ঢাকা ১০:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

ইসরায়েলের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আমরা কতটা জানি?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১১:১৫:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • / 291
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দক্ষিণ ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত ডিমোনা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে

ইরানকে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া ঠেকাতে ইসরায়েলের নেওয়া পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে আলোচিত হলেও, ইসরায়েল নিজেই একটি ‘গোপন পারমাণবিক শক্তি’—এই ধারণা বহুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মহলে প্রচলিত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই অস্ত্রভাণ্ডার সম্পর্কে আমরা আসলে কতটা জানি?

ব্রিটিশ অনলাইন সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি যে তাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে। তবে অস্বীকারও করেনি। এই ‘নৈতিক অস্পষ্টতা’র নীতির মাধ্যমে ইসরায়েল বিশ্বের একমাত্র এমন পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত, যার অস্ত্রভাণ্ডারের অস্তিত্ব নিয়ে বিশ্বাস রয়েছে, কিন্তু সেখানে কোনো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের অনুমতি নেই।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউক্লিয়ার থ্রেট ইনিশিয়েটিভ (এনটিআই)–এর তথ্যমতে, ইসরায়েলের কাছে আনুমানিক ৯০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। ধারণা করা হয়, তাদের মজুদ প্লুটোনিয়াম দিয়ে আরও প্রায় ২০০ পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব।

এই অস্ত্রগুলো স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—তিন মাধ্যম থেকেই ছোড়া সম্ভব। ইসরায়েলের নিজস্ব এফ-১৫, এফ-১৬ ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পারমাণবিক বোমা বহনের উপযোগী। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, দেশটির মালিকানাধীন ছয়টি জার্মান ‘ডলফিন-শ্রেণির’ সাবমেরিন পারমাণবিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে সক্ষম। এ ছাড়া ‘জেরিকো’ ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ পাল্লা ৪ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত এবং এর অন্তত ২৪টি পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম বলে ধারণা করা হয়।

ইসরায়েলের পারমাণবিক ইতিহাস শুরু হয়েছিল ১৯৫০-এর দশকের শেষ দিকে, যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ন ‘ডিমোনা’ নামের একটি গোপন পারমাণবিক স্থাপনা গড়ে তোলেন নেগেভ মরুভূমিতে। ফরাসি সরকারের সহায়তায় তৈরি এই কেন্দ্রটি ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন গোয়েন্দাদের নজরে এলেও বহু বছর তা গোপন রাখা হয়।

তখন ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে জানায়, এটি শুধুমাত্র একটি গবেষণাগার। কিন্তু মার্কিন তদন্তকারীদের চোখে পড়ে—ভুয়া দেয়াল, সাজানো ঘর, গোপন তলা—সবই ছিল এক প্রকার প্রতারণার অংশ।

১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেইরের মধ্যে একটি ‘নীরব চুক্তি’ হয়। এতে শর্ত ছিল—ইসরায়েল যদি পরমাণু অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার না করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তুলবে না। আজও সেই ‘অস্বীকৃতির নীতি’ অনুসরণ করছে তেলআবিব।

১৯৮৬ সালে সাবেক পারমাণবিক প্রযুক্তিবিদ মর্দেখাই ভানুনু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস–কে গোপন তথ্য ও ছবি সরবরাহ করেন। তিনি দাবি করেন, ডিমোনা কেন্দ্র থেকে প্রতি সপ্তাহে ১.২ কেজি প্লুটোনিয়াম উৎপন্ন করা সম্ভব—যা দিয়ে বছরে প্রায় ১২টি পরমাণু ওয়ারহেড তৈরি করা যায়।

তবে তথ্য ফাঁসের আগেই ভানুনুকে লন্ডন থেকে রোমে কৌশলে নিয়ে গিয়ে অপহরণ করে মোসাদ। পরে তাকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ইসরায়েল নিজেদের কখনো ‘পরমাণু যুদ্ধের প্রস্তুত রাষ্ট্র’ হিসেবে তুলে ধরে না। বরং দেশটির অবস্থান হলো—এই অস্ত্র কেবলমাত্র ‘চরম পরিস্থিতি’, অর্থাৎ জাতিগত অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে ব্যবহার করা হবে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ইসরায়েল এখনো পর্যন্ত এনপিটি (পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি) স্বাক্ষর করেনি। ফলে আইএইএ বা কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারে না। ২০১৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ইসরায়েলকে এনপিটিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেও তাতে কোনো সাড়া মেলেনি।

ফলে, ইসরায়েল পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ কি না, এই প্রশ্নের উত্তর রয়ে গেছে দীর্ঘদিন ধরেই এক রহস্যঘেরা ‘অস্পষ্টতার’ মধ্যেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ইসরায়েলের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আমরা কতটা জানি?

আপডেট সময় : ১১:১৫:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

দক্ষিণ ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে অবস্থিত ডিমোনা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে

ইরানকে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া ঠেকাতে ইসরায়েলের নেওয়া পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে আলোচিত হলেও, ইসরায়েল নিজেই একটি ‘গোপন পারমাণবিক শক্তি’—এই ধারণা বহুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মহলে প্রচলিত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই অস্ত্রভাণ্ডার সম্পর্কে আমরা আসলে কতটা জানি?

ব্রিটিশ অনলাইন সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি যে তাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে। তবে অস্বীকারও করেনি। এই ‘নৈতিক অস্পষ্টতা’র নীতির মাধ্যমে ইসরায়েল বিশ্বের একমাত্র এমন পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত, যার অস্ত্রভাণ্ডারের অস্তিত্ব নিয়ে বিশ্বাস রয়েছে, কিন্তু সেখানে কোনো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের অনুমতি নেই।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউক্লিয়ার থ্রেট ইনিশিয়েটিভ (এনটিআই)–এর তথ্যমতে, ইসরায়েলের কাছে আনুমানিক ৯০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। ধারণা করা হয়, তাদের মজুদ প্লুটোনিয়াম দিয়ে আরও প্রায় ২০০ পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব।

এই অস্ত্রগুলো স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—তিন মাধ্যম থেকেই ছোড়া সম্ভব। ইসরায়েলের নিজস্ব এফ-১৫, এফ-১৬ ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পারমাণবিক বোমা বহনের উপযোগী। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, দেশটির মালিকানাধীন ছয়টি জার্মান ‘ডলফিন-শ্রেণির’ সাবমেরিন পারমাণবিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে সক্ষম। এ ছাড়া ‘জেরিকো’ ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ পাল্লা ৪ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত এবং এর অন্তত ২৪টি পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম বলে ধারণা করা হয়।

ইসরায়েলের পারমাণবিক ইতিহাস শুরু হয়েছিল ১৯৫০-এর দশকের শেষ দিকে, যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ন ‘ডিমোনা’ নামের একটি গোপন পারমাণবিক স্থাপনা গড়ে তোলেন নেগেভ মরুভূমিতে। ফরাসি সরকারের সহায়তায় তৈরি এই কেন্দ্রটি ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন গোয়েন্দাদের নজরে এলেও বহু বছর তা গোপন রাখা হয়।

তখন ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে জানায়, এটি শুধুমাত্র একটি গবেষণাগার। কিন্তু মার্কিন তদন্তকারীদের চোখে পড়ে—ভুয়া দেয়াল, সাজানো ঘর, গোপন তলা—সবই ছিল এক প্রকার প্রতারণার অংশ।

১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেইরের মধ্যে একটি ‘নীরব চুক্তি’ হয়। এতে শর্ত ছিল—ইসরায়েল যদি পরমাণু অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার না করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তুলবে না। আজও সেই ‘অস্বীকৃতির নীতি’ অনুসরণ করছে তেলআবিব।

১৯৮৬ সালে সাবেক পারমাণবিক প্রযুক্তিবিদ মর্দেখাই ভানুনু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস–কে গোপন তথ্য ও ছবি সরবরাহ করেন। তিনি দাবি করেন, ডিমোনা কেন্দ্র থেকে প্রতি সপ্তাহে ১.২ কেজি প্লুটোনিয়াম উৎপন্ন করা সম্ভব—যা দিয়ে বছরে প্রায় ১২টি পরমাণু ওয়ারহেড তৈরি করা যায়।

তবে তথ্য ফাঁসের আগেই ভানুনুকে লন্ডন থেকে রোমে কৌশলে নিয়ে গিয়ে অপহরণ করে মোসাদ। পরে তাকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ইসরায়েল নিজেদের কখনো ‘পরমাণু যুদ্ধের প্রস্তুত রাষ্ট্র’ হিসেবে তুলে ধরে না। বরং দেশটির অবস্থান হলো—এই অস্ত্র কেবলমাত্র ‘চরম পরিস্থিতি’, অর্থাৎ জাতিগত অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে ব্যবহার করা হবে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ইসরায়েল এখনো পর্যন্ত এনপিটি (পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি) স্বাক্ষর করেনি। ফলে আইএইএ বা কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে পারে না। ২০১৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ইসরায়েলকে এনপিটিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেও তাতে কোনো সাড়া মেলেনি।

ফলে, ইসরায়েল পরমাণু অস্ত্রধারী দেশ কি না, এই প্রশ্নের উত্তর রয়ে গেছে দীর্ঘদিন ধরেই এক রহস্যঘেরা ‘অস্পষ্টতার’ মধ্যেই।