ঢাকা ০৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
জামায়াত কর্মীকে ‘রাজাকার’ বলায় বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষ ভোটের ওপর নির্ভর করছে সবার ভবিষ্যৎ: প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস যদি চান, সারা দেশকে কারাগার বানাতে পারেন: আদালতে আনিস আলমগীর সমালোচনা করা যাবে না- এই বার্তাই কি দেওয়া হলো আনিস আলমগীরের ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত চক্র ‘বিজয়ের নতুন ইতিহাস’ রচনার অপচেষ্টায়: তারেক রহমান আটকের ১৯ ঘণ্টা পর সাংবাদিক আনিস আলমগীর গ্রেফতার; ‘বাকস্বাধীনতাটা কোথায় গেল’ প্রশ্ন শাওনের বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ কেন বন্ধ করলো অন্তর্বর্তী সরকার? সাংবাদিক আনিস আলমগীর ও অভিনেত্রী শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে সরকার সমালোচক সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে আটক

জামায়াত কর্মীকে ‘রাজাকার’ বলায় বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষ

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১০:৫৫:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / 13

ভোলায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ

অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নে বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় এক জামায়াত কর্মীকে ‘রাজাকার’ বলাকে কেন্দ্র করে বিএনপির এক কর্মীর সঙ্গে প্রথমে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে ওই ঘটনার জেরে রাতে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা, সংঘর্ষ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে জেলা জামায়াতের উদ্যোগে ভোলা সদরে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। বেলা ১১টার দিকে শোভাযাত্রাটি ভেলুমিয়া বাজারে পৌঁছালে এতে অংশ নেওয়া জামায়াত কর্মী আবুল বাশারকে বিএনপি কর্মী মো. রিয়াজ ‘রাজাকার’ বলে মন্তব্য করেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে রিয়াজের চোখে আঘাত লাগে। পরে বিএনপির কর্মীরা আবুল বাশারকে মারধর করে আহত করেন। আহত অবস্থায় দুজনকেই ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এরপর রাতে এশার নামাজের আগে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভেলুমিয়া বাজারে বিজয় দিবস উপলক্ষে মিছিল বের করেন। মিছিলটি ভেলুমিয়া চরন্দ্রপ্রসাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় জামায়াত কর্মীদের পক্ষ থেকে বিরূপ মন্তব্য করা হয়। তখন বিএনপির কর্মীরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা চালান। এতে ভেলুমিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল হান্নানসহ অন্তত ১৩ জন আহত হন। এ সময় পাঁচ থেকে ছয়টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরে আহত ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে এবং ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

এই ঘটনার পর রাত ৯টার দিকে ভোলা সদর উপজেলা জামায়াত তাদের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে উপজেলা জামায়াতের আমির মো. কামাল হোসেন বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুই দফা অতর্কিত হামলা চালিয়ে জামায়াতের অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মীকে আহত করেছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া হামলায় জামায়াত-সমর্থিত ব্যবসায়ীদের পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে জামায়াতের মিছিল পছন্দ না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সকালে বিজয় শোভাযাত্রা শেষে ফেরার সময় জামায়াত নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ‘রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে হামলা করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় রাতে সমঝোতা বৈঠকের কথা থাকলেও তা না করে আবার হামলা চালানো হয়।

এ বিষয়ে ভেলুমিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরের ঘটনার বিষয়ে রাতে আলোচনায় বসার কথা ছিল। কিন্তু রাতে বিএনপির লোকজন বিজয় মিছিল বের করলে কয়েকজন অল্প বয়সী জামায়াত-শিবির কর্মী বিএনপির অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে তাঁদের পাঁচ থেকে ছয়জন আহত হন।

গতকাল রাতে সংঘর্ষের পর ভেলুমিয়া বাজারে যান ভোলা সদর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব হেলাল উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে সম্পর্ক ভালো রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশে জামায়াত এখন মারমুখী আচরণ করছে। দীর্ঘদিন তারা পিআর পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন করছিল, আর তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন বানচাল করতে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ভেলুমিয়ার ঘটনাটি তারই একটি উদাহরণ।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

জামায়াত কর্মীকে ‘রাজাকার’ বলায় বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষ

আপডেট সময় : ১০:৫৫:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নে বিজয় দিবসের শোভাযাত্রায় এক জামায়াত কর্মীকে ‘রাজাকার’ বলাকে কেন্দ্র করে বিএনপির এক কর্মীর সঙ্গে প্রথমে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে ওই ঘটনার জেরে রাতে দুই পক্ষের মধ্যে হামলা, সংঘর্ষ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে জেলা জামায়াতের উদ্যোগে ভোলা সদরে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। বেলা ১১টার দিকে শোভাযাত্রাটি ভেলুমিয়া বাজারে পৌঁছালে এতে অংশ নেওয়া জামায়াত কর্মী আবুল বাশারকে বিএনপি কর্মী মো. রিয়াজ ‘রাজাকার’ বলে মন্তব্য করেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে রিয়াজের চোখে আঘাত লাগে। পরে বিএনপির কর্মীরা আবুল বাশারকে মারধর করে আহত করেন। আহত অবস্থায় দুজনকেই ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এরপর রাতে এশার নামাজের আগে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভেলুমিয়া বাজারে বিজয় দিবস উপলক্ষে মিছিল বের করেন। মিছিলটি ভেলুমিয়া চরন্দ্রপ্রসাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় জামায়াত কর্মীদের পক্ষ থেকে বিরূপ মন্তব্য করা হয়। তখন বিএনপির কর্মীরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা চালান। এতে ভেলুমিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল হান্নানসহ অন্তত ১৩ জন আহত হন। এ সময় পাঁচ থেকে ছয়টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরে আহত ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে এবং ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

এই ঘটনার পর রাত ৯টার দিকে ভোলা সদর উপজেলা জামায়াত তাদের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে উপজেলা জামায়াতের আমির মো. কামাল হোসেন বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুই দফা অতর্কিত হামলা চালিয়ে জামায়াতের অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মীকে আহত করেছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া হামলায় জামায়াত-সমর্থিত ব্যবসায়ীদের পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে জামায়াতের মিছিল পছন্দ না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সকালে বিজয় শোভাযাত্রা শেষে ফেরার সময় জামায়াত নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ‘রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে হামলা করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় রাতে সমঝোতা বৈঠকের কথা থাকলেও তা না করে আবার হামলা চালানো হয়।

এ বিষয়ে ভেলুমিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরের ঘটনার বিষয়ে রাতে আলোচনায় বসার কথা ছিল। কিন্তু রাতে বিএনপির লোকজন বিজয় মিছিল বের করলে কয়েকজন অল্প বয়সী জামায়াত-শিবির কর্মী বিএনপির অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে জামায়াত-শিবির কর্মীরা মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে তাঁদের পাঁচ থেকে ছয়জন আহত হন।

গতকাল রাতে সংঘর্ষের পর ভেলুমিয়া বাজারে যান ভোলা সদর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব হেলাল উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে সম্পর্ক ভালো রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় নির্দেশে জামায়াত এখন মারমুখী আচরণ করছে। দীর্ঘদিন তারা পিআর পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন করছিল, আর তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন বানচাল করতে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ভেলুমিয়ার ঘটনাটি তারই একটি উদাহরণ।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।