শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
Sex Cams
সর্বশেষ সংবাদ
টাওয়ার হ্যামলেটসের বো এলাকায় নতুন কাউন্সিল ভবনের উদ্বোধন করেছেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর  » «   বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকের প্রাণহানি এবং সৃষ্ট অস্থিরতা-সহিংসতায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ক্ষোভ-নিন্দা  » «   সৃজনের আলোয় মুস্তাফিজ শফি, লন্ডনে বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা  » «   বৃটেনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তাহমিনার অসাধারণ সাফল্য  » «   দুই বঙ্গকন্যা ব্রিটিশ মন্ত্রীসভায় স্থান পাওয়ায় বঙ্গবন্ধু লেখক এবং সাংবাদিক ফোরামের আনন্দ সভা ও মিষ্টি বিতরণ  » «   কেয়ার হোমের লাইসেন্স বাতিলের বিরুদ্ধে আইনী লড়াইয়ে ল’ম্যাটিক সলিসিটর্সের সাফল্য  » «   যুক্তরাজ্যে আবারও চার ব্রিটিশ-বাংলাদেশী  পার্লামেন্টে  » «   আমি লুলা গাঙ্গ : আমার আর্তনাদ কেউ  কী শুনবেন?  » «   বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে লন্ডনে ইউনিভার্সেল ভয়েস ফর হিউম্যান রাইটসের সেমিনার অনুষ্ঠিত  » «   লন্ডনে বাংলা কবিতা উৎসব ৭ জুলাই  » «   হ্যাকনি সাউথ ও শর্ডিচ আসনে এমপি প্রার্থী শাহেদ হোসাইন  » «   ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে’র সাথে ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. এএসএম মাকসুদ কামালের মতবিনিময়  » «   মানুষের মৃত্যূ -পূর্ববর্তী শেষ দিনগুলোর প্রস্তুতি যেমন হওয়া উচিত  » «   ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নতুন স্পীকার নির্বাচিত  » «   কানাডায় সিলেটের  কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমকে সংবর্ধনা ও আশার আলো  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

অ্যাশেজ :আউট নট আউট



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

অস্ট্রেলিয়ান উইকেটকিপার এলেক্স কেরি স্টাম্প ভাঙ্গার জন্য উইকেটের পিছন থেকে বল থ্রো করলেন এবং বলটি স্টাম্প মিস করে চলে লং অন বা লং অফের দিকে ;তখন জন বেয়ারস্টোর কি দৌড়ে রান নিতেন এবং যদি তিনি রান নিতেন তাহলে ধারাভাষ্য বক্স কিংবা মিডিয়া জন কে তৎপর একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে অবহিত করত কিংবা ক্রিকেটের ভাষায় বলা হতো “রান চুরি” করে নিয়েছেন।

যেহেতু  বর্ণিত সেই কঠিন ঘটনাটি ঘটেনি অর্থাৎ এলেক্স কেরি  স্টাম্প এর উদ্দেশ্যে বল ছুড়েছিলেন এবং সেটি সত্যি সত্যি স্টাম্প ভেঙ্গে দিয়েছে যখন জন বেয়ারস্টোর উইকেট ছেড়ে এক্টু হাওয়া দেখতে বাহিরে বেরিয়ে ছিলেন।

এখানে এলেক্স কেরিকে নিয়ে বরং উচ্ছ্বাস করার কথা ।কারণ শিকারি বিড়ালের মতো  যিনি সেকেন্ডেরও ভগ্নাংশের মধ্যে অতি দ্রুত বল ছুড়ে স্টাম্প ভেঙ্গে দিতে পেরেছেন ।

এখানে খুবই নিরপেক্ষভাবে ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা হলে আপনি যেহেতু এক রায়  দুজনকে দিতে পারবেন না, সেজন্য স্কীলের যে ব্যাপার আসবে ;সেই স্কীল আর কান্ডজ্ঞানের ব্যাপারে জন বেয়ারস্টোর ব্যর্থ হয়েছেন; অপরদিকে একজন স্কীল্ড কিংবা চতুর শিকারী হিসাবে বিচার করলে এলেক্স কেরি হান্ড্রেডে হান্ড্রেডই পাচ্ছেন।

মজার ব্যাপার হলো অস্ট্রেলিয়া যখন ব্যাটিং করছিল তখন কিপিং এ থেকে জন বেয়ারস্টোর ও একই পদ্ধতিতে বল ছুড়েছিলেন কিন্তু স্ট্যাম্পে লাগেনি তফাৎ এখানেই। অন্যদিকে প্রথম ইনিংসে জন এভাবে উইকেট থেকে কয়েকবার হাটতে বেরিয়েছিলেন যা অসিরা নোট নিয়ে রেখেছিলো।

তারপর যা নিয়ে আলাপ হচ্ছে- সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে তা সবসময়ই দুর্বলদের জন্য কিংবা যারা ক্রিকেটীয় মোড়ল তারা কখনোই সেগুলিকে চর্চার মধ্যে রাখেনি। ক্রিকেটের ইতিহাস ঘাটলে অস্ট্রেলিয়া -ইংল্যান্ড- ইন্ডিয়া- পাকিস্তান এসব দেশে এমন সব নন স্পিরিটেড অসংখ্য উদাহরণ পাওয়া যায় এবং সর্বোচ্চ হিসাব করলে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া দু’দল এসব ক্ষেত্রে এ প্লাস প্রাপ্ত।

১৯৮১/৮২মৌসুমে ভারতের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলতে নামা শ্রীকান্তকে তার প্রথম ম্যাচেই এমন আউটের শিকার হতে হয়েছিল এবং সেটি করেছিল ক্রিকেটের জনক ইংরেজরাই।আরও চমকপ্রদ হলো সেটা উইকেট কিপার কর্তৃক নয় বরং গালি অঞ্চল হতে একজন ফিল্ডার সম্ভবত জন এম্বুরি কই ইংল্যান্ড তো আপিল প্রত্যাহার করেনি।

ক্রিকেটীয় আইনে বল ছোঁড়ার পর হতে সেই বল ঘুরে আবার বোলারের হাতে আসা পর্যন্ত জীবন্ত থাকে ,যদি না এর মধ্যে আম্পায়ারের হাতে বল যায়।

সুহজ ভাষায় বলা যায়- বোলার বোলিং করার পরে ফিল্ডার এবং ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যদি নিশ্চিত হওয়া যায়,আর রান নেবার চেষ্টা হচ্ছে না ; তাহলে হয়তোবা ক্রীজের উপর মুভমেন্ট করা যাবে কিন্তু বল ডেড এর যে ব্যাপারটা আছে, সেখানে আম্পায়ার কিংবা সেই বোলারের বোলিং প্রান্ত পর্যন্ত ফিরে যাওয়ায় পর্যন্ত বলটি আসলে ডেড হয় না ।

এজন্য রান নিতে চাইলে কিংবা নিজের বাইরে চলে গেলে আপনি আউট হয়ে যেতে পারেন, সৌজন্যতা কিংবা স্পিরিট এগুলি পরবর্তী আলাপ।

ক্রিকেটে স্পিরিট বলতে যেটুকু আলোচনা হয় সেটি আসলে “কাজীর বলদ ; কিতাবে আছে গোয়ালে নেই” বাক্যের মতই বাস্তব।

কৌশল -মোমেন্ট – স্পিরিট এগুলি কদাচিৎ দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হার না মানার মানসিকতাকে সামনে এনে উল্টো বাহবা দেওয়া হয় যদি সেটি ইংল্যান্ড- অস্ট্রেলিয়ানদের  পক্ষে যায় নতুবা তারা এসবের বিপক্ষে সবসময়ই গলাবাজি করে এটাই ইতিহাসের বাস্তবতা।

অস্ট্রেলিয়ার কাছে সবসময় জয় গুরুত্বপূর্ণ।নিয়মের মধ্য থেকে সব সময় জিততে চায় ।ইংল্যান্ড একই পথের পথিক। তবে ইংল্যান্ডের সুবিধা হচ্ছে তাদের হয়ে মাঠের প্লেয়াররা পারফর্ম করতে না পারলেও ইংলিশ মিডিয়া খেলে দেয়।

ডব্লিউ জি গ্রেস। উনাকে বলা হয়ে থাকে ক্রিকেটের লর্ড স্যার। গ্রেস কে আম্পায়ার আউট দিলে তিনি বলে উঠেছিলেন- মানুষ আপনার আউট দেখতে আসেনি;এসেছে আমার ব্যাটিং দেখতে।

আরেকবার পুরো ইংল্যান্ড দল মিলে আম্পায়ারকে বাথটাবে চুবিয়ে ছিলো তাদের বিপক্ষে অনেকগুলি সিদ্ধান্ত যাওয়ার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে।

জন লিভার বলে ভ্যাসেলিং লাগিয়ে বোলিং করেছিলেন কিন্তু তাদের মিডিয়া কিচ্ছু বলেনি স্পিরিট নিয়ে। বেদি এ নিয়ে প্রশ্ন তুলায় তাহার কাউন্টি টিম কন্ট্রাক ক্যানসেল করে দিয়েছিলো।

শচিনের বিপক্ষে বোলিং করছিলেন এসলে জাইলস চোখে রোদ চশমা দিয়ে। এটার রিফলেক্সে শচীনের সমস্যা হচ্ছিলো বলে তিনি দৃষ্টি আর্কষন করলে প্রতিউত্তরে ক্যাপ্টেন নাসের হুসাইন বলেছিলেন -সে চশমা পরে বোলিং এ কমফোর্ডফিল করে।

ওসাসিম, ওয়াকার যখন ফাস্ট বোলিং এ রিভার্স সুইঙ্গয়ের বিপ্লব ঘটাচ্ছেন ,তখনই ইংলিশ টীম তথা তাদের মিডিয়া বলটেম্পারিং এর অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়ে গেলো। অথচ এক- দেড় যুগ পরে যখনই তারা নিজেরাই এই কৌশল রপ্ত করে নিলো তখন এটাকে আর্ট বলে চালাতে শুরু করলো।

অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা ও একই । গ্লেন ম্যাকগ্রার বোলিং এ শচীন টেন্ডুলকার ডাক করলেন, বল তার সোল্ডারে লাগলো ,পুরো অস্ট্রেলিয়াটিম আপিল করে বসলো এবং আম্পিয়ার এলবিডাব্লিউ ঘোষণা করলেন; যেটাকে পরবর্তীতে শোল্ডার বিফোর উইকেট বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।

আসল কথা হলো ক্রিকেটে আইন আছে; ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা কিংবা অন্য অনেক যুক্তি দেওয়া যায় পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কিন্তু সত্য কথা হলো যখন কোন টিম জিততে চায় তখন কখনোই তারা আইন কিংবা সৌজন্যতাসহ কোন কিছুরই তোয়াক্কা করে না; খালি চোখে সেটা করার কথা না।

এরপরেও জেন্টলম্যান গেম কিংবা স্পোর্টসম্যানশিপ অথবা স্পিরিট অফ ক্রিকেট বলা হয় অল্প সংখ্যক ক্রিকেটারদের কারণেই যেমন অনেক ক্রিকেটার আছেন যারা ওয়াক করতেন অর্থাৎ বর্তমান সময়ের মতো রিভিউ সিস্টেম কিংবা এতো ক্যামেরা এঙ্গেলের পূর্বে অনেক সময় কট বিহাইন্ডের আবেদনে আম্পায়ার নট আউট ঘোষণা দেওয়ার পরে ও তারা নিজেরাই ব্যাটে লেগেছে এজন্য ওয়াক করতেন।

সে সময় ও কিছু ক্রিকেটার এবং ধারাভাষ্যকার  ক্রিকেটের স্পিরিটের উল্টো করে বলেছিলেন- আম্পায়ার যদি নট আউট দেয় তাহলে ক্রীজে থেকে যাওয়া উচিত; কারণ আপনাকে যখন ভুল ভাবে দেওয়া হয়/হবে তখন তো সেটা শুধরানোর কোন সুযোগ নেই। যদিও এখন রিভিউ সিস্টেম যুক্ত হওয়াতে দুপক্ষের জন্যই এক্সট্রা আপিলের রাস্তা বের হয়েছে।

ক্রিকেট এখন বানিজ্যিক কিংবা পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ অবস্থায় অবস্থান করছে সেজন্য ক্রিকেট নিয়মের মধ্য থেকে আপনি আউট কিংবা নট আউট যেটি হবেন সেটি মেনে নেয়া উচিত কারণ আপনার কিংবা প্রতিপক্ষ ক্যাপ্টেনের একটি স্পোর্টসম্যানশিপ দেখাতে গিয়ে দল হেরে যেতে পারে এবং ওই ক্যাপ্টেন তার নিজেদের দলের কাছে ঘৃনার পাত্র হয়ে যেতে পারেন। একটি উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটি ক্লিয়ার হবে।

ইডেন গার্ডেন একটি টেস্ট ম্যাচে রান পুরো করার সময়ে নন বোলিং প্রান্তে শচীনের সাথে শোয়েব আক্তারের একটি ধাক্কা লেগে যায় এবং সেজন্য শচীন ক্রীজের ভিতরে ব্যাট রাখতে পারেননি এবং রান আউট হয়ে যান।

পাকিস্তান টিম সেটা উদযাপন ও করে । ম্যাচ পরবর্তীতে ওয়াসিম আকরামকে শচীন কে ক্রীজে ফিরিয়ে আনা যেতো কিনা প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন -অন্য কেউ হলে চিন্তা করা যেত কারণ আমার সিদ্ধান্তের কারণে শচীন ব্যাটিংয়ে ফেরত আসলে এবং পাকিস্তান হেরে গেলে আমাকে আরেকটি পক্ষ কাঠগড়ায় তুলে দিত সো এই রিক্স আমি নিতে যাব কেন।

এখনই আসলে সকল উত্তর । আমাদের স্পোর্টসম্যানশিপ কিংবা স্পোটিং স্পিরিট কিংবা খেলাধুলার যে সৌজন্যতা দেখানো হয় সেটিও আসলে যতক্ষণ পর্যন্ত না হেরে যাওয়ার রিস্ক থাকে না ততক্ষণ পর্যন্তই বেশিরভাগ সময় দেখানো হয়।

হেরে যাওয়া কিংবা বিগ উইকেট কিংবা বিগ ডিসিশন হলে কেউই সৌজন্যতা দেখাতে চায় না এটাই বাস্তবতা ।এজন্য অনুশোচনা কিংবা অনুতাপেরও কিছু নেই কারণ আপনি এখানে খেলার নামে যুদ্ধক্ষেত্রেই আছেন আর সেই ঐতিহাসিক প্রবাদই তো আছে –নাথিং আনফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার।

খেলা তো এখন যুদ্ধই। অ্যাশেজ এর ধোয়াঁ থেকে আগুনের উত্তাপ পাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট।

ফুজেল আহমদ: লেখক, ক্রীড়া বিশ্লেষক

টরেন্টো,কানাডা।  জুলাই ২০২৩

আরও পড়ুন-

মেসির আমেরিকা যাত্রা


সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন