ঢাকা ১০:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু

ফেসবুক আজ বঙ্গবন্ধুময়, ‘যতদিন বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু অনিঃশেষ’

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৩:০০:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / 331

বঙ্গবন্ধুর তর্জনী

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আজ বঙ্গবন্ধুময় হয়ে উঠেছে। ফেসবুকজুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নানামাত্রিক ছবি ও প্রতিকৃতি। আছে শিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্মও।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম প্রয়াণবার্ষিকীতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নানা রকম পোস্ট দিচ্ছেন। কেউ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন, কেউ নিজের লেখা কবিতা পোস্ট করছেন। কেউ কেউ জনপ্রিয় কবিদের কবিতার পংক্তি উদ্ধৃত করে পোস্ট দিচ্ছে।

কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার লিখেছেন, `গত ১৬ বছর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের দিনে শোক প্রকাশ করে কোনো পোস্ট দিইনি। কারণ তখন চলছিল শোক প্রকাশের প্রতিযোগিতা। সেই মিছিলের সবাই যে ধান্ধাবাজ এবং সরকারের নেক নজরে পড়ার জন্য শামিল ছিলেন, তা নয়। অনেকেই হৃদয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে শোক প্রকাশ করতেন। কিন্তু তাদের আলাদা করে চেনার সুযোগ ছিল না। সেই কারণে আমি, এবং আমার মতো অনেকেই, সেই ভিড়ে নাম লেখাতে চাইনি।
আজ আমি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের, শিশু রাসেলের (আমরা একই বয়সের) হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমার শোক যুক্ত হোক সকল অন্যায় হত্যাকাণ্ডের শিকার মানুষের স্বজন ও পরিবারের শোকের সাথে।’

পাঠাগার আন্দোলনের কর্মী, ব্যবসায়ী আনিসুল হোসাইন লিখেছেন, ‘পারিবারিকভাবেই আমি মধ্যবিত্ত শ্রেণির একজন ভীতু প্রকৃতির মানুষ। গতকাল থেকেই ভাবছিলাম শোক এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা কতটা নিরাপদ হবে। তার উপর একরাশ বিধিনিষেধ, শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম অসংখ্য মানুষ ফেসবুকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে। কেউ সরাসরি আবার কেউ ভিন্ন উপায়ে। এই মানুষদের অনেকেই গত ১৪ বছরে এতটা সরব দেখিনি। সেই ১৪বছর যাদের দেখেছি কোটি কোটি টাকার অর্থ সম্পদের সুবিধা নিয়েছে তারা এখন নিশ্চুপ। হয়তো রূপান্তরিত হওয়ার প্রচেষ্টায়। এবং আমি নিশ্চিত অনেকেই সফলও হবে। আর আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোয় এটা অসম্ভব নয় কারণ ক্ষমতায় যারাই আসে তাদের জন্য এটা খুব প্রয়োজন।
এতোদিন এই জাতি মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত ছিলো। শোক প্রকাশ এবং শুভেচ্ছা জানানো। আরেকটি ছিলো একেবারেই বিপরীতে, ৭১কেই প্রশ্নবিদ্ধ করায়। বিভক্ত প্রতিটি রাষ্ট্রেই ওই রকম দুষ্ট ক্ষত থাকে।
আর এই বিতর্কের কারণ একটাই এর প্রত্যেকটিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রচেষ্টা। জয় বাংলা, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ এবং ধর্ম সব মিলিয়ে আমাদের মুক্তির দেখা নেই। আমরা বিভক্ত জাতি হিসেবে পেছনের দিকেই হাটছি। সারা বিশ্বে কোনো সভ্য জাতিই বোধহয় তার ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নায়ককে এভাবে হেয় করে না। তাইতো তারা এগিয়ে যাচ্ছে সভ্যতা এবং উন্নয়নের দিকে।
কেউ এসে বলে না ইতিহাসের নায়কদের শ্রদ্ধা করার কথা। এক পক্ষের অশ্রদ্ধাকে আরেক পক্ষ নিশ্চুপ থেকে উপভোগ করে, কেউ নিজেকে ওই আসনে অধিষ্ঠিত করতে চায়। ১৯৭৫ সালে খন্দকার মোশতাকও তাই চেয়েছিলো, আবার ১৯৮১ সালেও। হত্যাকাণ্ডের হোতারা এবং ষড়যন্ত্রকারীরা নিজেদের জাতির কান্ডারি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলো নিজেদের। তারাই ইতিহাসের পাতায় ঘৃণিত হিসেবে স্থান পেয়েছে।
বিভক্ত এই জাতির কি মুক্তি নেই! ’

চলচ্চিত্র নির্মাতা অপরাজিতা সঙ্গীতা লিখেছেন, ‘‘ফেসবুক নিউজফিড আজ বঙ্গবন্ধুময়। আজ যারা জাতির পিতাকে নিয়ে লিখেছে, ছবি দিয়েছে; তাদের অনেককেই আওয়ামীলীগ সরকার থাকা সময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখতে, ছবি দিতে দেখিনি। আমি নিজে অনেকবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখলেও কখনো প্রোফাইল ছবি করে রাখিনি। এবার অন্তরের গভীর থেকে ধারণ করে ছবিটা রেখেছি।
২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে এই দেশ থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। এক বছর শেষে দেখা যাচ্ছে- মুছে ফেলতে গিয়ে উল্টো আরও বেশি দৃশ্যমান করে তোলা হয়েছে তাঁকে। এটাই বাস্তবতা- ভয় যেমন ছড়ায়, সাহসও ছড়ায়।
‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা’।’’

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হাসান মোর্শেদ লিখেছেন, ‘বাংলা ভাষা আসলেই বিরাট মাধুর্য। এতো দারুন উপমাময় সব শব্দ। এরকম এক শব্দ হলো- ❝ইনিয়ে বিনিয়ে❞।
ইনিয়ে বিনিয়ে কতোজন আজ ন্যাকামী করবে- আহা বঙ্গবন্ধু তো ভালো লোক, তাঁর হত্যার দিনে শোক প্রকাশ তো করাই যেতো। কিন্তু তাঁর মেয়েটির অতি খারাপ কর্মকান্ডের জন্যই না আজ বঙ্গবন্ধুর জন্য শোক প্রকাশ করা যাচ্ছে না, তাঁর মেয়েটির খারাপ কর্মকান্ডের জন্য ৩২ নম্বর পুড়িয়ে গুঁড়িয়ে দেয়াও অন্যায় মনে হচ্ছে না, কেউ শোক জানাতে সেখানে গেলে পিটিয়ে আহত করারও প্রতিবাদ করা যাচ্ছে না।
এসব না হলে কিন্তু শোক প্রকাশ করে মহাসাগর বানিয়ে দিতাম।
ভাইরে ভাই- ইনিয়ে বিনিয়ে ন্যাকামী বন্ধ করেন। ইউ গাইজ অলওয়েজ মুজিব হেটার্স। সুসময়ে মাছির মতো ঘুরতেন আর কি। সুসময় শেষ- এখন মুজিব হেইটের জন্য বাহানা!
বাহানা দরকার নাই তো। ভালোবাসেন অথবা ঘৃণা করেন- স্পষ্টভাবে বলার সাহস রাখেন। ইনিয়ে বিনিয়ে কী আর ফায়দা হবে? মানুষের জীবন একটাই। সাহস নিয়ে বাঁচেন।’’

কবি শামীম আজাদ লিখেছেন, ‘ফেসবুকের ফেসই এখন জাতির দর্পন। আজ সে দর্পনে দেখি তাঁর পূণরুত্থান। ফিরে এসেছেন তিনি। এবার আবারও হবে আমাদের পরিত্রাণ।’

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সমকালে প্রকাশিত ‘মহাকাব্যের নায়ক শেখ মুজিবের মৃত্যু নেই’ লেখাটি অনেকে ফেসবুকে শেয়ার দিচ্ছেন।

ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ( ডাকসু ) নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব জামান স্মৃতিচারণ লিখেছেন `বঙ্গবন্ধুর শেষ সন্ধ্যায়…’ শিরোনামে। তসলিমা নাসরিন ১৯৯৩ বা ১৯৯৪ সালের ৭ই মার্চ নিয়ে লেখ কবিত ‘আয় কষ্ট ঝেঁপে, জীবন দেব মেপে’ এর স্ক্রিনশর্ট দিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।

ক্রিকেটার সাকিল আল হাসান, নায়ক শাকিব খান, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, মেহের আফরোজ শাওন, রাহুল আনন্দসহ অনেকেই পোস্ট দিয়েছেন। চিত্রশিল্পী মাসুক হেলাল, চারুপিন্টু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নতুন পোস্টার পোস্ট করেছেন।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গান প্রচার করছেন অনেকে। নিবেদিত আবৃত্তিও শেয়ার করা হচ্ছে। Preset71 বঙ্গবন্ধুর ঢাকার বাইরে বঙ্গবন্ধুর শেষ জনসভার ভাষণটি প্রচার করছে।

সাংবাদিক আজিজুল পারভেজ লিখেছেন, ‘যতদিন বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু অনিঃশেষ।’’

ফেসবুকে Sheikh Rokon লিখেছেন, ‘এই যে আজ ফেসবুক ছেয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুর স্মরণে, এটাই নিখাদ শ্রদ্ধা; জবরদস্তি নাই, তেলবাজি নাই। আর যারা দু’দণ্ডের ক্ষমতার দাপটে মানুষের শোক ও শ্রদ্ধা দাবায়ে রাখতে চেয়েছিল, আজকের স্বতস্ফুর্ত প্রতিক্রিয়া তাদের গালে সশব্দ চপেটাঘাত ।’

কবি ও সাংবাদিক শিমুল সালাহ্‌উদ্দিন লিখেছেন, ‘‘এত স্বতস্ফুর্ত শোক প্রকাশের ১৫ আগস্ট আমি আর দেখি নাই। আপনারা কেউ দেখেছেন?
আজ সকাল থেকে মাইকের অত্যাচার নাই, টেলিভিশনের অনুষ্ঠান নেই, পত্রিকায় পাতা ভরানো ক্রোড়পত্র নাই— কিন্তু জুম্মা পড়তে গিয়ে দেখলাম হুজুরের দোয়ায় বঙ্গবন্ধু আর তার পরিবারের নিহতদের জন্য মাগফেরাত কামনা আছে, ফেইসবুক ফিড ভরা শোকের পোস্টে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবকে ত এখন ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে হচ্ছে, উনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকী ভা ঘোষণা না দিলে এমন বিশাল আকার নিতো না এবারের বাতিল হওয়া ‘জাতীয় শোক দিবস’। ১২ আগস্ট চ্যানেল আইয়ের তারকাকথনে অতিথি হয়ে তার বক্তব্যকে ফ্যাসিবাদী বক্তব্য বলেছি, প্রতিবাদ করেছি।
আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে আওয়ামী বয়ানের অতিরঞ্জন আর আরোপন থেকে মুক্ত করা সম্ভব। মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলাকেও। কাজটা হতে হবে দলমত স্বার্থ নিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক ইতিহাসবিদ, ইতিহাসচর্চাকারীদের হাতেই। আফসান ভাইয়ের মতো লোকজন ত এখনো বেচে আছেন, নিরপেক্ষ ‘বাংলাদেশের ইতিহাস কমিশন’ এর দাবি জানাই, এমন কাউকে সামনে রেখে।
জয় বাংলা।’’

নিউজটি শেয়ার করুন

ফেসবুক আজ বঙ্গবন্ধুময়, ‘যতদিন বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু অনিঃশেষ’

আপডেট সময় : ০৩:০০:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আজ বঙ্গবন্ধুময় হয়ে উঠেছে। ফেসবুকজুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নানামাত্রিক ছবি ও প্রতিকৃতি। আছে শিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্মও।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম প্রয়াণবার্ষিকীতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নানা রকম পোস্ট দিচ্ছেন। কেউ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন, কেউ নিজের লেখা কবিতা পোস্ট করছেন। কেউ কেউ জনপ্রিয় কবিদের কবিতার পংক্তি উদ্ধৃত করে পোস্ট দিচ্ছে।

কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার লিখেছেন, `গত ১৬ বছর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের দিনে শোক প্রকাশ করে কোনো পোস্ট দিইনি। কারণ তখন চলছিল শোক প্রকাশের প্রতিযোগিতা। সেই মিছিলের সবাই যে ধান্ধাবাজ এবং সরকারের নেক নজরে পড়ার জন্য শামিল ছিলেন, তা নয়। অনেকেই হৃদয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে শোক প্রকাশ করতেন। কিন্তু তাদের আলাদা করে চেনার সুযোগ ছিল না। সেই কারণে আমি, এবং আমার মতো অনেকেই, সেই ভিড়ে নাম লেখাতে চাইনি।
আজ আমি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের, শিশু রাসেলের (আমরা একই বয়সের) হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমার শোক যুক্ত হোক সকল অন্যায় হত্যাকাণ্ডের শিকার মানুষের স্বজন ও পরিবারের শোকের সাথে।’

পাঠাগার আন্দোলনের কর্মী, ব্যবসায়ী আনিসুল হোসাইন লিখেছেন, ‘পারিবারিকভাবেই আমি মধ্যবিত্ত শ্রেণির একজন ভীতু প্রকৃতির মানুষ। গতকাল থেকেই ভাবছিলাম শোক এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা কতটা নিরাপদ হবে। তার উপর একরাশ বিধিনিষেধ, শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম অসংখ্য মানুষ ফেসবুকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে। কেউ সরাসরি আবার কেউ ভিন্ন উপায়ে। এই মানুষদের অনেকেই গত ১৪ বছরে এতটা সরব দেখিনি। সেই ১৪বছর যাদের দেখেছি কোটি কোটি টাকার অর্থ সম্পদের সুবিধা নিয়েছে তারা এখন নিশ্চুপ। হয়তো রূপান্তরিত হওয়ার প্রচেষ্টায়। এবং আমি নিশ্চিত অনেকেই সফলও হবে। আর আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোয় এটা অসম্ভব নয় কারণ ক্ষমতায় যারাই আসে তাদের জন্য এটা খুব প্রয়োজন।
এতোদিন এই জাতি মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত ছিলো। শোক প্রকাশ এবং শুভেচ্ছা জানানো। আরেকটি ছিলো একেবারেই বিপরীতে, ৭১কেই প্রশ্নবিদ্ধ করায়। বিভক্ত প্রতিটি রাষ্ট্রেই ওই রকম দুষ্ট ক্ষত থাকে।
আর এই বিতর্কের কারণ একটাই এর প্রত্যেকটিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রচেষ্টা। জয় বাংলা, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ এবং ধর্ম সব মিলিয়ে আমাদের মুক্তির দেখা নেই। আমরা বিভক্ত জাতি হিসেবে পেছনের দিকেই হাটছি। সারা বিশ্বে কোনো সভ্য জাতিই বোধহয় তার ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নায়ককে এভাবে হেয় করে না। তাইতো তারা এগিয়ে যাচ্ছে সভ্যতা এবং উন্নয়নের দিকে।
কেউ এসে বলে না ইতিহাসের নায়কদের শ্রদ্ধা করার কথা। এক পক্ষের অশ্রদ্ধাকে আরেক পক্ষ নিশ্চুপ থেকে উপভোগ করে, কেউ নিজেকে ওই আসনে অধিষ্ঠিত করতে চায়। ১৯৭৫ সালে খন্দকার মোশতাকও তাই চেয়েছিলো, আবার ১৯৮১ সালেও। হত্যাকাণ্ডের হোতারা এবং ষড়যন্ত্রকারীরা নিজেদের জাতির কান্ডারি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলো নিজেদের। তারাই ইতিহাসের পাতায় ঘৃণিত হিসেবে স্থান পেয়েছে।
বিভক্ত এই জাতির কি মুক্তি নেই! ’

চলচ্চিত্র নির্মাতা অপরাজিতা সঙ্গীতা লিখেছেন, ‘‘ফেসবুক নিউজফিড আজ বঙ্গবন্ধুময়। আজ যারা জাতির পিতাকে নিয়ে লিখেছে, ছবি দিয়েছে; তাদের অনেককেই আওয়ামীলীগ সরকার থাকা সময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখতে, ছবি দিতে দেখিনি। আমি নিজে অনেকবার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখলেও কখনো প্রোফাইল ছবি করে রাখিনি। এবার অন্তরের গভীর থেকে ধারণ করে ছবিটা রেখেছি।
২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে এই দেশ থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। এক বছর শেষে দেখা যাচ্ছে- মুছে ফেলতে গিয়ে উল্টো আরও বেশি দৃশ্যমান করে তোলা হয়েছে তাঁকে। এটাই বাস্তবতা- ভয় যেমন ছড়ায়, সাহসও ছড়ায়।
‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা’।’’

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হাসান মোর্শেদ লিখেছেন, ‘বাংলা ভাষা আসলেই বিরাট মাধুর্য। এতো দারুন উপমাময় সব শব্দ। এরকম এক শব্দ হলো- ❝ইনিয়ে বিনিয়ে❞।
ইনিয়ে বিনিয়ে কতোজন আজ ন্যাকামী করবে- আহা বঙ্গবন্ধু তো ভালো লোক, তাঁর হত্যার দিনে শোক প্রকাশ তো করাই যেতো। কিন্তু তাঁর মেয়েটির অতি খারাপ কর্মকান্ডের জন্যই না আজ বঙ্গবন্ধুর জন্য শোক প্রকাশ করা যাচ্ছে না, তাঁর মেয়েটির খারাপ কর্মকান্ডের জন্য ৩২ নম্বর পুড়িয়ে গুঁড়িয়ে দেয়াও অন্যায় মনে হচ্ছে না, কেউ শোক জানাতে সেখানে গেলে পিটিয়ে আহত করারও প্রতিবাদ করা যাচ্ছে না।
এসব না হলে কিন্তু শোক প্রকাশ করে মহাসাগর বানিয়ে দিতাম।
ভাইরে ভাই- ইনিয়ে বিনিয়ে ন্যাকামী বন্ধ করেন। ইউ গাইজ অলওয়েজ মুজিব হেটার্স। সুসময়ে মাছির মতো ঘুরতেন আর কি। সুসময় শেষ- এখন মুজিব হেইটের জন্য বাহানা!
বাহানা দরকার নাই তো। ভালোবাসেন অথবা ঘৃণা করেন- স্পষ্টভাবে বলার সাহস রাখেন। ইনিয়ে বিনিয়ে কী আর ফায়দা হবে? মানুষের জীবন একটাই। সাহস নিয়ে বাঁচেন।’’

কবি শামীম আজাদ লিখেছেন, ‘ফেসবুকের ফেসই এখন জাতির দর্পন। আজ সে দর্পনে দেখি তাঁর পূণরুত্থান। ফিরে এসেছেন তিনি। এবার আবারও হবে আমাদের পরিত্রাণ।’

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সমকালে প্রকাশিত ‘মহাকাব্যের নায়ক শেখ মুজিবের মৃত্যু নেই’ লেখাটি অনেকে ফেসবুকে শেয়ার দিচ্ছেন।

ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ( ডাকসু ) নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব জামান স্মৃতিচারণ লিখেছেন `বঙ্গবন্ধুর শেষ সন্ধ্যায়…’ শিরোনামে। তসলিমা নাসরিন ১৯৯৩ বা ১৯৯৪ সালের ৭ই মার্চ নিয়ে লেখ কবিত ‘আয় কষ্ট ঝেঁপে, জীবন দেব মেপে’ এর স্ক্রিনশর্ট দিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।

ক্রিকেটার সাকিল আল হাসান, নায়ক শাকিব খান, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, মেহের আফরোজ শাওন, রাহুল আনন্দসহ অনেকেই পোস্ট দিয়েছেন। চিত্রশিল্পী মাসুক হেলাল, চারুপিন্টু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নতুন পোস্টার পোস্ট করেছেন।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গান প্রচার করছেন অনেকে। নিবেদিত আবৃত্তিও শেয়ার করা হচ্ছে। Preset71 বঙ্গবন্ধুর ঢাকার বাইরে বঙ্গবন্ধুর শেষ জনসভার ভাষণটি প্রচার করছে।

সাংবাদিক আজিজুল পারভেজ লিখেছেন, ‘যতদিন বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু অনিঃশেষ।’’

ফেসবুকে Sheikh Rokon লিখেছেন, ‘এই যে আজ ফেসবুক ছেয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুর স্মরণে, এটাই নিখাদ শ্রদ্ধা; জবরদস্তি নাই, তেলবাজি নাই। আর যারা দু’দণ্ডের ক্ষমতার দাপটে মানুষের শোক ও শ্রদ্ধা দাবায়ে রাখতে চেয়েছিল, আজকের স্বতস্ফুর্ত প্রতিক্রিয়া তাদের গালে সশব্দ চপেটাঘাত ।’

কবি ও সাংবাদিক শিমুল সালাহ্‌উদ্দিন লিখেছেন, ‘‘এত স্বতস্ফুর্ত শোক প্রকাশের ১৫ আগস্ট আমি আর দেখি নাই। আপনারা কেউ দেখেছেন?
আজ সকাল থেকে মাইকের অত্যাচার নাই, টেলিভিশনের অনুষ্ঠান নেই, পত্রিকায় পাতা ভরানো ক্রোড়পত্র নাই— কিন্তু জুম্মা পড়তে গিয়ে দেখলাম হুজুরের দোয়ায় বঙ্গবন্ধু আর তার পরিবারের নিহতদের জন্য মাগফেরাত কামনা আছে, ফেইসবুক ফিড ভরা শোকের পোস্টে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবকে ত এখন ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে হচ্ছে, উনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকী ভা ঘোষণা না দিলে এমন বিশাল আকার নিতো না এবারের বাতিল হওয়া ‘জাতীয় শোক দিবস’। ১২ আগস্ট চ্যানেল আইয়ের তারকাকথনে অতিথি হয়ে তার বক্তব্যকে ফ্যাসিবাদী বক্তব্য বলেছি, প্রতিবাদ করেছি।
আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে আওয়ামী বয়ানের অতিরঞ্জন আর আরোপন থেকে মুক্ত করা সম্ভব। মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলাকেও। কাজটা হতে হবে দলমত স্বার্থ নিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক ইতিহাসবিদ, ইতিহাসচর্চাকারীদের হাতেই। আফসান ভাইয়ের মতো লোকজন ত এখনো বেচে আছেন, নিরপেক্ষ ‘বাংলাদেশের ইতিহাস কমিশন’ এর দাবি জানাই, এমন কাউকে সামনে রেখে।
জয় বাংলা।’’