ব্রিটেনের গণমাধ্যমের অত্যন্ত পরিচিত ও প্রিয়মুখ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, ব্রডকাস্টার এবং কমিউনিটি কর্মী – সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিই “আজীবন সম্মাননা” ( “Life Time Achievement Award”) পেয়েছেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার পূর্ব লন্ডনের এন্টারপ্রাইজ একাডেমি মিলনায়তনে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুষ্ঠান এর আয়োজন করে। তিন দশকেরও অধিক সময় ধরে বিলেতে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বাংলা ভাষা শিক্ষা এবং ব্রিটিশ বাংলা মিডিয়াতে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ক্লাবের সদস্য, সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিই কে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, মোহাম্মদ জুবায়ের তাঁর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
উল্লেখ্য ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় টিভি সংবাদ পাঠক হিসেবে তিনি অধিক পরিচিত।
১৯৯৯ সালে ব্রিটেনের প্রথম স্যাটেলাইট বাংলা টিভি চ্যানেল – বাংলা টিভিতে সংবাদ পাঠক হিসেবে তিনি নিজেকে সংযুক্ত করেন। বাংলাদেশে থাকাকালীন সৈয়দ আফসার উদ্দিন সংবাদ ও সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। ইত্তেফাক গ্রূপের স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন।বাংলাদেশ টেলিভিশনে ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার ও উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
ব্রিটেনে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস রেডিওতে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, খেলাধুলা এবং ম্যাগাজিন প্রোগ্রামে কাজ করেছেন আট বছর। চার বছরের জন্য ভয়েস অফ আমেরিকা রেডিওর লন্ডন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৬ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে তিনি ব্রিটেনের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল – “চ্যানেল এস” এ সংবাদ পাঠ করে আসছেন। উল্লেখ্য ব্রিটেন তথা ইউরোপে টিভিতে যাঁরা বাংলা ভাষায় সংবাদ পাঠ করছেন তাঁদের মধ্যে সিনিয়র মোস্ট হলেন সৈয়দ আফসার উদ্দিন।
শিক্ষকতায় তাঁর রয়েছে ত্রিশ বছরের অভিজ্ঞতা। বাংলাসহ পাঁচটি বিষয়ে ইয়ার সেভেন থেকে এ লেভেল পর্যন্ত শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন হেড অব ইয়ার এবং ডাইরেক্টর অফ স্কুল হিসেবে কাজ করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বছর তিনেক আগে বাধ্য হয়ে তাঁকে অবসরে যেতে হয়। পাশাপাশি জিসিএসই বাংলার পরীক্ষক হিসেবে একিউএ এক্সাম বোর্ডের সাথে যুক্ত আছেন ১৯৯৬ সাল থেকে ।
সন্ধ্যাকালীন চাকুরী হিসেবে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সৈয়দ আফসার উদ্দিন ESOL লেকচারার হিসেবে টাওয়ার হ্যামলেটস্ কলেজে কাজ করেন।
তিনি ২০১৭ সালে সেরা পুরুষ সংবাদ উপস্থাপক বিভাগের অধীনে “ইস্টউড” পুরস্কার জিতেছেন। ২০১৯ সালে ব্রিটেনের অনলাইন গণমাধ্যম ৫২ বাংলা টিভি সৈয়দ আফসার কে ব্রিটেনে শিক্ষা, সাংবাদিকতা, ও কমিউনিটি সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য “৫২ বাংলা টিভি বিশেষ সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড ২০১৯” প্রদান করে। একই বছর সানরাইজ টুডে অনলাইন টিভি, সাংবাদিকতায় অসাধারণ অবদানের জন্য সৈয়দ আফসার কে “বিশেষ সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড” প্রদান করে। টাওয়ার হ্যামলেটস এ শিক্ষা ও সমাজ সেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে প্রয়াত মহামান্য রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁকে “এমবিই” সম্মানে ভূষিত করেন। ২০২২ সালে শিক্ষা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য তাঁকে আন্তর্জাতিক সম্মাননা – “ফ্রিম্যান অব দ্যা সিটি অব লন্ডন” প্রদান করা হয়। একই বছর সাংবাদিকতা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য ” ব্রিটিশ বাংলাদেশী হুজ হু অ্যাওয়ার্ড ” দেয়া হয়। এছাড়াও সৈয়দ আফসার উদ্দিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আরো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
সৈয়দ আফসার উদ্দিন তাঁকে “আজীবন সম্মাননা” জানানোর জন্য মহান রাব্বুল আল আমিনের শুকরিয়া আদায় করেন এবং লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব এর ইসি কমিটির সদস্য – সদস্যাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিশেষ করে ধন্যবাদ জানান ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও জেনারেল সেক্রেটারিকে। এছাড়া দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছরের পথচলায় সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতা পেশায় যাঁরা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন তাঁদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তাঁর ছাত্র – ছাত্রীদের ও মা – বাবা, অভিবাবকদের কাছেও তিনি কৃতজ্ঞ বলে জানান।
সৈয়দ আফসার উদ্দিন ব্রিটেনে বাংলা সংবাদ পত্র ও সাংবাদিকদের পথিকৃৎ – জনাব তাসাদ্দুক আহমেদ এমবিই এর নামে “জার্নালিস্ট অ্যাওয়ার্ড ” প্রবর্তনের জন্য প্রেস ক্লাবের প্রতি অনুরোধ জানান।
এছাড়াও বাংলাদেশ ও প্রবাসে যাঁরা বাংলা ভাষায় টিভি ও রেডিওতে সংবাদ পাঠ করছেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও প্রবাস হতে একজন করে মোট দুজনকে প্রতিবছর “২১শে পদক” দেয়ার জন্য বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু কন্যা – শেখ হাসিনার প্রতি আহব্বান জানান। তিনি এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবকে অনুরোধ করেন।
সৈয়দ আফসার উদ্দিন এর দেশের বাড়ি চট্রগ্রামের মিরশ্বরাই উপজেলার চিনকি আস্তানা “তাকিয়া বাড়ি” (“সৈয়দ বাড়ি”) । জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার সহধর্মিনীর বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথ পুরের সৈয়দ পুর গ্রামে। পারিবারিক জীবনে সৈয়দ আফসার উদ্দিন স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
সৈয়দ আফসার উদ্দিন তাঁর প্রাপ্ত সম্মাননাকে উৎসর্গ করেছেন তাঁর জন্মদাতা পিতা, বাবা, গর্ভধারিনী মা, স্ত্রী, তিন সন্তান – শাবাব, মেহরাব এবং জারাকে।
লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব ছাড়াও তিনি কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ইউকের সদস্য ।
আরও দেখুন-
সৈয়দ আফসার উদ্দিন কে ‘৫২বাংলা বিশেষ সম্মাননা এওয়ার্ড ২০১৯’ প্রদান