বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের গম কিনল বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০২:২৮:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

‘চুক্তির কারণে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের গম কিনছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ডেইলি স্টার। ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত এ প্রতিবেদনের প্রতিবাদ পাঠিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ডেইলি স্টারের রিপোর্ট ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন তুলনামূলক বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি করছে। রাশিয়ান গমের দাম কম হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ও দুই দেশের বাণিজ্য চুক্তি বজায় রাখাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। রোববার (২৬ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানান।

বর্তমানে মার্কিন ও রাশিয়ান গমের দামের ব্যবধান প্রতি টনে ৭৫ থেকে ৮০ ডলার। বাংলাদেশ প্রতি টন আমেরিকান গম ৩০৮ ডলারে কিনছে, যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে রাশিয়ান গমের দাম প্রতি টনে ২২৬ থেকে ২৩০ ডলার।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা ৫৭ হাজার টন গমের প্রথম চালান এসে পৌঁছেছে। এটি ৪ লাখ ৪০ হাজার টন গম কেনার চুক্তির অংশ।

চলতি বছরের শুরুতে খাদ্য অধিদপ্তর ও যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দপ্তরের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক সমঝোতা স্মারকের আওতায় এ গম কেনা হয়েছে।

এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের ওপর শুল্কহার ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে সম্মত হওয়ার পর এই শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কনীতি ছিল ৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কৌশলের অংশ।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ বছরে ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে এবং ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে।

সরকার বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ৩৫ লাখ টন গম আমদানিতে সম্মত হয়েছে। চুক্তির খসড়া উভয় পক্ষই ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে, এখন শুধু আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর বাকি।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাজার রক্ষা করা, যা এ বছর শেষে ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বড় বাণিজ্য অংশীদার, রাশিয়া তা নয়। তাই এই বাজারে কিছু সুবিধা দেওয়া যৌক্তিক।”

রাশিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি এখনো ১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেনি।

তিনি উল্লেখ করেন, সুবিধাজনক শুল্কনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

তার ভাষ্য, “যুক্তরাষ্ট্রের গমের প্রোটিন ও মান উভয়ই রাশিয়ান গমের তুলনায় ভালো, তাই ঐতিহ্যগতভাবেই মার্কিন গমের দাম কিছুটা বেশি।”

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিকর পোকা ও আর্দ্রতার কারণে রাশিয়ান গমের ১২ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়, ফলে কার্যকর গমের পরিমাণ কমে যায়।

তার মতে, “রাশিয়া ও ইউক্রেনকে গম সরবরাহের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে ধরা যায় না, কারণ দুই দেশের চলমান যুদ্ধ সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। যুদ্ধের কারণে জাহাজ ডুবির ঝুঁকিও রয়েছে।”

বাণিজ্য সচিব আরও জানান, বেসরকারি খাত চাইলে রাশিয়া থেকে কম দামে গম আমদানি করতে পারে, তবে সরকারের উদ্যোগ মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর অংশ।

সরকারের এই উদ্যোগের মধ্যে আরও রয়েছে বোয়িং বিমান ও এলএনজি কেনা, গম, তুলা ও সয়াবিনসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানি বৃদ্ধি।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসলিম শাহরিয়ার বলেন, “আমরা দামের প্রতিযোগিতা বিবেচনা করেই গম আমদানি করি, তবে যুক্তরাষ্ট্রের গমের মান সাধারণত রাশিয়ার তুলনায় ভালো।”

তিনি যোগ করেন, “মেঘনা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সয়াবিন আমদানি করে, তবে গমের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম আমদানি করে।”

তার মতে, বর্তমানে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন কিনতে শুরু করেছে চীন, ফলে মার্কিন সয়াবিনের দাম কিছুটা কমে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানিতে অনিয়ম হয়নি: খাদ্য মন্ত্রণালয়

যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানিতে কোনো ধরনের অনিয়ম, অতিরিক্ত দাম বা বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় জানায়, সম্প্রতি এক জাতীয় দৈনিকে ‘চুক্তির কারণে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের গম কিনছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেখানে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে গম আমদানির বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, ওই প্রতিবেদন পাঠকদের ভুল ধারণা দিতে পারে। তাই বিষয়টির সঠিক তথ্য তুলে ধরা প্রয়োজন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় জিটুজি পদ্ধতিতে গম আমদানি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম প্রতি টন ৩০২.৭৫ ডলারে কেনা হয় এবং দ্বিতীয় ধাপে একই পরিমাণ গম প্রতি টন ৩০৮ ডলারে কেনার চুক্তি সম্পন্ন হয়।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রথম চালান হিসেবে ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গম নিয়ে এমভি নোরস স্ট্রিড নামের একটি জাহাজ গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ১৭০ টন গম চট্টগ্রাম ও ২২ হাজার ৭৮৯ টন গম মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সংবাদে যুক্তরাষ্ট্রের গমের দামের সঙ্গে রাশিয়ার গমের দামের তুলনা করা হয়েছে, যা ‘সম্পূর্ণ ত্রুটিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর’। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের গমের দামে চট্টগ্রাম ও মোংলা সাইলো পর্যন্ত পরিবহন ব্যয়, বীমা, আনলোডিং ও বন্দরভিত্তিক সব খরচ অন্তর্ভুক্ত; কিন্তু রাশিয়ার দামে কেবল দেশটির বন্দর পর্যন্ত খরচ ধরা হয়েছে।

বাস্তব হিসেবে বর্তমানে রাশিয়ার গমের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য প্রতি মেট্রিক টন প্রায় ২৩০ ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রের গমের দাম ২৩২ ডলার— অর্থাৎ পার্থক্য মাত্র ২ ডলার।

এছাড়া মানের দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের গম উন্নত। রাশিয়ার গমে গড়ে ১১ শতাংশ প্রোটিন থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের গমে ১৩.৫ শতাংশ প্রোটিন রয়েছে, যা পুষ্টিগুণ ও মানের দিক থেকে উত্তম।

ফলে উন্নত মান, প্রোটিনের উচ্চমাত্রা ও পরিবহন ব্যয় বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের গমের দাম কিছুটা বেশি হওয়া যুক্তিসঙ্গত ও বাজারসম্মত বলেও জানায় মন্ত্রণালয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে জিটুজি পদ্ধতিতে গম আমদানির পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক ও সরকার অনুমোদিত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে।